অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা

অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা

যারা প্রাচীন  চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা অবশ্যই অনুসরণ তার নাম শুনেছেন। এটি প্রাচীন ভারতের চিকিৎসা  শাস্ত্রে অত্যাশ্চর্য নামে ও পরিচিত। অশ্বগন্ধার আশ্চর্য ধরনের ঔষধি গুণ থাকার কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

অশ্বগন্ধা একটি  ছোট আকৃতির উদ্ভিদ। এর থেকে ঘোড়া  অশ্বের মতো  এক ধরনের গন্ধ বের হয়। এই মূলত এই গাছের নাম অশ্বগন্ধা বলা হয়ে থাকে।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অশ্বগন্ধার বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। ভারতের শুষ্ক অঞ্চলে এটি বেশি পাওয়া যায়। তবে নেপাল চীন এবং  ইয়ামেন  দেশটিতেপাওয়া যায়।

অশ্বগন্ধার ভেষজ উপাদান

অশ্বগন্ধা গাছের ফল পাতা ফুল  সবকিছুই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।অশ্বগন্ধা একটি খুব ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে কারণ এর রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান। এর মধ্যে অন্যতম  হল  অ্যালকালয়েড, স্তেরয়েডাল ইত্যাদি।এছাড়াও অশ্বগন্ধা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বায়ু   অ্যাক্টিভ পদার্থ।

অশ্বগন্ধার প্রকারভেদ

অশ্বগন্ধা সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে।

  • ছোট অশ্বগন্ধা
  • বড় অশ্বগন্ধা

ছোট   অশ্বগন্ধা গুলো আকারে ছোট হলেও এদের শিকার গুলো মোটা ও বড় হয়ে থাকে। আবার বড়  অশ্বগন্ধা গুলো কিছুটা বড় আকৃতির হলেও এদের অনেকটা ছোট হয়ে থাকে।

অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা

আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা। অশ্বগন্ধার পরিচিতিপর্ব  সংক্ষিপ্ত করে অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করব।

অশ্বগন্ধার উপকারিতা

অশ্বগন্ধা গ্রামের  ঝোপ জঙ্গলে প্রচুর পরিমাণ থাকায় গ্রামের সাধারণ মানুষ তাদের অনেক রোগের চিকিৎসায় অশ্বগন্ধা কে ব্যবহার করে থাকেন। যারা এর সঠিক ব্যবহার জানেন তারা অশ্বগন্ধা থেকে সহজেই উপকৃত হতে পারেন। নিচে অশ্বগন্ধার বেশ কিছু ঔষধ গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ক্যান্সার প্রতিরোধে

অশ্বগন্ধার মধ্যে একটি বিশেষ উপাদান রয়েছে যার নাম হচ্ছে  উইথ ফেরেন। এই পদার্থটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। অশ্বগন্ধা মূল ও পাতার নির্যাস এ উপস্থিত ফাইটোকেমিক্যালস নামক পদার্থকে ধ্বংস করে এবং সেই কষে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফুসফুস, কোলন, স্তন, মস্তিষ্ক, ডিম্বাশয় ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের অশ্বগন্ধা ব্যবহার হয়ে থাকে।

ভালো ঘুম হয়

জাদুর রাতে ভালো ঘুম হয় না তারা চিনির সাথে অশ্বগন্ধা গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। দেখবেন আপনার ঘুম ভালো হয়েছে। ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রায় ভূগোলে অশ্বগন্ধা হতে পারে কার্যকরী একটি ঔষধ।

ডায়াবেটিক

অশ্বগন্ধার  মূল এবং পাতার নির্যাস রয়েছে ডায়াবেটিক বিরোধী উপাদান। এই উপাদানগুলো মানুষের শরীরে ইনসুলিন বৃদ্ধি করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। এগুলো শরীরের লিপিড এর পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

শক্তিবর্ধক

অশ্বগন্ধা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। অশ্বগন্ধা মজবুত করে তোলে পেশিতে স্থিতাবস্থা দান করে। ব্যায়াম করার ফলে যাদের পিসিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে তারা অশ্বগন্ধা খেতে পারেন।  পেশিতে কোন আঘাত পেলেও অশ্বগন্ধা সেটিকে সারিয়ে তোলে।

যৌন ক্ষমতা বাড়াতে

প্রাচীনকাল থেকেই ছেলেদের যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধার ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি টেস্টোস্টেরন ও প্রজেস্টেরন এর মাত্রা বৃদ্ধি করে ছেলেদের যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিছু গবেষণা থেকে জানা যায় এটি ছেলেদের কাম শক্তি বৃদ্ধি  করে।

থাইরয়েড সমস্যা

অশ্বগন্ধার মাধ্যমে দেখা যায় থাইরয়েডের সমস্যা ও অনেক সময় ভালো হয় ।অশ্বগন্ধা মানব  শরীরে  t4 মাত্রা বৃদ্ধি করতে এবং হাইপোথাইরয়েডিজম কমাতে সাহায্য করে । কিন্তু অশ্বগন্ধা মানব শরীরের ব্যবহারের নিরাপদ কিনা তা জানতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে ।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে

অশ্বগন্ধা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে । মানবদেহে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান থাকার জন্য অশ্বগন্ধা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ।আমাদের শরীরে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে তাহলে আমরা সহজে কোন রোগে আক্রান্ত হব না ।  তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে ।

কোলেস্টেরল কমায়

অশ্বগন্ধার উপকারিতা মধ্যে অন্যতম হলো কোলেস্টেরল কমায় । আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয়, অশ্বগন্ধা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে । আমাদের শরীরে যদি কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে এই কলেস্টেরল আমাদের ক্ষতি করতে পারে ।

দুশ্চিন্তা কমায়

অশ্বগন্ধা উপস্থিত  অ্যানজাইলটিকউপাদান থাকে বলে তা মানসিক চাপকে কমায়। এই অশ্বগন্ধা স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করতে সক্ষম। যদি আপনি অনেক বেশি ভয় পেয়ে থাকেন তাহলে অনেক সময় প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা এধরনের সমস্যায় বেশি বেশি ভুগে থাকেন তারা অশ্বগন্ধার সাহায্য নিতে পারেন। কারণ অশ্বগন্ধা স্নায়ুর ওপর চাপ কমিয়ে আপনাকে মানসিকভাবে দৃঢ় করে তুলতে সহায়তা করবে।

চুলের যত্ন

চুলের যত্নের জন্য অশ্বগন্ধা খুবই ভালো একটা প্রাকৃতিক উপকরণ ।  অশ্বগন্ধা চুলে পুষ্টি যোগায় চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে এবং চুল দীর্ঘ এবং উজ্জ্বল করে । অশ্বগন্ধা এন্টিঅক্সিডেন্ট হওয়ার কারণে অকালে চুলে পাক ধরা এবং চুল পড়া বন্ধ হয় ।

ত্বকের যত্নে

ত্বকের জন্য অশ্বগন্ধা খুব ভালো কাজ করে ।  অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধে সাহায্য করে । মানব শরীরে বয়স নেমে আসার সবচেয়ে প্রধান কারণ হচ্ছে ফ্রি রেডিকেল । যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন বিপাকীয় কার্যকলাপের দারুন সৃষ্টি হয় । অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলীর কারণে অশ্বগন্ধা এসব ফ্রিরেডিকেল এর বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে পারে এবং আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল এবং তাজা রাখতে সক্ষম । এক কথায় বলতে গেলে আমাদের  ত্বক কুচকে যাওয়া ডার্ক স্পট এবং অকাল বার্ধক্যের অন্যান্য লক্ষণ এটি বাচাই।

সাপে কামড়

সাপে কামড় দিলে অশ্বগন্ধার প্রলেপের  মাধ্যমে সাপের বিষ প্রশমিত হয় এবং শরীরের অন্যত্র তা ছড়ায় না ।সাপে কামড় দিলে অশ্বগন্ধার প্রলেপের ব্যবহারটা প্রাচীনকাল থেকে চলে এসেছে । এবং এটি চিরাচরিতভাবে  শাসক হিসেবে প্রচলিত ।

অশ্বগন্ধার অপকারিতা

প্রত্যেকটা জিনিসের যেমন পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে বা অপকারিতা আছে । তেমনি অশ্বগন্ধার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং অপকারিতা আছে । তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক অশ্বগন্ধার কিছু  অপকারিতা।

  • অশ্বগন্ধা শরীরের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে । আপনি যদি একই কাজের জন্য অন্য কোন ওষুধ গ্রহণ  করেন তাহলে এতে বিপরীত হতে পারে  এবং আপনার শরীর শর্করার মাত্রা অনেক বেশি কমে যেতে পারে ।
  • আপনি যদি একটানা দীর্ঘদিন অশ্বগন্ধা পাউডার খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার ডায়রিয়া বমি এবং গ্যাস্ট্রিক আলসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অনেক সময় গর্ভ অবস্থায় অশ্বগন্ধা খেলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় গর্ভবতী মহিলাদের সময় এর আগে  গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • অশ্বগন্ধা অনেক সময় ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে থাকে । এমন অবস্থায় আপনি ঘুমানোর জন্য অশ্বগন্ধা খেলেন এবং পাশাপাশি অন্য ওষুধ খেলে এটা আপনার ক্ষতি হতে পারে । তাই অশ্বগন্ধা খেয়ে আলাদা ওষুধ খেলে বেশি ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
  • অশ্বগন্ধা মানব শরীরের রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করে । ধরুন আপনার কোনো ভাবে কোনো অপারেশন বা শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে এ সময় যদি আপনি অশ্বগন্ধা খান তাহলে এটা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে । কেননা অশ্বগন্ধা আমাদের শরীরের রক্তকে পাতলা করে তোলে । যার ফলে আপনি সহজে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন না।
  • আপনি যদি অশ্বগন্ধা কে আপনার ডেইলি ডায়েট রুটিনের মধ্যে রাখতে চান তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ  নিয়ে তারপরে রাখবেন ।  কেননা আপনি ইতিমধ্যে যে ওষুধগুলো গ্রহণ করছেন তার প্রতিক্রিয়া ওপর একটি প্রভাব ফেলতে পারে ।  তাই অবশ্যই আপনি অশ্বগন্ধা খাওয়ার পূর্বে বা ব্যবহার করার পূর্বে সম্পূর্ণ বিষয়টি  বিবেচনা করে নিবেন ।
  • যে মায়েরা নবজাতক শিশুদের  নিজের বুকের দুধ পান করান তাদের ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা না খাওয়াটাই উত্তম ।

আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল অশ্বগন্ধার উপকারিতা এবং অপকারিতা।আশা করি আপনারা সবাই  অশ্বগন্ধার উপকারিতা সম্পর্কে এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বুঝতে পেরেছেন ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *