বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার খরচ

স্বপ্ন যখন আইন নিয়ে পড়াশোনা জীবনের হরেক রকমের পর্যায়ে আমরা কিছু না কিছু শিখি, শেখার কোনো বয়স হয় না, ইচ্ছা থাকলে শেখারও কোনো শেষ হয় না। নামের আগে বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, অধ্যাপক (আইন) ব্যারিস্টার, অ্যাডভোকেট পদবিগুলো থাকা সব মানুষেরই স্বপ্ন বলা চলে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার খরচ চাহিদার কথা বিবেচনা করে বর্তমানে অনেক তরুণ-তরুণী এই পেশায় আসতে আগ্রহী। আইন নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ আছে দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। যে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী বা পেশাজীবীর আইন পড়ার সুযোগ আছে। সে বিজ্ঞানের ছাত্র হোক, মানবিক, বাণিজ্য কিংবা মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের হোক না কেন।

প্রথমে আপনাকে এইচএসসি পাসের পর যে কোনো সরকারি অথবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদে ভর্তি হতে হবে। এখানে আপনাকে চার বছরমেয়াদী এলএলবি অনার্স সম্পন্ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তবে আপনি ইচ্ছা করলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হতে পারেন। দেশের প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের জন্য এলএলবি অনার্স কোর্স চালু আছে। এখানে পড়তে হলে প্রতিষ্ঠানভেদে খরচ পড়বে ৩ থেকে ৭ লাখ টাকা। আইন বিষয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম হলো

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)
  • খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)
  • জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি)
  • গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)
  • বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রভৃতি।

এছাড়া দেশের অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যে অন্যতম হলো নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি। চাইলে আপনি চার বছর মেয়াদি এলএলবি না করেও আইন পেশায় আসতে পারেন। এ জন্য আপনাকে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজ থেকে অনার্স বা ডিগ্রি পাস করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে কোনো ‘ল’ কলেজে দুই বছর এলএলবি (পাস) কোর্স করতে হবে। দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েই অন্যতম চাহিদাসম্পন্ন বিষয় আইন।বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কোর্স পড়ানো হয়।

তবে সার্বিকভাবে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে হলে একজন শিক্ষার্থী ‘জুরিসপ্রুডেনস’, সাংবিধানিক আইন, মুসলিম আইন, হিন্দু আইন, চুক্তি আইন, টর্ট আইন, ভূমি আইন, প্রশাসনিক আইন, কোম্পানি আইন, বাণিজ্যিক আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, সাইবার ল, রেজিস্ট্রেশন আইন, পরিবেশ আইন, আয়কর আইন, সুনির্দিষ্ট কার্য-সম্পাদন আইন, ইক্যুইটি ট্রাস্ট, শ্রম আইন, অপরাধ আইন, দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন, আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার আইন, ক্রিমিনোলজি, রিয়েল এস্টেট আইন, সমুদ্র আইন, আন্তর্জাতিক সংগঠন, রিফুজি ল ও গুড গভর্নেন্সসহ ইত্যাদি নানা বিষয়ে পড়ানো হয়।

স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আরও কিছু বিশেষায়িত বিষয়ও পড়ানো হয়। একসময় সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল আইন বিষয়ে পড়াশোনা মানেই ওকালতি করা। প্রথমত, আইনজীবী হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা তো আছেই। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা যেসব চাকরিতে আবেদনের যোগ্য, আইনের শিক্ষার্থীরাও সেই সব পদে অনায়াসে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

বলাই বাহুল্য, আইন পেশায় এখন যোগ হয়েছে নতুন নতুন মাত্রা ও সম্ভাবনা। বিসিএস ও অন্য যে কোনো নন ক্যাডারের চাকরি, ব্যাংক, স্বায়ত্তশাসিত ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানেও চাকরির ক্ষেত্রে আইনের ছাত্রদের অন্য ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের মতো সমান সুযোগ আছে। তবে বিশেষ কিছু পেশা আছে যেখানে শুধু আইনের ছাত্ররাই কাজ করতে পারবেন, অন্যরা নয়। আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিভিন্ন বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, বহুজাতিক কোম্পানি ও এনজিওতে আইন কর্মকর্তা বা প্যানেল আইনজীবী হিসেবেও কাজের সুযোগ। রয়েছে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আদালতে যোগ দেওয়ার সুযোগ। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার খরচ আইন কলেজে আইন বিভাগের গ্রাজুয়েটদের শিক্ষকতার সুযোগও রয়েছে।

কম খরচে ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় (খরচ সহ)

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার খরচ পাবলিক বা সরকারি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না থাকলে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী পছন্দ হয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কম খরচে ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কোনগুলো এ সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। পাশাপাশি পড়াশোনার মান কেমন হবে, সেই প্রশ্ন তো থাকছেই। বর্তমানে কম খরচে ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এর সংখ্যা হাতে গোণা কয়েকটি। কারণ প্রতিনিয়ত ছত্রাকের মত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গজিয়ে উঠছে। সেই সাথে তাদের মানহীন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আকাশ ছোঁয়া খরচের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয় অনেক শিক্ষার্থী। খুব বেশি বাধ্য না হলে শিক্ষার্থীরা সাধারণত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে না। আর এই সুযোগে তারাও টিউশন ফির নামে গলা কাটে শিক্ষার্থীদের। তাই কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন তা পছন্দ করার আগে জেনে নিতে হবে সেখানকার সামগ্রিক বিষয়। সেখানে পড়াশোনার মান কেমন, বছরে খরচ কত হতে পারে, সরকারি অনুমোদন রয়েছে কিনা ইত্যাদি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার খরচ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বে এসব তথ্য জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কম খরচে ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়

আজ আমরা কোর্সটিকায় বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার খরচ কম আছে বলে ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কোনগুলো তা জানবো। এখানে আমরা দেশের ৫ টি পরিচিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচসহ অন্যান্য তথ্য তুলে ধরেছি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে একাধিক অনুষদ। তাই আপনি নিচের ৫ টি থেকে থেকে যেকোন একটি বেছে নিতে পারেন।বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার খরচ।

১. গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ২০০৩ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টি গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সাশ্রয়ী মূল্যে শিক্ষা সুবিধা প্রদান করে। এটি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আধুনিক, গতিশীল এবং উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। যা নিবেদিত এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সমন্বয় মানসম্মত শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করে। গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সম্প্রতি মানসম্মত শিক্ষার জন্য Internationally Recognized commissioned Certification Body Orion Registrar INC কর্তৃক ISO 9001:2008 সনদ পেয়েছে। যদিও এখানে কম খরচে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা যায়; তথাপি শিক্ষার্থীদের SSC এবং HSC ফলাফলের GPA এর ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন বৃত্তি প্রদান করে থাকে। গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এ বিভিন্ন সাবজেক্টে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর করতে কেমন খরচ হয়, এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার খরচ  তা জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

২. ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (EUB) একটি দ্রুত উন্নতিশীল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যা বাংলাদেশে ইউরোপীয় মানের মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের চেষ্টা করছে। এটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট ২০১০ এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং বাংলাদেশ সরকার ১৪ মার্চ ২০১২ তারিখে এটির অনুমোদন করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দ্বারা অনুমোদিত এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পাঠ্যক্রম দ্বারা অনুমোদিত। ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের চ্যান্সেলর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। বর্তমানে এর ছাত্র সংখ্যা প্রায় ২১,০০০ এবং অনুষদের সদস্য ৪০০ টি। EUB – তে পড়ার সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এখানে রয়েছে মাঝারি টিউশন ফি যা সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠাটি দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তাও প্রদান করে থাকে। ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে BBA করতে হলে আনুমানিক ২,৫৮,৪০০ টাকার মত খরচ হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার খরচ এছাড়াও অন্যান্য বিভাগের খরচগুলো জানতে আমাদের সাথেই থাকুন ।

৩. ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (WUB) ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত এবং স্বীকৃত। বর্তমানে বাংলাদেশে সময় উপযোগী শিক্ষার জন্য WUB শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ। বর্তমানে এটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুসারে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত যা একটি অলাভজনক প্রক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সদস্য, অ্যাসোসিয়েশন অব কমন ওয়েলথ ইউনিভার্সিটি এবং কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স অ্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট কাউন্সিলের সদস্য এবং ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতীয় আদর্শ ও আকাঙ্খাকে ক্ষুন্ন না করে উপযোগী শিক্ষা প্রদানের জন্য নির্ধারিত এবং এটি নিজেই কোর্স এবং পুরস্কার ডিগ্রী, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য অনুমোদিত। বর্তমানে এর ক্রেডিট ট্রান্সফার ব্যবস্থা এবং যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং ক্যারিবিয়ান কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একাডেমিক সহযোগিতা রয়েছে।

আইন পড়লে কি কি হওয়া যায় । আইন বিষয়ের ক্যারিয়ার সম্ভবনা । কেন পড়বো আইন?

এইচ. এস. সি পরীক্ষার পর যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন নিবেন অথবা সাবজেক্ট পরিবর্তন করার কথা ভাবছেন, কিংবা সন্তান কে ভার্সিটিতে ভর্তি করাতে সাবজেক্ট চয়েজ নিয়ে দু:শ্চিন্তায় আছেন, আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। আইন বিষয়ে পড়ার ভবিষ্যৎ সম্ভবনা, আইন বিষয়ে পড়ে কোন কোন ফিল্ডে ক্যারিয়ার গড়া যায়, কি কি চাকরীর সুযোগ রয়েছে এবং টেকনিক্যাল সাবজেক্ট হিসাবে কেন আইন সব বিষয়ের চেয়ে আলাদা। এ সব বিষয়ে ধারনা পাবেন এই লেখা থেকে। সর্ম্পূণ লেখাটি পড়ে আপনি অবাক হবেন, বাংলাদেশের ক্যারিয়ারে আইন বিষয়ের দাপুটে কর্মক্ষেত্র দেখে।

আইন পড়লে কি কি হওয়া যায় ?

কেউ এই প্রশ্ন করলে উত্তরের বদলে পাল্টা প্রশ্ন হবে- ‘আইন পড়ে কী হওয়া যাবে না? বাংলাদেশে আইনের শিক্ষার্থীদেরকে পরিবারে ও সমাজে অবধারিতভাবে যে অনিবার্য প্রশ্নটির সম্মুখীন হতে হয় তা হচ্ছে- ‘Law পড়বি কি Liar হওয়ার জন্য?’

অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষ ধরেই নেয়- ‘ল’ পড়ে ‘লইয়ার’ বা তাঁদের ভাষায় লাইয়ার (মিথ্যাবাদি) হওয়া ছাড়া আর বুঝি কোন গত্যন্তর নাই। কিন্তু তাঁরা আসলে জানে না আইন পড়া একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার পরিধি কতোটা বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময় !

আইন পাশ করে আইন সংশ্লিষ্ট বা আইন বহির্ভূত সব কিছুই আপনি হতে পারবেন। আইন পড়ে কেউ আইনজীবী হতে না চাইলেও তাঁর জন্য সরকারি- বেসরকারি চাকুরির দুনিয়া খোলা। আইন পড়ার আরেকটি মজার বিষয় হল- আপনি স্বাস্থ্য, প্রোকৌশল, আইটি সহ সকল সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পাবেন। ছোট-বড় সব ধরনের কোম্পানীতেই লিগ্যাল সেক্টরে চাকুরী বা পরামর্শক হিসাবে আইনের ছাত্ররা ক্যারিয়ার গড়তে পারে।

১/ বিজেএস ক্যাডার (জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট)

বিজেএস পরিক্ষা বিসিএস এর মতোই। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ায় বর্তমানে জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হয় বিজেএস বা ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন’ এর মাধ্যমে। বিসিএস ক্যাডারের তুলনায় বিজেএস ক্যাডারদের বেতন, ক্ষমতা ও অন্যন সুবিধা প্রায় ৩০% বেশী। এই পদে নিয়োগ লাভের সুযোগ শুধুই আইনের গ্রাজুয়েটদের জন্য সংরক্ষিত।

২/ বিসিএস ক্যাডার

আইন থেকে পাশ করে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের মতোই আপনারা বিসিএস এর সমস্ত ক্যাডার যেমন- ফরেন সার্ভিস, প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টম, আনসার ইত্যাদি সব নন- ট্যাকনিক্যাল ক্যাডারে একজন র্ফাস্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। আইন থেকে পাশ করে বিসিএস এর বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ লাভের উদাহরণ ভুরিভুরি। এক মাত্র আইন পড়লেই বিসিএস ও বিজেএস দুটি ক্যাডার পরীক্ষায় একত্রে অংশ নেয়া সম্ভব!

৩/ শিক্ষকতা

ভালো একাডেমিক ফলাফল থাকলে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে আইনের শিক্ষক হিসেবে উচ্চ বেতনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায়। আইনের ভালো ফলধারীর জন্য বিকল্প অজস্র ক্যারিয়ার সম্ভাবনার কারনে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে উপযুক্ত শিক্ষক সংকট লেগেই থাকে। এই সেক্টরে চাহিদা এমনই বেশি যে অনার্সে ভালো ফল থাকলে মাস্টার্সের রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার আগেই অনেক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি আইনের যোগ্য প্রার্থীকে ‘অগ্রীম এপয়েন্টমেন্ট লেটার’ দিয়ে বুকড করে রাখে!

৫/ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী

একজন আইনের শিক্ষার্থী সামরিক বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট, সাব লেফটেন্যান্ট, ফ্লাইং অফিসার হয়ে কমিশন্ড অফিসারের পদমর্যাদায় সেনা, নৌ কিংবা বিমানবাহিনীতে ‘জাজ- এডভোকেট জেনারেল’ (JAG Core) কোরে যোগ দিতে পারেন। সামরিক আইন-আদালত ও সামরিক বিচার নিয়ে এদের কাজ কর্ম। এই সুযোগটাও শুধু আইনের শিক্ষার্থীদের !

৬/ ব্যাংক, বীমা, কোম্পানি, শিল্প ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান

বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি বা অন্যান্য বিষয়ের মতো আইন থেকে পাশ করেও যে কেউ ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে যোগ দিতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে এমন ব্যাংক, বীমা, কোম্পানি, শিল্প ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে ‘লিগ্যাল ডিভিশান’ নাই। ব্যাংকিং, কোম্পানি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে সাধারণ অফিসার হিসেবে আবেদনের পাশাপাশি আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ লাভের এক্সট্রা সুযোগ শুধু আইনের ডিগ্রিধারীদের জন্যই সংরক্ষিত !

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক (জেনারেল সাইড)’ পদে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে আবেদনের পাশাপাশি আইনের ডিগ্রিধারীরা ‘সহকারী পরিচালক (লিগ্যাল সাইড) পদে নিয়োগ লাভের আলাদা সুযোগ পায়। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান আবার অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্র্যাকটিসিং লইয়ারদের কে ‘প্যানেল আইনজীবী’ হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও দিয়ে থাকে। এটি আইনজীবীদের জন্য আরেকটি বাড়তি সুযোগ। বেশীর ভাগ আইনজীবীই ঢাকা মূখী হওয়ার অন্যতম একটি বড় কারন বিভিন্ন কোম্পানীতে রিটেনার বা প্যানেল আইনজীবী হওয়ার সুযোগ থাকা।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *