Blog
1 min read

ডোমেইন নেইম কি? কিভাবে ডোমেইন কিনবেন? বিস্তারিত জানুন

ডোমেইন নেইম কি ?

ডোমেইন  হল (Domain) একটি ইংরেজি শব্দ। এর বাংলা অর্থ  হলো স্থান কিংবা ঠিকানা। যেটা  ইন্টারনেট দুনিয়াতে ব্যবহার করা হয়। মূলত, ডোমেইন নেইম বলতে সাধারনভাবে কোন একটি ওয়েবসাইটের নামকে বুঝানো হয়ে থাকে। প্রত্যেকটা ওয়েবসাইটের একটি নির্দিষ্ট আইপি অ্যাড্রেস (IP Address) রয়েছে।

যেমন ধরুন , 66.220.159.255. সাধারণভাবে আইপি অ্যাড্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট মনে করে রাখা অনেকটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর তাই মনে রাখার সুবিধার জন্য আইপি অ্যাড্রেসের পরিবর্তে ডোমেইন নাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও এক বা একাধিক কম্পিউটারকে ইন্টারনেটে চেনার জন্যও ডোমেইন নেইম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

প্রত্যেকটা মানুষের কিন্তু আলাদা আলাদা একটা নাম থাকে আর সেই নামেই কিন্তু সবাই তাকে চিনে। আর এখানে ডোমেইন নামটাও কিন্তু ঠিক সেরকম ভাবেই বলা যায়। ডোমেইন নাম হল একটা ওয়েবসাইটের নাম। ওয়েবসাইটের নামে মানে ডোমেইন নামটা আপনারা যে নাম দিয়ে কিনবেন সেই নামেই কিন্তু আপনাদের ওয়েবসাইটকে সকলে চিনবে।

যেমন, www.noproblem.com এটি একটি ওয়েব সাইট, যা সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তার ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে দেখতে পারে। এখানে তিনটি W হচ্ছে যথাক্রমে world wide web আর noproblembd.com হচ্ছে সেই ওয়েব সাইটের মূল নাম। এর আইপি এড্রেস হলো

ডোমেইন নাম এবং আইপি দুটো দিয়েই ওয়েবসাইটে যাওয়া যাবে। কিন্তু এটা কি সম্ভব এত এত ওয়েবসাইটের নাম সংখ্যা দিয়ে মনে রাখা? এটা অসম্ভব। তাই এ প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্যই ডোমেইন নেইম ব্যবহার করা হয়।

আপনারা যদি একটা ওয়েবসাইট বানাতে চান তাহলে কিন্তু আপনাদেরকে ইন্টারনেটে একটি ডোমেইন কেনা লাগবেই । মনে করেন যে, আপনার একটি অফিসে আছে আর সেখানে যদি কেউ আসতে চায়, তাহলে কিন্তু তার আপনাদের অফিসের ঠিকানা জানা লাগবে , তা না হলে কিন্তু সে আপনাদের অফিসে আসতে পারবে না ।

ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রে এই ঠিকানাটাই হল ডোমেইন নেইম। আর এই ডোমেইন নামই আসলে আপনার ওয়েবসাইটকে অনন্য ভাবে আইডেন্টিফাই করে দিবে। বিশ্বের সকলেই আপনাদের ওয়েবসাইটটিকে চিনবে আর  একসেস করতে পারবে।

ডোমেইনের গঠন

প্রত্যেকটি ডোমেইন নেইমের ২টি অংশ রয়েছে। একটিতে নাম আর আরেকটিতে এক্সটেনশন থাকে। যেমন – www.noproblembd.com এখানে noproblembd হল ডোমেইন নাম আর  .com হল কিন্তু এক্সটেনশন। প্রতিটি অংশকে ডট (.) দ্বারা ভাগ করা হয়। এসব এক্সটেনশনগুলো ওয়েবসাইটের আর প্রতিষ্ঠানের ধরনের  উপরে নির্ভর করে সিলেক্ট করা হয়ে থাকে। .com সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আমি নিচে কয়েকটা ওয়েবসাইটের ধরন অনুযায়ী ডোমেইনের এক্সটেনশন এর উদাহরন দেওয়া হলো –

ডোমেইন এক্সটেন শন ধরণ
.com এটি সবথেকে বেশি ব্যবহার করা ডোমেইন এক্সটেনশন। সাধারনতভাবে এটি কমার্শিয়াল কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইটের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে
.net এটি এক বা একাধিক নেটওয়ার্ক কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
.org এটি অর্গানাইজেশন অথবা অলাভজনক সংগঠনের ওয়েবসাইটের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
.info এটা তথ্যভিত্তিক কিংবা  ব্যক্তিগত ওয়েব সাইটের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
.me এইটা সাধারনত ভাবে ব্যক্তিগত পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট বানানোর জন্যই সব থেকে বেশি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

ডোমেইনের প্রকারভেদ (Types of Domain)

ডোমেইন বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। নিম্নে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো –

ডোমেইনের প্রকারভেদ

1. LTD – Top level domain

LTD এর পূর্ণ রূপ হলো Top level domain. যেমন – . gov. দিন দিন এই টপ লেবেলের ডোমেইন নেইম বেড়েই চলছে। এটিকে SEO Friendly Domain ও বলা হয়। আপনি যদি কোন ওয়েবসাইট বা ব্লগ বানানোর কথা ভাবেন, তাহলে এই ধরণের ডোমেইন ব্যবহার করাটায় বেশি ভালো ও লাভজনক। নিম্নে কিছু টপ লেভেল ডোমেইনের উদাহরণ দেওয়া হলো –

টপ লেভেল ডোমেইন সার্ভিস
.com Commercial
.org Organization
.net Network
.edu Education
.gov Government
.info Information
.biz Business
.int International ইত্যাদি।

এ সকাল ডোমেইন যে কেউ কিনতে পারবে।

2. CcTLD – Country Code Top Level Domain

CcTLD এর পূর্ণ রূপ হলো – Country Code Top Level Domain. এটি দুই অক্ষর বিশিষ্ট দেশের নাম বা ভৌগোলিক অবস্থান বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন – www.dhakaboard.gov.bd এই অ্যাড্রেসটিতে .bd অংশটি দিয়ে বুঝানো হয়েছে ডোমেইনটি বাংলাদেশের।

Country Code Top Level Domain এর কয়েকটি উদাহরণ হলো –

Country Code Country Name
.bd
.au অস্ট্রেলিয়া
.in ইন্ডিয়া
.br ব্রাজিল
.ca কানাডা
.ru রাশিয়া
.ir ইরান
.tr তুরস্ক
.cn চীন
.fi ফিনল্যান্ড
.fr ফ্রান্স
.hk হংকং
.us United States
.ro

Top Level Domain কোথা থেকে কিনব?

আপনি যদি ছোট খাটো ব্যবসা বা পার্সোনাল ব্যবহারের জন্য কোন ব্লগ বা ওয়েবসাইট বানানোর কথা ভেবে থাকেন তাহলে অব্যশ্যই টপ লেবেল ডোমেইন কিনা প্রয়োজন। এসব ডোমেইন নেইমের রেঞ্জ হলো ৫০০-১৫০০ টাকার ভিতরে পেয়ে যাবেন। প্রতিটি ডোমেইনকে আবার বছরে বছরে রিনিউ করা জরুরি। তবে আপনি চায়লে কেনার সময় ২,৩,৪,৫ বছরের জন্যও কিনতে পারবেন।

ডোমেইন কিনার জন্য আপনার ইন্টারনেটে থাকা “Domain Name Service Provider” এর ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। এতে আপনার একটি একাউন্ট বানিয়ে কিনতে পারবেন।

ইন্টারনেটে সেরা কিছু Domain Service Provider হলো –

  • www.bigrock.in/domain-registration
  • https://www.namecheap.com
  • https://godaddy.com/domain
  • https://www.crazydomains.in
  • https://www.hostgator.in/

আপনি যদি ডোমেইন কিনতে চান উপরের যেকোনো সাইটে গিয়ে কিনতে পারবেন।

ডোমেইন নেইম সিলেক্ট করার পূর্বে যে সকল বিষয়ের খেয়াল রাখা উচিত

  • এমন নাম নির্বাচন করা উচিত যাতে সকলেই মনে রাখতে পারে।
  • সংক্ষিপ্ত, শুনতে সুন্দর এবং সহজ নাম রাখা।
  • ইউনিক হতে হবে।
  • ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তুর সাথে মিল রেখে নাম সিলেক্ট করা।
  • বড় কোন কোম্পানির সাথে মিল রেখে রাখা যাবে না। এ থেকে শতগজ দূরে থাকবেন। মিল রেখে রাখলে রেঙ্কিং এ সমস্যা হয়।
  • টপ লেবেল ডোমেইন কিনার চেষ্টা করবেন।
  • চেষ্টা করবেন কোন ধরণের special character /hypen/number না দিতে ।
  • আপনার পছন্দের ডোমেইন খালি আছে কিনা দেখে নিবেন।

কিভাবে একটি ডোমেইন কিনতে হয় ? (How to buy a domain)

ডোমেইন কিনা অনেক সহজ। আপনি কম্পিউটার বা মোবাইল দুটো ব্যবহার করেই কিনতে পারবেন। দুটো ক্ষেত্রেই একই নিয়ম। চলুন তাহলে নিয়মগুলো জেনে নেই –

Step: 01

সবার প্রথমে আপনাকে উপরে দেওয়া Domain Name Service Provider বা ডোমেইন কেনার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। সব ওয়েবসাইট থেকেই ডোমেইন কিনার নিয়ম একই।

আপনি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট Godaddy থেকে কিনতে পারেন। ডোমেইন কিনার জন্য এটি একটি নামকরা ওয়েবসাইট। এখান থেকে প্রায় ৭০% লোকেরা ডোমেইন কিনে থাকে।

Step: 02

Godaddy ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর, হোমপেইজে আপনারা একটি বাক্স (box) দেখতে পাবেন। সেখানে Find your perfect domain লিখা থাকবে। এবার এ বাক্সে আপনার ইচ্ছে মত নাম লিখে সার্চ করুন।

Step: 03

সার্চ বাটনে ক্লিক করার পর আপনার সার্চ করা ডোমেইনটি যদি থাকে, তাহলে পরবর্তী পেইজে আপনি সেটা দেখতে পাবেন। এবার আপনি যদি ডোমেইনটি কিনতে চান, তাহলে Add to card অপশনে ক্লিক করতে হবে।

Step: 04

ডোমেইনটি কার্ডে এড করার পর আপনাকে নিজের একটি একাউন্ট বানাতে হবে। একাউন্ট তৈরি করতে বামদিকে থাকা Create an account অপশনে গিয়ে আপনাকে আপনার E-mail ID, User Name এবং Password দিয়ে Create Account এ ক্লিক করতে হবে।

Step: 05

একাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে আপনাকে পেমেন্ট পেইজ থেকে আপনার ইচ্ছেমত পেমেন্ট অপশন ব্যবহার করতে পারবেন। পেমেন্ট করার জন্য আপনাকে Net banking, Debit card, Mobile wallet, UPI এগুলোর মাঝখান থেকে অপশন বেছে নিতে হবে। এবার পেমেন্ট করলেই হয়ে গেল।

ব্যাস এভাবেই আপনারা আপনার মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার থেকে খুব সহজেই ডোমেইনটি কিনতে পারবেন।

ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের সময়ে যে সকল বিষয়ের উপরে খেয়াল রাখা উচিত  

১। যে কোম্পানি হতে আপনারা ডোমেইন কিনবেন তাদের সঙ্গে আপনারা ডোমেইনের প্রাইজ নিয়ে ভাল ভাবে কথা বলে নিবেন।

২। আর তারপরে আপনাদেরকে তাদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া লাগবে যে বছরের রিনিউ চার্জের পরিমান কত টাকা নেয়। অনেক প্রোভাইডার আছে যারা প্রথম বছরে কম দামে অফার করে থাকে আর  তারপরে পরের বছরে  যখন রিনিউ করা লাগে তখন দেখা যায় যে , তারা বেশি টাকা দাবি করে বা বেশি টাকা দিয়ে রিনিউ করা লাগে তাই আপনারা এই বিষয়টা  সম্পর্কে আগে থেকেই তাদের কাছ থেকে জেনে নিবেন।

৩। সম্পূর্ণ কন্ট্রোল প্যানেল বুঝে নিতে হবে EPP কোড সহ যাতে পরে কোন সমস্যা হয়ে গেলে আপনারা ডোমেইন ট্রাস্ফার করো অন্য প্রোভাইডারের কাছে যেতে পারেন ও রিনিউ করতে পারেন।

ডোমেইন ম্যানেজমেন্টের বিষয়

প্রথম প্রথম ডোমেইনের কন্ট্রোল প্যানেল দেখলে মনে হতে পারে ডোমেইন ম্যানেজ করা অনেক কঠিন। কিন্তু বাস্তবে ততটা কঠিন নয়। এটি আপনি সহজেই ম্যানেজ করতে পারবেন। ডোমেইন কন্ট্রোল প্যানেলে অনেক কিছু দেওয়া থাকে। এর মাঝে আপনাকে মূল মূল বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে হবে। নিম্নে তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-

Contact Details : এই শাখায় ডোমেইনটি কার নামে কেনা বা এটি রেজিস্টেশনে কোন ইমেইল ব্যবহার করা হয়েছে এসব দেখতে পাবেন। আপনাকে যদি পুরো কোন্ট্রোল প্যানেল দেওয়া হয় তাহলে আপনি চাইলে সব ডিটেইলস পরিবর্তন করতে পারবেন।

Privacy Protection: আপনার কাছে সম্ভব হলে এই প্রাইভেসি প্রোটেকশন এনাবেল করে রাখবেন। এটি করতে হলে আপনাকে বছরে ২-৪ ডলার পে করা লাগতে পারে। এটি করার কারণ হলো অনেক সময় দেখা যায় whois থেকে ডোমেইনের মালিকের ইমেইল এবং ফোন নাম্বার নিয়ে স্পামিং করা হয়ে থাকে। তাই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

Name Server: ডোমেইন কেনার পর ডোমেনের কন্ট্রোল প্যানেলে আপনার হোস্টিং এর নেম সার্ভার বসিয়ে দিবেন, যেটি আপনাকে আপনার হোস্টিং প্রোভাইডার দিয়েছে। নেম সার্ভার দেখতে অনেকটা নিচের মত হয়ে থাকে –

ns2.w3techniaues.com

Domain Secret: এটি একটি সেনসিটিভ বিষয়। আপনার ডোমেইন প্যানেলে ডোমেন সিক্রেট অপশনে আপনি একটা কোড পাবেন। যাকে EPP Code বলা হয়ে থাকে। এই কোডের মাধ্যমে আপনি যেকোনো সময় আপনার ডোমেইন অন্য প্রোভাইডারে ট্রান্সফার করতে পারবেন। যেমন – Name Cheap ট্রান্সফার করে W3 Techniques এ নিয়ে আসা।

Theft Protection: ডোমেইন নেইম রেজিস্ট্রেশন করার পর পরই থেফ্ট প্রোটেকশন অন করে রাখা উচিত। কারণ এতে আপনার ডোমেইনের EPP Code অন্য কারো কাছে থাকলেও সে আপনার ডোমেইন ট্রান্সফার করে নিতে পারবে না।

এগুলো ছাড়াও ডোমেইন ম্যানেজমেন্টের আরও অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। যেগুলো সম্পর্কে আপনারা জেনে নিবেন৷

আমাদের শেষ কথা

তো বন্ধুরা আশা করি, আজকের এই আর্টিকেলে ডোমেইন কি, ডোমেইন কিভাবে কিনবেন, এর ম্যানেজমেন্টের বিষয় ইত্যাদি নিয়ে লেখা পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

Rate this post