কোন ব্যাংকে ডিপিএস লাভ বেশি
কোন ব্যাংকে ডিপিএস লাভ বেশি। কোন ব্যাংকে কত মুনাফা দেয়। জীবন যাপনের জন্য বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অর্থ। যার যত অর্থ আছে তার জীবন তত সচ্ছল। যারা বর্তমান বিশ্ব এবং অর্থনৈতিক অবস্থা এর তথ্য রাখেন তারা নিশ্চিত ভাবে জানবেন বর্তমান বিশ্বে অর্থ কতটা প্রয়োজনীয়। আপনি হয়তো ভাবছেন আপনার আর্থিক নিরাপত্তার জন্য আপনারা এর একটি নির্দিষ্ট অংশ এখন থেকে সঞ্চয় করবেন। এবং সঞ্চয় এর কথা যখনই আসে তখনই আমরা ব্যাংক এর কথা ভাবি। অর্থ সঞ্চয় এর জন্য ব্যাংকের মতো নিরাপদ স্থান আর নেই। ব্যাংকে বর্তমানে শুধু টাকা সঞ্চয় হয় না সেই টাকার উপরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ দেওয়া হয়। আমাদের আজকের নিবন্ধে আমরা জানবো বাংলাদেশের সকল ব্যাংক এবং তাদের দেওয়া সুদ এর পরিমাণ। তাই দেরি না করে আসুন দেখে নেই আমাদের আজকের নিবন্ধটি।
বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে ডিপিএস লাভ বেশি
বেশিরভাগ মানুষ এই সহজলভ্য ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ব্যাংকে টাকা জমানো টাই সবচেয়ে ভালো মনে করে এবং তাদের কাছে ব্যাংকে টাকা রাখা অনেক ভরসার। কিন্তু সব ব্যাংকে একই ধরনের ভালো সুবিধা দেয় না। তাই নিশ্চিত ভাবে আমরা বলতে পারি আপনার কষ্টার্জিত টাকা কোন ব্যাংকে রাখলে বেশি সুদ পাবেন এই বিষয়টি আপনার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা আপনাদের জন্য আমাদের আজকের এই নিবন্ধে নিয়ে এসেছি বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে ডিপিএস লাভ বেশি ।
কোন ব্যাংকের সুদ সব থেকে বেশি দেয় বা কোন ব্যাংকে ডিপিএস লাভ বেশি
আপনারা সবাই ডিপিএস অর্থাৎ ডিপোজিট পেনশন স্কিম সম্পর্কে জেনে থাকবেন। যারা জানেন না তাদের জন্য আমি বলে দিচ্ছি। এটি হলো প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা ব্যাংকে জমা রাখা বা সঞ্চয় করা। এই ডিপিএস কে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়। বাংলাদেশে যে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো রয়েছে সেখানে ডিপিএস এর বিপরীতে গ্রাহককে মাসিক, ত্রৈমাসিক, ছয় মাসিক ও বাৎসরিক সুদ দিয়ে থাকে তারা। এছাড়া তাদের কাছে সর্বনিম্ন তিন মাস থেকে তিন বছর অথবা তারও বেশি সময়ের জন্য ব্যাংকে টাকা সঞ্চয় করার সুযোগ দেওয়া আছে। আপনার এই সঞ্চয় এর টাকার বিপরীতে ব্যাংক যে সুদ দেয় তার নাম ফিক্সট ডিপোজিট রেট বা স্থায়ী আমানতের সুদের হার, যাকে সংক্ষেপে এফডিআর বলে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে রয়েছে ৫৯ টি ব্যাংক এবং তাদের প্রত্যেকের সুদের হার ভিন্ন ভিন্ন। ব্যাংক গুলো বিভিন্ন মেয়াদে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ পর্যন্ত এফডিআর সুদ দিয়ে থাকে।
কোন ব্যাংকে কত সুদ দেয়
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে ভাবলে আমাদের প্রথম যে কথাটি মাথায় আসে সেটা হচ্ছে অর্থ সঞ্চয়। আরে অর্থ সঞ্চয় কথা আসলে চলে আসে ব্যাংকের কথা। এবং যে কোন ব্যক্তি ব্যাংকে টাকা সঞ্চয় এর আগে জানতে চাই কোন ব্যাংকে কত সুদ দেয়। তাই আপনাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি আমাদের আজকের এই নিবন্ধটি যেটাতে আপনি পাবেন বাংলাদেশের ব্যাংক সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য। কোন ব্যাংকে কত সুদ দেয় এ সম্পর্কিত সকল তথ্য আমাদের আজকের এই নিবন্ধে দেওয়া হচ্ছে।
সুদ সব থেকে বেশি কোন ব্যাংকে বা কোন ব্যাংকে ডিপিএস লাভ বেশি
আপনি কি জানেন আপনার অর্থ কোন ব্যাংকে সবচেয়ে সুরক্ষিত অথবা কোন ব্যাংকে অর্থ সঞ্চয় করলে আপনি সুদ সবথেকে বেশি পাবেন? যদি না জেনে থাকেন তাহলে চিন্তা করবেন না, আপনাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি সুদ সবচেয়ে বেশি কোন ব্যাংকে এই সম্পর্কিত সকল তথ্য। আশা করছি আমাদের আজকের নিবন্ধটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে কত সুদ দেওয়া হয়। এবং আপনার কাছে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে আপনি আপনার অর্থ কোন ব্যাংকে সঞ্চয় করবেন।
বাংলাদেশের ব্যাংক ও সুদের পরিমাণ
বাংলাদেশের ব্যাংক ও সুদের পরিমাণ নিয়ে আমাদের আজকের এই নিবন্ধটি। আপনার যাতে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয় যে আপনি আপনার অর্থ কোন ব্যাংকে সঞ্চয় করতে চান সেই চিন্তা করেই আমাদের আজকের এই নিবন্ধটি লেখা হয়েছে। দেরি না করে আসুন দেখে নিই বাংলাদেশের ব্যাংক ও সুদের পরিমাণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট নয়টি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক রয়েছে। এই বেঙ্গলের মধ্যে রয়েছে ৩ টি বিশেষায়িত ব্যাংক। বাংলাদেশের যে সকল সরকারি ব্যাংকগুলোর রয়েছে সেগুলোতে এফডিআরএম ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে গ্রাহককে সাড়ে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ অফার করা হয়ে থাকে।
সাধারণ ডিপোজিটে ৩.৫০ থেকে ৪ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে এই সরকারি ব্যাংকগুলো। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমাদের জানামতে সবচেয়ে বেশি সুদ দিয়ে থাকে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক রাকাব। ৩ থেকে ৬ মাসের কম সময়ের সুদ ৫.৫০ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ। ৬ মাস থেকে ১ বছরের কম সময়ের জন্য ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ । ১ বছর থেকে ৩ বছর মেয়াদী সময় শুধু ৫.৭৫ থেকে ৭ শতাংশ । ৩ বছরের বেশি সময়ের ডিপোজিট এর জন্য ৬ থেকে ৯ শতাংশ সুদ দেওয়া হয়। এছাড়া সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বিডিবিএল, পিকেবি ও বিকেবির সুদ ৫.২৫ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত সঞ্চয় এর উপর মুনাফা দিচ্ছে।
বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংক
বাংলাদেশ বেসরকারি যে সকল ব্যাংক আছে সেই ব্যাংকগুলোতে সাধারণ সঞ্চয় ২ থেকে ৪ শতাংশ সুদ দেয়া হয়। আর যে সকল সঞ্চয় মেয়াদ এর উপর নির্ভর করে সেগুলোতে ৪ থেকে ৬ শতাংশ সুদ দেওয়া হয়। তবে কিছু কিছু ব্যাংক রয়েছে যারা মেয়াদি আমানতের সর্বোচ্চ ৮ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ সুদ অফার করে থাকে। এই তালিকায় সবার ওপরে আছে চতুর্থ প্রজন্মের নতুন ব্যাংকগুলো যেমন মিডল্যান্ড, মেঘনা, পদ্মা ব্যাংক, ইউনিয়ন, মধুমতি, এসবিএসি প্রবাসী উদ্যোক্তাদের এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও এনআরবি গ্লোবাল।
বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এর মধ্যে সবথেকে বেশি পরিমাণে রাখা দিচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা (সাবেক ফারমার্স) ব্যাংকটি। পদ্মা ব্যাংকে ৩ থেকে ৬ মাস এরও কম সময়ের সুদ ৭ শতাংশ। ৬ মাস থেকে ১ বছরের কম সবার জন্য সুদ দেওয়া হয় সাড়ে ৭ শতাংশ। ১ বছর তার বেশি সময় এর জন্য সুদ দেওয়া হয় ৮ শতাংশ। ৩ মাস থেকে ৩ বছর বা তার থেকে বেশি সময়ের জন্য সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক অর্থাৎ এসএবিসি সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিয়ে থাকে। এবি ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আইএফআইসি, আইসিবি, মার্কেনটাইল, প্রিমিয়ার, উত্তরা ও ন্যাশনাল সহ বেশকিছু ব্যাংক রয়েছে যারা মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক :
ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ী যারা পূর্ণাঙ্গ ইসলামে বিশ্বাসী তাদের জন্য ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফা, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, শাহ্জালাল, এক্সিম, ইউনিয়ন, আইসিবি ইসলামিক এনআরবি গ্লোবাল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী পরিচালিত এই ব্যাংকগুলো গ্রাহককে ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বিভিন্ন মেয়াদী সঞ্চয় এর ওপর সুদ দিচ্ছে সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ। কিন্তু আল-আরাফা ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৫ শতাংশের নিচে সুদ দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের বিদেশী ব্যাংক ।
বাংলাদেশে সঞ্চয় এর উপরে বেশি সুদ দেয় না বিদেশী ব্যাংক গুলি। এ দেশের বেশিরভাগ বিদেশী ব্যাংক মেয়াদি আমানতে ২ থেকে ৩ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে। তিন বছর থেকে তার বেশি সময়ের জন্য সবচেয়ে বেশি সুদ দিয়ে থাকে ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তান। তাদের মুনাফার পরিমাণ ৯ শতাংশ। সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে হাবিব ব্যাংক। এবং সবচেয়ে কম সুদ দিয়ে থাকে সিটি এনএ ব্যাংক। এই ব্যাংকের সঞ্চয় এর উপর মুনাফার হার এক শতাংশের নিচে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এসবিআই মেয়াদি আমানতের ওপর এ ৬ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে। এছাড়া আর যেসব ব্যাংক আছে যেমন এফডিআরএ আল ফালাহ, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড, এইচএসবিসি, ওরি এবং কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলভের মুনাফার হার ১.২০ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কোন ব্যাংকে টাকা রাখলে লাভ বেশি
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে আপনি কোন ব্যাংক টাকা রাখলে বা ডিপিএস এ করলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে। আবার অনেকে আসেন ঘরে টাকা রাখতে চাচ্ছেন না আপনি চাইছেন ব্যাংকে সেই টাকা জমা রাখতে। কিন্তুু আপনি ভেবে পাচ্ছেন না যে কোন ব্যাংকে আপনি টাকা রাখবেন। আর আজকে এই বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করবো যে কোন ব্যাংকে বেশি টাকা লাভ পাওয়া যায়।
এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড
এক্সিম ব্যাংক ডিপিএস এর লাভের হার নির্ধারণ করা হয়েছে মেয়াদের উপর ভিত্তি করে ৫.৬০% ও ৫.৭০% হার। এই ব্যাংকের মেয়াদ কাল হচ্ছে ৩ বছর, ৫ বছর, ৮ বছর, ১০ বছর, ১২ বছর। এক্সিম ব্যাংকের মাসিক কিস্তি সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা রাখতে পারবেন। উপরে যে সব ব্যাংকের কথা বলা হয়েছে আপনি ইচ্ছে করলে বা কারো কাছে পরামর্শ করে সেই ব্যাংকে টাকা জমাতে পারেন এটা আপনার নিজের ব্যপার।তবে মনে রাখবেন যে কোনো কাজ করার আগে ভেবে তারপর সেই কাজ করতে যাবেন। আবার আমাদের দেশে যে অবস্থা তাতে আমাদের উচিত বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে শতকরা সুদের হার বা মুনাফার আশা করতে পারি। কারন ভবিষ্যতে আপনার সন্তানদের ও পরিবারের উন্নয়নে কাজে টাকা জমানো বিরাট ভুমিকা রাখে। আপনে ইচ্ছে করলে সন্তান ও পরিবারের কথা মাথায় রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারেন। এতে কি হবে আপনার সন্তানদের সুশিক্ষিত ও পরিবারে চাহিদা পূরণ করা আপনার পক্ষে সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
শেষকথাঃ কোন ব্যাংকে ডিপিএস লাভ বেশি
আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল কোন ব্যাংকে ডিপিএস লাভ বেশি। সকলের প্রতি রিকোয়েস্ট থাকবে বেশি লাভ খোঁজে বরং কোন একটি ইসলামী ব্যাংকে ডিপিএস করার জন্য। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ইসলামী ব্যাংক পদ্ধতি সবচেয়ে স্বচ্ছ এবং নিরাপদ। তাই কোন ব্যাংকে ডিপিএস লাভ বেশি সেটা না দেখে বরং কোন ব্যাংকের স্বচ্ছতা বেশি এবং পরবর্তীতে বা পরকালে ঝামেলা করার সম্ভাবনা নেই এমন ব্যাংকের লেনদেন করা ভালো। যদি কোন ব্যাংকে ডিপিএস লাভ বেশি এ সম্পর্কে আরও জানার প্রয়োজন হয় কমেন্ট করবেন ।