Islamic

সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ সহ

1 min read

সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ সহ

মানব জাতি তাদের জীবনে নানা রকম ভুল পাপাচারে লিপ্ত হয় থাকে মহান আল্লাহতায়ালা এসব পাপ ও ভুলগুলো ক্ষমা করার জন্য মানব জাতিকে বিভিন্ন দোয়া ক্ষমা প্রার্থনার নিয়ম শিখিয়ে দিয়েছেন।  আল্লাহু তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সবচেয়ে উত্তম একটি দোয়া সাইয়েদুল ইস্তেগফার। এই দোয়ার ফজিলত এত বেশি যে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য এই দোয়াটাই সর্বোত্তম একটি দোয়া।সাইয়্যেদ অর্থ নেতা, সরদার বা শ্রেষ্ঠ৷ ইস্তেগফার অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা ৷ দুটো মিলে অর্থ দাঁড়ায় ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দুআ ৷সাইয়েদুল ইস্তেগফার দোয়াটি শুধু ক্ষমা প্রার্থনার জন্য  অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা এই দোয়াটি পড়ে থাকি । এবং ইস্তেগফার করার মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদেরকে  অনেক  আকর্ষণীয় পুরস্কার দান করবেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দোয়াটি পাঠ করবে, দিনে পাঠ  করলে  রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করলে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।

সাইয়েদুল ইস্তেগফার আরবি উচ্চারণ:

।اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ-

সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ:

আল্লা-হুম্মা আনতা রাব্বী, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদু, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া আ‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ লাকা বিযাম্বী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

সাইয়েদুল ইস্তেগফার অর্থ:

‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’। (১০৫)(১০৫) . বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।

সাইয়্যেদুল ইস্তেগফারের ফজিলতঃ

রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করছেন- ” যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দোয়া পাঠ করবে,  দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতি হবে ”

অর্থাৎ ফজরের সালাত এর পর একবার এবং মাগরিবের সালাত এর পর একবার সাইয়েদুল ইস্তেগফার পাঠ করলে সারা দিনে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে থাকে তবে সে জান্নাতের লাভ করবে।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস থেকে বোঝা যায় সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পাঠের ফজিলত কত বেশি।

তাছাড়া ইস্তেগফারকারীকে আল্লাহ পাক অসংখ্য পুরস্কার দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন ।যেমন

আল্লাহপাক আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। অনাবৃষ্টি সমস্যা দূর করে রহমতের বৃষ্টি নাযিল করবেন। যাদের সম্পদের অভাব  তা দূর করে দিবেন । অনেকেই সন্তানহীনতার সমস্যা আছে সম্পদ আছে কিন্তু সন্তান নেই আল্লাহ পাক সন্তানহীনতার সমস্যা দূর করে দিবেন আল্লাহ এমন সন্তান দান করবে যা তাকে শক্তিশালী করে । রিজিক বৃদ্ধি করে দিবেন ।

কোরান ও হাদীস থেকে আমরা এসতেগফারের অসংখ্যা ফযিলত ও উপকারিতা লক্ষ্য করি তার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফযিলত হলঃ

  • ১) এসতেগফার করা নবীদের সুন্নত।
  • ২) এসতেগফার আল্লাহর কাছে প্রিয় একটি আমল।
  • ৩) এসতেগফার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল…
  • ৪) এসতেগফার দ্বারা গুনাহসমুহ মাফ হয়।
  • ৫) এসতেগফার দ্বারা ব্যবসায় লাভ হয়।
  • ৬) এসতেগফার দ্বারা মযাদা বৃদ্ধি পায়।
  • ৭) এসতেগফার দ্বারা আল্লাহর রহমত নাযিল হয়।

সহিহ নিয়তে এসতেগফার পাঠ করলে আল্লাহ করুনা ও দয়া করবেন দলিল কুরান আযিমুশশান সুরা নিসার ১১০ নং আয়াত

وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا

যে গোনাহ, করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়। [ সুরা নিসা ৪:১১০ ]

  • ৮) এসতেগফার দ্বারা সন্তান সন্ততি যাদের হয়না তাদের সন্তান হয়।
  • ৯) এসতেগফার খড়া ও অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • ১০) এসতেগফার দ্বারা বাগানে ফসল ভাল হয়।
  • ১১) এসতেগফার দ্বারা কলবের ময়লা পরিস্কার হয়।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, মোমিন ব্যক্তি যখন কোনো গোনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। তারপর সে যদি ফিরে আসে, গোনাহের ইচ্ছাকে মন থেকে বের করে দেয় এবং এস্তেগফার করে, তাহলে তার অন্তর পরিচ্ছন্ন করে দেয়া হয়। যদি আবার গোনাহ করে তাহলে এটি বাড়তে থাকে। অবশেষে গোনাহগুলোর কারণে তার অন্তর কালিমায় আচ্ছাদিত হয়ে যায়। বস্তুত এটিই  আলোচনা করে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে,

كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِم مَّا كَانُوا يَكْسِبُونَ

কখনও না, বরং তারা যা করে, তাই তাদের হৃদয় মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে। [ সুরা মুতাফফিফীন ৮৩:১৪ ]

  • ১২) এসতেগফার দ্বারা সকল সংকিনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • ১৩) এসতেগফার দ্বারা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • ১৪) এসতেগফার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা অকল্পনীয় স্থান থেকে রিযিকের ব্যবস্থা করে দেন।

জরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি এস্তেগফার করাকে সর্বদা গ্রহণ করে আল্লাহ তাকে সব সংকীর্ণতার মধ্যে উদ্ধারের পথ বের করে দেন, সব দুশ্চিন্তার ক্ষেত্রে মুক্তির পথ বের করে দেন এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন যা সে চিন্তাও করেনি।’ (আবু দাউদ ও আহমদ)।

  • ১৫) এসতেগফার দ্বারা সকল গুনাহসমুহ মাফ হয়ে যায়।

হজরত বিলাল ইবনে ইয়াসার ইবনে জায়েদ (রা.) (যিনি ছিলেন প্রিয় নবী (সা.) এর আজাদকৃত গোলাম) থেকে বর্ণিত, তিনি তার বাবা ও দাদা সূত্রে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি পড়ে ‘আসতাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইউল কাইউম ওয়া আতুবু ইলাইহি’ তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, এমনকি ধর্মযুদ্ধ থেকে পলায়নের গোনাহও ক্ষমা করে দেয়া হয়।” (তিরমিজি, মিশকাত)।

  • ১৬) এসতেগফারের দ্বারা আল্লাহর আযাব ও আসে না দলিল কোরানের সুরা আনফালের ৩৩ নং আয়াত

وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ

অথচ আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। তাছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের উপর আযাব দেবেন না। [ সুরা আনফাল ৮:৩৩ ]

  • ১৭) গুনাহ নামক মারাত্মক রোগের ঔষদ হল এসতেগফার।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, আমি কি তোমাদের জানাব না, তোমাদের রোগ কী এবং তার ওষুধ কী? তোমাদের রোগ হলো গোনাহ, আর ওষুধ হলো এস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। (বায়হাকি, আত-তারগিব)।

  • ১৮) এসতেগফার শয়তানের বিরুদ্ধে আল্লাহর পক্ষে একটি চ্যালেঞ্জ।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘ইবলিস বলেছিল, তোমার প্রতাপের শপথ, তোমার বান্দাদের দেহে যতক্ষণ প্রাণ থাকবে, ততক্ষণ আমি তাদের বিপথগামী করতে থাকব। জবাবে আল্লাহ তায়ালা বলেছিলেন, আমার প্রতাপ ও মহিমার শপথ, তারা যতক্ষণ ক্ষমা চাইতে থাকবে, আমি তাদের ততক্ষণ ক্ষমা করতে থাকব।’ (আহমদ, হাকেম)।

এছাড়াও এস্তেগফার পাঠের মাধ্যমে।

  • (১৯) হৃদয় মুকুরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয়।
  • (২০) নেক কাজ করতে মনে চায়।
  • (২১) গোনাহের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়।
  • (২২) হৃদয়-মন দারুণ প্রফুল্ল থাকে।
  • (২৩) ইবাদতে একাগ্রতা তৈরি হয়।
  • (২৪) বিপদাপদ থেকে আল্লাহ তায়ালা হেফাজত করেন।
  • (২৫) এসতেগফার করার পর আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়াও কবুল করেন। (সুবহানাল্লাহ)

সুতরাং আমাদের উচিত বেশি বেশি ইস্তেগফার করা এবং অন্যদেরকেও ইস্তেগফার করার উপদেশ দেওয়া।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x