Health

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

1 min read
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

বর্তমান বিশ্বে আপেল সিডার ভিনেগার একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া পানীয়ের নাম | অনেকদিন আগে থেকে মানুষ এটিকে রান্নাবান্না এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহার করে আসছে | আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন হ্রাস, রক্তে শর্করার হার নিয়ন্ত্রণ করা সহ অনেক রকম স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উপকারিতা পাওয়া যায় |

কিন্তু আধুনিক গবেষণার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আপেল সিডার ভিনেগার এর ব্যবহারের বিষয়ে কি বলেছেন ঠিক সে বিষয়টি জানার জন্য আজকে আমাদের এই আপেল সিডার ভিনেগার আর্টিকেল |

কিন্তু যারা এখনও আপেল সিডার ভিনেগার সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখেন না তাদেরকে প্রথমেই আপেল সিডার ভিনেগার সম্পর্কে জানতে হবে | অন্যান্য ভিনেগারের মতোই আপেল সাইডার ভিনেগার একপ্রকার ভিনেগার | এটি তৈরি হয় আপেল থেকে | আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, আপেল সিডার ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ার ফলে যে ভিনেগার অম্লজাতীয় তরল পদার্থ উৎপন্ন হয় সেটি হচ্ছে আপেল সিডার ভিনেগার |

আপেল সিডার ভিনেগার এর প্রকারভেদ

আপেল সিডার ভিনেগার বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে |

ফিল্টার করা আপেল সিডার ভিনেগার

ফিল্টার করা আপেল সিডার ভিনেগার খুবই পরিষ্কার হয় এবং এটি তুলনামূলকভাবে অনেক পাতলা হয়ে থাকে | একে একে পরিশুদ্ধ করা হয় বলে এতে পুষ্টিকর এনজাইমের পরিমাণ নেই বললেই চলে এবং দামও তুলনামূলক কিছুটা  কম |

পাস্তুরাইজেশন ছাড়া আপেল সিডার ভিনেগার

উচ্চ তাপ প্রয়োগ করে পাস্তুরাইজেশন এর ফলে যে আপেল সিডার ভিনেগার প্রস্তুত করা হয় তাতে কিছু  উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও এনজাইম মরে যায় | এর ফলে  আপেল সিডার ভিনেগার  তার কর্মদক্ষতা হারিয়ে ফেলে | পাস্তুরাইজেশন ছাড়া আপেল সিডার ভিনেগার এর মাদার ব্যাকটেরিয়াগুলো থাকার ফলে এর গুণগত মান অক্ষুন্ন থাকে |

অর্গানিক আপেল সিডার ভিনেগার

অজৈব পদার্থের উপস্থিতি না থাকায় এবং কোন রাসায়নিক উপাদান না থাকায় এটি বেশ গ্রহণযোগ্য |

এছাড়াও বিভিন্ন রকম আপেল সিডার ভিনেগার বাজারে পাওয়া যায় | বলে রাখা ভালো আপেল সিডার ভিনেগার তরল হিসেবে বোতলজাত করা ছাড়াও সাপ্লেমেন্ট এবং ক্যাপসুল আকারেও পাওয়া যায় |

এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে কোন আপেল সিডার ভিনেগার  স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশি উপকারী | এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বর্ণনা হচ্ছে অর্গানিক এবং পাস্তুরাইজেশন ছাড়া তৈরিকৃত আপেল  সিডারে মাদার ভিক্টোরিয়া এবং উপস্থিত থাকে এবং তারাই স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী |

আপেল সিডার  ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা

যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না | একটি প্রাচীন গ্রীক সভ্যতায় ক্ষতস্থান নিরাময় এর পাশাপাশি বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো |

ওজন নিয়ন্ত্রণ

আপেল সিডার ভিনেগার এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি আমাদের দীর্ঘ সময় পেট কে ভরা রাখে | এটি আসলে এক প্রকারের মেটাবলিজম বুস্ট করে যার ফলে আমাদের খাওয়ার  প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয় | এর ফলে আমরা দৈনিক যে মাত্রাতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করি সেটা কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং নিয়ন্ত্রণে থাকে| তাই যারা খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজের ওজন কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তারা আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করতে পারেন |

হরমোনের সামঞ্জস্যতা

যেসব মহিলাদের পিরিয়ডের এবং হরমোনের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে তারা আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন | তিন মাসের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে রাতের খাবার গ্রহণের পর 100 মিলি উষ্ণ পানির সাথে 15 মিলি আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেলে এতে হরমোনজনিত এবং পিরিওড জনিত অসামঞ্জস্যতা নিরাময় হয় |

হৃদরোগের সুস্থতায়

হৃদরোগের ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে | খাবারের আগমুহূর্তে আপেল সিডার ভিনেগার মিশ্রিত পানি পানের ফলে রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায় এবং এইচডিএল কোলেস্টেরল মাত্রা বৃদ্ধি পায় | এতে হৃদ রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকার পাওয়া যায় |

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

আমাদের দেহে কিডনি ranin নামক একটি হরমোন উৎপাদন করে যা আমাদের রক্তনালীকে প্রয়োজন অনুযায়ী সংকুচিত ও প্রসারিত করে | আপেল সিডার ভিনেগার হরমোন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমাদের রক্তনালীগুলোকে শিথিল করে | ফলশ্রুতিতে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে | তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আপেল সিডার ভিনেগার একটি উপকারী ভূমিকা পালন করতে পারে |

ক্যান্সার প্রতিরোধ

একটা গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যেকোনো ধরনের ভিনেগার ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম| এছাড়াও বিভিন্ন গবেষক আপেল সিডার ভিনেগার কে খাদ্যনালীর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করার কথা জানিয়েছেন |

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে

অনেকেই হয়তো জানেন না আপেল সিডার ভিনেগার টাইপ টু ডায়াবেটিস  নিয়ন্ত্রণে উত্তম একটি ভূমিকা পালন করে| টাইপ টুল ডায়াবেটিসের ইনসুলিন হরমোনের উৎপাদনের হার ব্যাহত করে এবং রক্তের শর্করার হার বৃদ্ধি করে | এই  অতিরিক্ত শর্করা  বিভিন্ন হৃদরোগের কারণ হিসাবে গণনা করা হয় | কিছু বিজ্ঞান গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে আপেল সিডার ভিনেগার দেহে ইনসুলিন এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং খাবারের পর শর্করার হার কমাতে সাহায্য করে |এক্ষেত্রে ঘুমানোর আগে 2 টেবিল-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার নির্দিষ্ট মাত্রার পানির সাথে মিশিয়ে খেলে তা 4 পার্সেন্ট পর্যন্ত সরকার হার কমায়| তবে শর্করা নিয়ন্ত্রণ কারি ওষুধের পাশাপাশি যেকোনো ধরনের ভিনেগার গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে |

ত্বকের সুস্থতা নিয়ন্ত্রণে

ইতিহাস থেকে জানা যায় হিপোক্রিটাস প্রায় 2 হাজার বছর আগে ত্বকের ক্ষত স্থান নিরাময়ের জন্য ভিনেগার ব্যবহার করতেন| আধুনিক সময়ে ত্বকের সুস্থতা নিয়ন্ত্রণের জন্য আপেল সিডার ভিনিগার একটি ভরসার নাম| আপেল সিডার বিদ্যমান প্রাকৃতিক anti-microbial উপাদানগুলো ত্বকের পিএইচ এর মান স্বাভাবিক রাখে| এটি ত্বকের আর্দ্রতা  নিয়ন্ত্রনে রাখে| গোসলের পানিতে অনেকেই আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে থাকেন | আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার| অনেকেই এবং ক্লিনজার আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে থাকেন|

চুলের যত্নে

ডার্মাটোলজিস্ট দের মতে আপেল সিডার ভিনেগার মাথার ত্বকে ফাঙ্গাসের সংক্রামক রোগ করে| এছাড়াও সৌন্দর্য এবং সুগঠিত চুলের জন্য পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন | উচ্চ সংবেদনশিল ত্বকের অধিকারীদের এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে |

মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে

1 কাপ পানিতে 1 টেবিল-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে ব্যবহার করলে মাড়ির সুস্থতা বজায় থাকে দাঁত ঝকঝকে হয় একই সাথে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় |

রান্নাবান্নার কাজ

যে কোন শস্য সালাত ইত্যাদি তৈরিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার রান্নার স্বাদ বাড়ায়| তাই আজকে অনেক স্বাস্থ্য সচেতন গৃহিণী তাদের রান্নাবান্না আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে থাকেন| রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি পুষ্টিমান অটুট রাখে|

আমরা যদি একসাথে আপেল সিডার ভিনেগার কল্পনা করি তাহলে এরকম হবে|

 

 

  1.   আপেল সিডার ভিনেগার ব্লাড সুগার কমায়।
  2.  কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে ও হজমশক্তি বাড়ায়।
  3.  নিয়মিত ভিনেগার গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে ও হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে।
  4. ত্বকের পি এইচের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও ঘামের দুর্গন্ধ দূর করে।
  5. পা ব্যথা, পেট খারাপ, গলাব্যথা, সাইনাসের সমস্যা সারাতে ভালো কাজ করে আপে
  6. রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে;
  7. ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে।
  8. তৃপ্তি বৃদ্ধি করে
  9. পেটের মেদ কমায়;
  10. রক্তচাপ কমায় এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে;
  11. ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি প্রতিরোধ করে ও হ্রাস করে এবং ক্যান্সার কোষগুলির বৃদ্ধি ধীর করে দেয়।

 

সতর্কতা

আপেল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। খেতে হবে নিয়ম মেনে পরিমাণমতো। আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার ক্ষেত্রে খাবার একঘন্টা অথবা আধাঘন্টা পরে খেতে হবে|অনেকে সকালে উঠেই খালি পেটে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খান ওজন কমানোর জন্য। কিন্তু তারপর বেশিক্ষণ অভুক্ত থাকা যাবে না। এটি খেতে হবে ঠিক খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট  আগে । তাহলে হজমশক্তিবাড়ার সাথে সাথে শরীরও ভালো থাকবে।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x