রোজা

রমজানের মাসআলা সমূহ: রোজার ১০০টি+ মাসআলা-মাসায়েল

1 min read

রমজানের মাসআলা সমূহ: রোজার ১০০টি মাসআলা-মাসায়েল এবং প্রয়োজনীয় গুরুত্যপূর্ণ প্রশ্নোত্তর জেনে সমূহ নিন-

  1. প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক বালেগ মুসলিমের উপর রমযানের রোযা ফরয। (সূরা বাকারা : ১৮৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭২)
  1. শাবানের ২৯ তারিখ দিবাগত সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে পরদিন থেকে রোযা রাখতে হবে। নতুবা শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করার পর রোযা রাখা শুরু করবে। (সহীহ মুসলিম ১/৩৪৭)
  1. আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে রোযা শুরুর জন্য এমন একজন ব্যক্তির চাঁদ দেখাই যথেষ্ট হবে, যার দ্বীনদার হওয়া প্রমাণিত কিংবা অন্তত বাহ্যিকভাবে দ্বীনদার। (মুসতাদরাকে হাকিম ১/৪২৪; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮৫)
  1. আকাশ পরিষ্কার থাকলে একজনের খবর যথেষ্ট নয়; বরং এত লোকের খবর প্রয়োজন, যার দ্বারা প্রবল বিশ্বাস জন্মে যে, চাঁদ দেখা গেছে। কেননা, যে বিষয়ে অনেকের আগ্রহ ও সংশ্লিষ্টতা থাকে তাতে দু’ একজনের খবরের উপর নির্ভর করা যায় না। (রদ্দুল মুহতার ৩/৩৮৮)
  1. কোনো ব্যক্তি একাকী চাঁদ দেখেছে, কিন্তু তার সাক্ষ্য গৃহিত হয়নি, এক্ষেত্রে তার জন্য ব্যক্তিগতভাবে রোযা রাখা উত্তম, জরুরি নয়। এমন ব্যক্তির জন্য রোযা রাখা জরুরি না হলেও উত্তম হল রোযা রাখা। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২১)
  1. শাবান মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখে রোযা রাখবে না; না রমযানের নিয়তে না নফলের নিয়তে। অবশ্য যে পূর্ব থেকেই কোনো নির্দিষ্ট দিবসে (যেমন, সোম ও মঙ্গলবার) নফল রোযা রেখে আসছে, আর ঘটনাক্রমে শাবানের ২৯ ও ৩০ তারিখে ঐ দিন পড়েছে তার জন্য এই তারিখেও নফল রোযা রাখা জায়েয। (সহীহ বুখারী হাদীস: ১৯১; বাদায়েউস সানায়ে ২/২১৭)

 

রমজানের নিয়ত বিষয়ক মাসআলা সমূহ

  1. রোযার নিয়ত করা ফরয। নিয়ত অর্থ সংকল্প। যেমন মনে মনে এ সংকল্প করবে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামী কালের রোযা রাখছি। মুখে বলা জরুরি নয়। (সহীহ বুখারী ১/২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৬)
  1. ফরয রোযার নিয়ত রাতেই করা উত্তম। (সুনানে আবু দাউদ ১/৩৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯)
  1. রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোযা হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী ২০০৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯)
  1. পুরো রমযানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়; বরং প্রত্যেক রোযার নিয়ত পৃথক পৃথকভাবে করতে হবে। কারণ প্রতিটি রোযা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। (সহীহ বুখারী ১/২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫)
  1. রাতে রোযার নিয়ত করলেও সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-মিলনের অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না। (সূরা বাকারা : ১৮৭)
  1. নিয়তের সময় শুরু হয় পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমন-মঙ্গলবারের রোযার নিয়ত সোমবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করা যায়। সোমবার সূর্যাস্তের পূর্বে মঙ্গলবারের রোযার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেননা, হাদীস শরীফে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে। (আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৩; রদ্দুলমুহতার ২/৩৭৭)

রমজানের সাহরী বিষয়ক মাসআলা সমূহ

  1. মাসআলা: সাহরী খাওয়া সুন্নত। পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়, এক ঢোক পানি পান করলেও সাহরীর সুন্নত আদায় হবে। (সহীহ মুসলিম ১/৩৫০)
  1. সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময় সাহরী খাওয়া মুস্তাহাব। তবে এত দেরি করা মাকরূহ যে, সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়। (আলমুজামুল আওসাত ২/৫২৬)
  1. দেরি না করে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা মুস্তাহাব।-সহীহ বুখারী ১/২৬৩
  1. মাগরিবের নামায পড়ার আগেই ইফতার করে নিবে, যেন সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করার সওয়াব পাওয়া যায়। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৬৯২)
  1. খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৬৯৪)

রোযা ভঙ্গ এবং কাযা ও কাফফারা বিষয়ক জরুরি মাসআলা সমূহ

  1. রমযানে রোযা রেখে দিনে স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে। (সহীহ বুখারী ৬৭০৯)
  1. রোযা রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। (সুনানে দারাকুতনী ২/১৯১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৬)
  1. বিড়ি-সিগারেট, হুক্কা পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। (রদ্দুল মুহতার ৩/৩৮৫)
  1. সুবহে সাদিক হয়ে গেছে জানা সত্ত্বেও আযান শোনা যায়নি বা এখনো ভালোভাবে আলো ছাড়ায়নি এ ধরনের ভিত্তিহীন অজুহাতে খানাপিনা করলে বা স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হলে কাযা-কাফফারা দু’টোই জরুরি হবে। (সূরা বাকারা : ১৮৭; মাআরিফুল কুরআন ১/৪৫৪-৪৫৫)

রমজানের কাফফারা আদায় বিষয়ক মাসয়ালা-মাসায়েল

  1. একটি রোযার জন্য দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখতে হবে। কোনো কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে পুনরায় নতুন করে রোযা রাখতে হবে। পেছনের রোযাগুলো কাফফারার রোযা হিসাবে ধর্তব্য হবে না। তবে মহিলাদের হায়েযের কারণে ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে অসুবিধা নেই। (আলমুহাল্লা ৪/৩৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭)

যেসব কারণে রোযা ভেঙ্গে যায় এবং শুধু কাযা করতে হয় সেই বিষয়ক মাসয়ালা-মাসায়েল

  1. অযু বা গোসলের সময় রোযার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তাই রোযা অবস্থায় অযু-গোসলের সময় নাকের নরম স্থানে পানি পৌঁছানো এবং গড়গড়াসহ কুলি করবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৩৬৩; ফাতাওয়া শামী ২/৪০১)
  1. যা সাধারণত আহারযোগ্য নয় বা কোনো উপকারে আসে না, তা খেলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। (সহীহ বুখারী ১/২৬০ (তা’লীক); রদ্দুল মুহতার ২/৪১০)
  1. দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে যদি তা থুথুর সাথে ভেতরে চলে যায় তবে রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশি হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৬)
  1. হস্তমৈথুনে বীর্যপাত হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর এটা যে ভয়াবহ গুনাহের কাজ তা বলাই বাহুল্য। (সহীহ বুখারী ১/২৫৪; ফাতাওয়া শামী ২/৩৯৯)
  1. মুখে বমি চলে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে। যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৫)
  1. রোযা অবস্থায় হায়েয বা নেফাস শুরু হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। পরে তা কাযা করতে হবে। (সহীহ বুখারী ১/৪৪; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া ১০০)
  1. পেটের এমন ক্ষতে ওষুধ লাগালে রোযা ভেঙ্গে যাবে, যা দিয়ে ওষুধ পেটের ভেতর চলে যায়। বিশেষ প্রয়োজনে এমন ক্ষতে ওষুধ লাগাতে হলে পরে সে রোযার কাযা করে নিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার ২/৪০২)
  1. নাকে ওষুধ বা পানি দিলে তা যদি গলার ভেতরে চলে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে।
  1. মলদ্বারের ভেতর ওষুধ বা পানি ইত্যাদি গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ২/৪০২)
  1. সুবহে সাদিকের পর সাহরীর সময় আছে ভেবে পানাহার বা স্ত্রীসঙ্গম করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তেমনি ইফতারির সময় হয়ে গেছে ভেবে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করে নিলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। (আলবাহরুর রায়েক ২/২৯১)
  2. রোযা রাখা অবস্থায় ভুলবশত পানাহার করে রোযা নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কাযা করা জরুরি হবে।
  1. অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়ার কারণে রোযা নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে রোযা ভেঙ্গে ফেললে কাযা করতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৪৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৫০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১)

যেসব কারণে রোযা ভাঙে না সেই বিষয়ক মাসয়ালা-মাসায়েল

  1. কোনো রোযাদার রোযার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করলে তার রোযা নষ্ট হবে না। তবে রোযা স্মরণ হওয়া মাত্রই পানাহার ছেড়ে দিতে হবে। (সহীহ মুসলিম ১/২০২; আলবাহরুর রায়েক২/২৭১)
  1. চোখে ওষুধ-সুরমা ইত্যাদি লাগালে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। (সুনানে আবু দাউদ ১/৩২৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫)
  1. রাত্রে স্ত্রীসহবাস করলে বা স্বপ্নদোষ হলে সুবহে সাদিকের আগে গোসল করতে না পারলেও রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে কোনো ওযর ছাড়া, বিশেষত রোযার হালতে দীর্ঘ সময় অপবিত্র থাকা অনুচিত।
  1. বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে স্ত্রীকে চুমু খাওয়া জায়েয। তবে কামভাবের সাথে চুমু খাওয়া যাবে না। আর যুবকদের যেহেতু এমন আশঙ্কা থাকে তাই তাদের বেঁচে থাকা উচিত। (মুসনাদে আহমদ ২/১৮০, ২৫০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০০)
  1. অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (মুখ ভরে হলেও) রোযা ভাঙ্গবে না। তেমনি বমি মুখে এসে নিজে নিজে ভেতরে চলে গেলেও রোযা ভাঙ্গবে না। (জামে তিরমিযী হাদীস: ৭২০; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৪)
  1. শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোযা ভাঙ্গবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/৩১৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭)
  1. শুধু যৌন চিন্তার কারণে বীর্যপাত হলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে এ কথা বলাই বাহুল্য যে, সব ধরনের কুচিন্তা তো এমনিতেই গুনাহ আর রোযার হালতে তো তা আরো বড় অপরাধ। (রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৬)
  1. কামভাবের সাথে কোনো মহিলার দিকে তাকানোর ফলে কোনো ক্রিয়া-কর্ম ছাড়াই বীর্যপাত হলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে রোযা অবস্থায় স্ত্রীর দিকেও এমন দৃষ্টি দেওয়া অনুচিত। আর অপাত্রে কু-দৃষ্টি তো গুনাহ। যা রোযা অবস্থায় আরো ভয়াবহ। এতে ঐ ব্যক্তি রোযার ফযীলত ও বরকত থেকে মাহরূম হয়ে যায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/২৫৯; ফাতাওয়া শামী ২/৩৯৬)
  1. মশা-মাছি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটের ভেতর ঢুকে গেলেও রোযা ভাঙ্গবে না।
  1. অনুরূপ ধোঁয়া বা ধুলোবালি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা পেটের ভেতর ঢুকে গেলে রোযা ভাঙ্গবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/৩৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫)
  1. স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভাঙ্গবে না। (সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৪/২৬৪)
  1. চোখের দু’ এক ফোটা পানি মুখে চলে গেলে রোযার ক্ষতি হয় না। তবে তা যদি গলার ভেতর চলে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৯)
  1. সুস্থ অবস্থায় রোযার নিয়ত করার পর যদি অজ্ঞান বা অচেতন হয়ে যায় তাহলে রোযা নষ্ট হবে না। (সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৪/২৩৫;)

যাদের জন্য রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে সেই বিষয়ক মাসয়ালা-মাসায়েল

১. মুসাফির

  1. মুসাফিরের জন্য সফরের হালতে রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে। তবে অস্বাভাবিক কষ্ট না হলে রোযা রাখাই উত্তম। আর অস্বাভাবিক কষ্ট হলে রোযা রাখা মাকরূহ। এ অবস্থায় রোযা না রেখে পরে তা কাযা করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৩২; রদ্দুল মুহতার ২/৪২১)
  1. সফরের হালতে রোযা রাখা শুরু করলে তা আর ভাঙ্গা জায়েয নয়। কেউ ভেঙ্গে ফেললে গুনাহগার হবে। তবে কাফফারা আসবে না। শুধু কাযাই যথেষ্ট। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৩১)
  1. মুসাফির সফরের কারণে রোযা রাখেনি, কিন্তু দিন শেষ হওয়ার আগেই মুকীম হয়ে গেল। তাহলে দিনের অবশিষ্ট সময় রমযানের মর্যাদা রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। তবে পরবর্তী সময়ে এ রোযার কাযা অবশ্যই করতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/২২১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯১)
  1. রমযানের দিনে হায়েয-নেফাস থেকে পবিত্র হলে অবশিষ্ট দিন রমযানের মর্যাদা রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। তবে উক্ত ওযরে ছুটে যাওয়া রোযাগুলোর সাথে এ দিনের রোযাও কাযা করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/২২১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯১)

২. অসুস্থ ব্যক্তি

  1. রোযার কারণে যে রোগ বৃদ্ধি পায় বা রোগ-ভোগ দীর্ঘ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে সে রোগে রোযা ভাঙ্গার অবকাশ আছে। উল্লেখ্য, আশঙ্কা যদি সুস্পষ্ট হয় তাহলে তো কথা নেই। নতুবা একজন অভিজ্ঞ ও দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামতের প্রয়োজন হবে। (আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯)

৩. গর্ভবতী

  1. রোযা রাখার কারণে গর্ভবতী মহিলা নিজের কিংবা সন্তানের প্রাণহানী বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর প্রবল আশঙ্কা করলে তার জন্য রোযা ভঙ্গ করা জায়েয। পরে এ রোযা কাযা করে নিবে। (আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯)

৪. দুগ্ধদানকারিনী

  1. দুগ্ধদানকারিনী মা রোযা রাখলে যদি সন্তান দুধ না পায় আর ঐ সন্তান অন্য কোনো খাবারেও অভ্যস্ত না হয়, ফলে দুধ না পাওয়ার কারণে সন্তানের মৃত্যুর বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কা হয়, তাহলে তিনি রোযা ভাঙ্গতে পারবেন এবং পরে কাযা করে নিবেন। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, অর্থ: আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোযার হুকুম শিথিল করেছেন এবং আংশিক নামায কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোযার হুকুম শিথিল করেছেন। (জামে তিরমিযী ১/১৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯)

৫. দুর্বল বৃদ্ধ ব্যক্তি

  1. বার্ধক্যজনিত কারণে রোযা রাখতে সক্ষম না হলে রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে সে ফিদয়া দিবে। (সূরা বাকারা : ১৮৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬১)

রোযার ফিদয় বিষয়ক মাসয়ালা-মাসায়েল

  1. ফিদয়া হল প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে একজন গরীবকে দুবেলা খাবার খাওয়ানো অথবা পৌনে দু কেজি গমের মূল্য সদকা করা। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৫৮৫;)
  1. যে বৃদ্ধ বা অসুস্থ ব্যক্তির রোযা রাখার সামর্থ্য নেই এবং পরবর্তীতে কাযা করতে পারবে এমন সম্ভাবনাও নেই এমন ব্যক্তি রোযার পরিবর্তে ফিদয়া প্রদান করবে। (সূরা বাকারা : ১৮৪)
  1. যাদের জন্য রোযার পরিবর্তে ফিদয়া দেওয়ার অনুমতি রয়েছে তারা রমযানের শুরুতেই পুরো মাসের ফিদয়া দিয়ে দিতে পারবে। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭)
  1. উপরোক্ত দুই শ্রেণীর মানুষ ছাড়া (অর্থাৎ দুর্বল বৃদ্ধ ও এমন অসুস্থ ব্যক্তি যার ভবিষ্যতে রোযার শক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।) আরো যাদের জন্যে রোযা ভাঙ্গা জায়েয আছে, (যেমন-মুসাফির, গর্ভবতী ও শিশুকে স্তন্যদানকারিনী) তারা রোযা না রাখলে রোযার ফিদয়া দিবে না; বরং পরে কাযা করবে। আর ওযরের হালতে মৃত্যুবরণ করলে কাযা ও ফিদয়া কিছুই ওয়াজিব হবে না। অবশ্য ওযরের হালত শেষ হওয়ার পর, অর্থাৎ মুসাফির মুকীম হওয়ার পর, গর্ভবতী নারীর সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া ও ¯্রাব বন্ধ হওয়ার পর এবং স্তন্যদানকারিনী স্তন্যদান বন্ধ করার পর যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে ওযর শেষে যে কয়দিন সময় পেয়েছে সে কয়দিনের কাযা যিম্মায় আসবে। কাযা না করলে উক্ত দিনগুলির ফিদয়া প্রদানের অসিয়ত করে যেতে হবে। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৩-৪২৪; কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/২৫৫)
  1. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, ‘গর্ভবতী নারী ও শিশুকে স্তন্যদানকারিনীর জন্যে রমযানে রোযা না রাখার অবকাশ রয়েছে। তারা ফিদয়া আদায় করবে না; বরং রোযাগুলো কাযা করে নিবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭০৬৪)
  1. ছুটে যাওয়া রোযার কাযা সম্ভব না হলে মৃত্যুর পূর্বে ফিদয়া দেওয়ার অসিয়ত করে যাওয়া জরুরি। অসিয়ত না করে গেলে ওয়ারিশরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে ফিদয়া দেয় তবে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করবেন। তবে মৃতব্যক্তি অসিয়ত না করে গেলে সে ক্ষেত্রে মিরাসের ইজমালী সম্পদ থেকে ফিদয়া দেওয়া যাবে না। একান্ত দিতে চাইলে বালেগ ওয়ারিশগণ তাদের অংশ থেকে দিতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার ২/৪২৪-৪২৫)
  1. এক রোযার ফিদয়া একজন মিসকীনকে দেওয়া উত্তম। তবে একাধিক ব্যক্তিকে দিলেও ফিদয়া আদায় হয়ে যাবে। আর একাধিক ফিদয়া এক মিসকীনকে দেওয়া জায়েয।
  1. আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, ‘যে বৃদ্ধ রোযা রাখতে সক্ষম নন তিনি রোযা না রেখে প্রতি দিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে আধা সা’ (অর্থাৎ প্রায় পৌনে দুই কেজি) গম দিয়ে দেবেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৫৭৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭)
  1. ছাবেত বুনানী রাহ. বলেন, আনাস ইবনে মালেক রা. যখন বার্ধক্যের কারণে রোযা রাখতে সক্ষম ছিলেন না তখন তিনি রোযা না রেখে (ফিদয়া) খাবার দান করতেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযযাক, হাদীস : ৭৫৭০)
  1. ইকরিমা রাহ. বলেন, ‘‘আমার মা প্রচন্ড তৃষ্ণা-রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং রোযা রাখতে সক্ষম ছিলেন না। তাঁর সম্পর্কে আমি তাউস রাহ.কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘প্রতি দিনের পরিবর্তে মিসকীনকে এক মুদ (বর্তমান হিসাবে পৌনে দুই কেজি) পরিমাণ গম প্রদান করবে’।’’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৫৮১)
  1. যাদের জন্য রোযার পরিবর্তে ফিদইয়া দেওয়ার অনুমতি রয়েছে তারা রমযানের শুরুতেই পুরো মাসের ফিদয়া দিয়ে দিতে পারবে। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭)

রোযা মাকরূহ হওয়ার কারণসমূহ বিষয়ক মাসয়ালা-মাসায়েল

  1. রোযা অবস্থায় কুলি করার সময় গড়গড়া করা এবং নাকের নরম অংশ পর্যন্ত পানি পৌঁছানো মাকরূহ। (জামে তিরমিযী, হাদীস: ৭৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯)
  1. এমন কাজ করা মাকরূহ, যার দ্বারা রোযাদার নিতান্তই দুর্বল হয়ে পড়ে। যেমন শিঙ্গা লাগানো। (সুনানে তিরমিযী ৭৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০০)
  1. রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে বা ইনজেকশন ইত্যাদি দ্বারা রক্ত বের করলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যার দ্বারা রোযাদার খুব দুর্বল হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৪০; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫)
  1. রোযার হালতে গীবত করলে, গালি-গালাজ করলে, টিভি-সিনেমা ইত্যাদি দেখলে, গান-বাদ্য শ্রবণ করলে এবং যে কোনো বড় ধরনের গুনাহে লিপ্ত হলে রোযা মাকরূহ হয়ে যায়। আর এ কাজগুলো যে সর্বাবস্থায় হারাম, তা তো বলাই বাহুল্য। (সহীহ বুখারী হাদীস : ১৯০৪;)

যেসব কাজ রোযাদারের জন্য মাকরূহ নয় মাসয়ালা-মাসায়েল

  1. রোযার হালতে প্রয়োজনে জিহবা দ্বারা কোনো কিছুর স্বাদ নেওয়া বা প্রয়োজনে বাচ্চাদের জন্য খাদ্য চিবানো মাকরূহ নয়। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেন স্বাদ গলার ভেতরে চলে না যায়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৬)
  1. রোযাদারের জন্য সুরমা লাগানো বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মাকরূহ নয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮০)
  2. রোযা অবস্থায়ও মিসওয়াক করা সুন্নত। এমনকি কাঁচা ডাল দ্বারা মিসওয়াক করাও মাকরূহ নয়। (সহীহ বুখারী ১/২৫৯)

রোজার আধুনিক ৩০টি মাসআলা, আল্লামা মুফতি তাকি উসমানী

  • ১. ইনজেকশন (Injection): ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। (জাওয়াহিরুল ফতওয়া)
  • ২. ইনহেলার (Inhaler): শ্বাসকষ্ট দূর করার লক্ষ্যে তরল জাতীয় একটি ঔষধ স্প্রে করে মুখের ভিতর দিয়ে গলায় প্রবেশ করানো হয়, এভাবে মুখের ভিতর ইনহেলার স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভেঙ্গে যাবে। (ইমদাদুল ফতওয়া)
  • ৩. এনজিওগ্রাম (Angio Gram): হার্ট বøক হয়ে গেলে উরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রগের ভিতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিওগ্রাম। এ যন্ত্রটিতে যদি কোনো ধরনের ঔষধ লাগানো থাকে, তারপরেও রোজা ভাঙ্গবে না।
  • ৪. এন্ডোসকপি (Endos Copy): চিকন একটি পাইপ, যার মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলিতে ঢুকানো হয় এবং বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করা হয়। এই নলে যদি কোন ঔষধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভিতর দিয়ে পানি/ঔষধ ছিটানো হয়ে থাকে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে, আর যদি কোন ঔষধ লাগানো না থাকে তাহলে রোজা ভাঙ্গবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
  • ৫. নাইট্রোগিøসারিন (Nitro Glycerin): এরোসল জাতীয় ঔষধ, যা হার্টের জন্য দুই-তিন ফোঁটা জিহŸার নীচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। ঔষধটি শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায় এবং ঔষধের কিছু অংশ গলায় প্রবেশ করার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। অতএব এতে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
  • ৬. লেপারোসকপি (Laparoscopy): শিক্ জাতীয় একটি যন্ত্র দ্বারা পেট ছিদ্র করে পেটের ভিতরের কোন অংশ বা গোশত ইত্যাদি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের করে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। এতে যদি ঔষধ লাগানো থাকে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে অন্যস্থায় রোজা ভাঙ্গেব না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)
  • ৭. অক্সিজেন (OXzgen): রোজা অবস্থায় ঔষধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
  • ৮. মস্তিষ্ক অপারেশন (Brain Operation): রোজা অবস্থায় মস্তিষ্ক অপারেশন করে ঔষধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক রোজা ভাঙ্গবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)
  • ৯. রক্ত নেয়া বা দেয়া: রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের করলে বা শরীরে প্রবেশ করালে রোজা ভাঙ্গবে না। (আহসানুল ফতওয়া)
  • ১০. সিস্টোসকপি (cystoscop): প্রসাবের রাস্তা দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় এর দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। (হেদায়া)
  • ১১. প্রক্টোসকপি (proctoscopy): পাইলস, পিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপি বলে। মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গিøসারিন জাতীয় কোন পিচ্ছিল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরি ভিতরে প্রবেশ করে না। চিকিৎসকদের মতানুসারে ঐ পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সাথে মিশে থাকে এবং নলের সাথেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। আর থাকলেও তা পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষে না কিন্তু ঐ বস্তুটি ভিজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (ফতওয়া শামী)
  • ১২. কপার-টি (Coper-T): কপার-টি বলা হয় যোনিদ্বারে প্লাস্টিক লাগানোকে, যেন সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে বীর্য জরায়ুতে পৌঁছাতে না পারে। এ কপার-টি লাগিয়েও সহবাস করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কাযা কাফফারা উভয়টাই ওয়াজিব হবে।
  • ১৩. সিরোদকার অপারেশন (Shirodkar Operation): সিরোদকার অপারেশন হল অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জরায়ুর মুখের চতুষ্পার্শ্বে সেলাই করে মুখকে খিচিয়ে রাখা। এতে অকাল গর্ভপাত রোধ হয়। যেহেতু এতে কোন ঔষধ বা বস্তু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি স্থানে পৌঁছে না তাই এর দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না।
  • ১৪. ডি এন্ড সি (Dilatation and Curettage): ডি এন্ড সি হল গর্ভধারণের আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্যে উরষধঃড়ৎ এর মাধ্যমে জীবিত কিংবা মৃত বাচ্চাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে আসা। এতে রোজা ভেঙ্গে যাবে। অযথা এমন করলে কাযা কাফফারা উভয়টি দিতে হবে এবং তওবা করতে হবে। (হেদায়া)
  • ১৫. এম আর (M.R): এম আর হল গর্ভ ধারণের পাঁচ থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ুতে এম আর সিরিঞ্জ প্রবেশ করিয়ে জীবিত কিংবা মৃত ভ্রণ নিয়ে আসা। যার পর ঋতু¯্রাব পুণরায় হয়। অতএব মাসিক শুরু হওয়ার কারণে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। কিন্তু যদি রাতের বেলা করা হয় তাহলে দিনের রোজা কাযা করতে হবে না। (ফতহুল কাদীর)
  • ১৬. আলট্রাসনোগ্রাম (Ultrasongram): আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষায় যে ঔষধ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সবই চামড়ার উপরে থাকে, তাই আলট্রাসনোগ্রাম করলে রোজা ভাঙ্গবে না। (হেদায়া)
  • ১৭. স্যালাইন (Saline): স্যালাইন নেয়া হয় রগে, আর রগ যেহেতু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়, তাই স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না, তবে রোজার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেয়া মাকরূহ। (ফতওয়ায়ে দারুল উলূম)
  • ১৮. টিকা নেয়া (Vaccine): টিকা নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ, টিকা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তায় ব্যবহার করা হয় না। (আপকে মাসায়েল)
  • ১৯. ঢুস (Douche): ঢুস মলদ্বারের মাধ্যমে দেহের ভিতরে প্রবেশ করে, তাই ঢুস নিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। ঢুস যে জায়গা বা রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে এ জায়গা বা রাস্তা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য স্থান । (ফতওয়ায়ে শামী)
  • ২০. ইনসুলিন গ্রহণ করা: (Insulin): ইনসুলিন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ, ইনসুলিন রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে না এবং গ্রহণযোগ্য খালি জায়গায় প্রবেশ করে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
  • ২১. দাঁত তোলা: রোজা অবস্থায় একান্ত প্রয়োজন হলে দাঁত তোলা জায়েজ আছে। তবে অতি প্রয়োজন না হলে এমনটা করা মাকরূহ। ঔষধ যদি গলায় চলে যায় অথবা থুথু থেকে বেশি অথবা সমপরিমাণ রক্ত যদি গলায় যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (আহসানুল ফতওয়া)
  • ২২. পেস্ট, টুথ পাউডার ব্যবহার করা: রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথ পাউডার, পেস্ট, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরূহ। কিন্তু গলায় পৌঁছালে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
  • ২৩. মিসওয়াক করা: শুকনা বা কাঁচা মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজার দ্বারা রোজার কোন ক্ষতি হয় না। চাই যখনই করা হোক না কেন। (ফতওয়ায়ে শামী)
  • ২৪. মুখে ঔষধ ব্যবহার করা:মুখে ঔষধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে বা ঔষধের অংশ বিশেষ গলায় প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। গলায় প্রবেশ না করলে রোজা ভাঙ্গবে না। (ফতওয়ায়ে শামী)
  • ২৫. রক্ত পরীক্ষা: রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোজার কোন ক্ষতি হবে না। তবে খুব বেশি পরিমাণে রক্ত দেয়া যার দ্বারা শরীরে দুর্বলতা আসে, তা মাকরূহ।
  • ২৬. ডায়াবেটিস পরীক্ষা: ডায়াবেটিসের সুগার মাপার জন্য সুঁচ ঢুকিয়ে যে একফোঁটা রক্ত নেয়া হয়, এতে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।
  • ২৭. নাকে ঔষধ দেয়া: নাকে পানি বা ঔষধ দিলে যদি তা খাদ্যনালীতে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। (ফতওয়ায়ে রাহমানিয়া)
  • ২৮. চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করা: চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করার দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় অনুভব হয়। (হেদায়া)
  • ২৯. কানে ঔষধ প্রদান করা: কানে ঔষধ, তেল ইত্যাদি ঢুকালে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে গোসল করার সময় অনিচ্ছায় যে পানি কানে ঢুকে তাতে রোজা ভঙ্গ হবে না। অবশ্য এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন পানি গলায় না চলে যায়। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)
  • ৩০. নকল দাঁত মুখে রাখা: রোজা রেখে নকল দাঁত মুখে স্থাপন করে রাখলে রোজার কোন ক্ষতি হয় না। (ইমদাদুল ফতওয়া)

রোজার নিয়তে ১০ জরুরি মাসআলা

  1. রমজানের প্রতিদিনই রোজার নিয়ত করতে হবে। এক দিন নিয়ত করলে পুরো রমজানের জন্য তা যথেষ্ট নয়। (সূত্র : ইলমুল ফিকাহ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৮)
  1. রাতেই নিয়ত করা আবশ্যক নয়, করে ফেললে ভালো। নিয়ত করার বিষয়টি মনে না থাকলে সকালে যখন মনে হবে, তখনই নিয়ত করে নিলেও তা হয়ে যাবে। তবে সেহরির সময় পার হয়ে যাওয়ার পর কোনো কিছু পানাহার করলে বা রোজা ভঙ্গের কোনো কারণ সংঘটিত হওয়ার পর নিয়ত করলে তা আদায় হবে না। (সূত্র : বেহেশতি জেওর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩)
  1. রমজানুল মোবারকে মনে মনে শুধু এটুকু ভাবলেই নিয়ত হয়ে যাবে যে আমি আজ রোজা রাখব। নির্দিষ্টভাবে কোনো দোয়া পাঠ করা বা আমি আজ রমজানের ফরজ রোজা রাখছি- এমন কিছু বলা জরুরি নয়। (সূত্র : বেহেশতি জেওর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩)
  1. নফল রোজা, নির্দিষ্ট মানতের রোজা এবং রমজানের রোজাসমূহের নিয়ত রাতের বেলা অথবা শরিয়তের ঘোষিত অর্ধদিবস পর্যন্ত করা যাবে। অন্য সব ধরনের রোজার জন্যই রাতের মধ্যেই নিয়ত করে নেওয়া জরুরি। (সূত্র : ফাতাওয়া দারুল উলুম, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩৪৬)
  1. রমজান মাসে সেহরি খাওয়াটাও রোজার নিয়ত বলে গণ্য হবে। তবে সেহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (সূত্র : কিতাবুল ফিকাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৮১)
  1. কোনো ব্যক্তি সারা দিন কিছুই পানাহার করেনি, রোজা ভাঙার কোনো কাজও তার মাধ্যমে সংঘটিত হয়নি; অথচ তার মনে রোজার রাখার কোনো ইচ্ছা ছিল না। হয়তো তার ক্ষুধাই লাগেনি বা তেমন কিছু করার প্রয়োজন হয়নি। এমন অবস্থায় তা রোজা বলে গণ্য হবে না। তবে মনে মনে রোজা পালনের ইচ্ছা করে থাকলে তা রোজা হয়ে যেত। (সূত্র : বেহেশতি জেওর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩)
  1. ইসলামী শরিয়ার আলোকে রোজা শুরু হয় সুবহে সাদিক হতে। তাই সুবহে সাদিক উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহারে কোনো আপত্তি নেই। সব কিছুই তখন বৈধ। অনেকে রাতের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে সেহরি খেয়ে শুয়ে পড়েন এবং মনে করেন, রোজার নিয়ত করার পর বা সেহরি খেয়ে ফেলার পর আর কিছু পানাহার করা যাবে না। এমন ধারণা সঠিক নয়। সুবহে সাদিক উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে কোনো দোষ নেই। তা নিয়ত করা হোক বা না হোক। (সূত্র : বেহেশতি জেওর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩)
  1. মনের ইচ্ছার নামই নিয়ত। সুনির্দিষ্টভাবে বিশেষ কোনো বাক্য মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই রাতের বেলায় মনে মনে রোজা রাখার ইচ্ছা নিয়ে শুয়ে পড়লে তার জন্য ফের নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। (সূত্র : হাশিয়ায়ে ফাতাওয়া দারুল উলুম, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৪৬)
  1. মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট, তবে ‘নাওয়াইতু বি সাউমি গাদিম মিন শাহরি রামাদান’ মুখে উচ্চারণ করার মাধ্যমে নিয়ত করা উত্তম। (সূত্র : বেহেশতি জেওর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩)।
  1. দিনের দ্বিপ্রহরের আগে রোজার নিয়ত করা না হয়ে থাকলে সেই রোজা সহিহ হবে না। এর পরও রোজাহীন অবস্থায় দিনের বাকি সময়ে পানাহার করা রমজানুল মোবারকের সম্মানের বিরোধী বলে তা জায়েজ নয়। (সূত্র : ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭৩) গ্রন্থনা : মাওলানা মিরাজ রহমান।

হাদীস ও আছারের আলোকে রোযার মাসায়েল

মাসআলা : প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক বালেগ মুসলিমের উপর রমযানের রোযা ফরয। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فمن شهد منكم الشهر فليصمه

অর্থ : সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে।-সূরা বাকারা : ১৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭২

মাসআলা : শাবানের ২৯ তারিখ দিবাগত সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে পরদিন থেকে রোযা রাখতে হবে। নতুবা শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করার পর রোযা রাখা শুরু করবে।

عن ابن عمر رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه ذكر رمضان، فقال : لا تصوموا حتى تروا الهلال، ولا تفطروا حتى تروه.

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘(রমযানের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখবে না এবং (শাওয়ালের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখা বন্ধ করবে না।’-সহীহ মুসলিম ১/৩৪৭

অন্য হাদীসে আছে, ‘(শাবানের ২৯ দিন পূর্ণ করার পর) তোমরা যদি রমযানের চাঁদ না দেখ তাহলে শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করবে।’-আলমুসান্নাফ, আবদুর রাযযাক হাদীস : ৭৩০১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৭

মাসআলা : আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে রোযা শুরুর জন্য এমন একজন ব্যক্তির চাঁদ দেখাই যথেষ্ট হবে, যার দ্বীনদার হওয়া প্রমাণিত কিংবা অন্তত বাহ্যিকভাবে দ্বীনদার।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, ‘একজন মরুবাসী ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট (রমযানের) চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি একথার সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সকলকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন।’-মুসতাদরাকে হাকিম ১/৪২৪; সুনানে আবু দাউদ ২৩৩৩; সুনানে নাসায়ী ২৪২২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৯৫৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮৫

মাসআলা : আকাশ পরিষ্কার থাকলে একজনের খবর যথেষ্ট নয়; বরং এত লোকের খবর প্রয়োজন, যার দ্বারা প্রবল বিশ্বাস জন্মে যে, চাঁদ দেখা গেছে। কেননা, যে বিষয়ে অনেকের আগ্রহ ও সংশ্লিষ্টতা থাকে তাতে দু’ একজনের খবরের উপর নির্ভর করা যায় না।-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩৮; রদ্দুল মুহতার ৩/৩৮৮

মাসআলা : কোনো ব্যক্তি একাকী চাঁদ দেখেছে, কিন্তু তার সাক্ষ্য গৃহিত হয়নি, এক্ষেত্রে তার জন্য ব্যক্তিগতভাবে রোযা রাখা উত্তম, জরুরি নয়।

এক ব্যক্তি উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর নিকট এসে বলল, ‘আমি রযমানের চাঁদ দেখেছি।’ উমর রা. জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার সাথে অন্য কেউ কি দেখেছে?’ লোকটি বলল, ‘না, আমি একাই দেখেছি।’ উমর রা. বললেন, ‘তুমি এখন কী করবে?’ লোকটি বলল, ‘(আমি একা রোযা রাখব না) সবাই যখন রোযা রাখবে আমিও তখন রোযা রাখব।’ উমর রা. তাকে বাহবা দিয়ে বললেন, ‘তুমি তো বড় ফিকহ ও প্রজ্ঞার অধিকারী।’-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৬৮; আলমুহাল্লা ৪/৩৭৮

ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, এমন ব্যক্তির জন্য রোযা রাখা জরুরি না হলেও উত্তম হল রোযা রাখা।-বাদায়েউস সানায়ে ২/২২১

মাসআলা : শাবান মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখে রোযা রাখবে না; না রমযানের নিয়তে না নফলের নিয়তে। অবশ্য যে পূর্ব থেকেই কোনো নির্দিষ্ট দিবসে (যথা সোম ও মঙ্গলবার) নফল রোযা রেখে আসছে, আর ঘটনাক্রমে শাবানের ২৯ ও ৩০ তারিখে ঐ দিন পড়েছে তার জন্য এই তারিখেও নফল রোযা রাখা জায়েয।

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : نهي رسول الله عليه وسلم أن يتعجل شهر رمضان بصوم يوم أو يومين، إلا رجل كان يصوم صوما فيأتي ذلك على صومه.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা রমযান মাসের একদিন বা দুই দিন পূর্ব থেকে রোযা রেখো না। তবে কারো যদি পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট কোনো দিন রোযা রাখার অভ্যাস থাকে আর ঐ দিন উক্ত তারিখ পড়ে যায় তাহলে সে ঐ দিন রোযা রাখতে পারে।’-সহীহ বুখারী ১/১৫৬, হাদীস : ১৯১; মুসানাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৫৮, হাদীস : ৭৩১৫; জামে তিরমিযী ২/৩২; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২১৭

রমজানের কাফফারা আদায়ের নিয়ম সম্পর্কিত মাসআলা

একটি রোযার জন্য দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখতে হবে। কোনো কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে পুনরায় নতুন করে রোযা রাখতে হবে। পেছনের রোযাগুলো কাফফারার রোযা হিসাবে ধর্তব্য হবে না। তবে মহিলাদের হায়েযের কারণে ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে অসুবিধা নেই।

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘যার উপর কাফফারা হিসাবে দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখা জরুরি সে যদি মাঝে অসুস্থ হওয়ার কারণে রোযা রাখতে না পারে, তাহলে আবার নতুন করে রোযা রাখা শুরু করবে।’ (আলমুহাল্লা ৪/৩৩১; মাবসূত, সারাখসী ৭/১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১৯৬)

যেসব কাজ রোযাদারের জন্য মাকরূহ নয়

মাসআলা : রোযার হালতে প্রয়োজনে জিহবা দ্বারা কোনো কিছুর স্বাদ নেওয়া বা প্রয়োজনে বাচ্চাদের জন্য খাদ্য চিবানো মাকরূহ নয়। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেন স্বাদ গলার ভেতরে চলে না যায়।

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. রোযাদার মহিলা বাচ্চার জন্য খাদ্য চিবানোকে দোষের বিষয় মনে করতেন না।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৬

মাসআলা : রোযাদারের জন্য সুরমা লাগানো বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মাকরূহ নয়।

আতা রাহ. বলেন, ‘রোযাদারের জন্য সুরমা ব্যবহার করাতে দোষ নেই।’-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮০

মাসআলা : রোযা অবস্থায়ও মিসওয়াক করা সুন্নত। এমনকি কাঁচা ডাল দ্বারা মিসওয়াক করাও মাকরূহ নয়।

আমির ইবনে রবীয়া রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি রোযার হালতে অসংখ্যবার মিসওয়াক করতে দেখেছি।-সহীহ বুখারী ১/২৫৯; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০০

হাসান রাহ.কে রোযা অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রোযা অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই। মিসওয়াক পবিত্রতার মাধ্যম। অতএব দিনের শুরুতে এবং শেষেও মিসওয়াক করো।’-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০২

ইবরাহীম রাহ. বলেন, ‘রোযা অবস্থায় দিনের শুরু ও শেষে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই।’-প্রাগুক্ত ৪/২০৩

মুজাহিদ রাহ. রোযা অবস্থায় তাজা মিসওয়াক ব্যবহার করাকে দোষণীয় মনে করতেন না। সুফিয়ান সাওরী রাহ. থেকেও অনুরূপ বক্তব্য বর্ণিত আছে।-প্রাগুক্ত ৪/২০২; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮১

রমজানের মুস্তাহাব সম্পর্কিত মাসআলা

খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব: খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার শুরু করবে। আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যার কাছে খেজুর আছে সে খেজুর দ্বারা ইফতার করবে। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। কেননা পানি হল পবিত্র।’ (সুনানে তিরমিযী হাদীস : ৬৯০ আরো দেখুন : মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৭৫৮৬)

রমজানের মাসআলা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নত্তর

সেহরি না খেলে রোজা হবে?

সেহরি খাওয়া সুন্নত, এটি রোজার অংশ নয়। সেহরি না খেলেও রোজা হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ ২/৩৭৭; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৯৭)

আর রমজান মাসে কোনো কারণে রাতে নিয়ত করতে না পারলে এবং সুবহে সাদিকের পর থেকে রোজা ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া না গেলে দুপুরের আগ (অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়ের আগ) পর্যন্ত নিয়ত করার সুযোগ থাকে। তবে রাতে নিয়ত করে নেওয়াই উত্তম।
[শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪০৪; কিতাবুল আছল ২/২২৬; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯]

ঢেকুর আসলে রোজা ভাঙ্গবে?

সেহরির সময় কোনো ব্যক্তি এত পরিমাণ খেয়েছে যে, সূর্যোদয়ের পর তার মধ্যে ঢেকুর আসতে শুরু করে। সঙ্গে পানিও বের হয়। এর দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। (সূত্র : ফাতাওয়া রশিদিয়া, পৃষ্ঠা ৩৭১)।

ভুলে ইফতার করে ফেললে রোজা হবে?

সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করার পর দেখা গেল এখনো সূর্যাস্ত হয়নি। এমন অবস্থায় রোজা কি ভেঙে যাবে? ভেঙে গেলে একটি রোজা কাজা করাই কি যথেষ্ট হবে, নাকি কাফফারাও দিতে হবে? এ ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যাবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে হুকুম হলো, ভুল সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে এবং পরবর্তী সময়ে একটি রোজা কাজা করে নেবে।

তবে কাফফারা আদায় করতে হবে না। হজরত হানজালা (রা.) বলেন, ‘আমি রমজান মাসে হজরত উমর (রা.)-এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে কিছু পানীয় পেশ করা হলো এবং কেউ কেউ সূর্য ডুবে গেছে মনে করে তা পান করল। তখন মুয়াজ্জিন উচ্চৈঃস্বরে বললেন, আমিরুল মুমিনিন! আল্লাহর কসম, সূর্য এখনো ডোবেনি, তা উদিত অবস্থায় আছে। তখন হজরত উমর (রা.) বললেন, যারা ইফতার করে ফেলেছে, তারা যেন তার পরিবর্তে আরেকটি রোজা রাখে। আর যারা ইফতার করেনি, তারা যেন সূর্যাস্ত পর্যন্ত তা পূর্ণ করে।’ [মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ৬/১৫০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ৩৬৯; ফাতহুল কাদীর ২/২৯০]

গর্ভবতী নারী রোযা ভেঙ্গে ফেললে পরবর্তীতে তার কতটি রোযা কাযা করতে হবে? ফিদিয়া দিলে হবে কি?

বিষয়ঃ মহিলারা গর্ভ অবস্থায় রোজা ভাঙ্গার অথবা রোজা রাখা/না রাখার হুকুম কি?

গর্ভ অবস্থায় রোজা ভাঙ্গলে পরবর্তীতে ১টি রোজার জন্য কতটি রোজা রাখতে হবে?
পরবর্তীতে রোজা না রাখতে পারলে কি করুনীয়?

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রসূতি নারীরা এক প্রকার অসুস্থ্য। আর অসুস্থ্যদের ক্ষেত্রে বিধান হল, যদি রোযা রাখতে সক্ষম না হয়, অর্থাৎ রোযা রাখলে গর্ভের বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জানান, কিংবা রোযা রাখলে মায়ের অসহনীয় কষ্ট হয়, তাহলে রমজানে রোযা না রাখার সুযোগ আছে। তারপর রমজানের পরবর্তীতে কাযা করে নিতে হবে। একটি রোযার জন্য একটি রোযাই কাযা করতে হবে। বেশি করতে হবে না।

যদি পরবর্তীতে রোযার কাযা আদায় না করেই মারা যায়, বা এমন অবস্থায় পৌছে যায় যে, রোযা রাখতে আর পারবে না, তাহলে উক্ত রোযাগুলোর ফিদিয়া আদায় করে দিবে। প্রতিটি রোযার জন্য একজন মিসকিনকে দুইবেলা খানা খাওয়াবে বা এর সমমূল্য দান করে দিবে। কিন্তু রোযা রাখতে সক্ষম হলে ফিদিয়া দিলে আদায় হবে না।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ [٢:١٨٣]

أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۚ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ ۚ وَأَن تَصُومُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٢:١٨٤]

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।

গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার। [সূরা বাকারা-১৮৩-১৮৪]

فى الفتاوى التاتارخانية- اذا خافت الحامل أو المرضع على أنفسهما أو على ولدهما جاز له الفطر، وعليهما القضاء، (الفتاوى التاتارخانية – كتاب الصوم، فصل الأسباب المبيحة للفطر-3/404)

وفى حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح- ( واختلف الترجيح في ) صوم ( المريض إذا نوى واجبا آخر ) بصومه ( في ) شهر رمضان ) الخ وقال فخر الإسلام وشمس الأئمة الصحيح أنه يقع صومه عن رمضان وفي البرهان وهو الأصح، (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح-644

والله اعلم بالصواب

রোযা অবস্থায় তেল জাতীয় দ্রব্যাদী মালিশ করলে কি রোযার ক্ষতি হবে?

কিছু মলম (যেমন tiger balm, Radiant, Icy-cool ইত্যাদি) আছে, যেগুলো মালিশ করলে খুব দ্রুত ব্যথার উপশম হয়। রোযা অবস্থায় এগুলো মালিশ করলে রোযার কোন ক্ষতি হয় কি?

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। প্রয়োজনে তা মালিশ করা যাবে।

عَنْ قَتَادَةَ: «يُسْتَحَبُّ لِلصَّائِمِ أَنْ يَدَّهِنَ حَتَّى تَذْهَبَ عَنْهُ غُبْرَةُ الصَّائِمِ»

হযরত কাতাদাহ রা. বলেন,‘রোযাদারের তেল ব্যবহার করা উচিত, যাতে রোযার কারণে সৃষ্ট ফ্যাকাশে বর্ণ দূর হয়ে যায়। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/৩১৩, হাদীস নং-৭৯১২]

রোজা রেখে কি সিগারেট খাওয়া যাবে?

রোজা রেখে সিগারেট খেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। রোজার আরবী হল সাওম। আর সাওম অর্থ বিরত থাকা।

সাওমের শর্ত হল সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সমস্ত প্রকার পানাহার, অশ্লীলতা, পাপাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা/সাওম।

রোযাঃ সুবেহ-সাদিকের সময় থেকে সূর্যাস্তের সময় পর্যন্ত সমস্ত অশ্লীল কাজ ও আহার থেকে নিজেকে বিরত রাখার নামই রোযা।

রোজা রেখে সিগারেট খেলে রোজা ভেঙ্গে যায়। রোজা থেকে কোনো খাবার,পানীয় বা ধোয়াজাতীয় কোনো কিছু ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রহণ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়। আর সিগারেট ধোয়াজাতীয় জিনিস, অতএব সিগারেট খেলে রোজা ভেঙ্গে যায়।

রোজা রেখে স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে?

স্বপ্নদোষের কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না। কারণ স্বপ্নদোষ রোযাদারের অনিচ্ছায় ঘটে থাকে।

ইমাম নববী ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থে বলেন:

আলেমগণের ইজমা হচ্ছে- কারো স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভাঙ্গবে না। কারণ সে ব্যক্তি এক্ষেত্রে অপারগ। যেমন- কারো অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোন একটি মাছি যদি উড়ে এসে কারো পেটে ঢুকে যায়। এ মাসয়ালার দলিলের ক্ষেত্রে এটাই হচ্ছে- ভিত্তি। পক্ষান্তরে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত: “যে ব্যক্তি বমি করেছে, কিংবা যার স্বপ্নদোষ হয়েছে, কিংবা যে শিঙ্গা লাগিয়েছে তার রোযা ভাঙ্গবে না” হাদিসটি ‘যয়িফ’ (দুর্বল); যা দলিল পেশ করার উপযুক্ত নয়।[সমাপ্ত]

তিনি ‘মুগনি’ গ্রন্থে (৪/৩৬৩) আরও বলেন:

কারো যদি স্বপ্নদোষ হয় তার রোযা ভাঙ্গবে না। কেননা স্বপ্নদোষ তার অনিচ্ছায় ঘটে থাকে। সুতরাং এটি ঐ মাসয়ালার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ – কেউ যদি ঘুমিয়ে থাকে আর তার গলার ভেতরে কোন কিছু ঢুকে যায়।[সমাপ্ত]

শাইখ বিন বায (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে দিনের বেলায় ঘুমিয়েছে এবং তার স্বপ্নদোষ হয়েছে, বীর্যও বের হয়েছে; সে কি ঐ দিনের রোযার কাযা পালন করবে?

জবাবে তিনি বলেন:

তার উপর কাযা আবশ্যক নয়। কেননা স্বপ্নদোষ তার ইচ্ছাধীন নয়। কিন্তু, তার উপর গোসল ফরয; যদি বীর্য দেখে থাকে।[মাজমুউল ফাতাওয়া (১৫/২৭৬)]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল রমযানের দিনের বেলায় যার স্বপ্নদোষ হয়েছে?

জবাবে তিনি বলেন: তার রোযা সহিহ। স্বপ্নদোষের কারণে রোযা ভাঙ্গবে না। কেননা স্বপ্নদোষ তার এখতিয়ারে নেই। ঘুমন্ত অবস্থায় কলম তুলে রাখা হয়।[সমাপ্ত]

স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে (১০/২৭৪) এসেছে:

যে ব্যক্তির রোযা অবস্থায় কিংবা হজ্জ বা উমরার ইহরাম অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়েছে তার কোন গুনাহ নেই; তার উপর কাফ্‌ফারা নেই। এটি তার রোযার উপর, হজ্জের উপর বা উমরার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। তার উপর ফরয হল: জানাবাতের গোসল করা; যদি সে বীর্যপাত করে থাকে।[সমাপ্ত]

রোজা রাখার নিয়ত করে সেহরি খেয়ে ঘুমানোর পর যদি কারো স্বপ্নদোষ হয়, তাহলে কি রোজা ভেঙে যাবে?

স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হয় না।

আবু সাঈদ খুদরি রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেছেন তিনটি জিনিস রোজাকে ভঙ্গ করে না। শিঙা, বমি, স্বপ্নদোষ। (তিরমিজি শরীফ, মেশকাত শরীফ)

উত্তর : সিয়ামরত আবস্থায় যদি কারো স্বপ্নদোষ হয়, তাহলে তার সিয়াম নষ্ট হবে না, যেহেতু তার অনিচ্ছায় এ কাজটি হয়েছে। যে কোনো আমলের মধ্যে যদি ইচ্ছেকৃত বিষয় না থাকে বা অনিচ্ছাকৃত কোনো আমল বান্দার কাছ থেকে হয়ে যায়, এটা যদি সিয়াম ভঙ্গকারী হয়ে থাকে, তাহলে এর মাধ্যমে সিয়াম নষ্ট হয় না।

তবে, এটি অনুভব করার পর আতিদ্রুত নিজেকে পাক পবিত্র কোরে ফেলাটিই উত্তম।

রোজা অবস্থায় করোনার টিকা নিলে কি রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে?

অতি জরুরি প্রয়োজন হলে দিতে পারেন। কিন্তু সমস্যা না থাকলে না নেওয়াই উত্তম।

ভ্যাক্সিন, টিকা, ইঞ্জেকশন (যেগুলো খাবারের বিকল্প নয়) সিয়ামরত অবস্থায় ভ্যাক্সিন, টিকা বা এমন কোনো ইঞ্জেকশন নেয়া বৈধ যেগুলোর দ্বারা খাদ্য বা পানির চাহিদা পূরণ হয় না। অর্থাৎ যেই ইঞ্জেকশন খাদ্য বা পানীয় এর বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয় না, সেগুলো সিয়ামের কোনো ক্ষতি করবে না। এছাড়াও ইনসুলিন নিলেও সিয়ামের কোনো ক্ষতি হয় না।

রোজা মুসলমানদের উপর কখন ফরজ হয়েছ?

রমজানের রোজা মহানবী (সা.) এর পূর্ববর্তী নবী-রাসূল ও তাদের উম্মতদের জন্যও ফরজ ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ও তার উম্মতদের জন্যও ফরজ করা হয়েছে।

ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের থুথু গিলে ফেললে কি রোজা ভেঙে যাবে বা হালকা হয়ে যাবে?

থুথু গিলে ফেললে রোজা ভঙ বা হালকা হয়ে যাবে এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। ছোটবেলায় যখন মাঝেমধ্যে রোজা রাখতাম তখন সারাদিন থুথু ফেলতেই থাকতাম। কিন্তু এটা একটি ভ্রান্ত ধারণা।

রোজা রেখে উলঙ্গ হয়ে গোসল করলে কি রোজা হালকা হয়ে যাবে?

রোযাদারের জন্য গোসল করা বৈধ। গোসল রোযার উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।

পরিবর্তিত জীবন ধারায় মানুষের সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিবস্ত্র হয়ে গোসল করার প্রবণতা মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এ বিষয়ে জানতে অনেকে আলেমসমাজের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। সংক্ষেপে এখানে সে প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে।

বিবস্ত্র হয়ে অজু বা গোসল করা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এমন : প্রয়োজন ছাড়া বাথরুমে বিবস্ত্র হয়ে গোসল করা উচিত নয়। হাদিসে এ ব্যাপারে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। সুতরাং তা পরিহার করা উচিত। এক হাদিসে এসেছে, মুয়াবিয়া বিন হাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি তোমার স্ত্রী ছাড়া অন্যদের কাছ থেকে তোমার লজ্জাস্থান সর্বদা হেফাজত করো (অর্থাৎ ঢেকে রাখো)।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি কোনো ব্যক্তি কোথাও একাকী থাকে! (তখনো কি তা ঢেকে রাখতে হবে?)।’ তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, কেননা আল্লাহকে অধিক লজ্জা করা উচিত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৬৯)

তবে কেউ যদি কোনো কারণে বিবস্ত্র হয়ে অজু বা গোসল করতে চায়, তাহলে লোকচক্ষুর আড়ালে করলে এর অবকাশ আছে। বিশেষত, স্বামী ও স্ত্রী একসঙ্গে গোসল করার কথা হাদিসে এসেছে। মহানবী (সা.) তাঁর স্ত্রী মাইমুনা (রা.) ও আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে একত্রে গোসল করেছেন। এটি সহিহ বুখারি ও মুসলিম দ্বারা প্রমাণিত। এ বিষয়ে কেউ কেউ মুসা (আ.)-এর বিবস্ত্র হয়ে গোসল করার ঘটনাও প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। (দেখুন : বুখারি, হাদিস : ৩৪০৪)

সুতরাং এ বিষয়ে অবকাশ থেকে যায়, যদিও এটি সুন্নত নয় এবং অনুত্তম কাজ।

আর একটি বিষয় হলো, বিবস্ত্র হয়ে অজু বা গোসল করলে অজু হওয়া-না হওয়া এবং গোসল হওয়া-না হওয়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। অজু ও গোসলের অঙ্গ পরিপূর্ণভাবে ধৌত হয়ে গেলে বিবস্ত্র থাকলেও অজু ও গোসল হয়ে যাবে।

গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার বিধান কী?

প্রকৃতপক্ষে রোজা রাখা যাবে কি যাবে না তা নির্ভর করে গর্ভধারণকারী নারীর উপর। গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যে উপর ভিত্তি করেই একজন গর্ভবতী নারী চাইলে রোজা রাখতে পারেন।গর্ভাবস্থায় রোজা রাখাটা কি শিশুর জন্য নিরাপদ কিনা তার সঠিক উত্তর দেওয়া মুশকিল। অনেক গবেষণা সত্ত্বেও এই কথা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে মা রোজা রাখলে গর্ভের শিশু নিরাপদ কি না।

বাংলাদেশে বসবাস করে যারা সৌদিআরব-এর সাথে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালন করে তাদের রোজা ও ঈদ হবে কি?

ইসলাম বলে আপনি যে এলাকার মানুষ, সেই এলাকার চাঁদ দেখে, চাঁদ নিরভ্র বিষয় গুলির সিদ্ধান্ত নিতে। এবার আপনি বলুন, আপনি কোনটা সঠিক মনে করেন। চাইলে রেফেরেঞ্চে হাদিস খুঁজে দেখতে পারেন বুখারি/ মুসলিমি সব হাদিসের বইয়েই আছে।

বাংলাদেশে বসবাস করে যারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালন করে তাদের রোজা ও ঈদ হবে কিনা সেটা বলা যায় না। বরং তাদের শেষের দিনের রোজার পরে যে ঈদ তারা করে যেদিন বাংলাদেশ 29 অথবা 30 রোজা থাকে, এই দিনটি তারা রোজা না রাখার কারণে হয়তোবা গুনাহগার হবে। কিন্তু এর আগের দিনগুলোর রোজা যেহেতু একই নিয়মে সেটা কবুল হয়ে যায়। আর আমাদের রোজার মধ্যেই যে তারা ঈদ পালন করে এ জন্য তাদের ঈদের নামাজও সহীহ হবে না।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x