আনুগত্য কাকে বলে?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য আনুগত্য কাকে বলে? জানা আবশ্যক। প্রিয় পাঠক, আমাদের আজকের আলোচনায় আপনাকে স্বাগতম। আপনি যদি এই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান, তাহলে খুব সহজেই আমাদের আজকের এই পোস্ট থেকে জানতে পারবেন। আপনাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিস্তারিত তথ্য এখানে তুলে ধরেছি। আশা করছি এটি আপনাকে খুব ভালোভাবে সাহায্য করবে। তাই অবশ্যই আর্টিকেল টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
আনুগত্য কাকে বলে?
আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যই বিশ্ব মানবতার মুক্তির একমাত্র পথ । আবার বিশ্বনবির অনুসরণকে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা লাভের পূর্বশত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কুরআনুল কারিমে এমনই ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা।
পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা তার রাসুলের প্রতি আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন। আনুগত্যের বাইরে গেলে পরিণতি কী হবে তাও সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে এ আয়াতে।
বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ ও তার রাসুলের অনুসরণ ও অনুকরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেই তা হবে কুফরি। কুফরের সঙ্গে জড়িত কাউকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন না। আল্লাহ তাআলার ঘোষণা-
قُلْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَالرَّسُولَ فإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ الْكَافِرِينَ
অনুবাদ : ‘(হে রাসুল!) আপনি বলে দিন, আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য প্রকাশ কর। আর যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ৩২)
আয়াত নাজিলের কারণ
সুরা আল-ইমরানের ৩২ নং আয়াতটি শুধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করেই ঘোষণা করা হয়নি বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকেও সম্বোধন করা হয়েছে।
কেননা আগের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা মানুষকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্যের বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন-
‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
আয়াত দুটিতে রয়েছে গভীর সামঞ্জস্য। বিশ্বনবির আনুসরণ ও আনুগত্যের মধ্যেই আল্লাহর আনুগত্য শামিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্যের মাধ্যমেই মহান আল্লাহর আনুগত্য করা যায়। কেননা তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নিয়ে বিশ্ব মানবতার সামনে উপস্থিত হয়েছেন।
তাই যারা আল্লাহর বিধান কুরআন ও রাসুলের আনুগত্যকে অস্বীকার করে কিংবা অবাধ্যতা প্রকাশ করে আল্লাহ ও তার রাসুলের মহব্বতে মুখে খই ফুটায়, কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করে না, তাদের উদ্দেশ্যেই এ আয়াত নাজিল করা হয়েছে।
আল্লাহর ভালোবাসা বা রাসুলের অনুসরণ সম্পর্কে মুখে যত খুই ফুটানো হোক না কেন, আল্লাহর বিধানের অনুসরণ ছাড়া তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। মূলত তারা আল্লাহ ও তার রাসুলকে অস্বীকারকারী। আর তাদেরকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন না।
উল্লেখিত আয়াতের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসার দাবিদার হলেই চলবে না বরং আল্লাহ ঘোষিত সব বিধান পালন করতে হবে।
মুখের ভালোবাসায়, বক্তব্যের মাধ্যমে গুণ বর্ণনা করে আল্লাহ ও তার রাসুলকে সিক্ত করলেই চলবে না, কুরআন ও সুন্নাহর বিধান বাস্তবায়নপূর্বক এর পরিপূর্ণতা বিধান করতে হবে। এ আয়াতে সে বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তার রাসুলের বিধানের অনুসরণ ও অনুকরণ করে প্রকৃত মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন।
আনুগত্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্য থেকে যে উলিল আমর তার আনুগত্য কর।’ (নিসা-৫৯)
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে এমন জান্নাতে দাখিল করবেন যার নিম্নদেশ হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হতে থাকবে এবং তারা অনন্তকাল তাতে অবস্থান করবে। আর প্রকৃতপক্ষে ইহাই হচ্ছে বিরাট সফলতা
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে সে ওইসব লোকের সঙ্গী হবে যাদের প্রতি আল্লাহতায়ালা নেয়ামত দান করেছেন।’ (নিসা ৬৯)
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে এবং আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী হতে দূরে থাকে এসব লোকই সফলকাম হবে।’ (নূর ৫২)
‘হে নবী, বলে দিন কসম খেয়ে আনুগত্য প্রমাণের তো কোন প্রয়োজন নেই। আনুগত্যের ব্যাপারটা তো খুবই পরিচিত ব্যাপার। সন্দেহ নেই আল্লাহ তোমাদের আমল সম্পর্কে অবগত আছেন।’ (নূর ৫৩)
আনুগত্য সম্পর্কে হাদীস : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শাসক যে পর্যন্ত কোন পাপকার্যের আদেশ না করবে, সে পর্যন্ত তার আদেশ শোনা ও মেনে নেয়া প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য, তা তার পছন্দ হোক আর নাই হোক। হ্যা সে যদি কোন পাপকার্যের আদেশ করে তাহলে তার কথা শোনা বা তার আনুগত্য করার কোন প্রয়োজন নেই।’ (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আলী (রা.) বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘গোনাহের কাজে কোন আনুগত্য নেই, আনুগত্য শুধু নেক কাজের ব্যাপারে।’ (বুখারী, মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার এতায়াত বা আনুগত্য করল সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে আমার হুকুম অমান্য করল সে আল্লাহর হুকুমই অমান্য করল। যারা আমীরের আনুগত্য করল তারা আমার আনুগত্য করল। আর যারা আমীরের আদেশ অমান্য করল সে প্রকৃতপক্ষে আমারই আদেশ অমান্য করল।’ (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) রাসূলে পাক (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আনুগত্যের বন্ধন থেকে হাত খুলে নেয়, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে এমন অবস্থায় হাজির হবে যে, আত্মপক্ষ সমর্থনে তার বলার কিছুই থাকবে না। আর যে ব্যক্তি বাইয়াত ছাড়া মারা যাবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু।’