গতিশক্তি
Kinetic energy
হাতুড়ি দিয়ে দেয়ালে পেরেক ঠুকলে হাতুড়ি তীব্র বেগে পেরেককে আঘাত করে। তখন পেরেকটি দেয়ালের বাধা অতিক্রম করে ঢুকে যায়। হাতুড়ি তার গতির জন্যই এই কাজ করতে সক্ষম হয় অর্থাৎ হাতুড়িটির গতিশক্তির জন্যই পেরেকটি দেয়ালের বাধা অতিক্রম করতে পারে। তোমরা নদীতে পাল তোলা নৌকা চলতে দেখেছ। নদীর স্রোতের গতিশক্তি নৌকাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। জোরে বাতাস বইলে পাল টাঙালে নৌকা এগিয়ে যেতে পারে। বায়ু প্রবাহের গতিশক্তিকে পাল টাঙিয়ে কাজে লাগিয়ে নৌকা এভাবে এগোয়।
পাহাড় পর্বত থেকে সমতলে নামার সময় নদী অত্যন্ত খরস্রোতা হয়। স্রোতের গতিশক্তি খুব বেশি বলে নদী বড় বড় পাথর খণ্ডকে গড়িয়ে নিয়ে যায়। আবার হাই জাম্প বা লং জাম্প দেওয়ার সময় প্রতিযোগীরা স্থির অবস্থা থেকে লাফ দেয় না, কিছু দূর থেকে দৌড়ে এসে লাফ দেয়। ফলে লাফ দিয়ে অনেক দূর যেতে পারে।
উপরের সকল ঘটনা লক্ষ করলে দেখা যায় যে, বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করে কোনো সচল বস্তুকে থামালে, থেমে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বস্তুটি ওই বলের বিরুদ্ধে মোট যে পরিমাণ কাজ করে তাই দিয়ে বস্তুটির গতিশক্তির পরিমাপ করা যায়। কোনো গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য কাজ করার যে সামর্থ্য বা শক্তি লাভ করে তাকে বস্তুটির গতিশক্তি বলে। যে কোনো সচল বস্তুর মধ্যে গতিশক্তি থাকে।
সঙ্গাঃ কোনো গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য কাজ করার যে সামর্থ্য বা শক্তি লাভ করে তাকে বস্তুটির গতিশক্তি বলে।
গতিশক্তির একক
Unit of kinetic energy
গতি’শক্তি ও কাজের একক একই। অর্থাৎ গতিশক্তির একক জুল (J)
গতিশক্তির মাত্রা
Dimension of kinetic energy
[Ek]=[1/2mv2]=[M][LT−1]2=[ML2T−2]
কোনো বস্তুর গতি চলন ও ঘূর্ণন অথবা চলন-ঘূর্ণন মিলিয়ে জটিল গতিও হতে পারে।
অতএব বস্তুর গতিশক্তি রৈখিক গতিশক্তি (translational kinetic energy) বা ঘূর্ণন গতি’শক্তি (rotational kinetic energy) বা এই দুই ধরনের গতিশক্তিই হতে পারে।
বিনা বাধায় পতনশীল বস্তুর গতিশক্তি হলো রৈখিক গতিশক্তি।
ঘুরন্ত বৈদ্যুতিক পাখার গতিশক্তি হলাে আবর্ত বা ঘূর্ণন গতিশক্তি।
গাড়ির চাকায় এবং ফুটবলে রৈখিক ও আবর্ত দুই ধরনের গতি’শক্তি থাকে।
উদাহরণঃ
(১) পাথরকে কাচের সঙ্গে ঠেকিয়ে রাখলে কিছু হয় না, কিন্তু পাথর ছুঁড়ে মারলে কাচ ভেঙ্গে যায়। গতির জন্য পাথরটি ঐ কাজ করার সামর্থ্য পায়।
(২) হাতুড়ি দিয়ে দেয়ালে পেরেক ঠুকলে হাতুড়ি তীব্র বেগে পেরেককে আঘাত করে।
তখন পেরেকটি দেওয়ালের বাধা অতিক্রম করে ঢুকে যায়।
হাতুড়ি তার গতির জন্যই এ কাজ করতে সক্ষম হয়।
অর্থাৎ হাতুরিটির গতিশক্তির জন্যই পেরেকটি দেওয়ালের বাধা অতিক্রম করতে পারে।
(৩) পাহাড় পর্বত থেকে সমতলে নামার সময় নদী অত্যন্ত খরস্রোতা হয়। স্রোতের গতিশক্তি খুব বেশি বলে বড় বড় পাথর খণ্ডকে গড়িয়ে নিয়ে যায়।^