উক্তি কি বা কাকে বলে? উক্তির প্রকারভেদ, অংশ ও উক্তি পরিবর্তন

যে বাক্যে বক্তা কোন মনোভাব ব্যক্ত করে তাকে উক্তি বলে। অর্থাৎ কোন কথকের বাক কর্মের নামই বা প্রতিদন আমরা যে কথা বলি তাই উক্তি।

উক্তির প্রকারভেদ

উক্তি ২ প্রকার। যথাঃ-

  • প্রত্যক্ষ উক্তি
  • পরোক্ষ উক্তি

প্রত্যক্ষঃ যে বাক্যে বক্তার কথা হুবহু উদ্ধৃত হয়, তাকে প্রত্যক্ষ উক্তি বলে। যেমন – ইফাদ বলল,” আমার বাবা বাজারে গেছে।”

পরোক্ষঃ যে বাক্যে বক্তার উক্তি অন্যের জবানিতে রূপান্তরিতভাবে প্রকাশ করা হয়, তাকে পরোক্ষ উক্তি বলা হয়। যেমন- ইফাদ বলল যে, তার বাবা বাড়ি ছিলেন না।

উক্তির অংশ

একটি উক্তির দুটি অংশ থাকে। সেগুলো হলো –

  • উপস্থাপক অংশ
  • উপস্থাপিত অংশ

দুটি অংশে দুরকমের কর্তা থাকে। যথাঃ

  • উপস্থাপক কর্তা
  • উপস্থাপিত কর্তা

উপস্থাপক কর্তাঃ যে উপস্থাপন করে তাকে উপস্থাপক কর্তা বলে।

উপস্থাপিত কর্তাঃ যার বা যাদের সম্পর্কে উপস্থাপন করা হয় তাকে উপস্থাপিত কর্তা বলে।

যেমন – ইফাদ বলল, ” আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।” এখানে, ইফাদ উপস্থাপক কর্তা আর আমি উপস্থাপিত কর্তা। আর ‘ইফাদ বলল’ উপস্থাপক অংশ এবং “আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।” উপস্থাপিত অংশ।

প্রত্যক্ষ উক্তির উপস্থাপক অংশের শেষে কমা (,) ব্যবহৃত হয় এবং উপস্থাপিত অংশ উদ্ধরণ চিহ্নের (” “) মধ্যে থাকে।

উক্তি পরিবর্তন

প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরোক্ষ এবং পরোক্ষ উক্তিকে প্রত্যক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করা যায়। একে উক্তি পরিবর্তন বলে। যেমন –

প্রত্যক্ষঃ ইফাদ বলল, “আমি যাব না।”

পরোক্ষঃ ইফাদ বলল যে, সে যাবে না।

উক্তি পরিবর্তনের সাধারণ নিয়ম

নিয়ম – ০১

প্রত্যক্ষ উক্তিতে বক্তার বক্তব্য উদ্ধরণ চিহ্নের (” “) মধ্যে থাকে। পরোক্ষ উক্তিতে উদ্ধরণ চিহ্ন তুলে দিয়ে এর আগে “যে” অব্যয়টি ব্যবহার করতে হয়। বাক্যের সঙ্গতি রক্ষার জন্য উক্তিতে ব্যবহৃত বক্তার পুরুষের পরিবর্তন করতে হয়। যেমন –

প্রত্যক্ষঃ ইফাদ বলল, ” আমি আগামীকাল মধুটিলা যাব।”

পরোক্ষঃ ইফাদ বলল যে, তিনি পরদিন মধুটিলা যাবেন।

নিয়ম – ০২

বাক্যের অর্থ সঙ্গতি রক্ষার জন্য সর্বনামের পরিবর্তন করতে হয়। যেমন –

প্রত্যক্ষঃ ইফাদ বলল, ” আমার বোন আজই শেরপুর যাচ্ছেন।”

পরোক্ষঃ ইফাদ বলল যে, তার বোন সেদিনই শেরপুর যাচ্ছিলেন।

নিয়ম – ০৩

অর্থ সঙ্গতি রক্ষার জন্য ক্রিয়াপদের পরিবর্তন হতে পারে। যেমন –

প্রত্যক্ষঃ মামা বললেন, ” আমি আসছি।”

পরোক্ষঃ খালা বললেন যে, তিনি যাচ্ছেন।

নিয়ম – ০৪

প্রত্যক্ষ উক্তির কালবাচক শব্দকে পরোক্ষ উক্তিতে অর্থ অনুসারী করতে হয়। যেমন –

প্রত্যক্ষঃ স্যার বললেন,”কাল তোমাদের ছুটি থাকবে।”

পরোক্ষঃ স্যার বললেন যে, পর দিন আমাদের ছুটি থাকবে।

নিয়ম – ০৫

সর্বনাম ও ক্রিয়া বিশেষণের নিম্নরূপ পরিবর্তন হয়-

প্রত্যক্ষ পরোক্ষ প্রত্যক্ষ পরোক্ষ
এই সেই সে
এটা ওটা,সেটা এখানে সেখানে
ইহা তাহা আজ সেদিন
আগামীকাল পরদিন ওখানে ঔখানে
গতকাল আগেরদিন এখন তখন
এবার সেবার এভাবে সেভাবে
গতকল্য পূর্বদিন আসা যাওয়া
এরূপে সেরূপে এসব সেসব

নিয়ম – ০৬

আশ্রিত খন্ড বাক্যের ক্রিয়ার কাল পরোক্ষ উক্তিতে সব সময় মূল বাক্যাংশের ক্রিয়ার কালের উপর নির্ভর করে না। যেমন –

প্রত্যক্ষঃ মেয়েটি লিখেছিল, ” শহরে খুব গরম পড়েছে। “

পরোক্ষঃ মেয়েটি লিখেছিল যে, শহরে খুব গরম পড়েছিল।

নিয়ম – ০৭

চিরন্তন সত্যের উদ্ধৃতি থাকলে পরোক্ষ উক্তিতে কালের কোন পরিবর্তন হয় না। যেমন –

প্রত্যক্ষঃ স্যার বললেন, ” পৃথিবী গোলাকার। “

পরোক্ষঃ স্যার বললেন যে, পৃথিবী গোলাকার।

নিয়ম – ০৮

প্রশ্নবোধক, অনুজ্ঞাসূচক ও আবেগসূচক প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করতে হলে প্রধান খন্ড বাক্যের ক্রিয়াকে ভাব অনুসারে পরিবর্তন করতে হয়। যেমন –

প্রশ্নবোধক বাক্য

প্রত্যক্ষঃ শিক্ষক বললেন,” তোমরা কি ছুটি চাও?”

পরোক্ষঃ আমরা ছুটি চাই কি না, শিক্ষক তা জিজ্ঞেস করলেন।

অনুজ্ঞাসূচক বাক্য

প্রত্যক্ষঃ তিনি বললেন,” দয়া করে ভেতরে আসুন।”

পরোক্ষঃ তিনি (আমাকে) ভেতরে যেতে অনুরোধ করলেন।

আবেগসূচক বাক্য

প্রত্যক্ষঃ ইফাদ বলল, ” বাঃ! পাখিটি তো চমৎকার।”

পরোক্ষঃ ইফাদ আনন্দের সাথে বলল যে, পাখিটি চমৎকার।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *