বিশ্বগ্রাম বলতে কী বোঝায়? বিশ্বগ্রামের সুবিধা ও অসুবিধা কি?
বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ (Global Village) বলতে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে গড়া বিশ্বকে বুঝি। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা যেখানে পৃথিবীর সকল মানুষই একটি একক সমাজে বসবাস করে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা তাদের চিন্তা চেতনা, অভিজ্ঞতা ও সংস্কৃতি-কৃষ্টি ইত্যাদি শেয়ার করতে পারে ও একে অপরকে সেবা প্রদান করতে পারে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যকার দূরত্বের সংক্ষেপণের কারণে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশকে আমরা ছোট ছোট এলাকা ভাবতে পারছি যাদের সমন্বয়ে গোটা পৃথিবীটাকে একটা বিশ্বগ্রাম হিসেবে ভাবতে পারছি।
বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার উপাদানসমূহ
বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার প্রধান প্রধান উপাদান গুলো নিম্নে আলোচনা করা হল–
১. হার্ডওয়্যার (Hardware);
২. সফটওয়্যার (Software);
৩. ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি (Internet Connectivity);
৪. ডাটা (Data);
৫. মানুষের জ্ঞান বা সক্ষমতা
১। হার্ডওয়্যার (Hardware)
যেকোনো ধরনের যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য সর্বপ্রথম উপযুক্ত হার্ডওয়্যার সামগ্রীর প্রয়োজন। হার্ডওয়্যার বলতে কম্পিউটারের সাথে যন্ত্রপাতি, মোবাইল ফোন, স্মার্ট ফোন, অডিও ভিডিও রেকর্ডার, স্যাটেলাইট, রেডিও, টেলিভিশন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত ডিভাইসসমূহ।
২। সফটওয়্যার (Software)
বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য হার্ডওয়্যার এর পাশাপাশি সফটওয়্যারের ও প্রয়োজন।সফটওয়্যার এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজিং সফটওয়্যার, কমিউনিকেটিং সফটওয়্যার এবং প্রোগ্রামিং ভাষা।
৩। ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি (Internet Connectivity)
কানেকটিভিটির মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত প্রতিটি মানুষের নিকট পৌঁছাতে পারে।নিরাপদ তথ্য আদান-প্রদানই হচ্ছে বিশ্বগ্রামের মূল ভিত্তি। আর নিরাপদ তথ্য আদান-প্রদানের জন্য প্রয়োজন নিরাপদ ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি।
৪। ডাটা (Data)
ডাটা হচ্ছে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু ইনফরমেশন। ডাটাকে প্রসেসিং করে ব্যবহারযোগ্য তথ্যে পরিণত করা হয়।বিশ্বগ্রামের বসবাস করতে প্রয়োজনে বিভিন্ন তথ্য ডাটা থেকে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রসেসিং করে পাওয়া যায়। বিশ্বগ্রামের ডাটা ও তথ্যকে মানুষ তার প্রয়োজনে একে অপরের সাথে বিনামূল্যে বা অর্থের বিনিময়ে শেয়ার করতে পারে।
৫। মানুষের জ্ঞান বা সক্ষমতা
মানুষের জ্ঞান বা সক্ষমতা বিশ্বগ্রামের উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিশ্বগ্রাম হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। এ কারণে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে মানুষের সচেতনতা ও সক্ষমতা ইত্যাদির ওপর এর প্রয়োগ নির্ভর করছে। এ প্রযুক্তির অবকাঠামো ব্যবহার করার জ্ঞান না থাকলে এর সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। তাই মানুষের জ্ঞান বা সক্ষমতা খুবই প্রয়োজন।
বিশ্বগ্রামের সুবিধাঃ
- বিভিন্ন দেশ এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
- ক্লিক করে মুহূর্তেই যে কোন দেশের তথ্য জানা যায়।
- মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের যে কোন স্থানের কোন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা যায়।
- বিশ্বগ্রামের ফলে মানুষের কাজের দক্ষতা এবং গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- সহজেই বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল জানা যাচ্ছে।
- মুহূর্তেই বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ই-মেইলের মাধ্যমে টেক্সট, ছবি, অডিও এবং ভিডিও আদান-প্রদান করা যায়।
- বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার, ফ্রিওয়্যার, বিনোদন উপকরণ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা যায়।
- বিভিন্ন শিক্ষামূলক সাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য আহরণ করে জ্ঞানার্জন করা যায়। অনলাইনে যেকোনো লাইব্রেরি থেকে বই পড়া যায় এবং ঘরে বসেই বিশ্বের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোর শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।
- টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে বসে বিশ্বের নামকরা চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়।
- ইন্টারনেট টিভি ও ইন্টারনেট রেডিও চালুর ফলে ঘরে বসেই কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের অনুষ্ঠান উপভোগ করা যায়।
- ঘরে বসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা পড়া যায়।
- ঘরে বসেই পণ্য কেনা বেচা করা যায়। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে এবং লেনদেন সহজ হচ্ছে।
- ওয়েবপেজে একটি বিজ্ঞাপন নিমেষেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
- স্যাটেলাইট টেলিভিশন, ইন্টারনেটনির্ভর অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে প্রতি মুহুর্তে বিশ্বের কোথায় কি ঘটছে সে খবরাখবর জানা যায়।
- ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে টাকা ইনকাম করা যায়।
বিশ্বগ্রামের অসুবিধাঃ
- ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে হ্যাকিং এর মাধ্যমে গোপনীয় তথ্য চুরি হচ্ছে।
- সাইবার আক্রমণ সংঘটিত হচ্ছে।
- ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরির মাধ্যমে ই-কমার্স পদ্ধতিটিকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
- মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে।
- পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।
- মিথ্যা তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে।