Blog
1 min read

কপিরাইট আইন কি বা কাকে বলে? ও এর সুবিধা

কপিরাইট আইন কি বা কাকে বলে?

কপিরাইট মূলত একটি আইন যা লেখা, কন্টেন্ট, ছবি, সফটওয়্যার বা যে কোন জিনিস এর লেখক, প্রকাশক বা প্রধান মালিকের অধিকার সংরক্ষণ করে যা সেই প্রকাশকের বা মালিকের অনুমতি ছাড়া যে কেউ ব্যক্তিগত কাজে বা অন্য কোন কাজে সরাসরি কপি করে ব্যবহার করলে তা কপিরাইট আইন লঙ্ঘন হবে এবং অপরাধী বলে বিবেচিত হবে।

পৃথিবীর দেশে দেশে সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মের কপি বা পুনরুৎপাদন, অবৈধ ব্যবহার ইত্যাদি বন্ধের জন্য যে আইনের বিধান রাখা হয়েছে, তাকে কপিরাইট আইন বলে।

মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে কপি করা বা নকল করা সহজ হয়েছে বলে, লেখকদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য ১৬৬২ সালে যুক্তরাজ্যে সর্বপ্রথম কপিরাইট আইন চালু হয়। এ আইনে বিভিন্ন বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ বা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের আওতায় চলে আসে।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ সকল সৃজনশীল বা বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ ব্যবহার করার স্বাধীনতা থাকে। বিশেষ করে একাডেমিক বা লেখাপড়ার কাজে সৃজনশীল কাজ কপি করা যায়। অর্থাৎ, লেখাপড়ার কাজে কোন বইয়ের ফটোকপি করলে তাতে কপিরাইট আইন ভঙ্গ হয় না। এরকম ব্যবহারকে ফেয়ার ইউজ বলে।

কপিরাইট / কপিরাইট আইনের সুবিধা

ডিজিটাল যুগে তৈরিকৃত যেকোন জিনিসের কপিরাইট নিবন্ধন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে যেকোনো সৃজনশীল কর্মকে এর প্রকৃত মালিককে সুবিধা ভোগ করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়। চলুন তাহলে এর সুবিধা সম্পর্কে জেনে নেই –

  • কোন লেখকের লিখা যদি কপিরাইট নিবন্ধিত হয়, তাহলে তার লিখা তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ প্রকাশ করতে পারে না। এতে তার লিখা সংরক্ষিত থাকে। এতে করে পরবর্তীতে সে নতুন লিখা প্রকাশ করার উৎসাহ পায়।
  • কোন জিনিসের প্রধান মালিক (যার নামে কপিরাইট করা থাকে) তাঁদের কাজের জন্য সম্মানী পান, যা তাদের কাজের প্রেরণা যোগায়।
  • লেখক, বিজ্ঞানী, শিল্পী ইত্যাদি লোকেরা তাদের সৃষ্টিকর্মের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন। তারা তাদের অধিকার নিশ্চিত করে এবং দেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো তাদের স্বার্থ রক্ষা করা।
  • এ আইনের ফলে তাঁদের সৃষ্টি কর্ম তাঁদের অনুমতি ছাড়া কেউ চাইলেও পরিবর্তন, পুনঃমুদ্রণ বা নিজের নামে ছাপাতে পারে না।
  • এ আইনের ফলে সৃষ্টিশীল কাজের বিকাশ ঘটে।
  • আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন সকল দেশের জন্য আশীর্বাদ, কারণ এ আইনের কারণে এক দেশের সৃষ্টিকর্ম অন্য দেশে নিরাপত্তা পায় ইত্যাদি।

এবার অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে কপিরাইট কি বৈধ? => না কপিরাইট বৈধ না।

বাংলাদেশে কপিরাইট আইন

১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে কপিরাইট আইন তৈরি হয়। তবে তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অনেক পরিবর্তনের ফলে কপিরাইট ধারণাও পাল্টে গেছে।

এ কারণে পরবর্তীতে ২০০০ সালে নতুন একটি কপিরাইট আইন তৈরি করা হয়। এটি ২০০০ সালের ১৮ জুলাই পাস হয় এবং বাংলাদেশ গেজেটে পাস হয়। ২০০৫ সালে এটি পুনরায় সংশোধন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ” এই আইনে সাহিত্যকর্ম, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, শিল্পকর্ম ও সাউন্ড রেকর্ডিং কপিরাইট আইনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়।”

বাংলাদেশের কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের শাস্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, ” চলচ্চিত্র বাদে চারটি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার বছরের জেল ও দু লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে। আর চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ পাঁচ বছরের জেল।”

যেসব ক্ষেত্রে কপিরাইট বেশি লঙ্ঘন হচ্ছে

অনেকের মতে চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র আর সঙ্গীতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কপিরাইট লঙ্ঘন হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম বলেন, ” গীতিকার বা সুরকার বা শিল্পীর অনুমতি ছাড়া বিভিন্নভাবে তাদের গান ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আইনের লঙ্ঘন। সাহিত্যের ক্ষেত্রে হলেও সেটা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে।”

তেমনই কিছু হচ্ছে –

  • কিন্তু বর্তমানে অনেকক্ষেত্রেই সুরকারের অনুমতি ছাড়া মূল সঙ্গীত ব্যবহার করা হচ্ছে। মালিকের অনুমতি ছাড়াই রিংটোন, ওয়ালপেয়ারে সেট হচ্ছে।
  • তাছাড়া ইন্টারনেট থেকে গান ডাউনলোড করে নেওয়া থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন বা পেন ড্রাইভের মাধ্যমে গান বা চলচ্চিত্র পাইরেসির ফলে এর নির্মাতাদের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
  • এছাড়াও ঢাকার নীলক্ষেত এলাকায় পাইরেসি বইয়ের বিশাল একটি বাজার তৈরি হয়েছে। ইত্যাদি।

তবে এসব বই বা সফটওয়্যার বিদেশি হওয়ায় কেউ কপিরাইট আইনে অভিযোগ করে না বলে এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কিছুদিন আগে র‍্যাব-পুলিশ গান বা চলচ্চিত্রের পাইরেসির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অনেক দোকান বন্ধ করে দেয়।

আবার বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু সে অভিযান থেমে যাবার পর পুনরায় শুরু হয়েছে পাইরেসি ব্যবস্থা। কবে নাগাল এসব বন্ধ হবে কেউ জানে না।

Rate this post