রোজার নিয়ত | অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মাঝে অন্যতম একটি হলো রোজা। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য লাভ করা যায়।

রোজা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে বলেছেন,

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া (আত্মশুদ্ধি) অর্জনে করতে পার।” (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

রোজা পালন করার জন্য সাহরি খাওয়া আবশ্যক। রাসূল (সাঃ) সাহরি গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন। আবার ইফতারের জন্যও তাগিদ দিয়েছেন।

হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমাদের রোজা এবং আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। (অর্থাৎ মুসলিমরা সাহরি খায় আর ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা সাহরি খায় না)।” (মুসলিম, নাসাঈ)

রোযা পালনে সাহরি ইফতারের গুরুত্বের পাশাপাশি রোজার নিয়তেরও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সাহরি খাওয়ার পর রোজার নিয়ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রোজার নিয়ত

রোজা রাখা যেমন ফরজ কাজ তেমনি রোজার নিয়ত করাও ফরজ। নিয়ত ছাড়া দিনভর না খেয়ে উপবাস করলেও রোযা হবে না। রোযা রাখার জন্য সাহরি খাওয়ার পর অন্তরের দৃঢ় সংকল্পই হলো নিয়ত। তাহলে আর দেরি না করে চলুন রোজার নিয়ত জেনে নেই –

রোজার নিয়ত (আরবি)

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আংতাস সামিউল আলিম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল তোমার পক্ষ থেকে পবিত্র রমজানের নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

আবার আপনি নিম্নের দেওয়া উপায়ের মাধ্যমেও রোজার নিয়ত করতে পারবেন –

بِصَوْمِ غَدٍا نَوَيْتُ مِنْ شَهْرِ رَمَضَان

বাংলা উচ্চারণ : বিসাওমি গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রামাদান।

অর্থ : আমি রমজান মাসের আগামীকালের রোজা রাখার নিয়ত করছি।

নিয়ত আপনি আরবিতেও করতে পারবেন আবার বাংলায়েও। মুখে জোরে জোরে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। এ নিয়ে আল্লামা শামি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ফাতাওয়ায়ে শামিতে উল্লেখ করেছেন– “আভিধানিক সূত্রে নিয়ত হলো ‘আজম’। আর ‘মনের দৃঢ় সংকল্পকে’ আজম বলা হয়।”

অনেকে জানেই না যে রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা ফরজ। তাই অনেকে নিয়ত করে না। এতে উপোস থাকলেও রোযা আদায় হয় না। তাই রোজা রাখতে হলে রোজার জন্য নিয়ত করতে হবে। মুখে উচ্চারণ করার পরও অন্তরে একনিষ্ঠ সংকল্প রাখতে হবে। তবেই রোজা আদায় হবে।

রোজার নিয়ত করার সময়

রোযার নিয়ত করার ভালো সময় হলো সাহরির পর বাকি রাত। এ সময়ের মাঝেই নিয়ত করা উত্তম। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না।”(আবু দাউদ)

কিছু কিছু ইসলামিক স্কলারদের মতে, “দিনের দ্বিপ্রহরের আগে রোজার নিয়ত করা না হয়ে থাকলে সেই রোজা বিশুদ্ধ হবে না। এর পরও রোজাহীন অবস্থায় দিনের বাকি সময়ে পানাহার করা রমজানুল মোবারকের সম্মানের বিরোধী বলে তা জায়েজ নয়।”(ইমদাদুল ফাতাওয়া)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *