Blog

যে কোন ফরম্যাটে স্মার্টফোনে নিজে নিজে ই বুক তৈরি করুন!

1 min read

ইন্টারনেটের কল্যাণে বর্তমানে সবকিছু এখন হাতের মুঠোয়। এজন্য পড়াও কাজটিও আপনি সহজেই করে ফেলতে পারেন। আপনার মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ কম্পিউটারে সহজেই ই বুক পড়া যায়।

প্রযুক্তির উন্নয়নে আমাদের বই পড়ার অভ্যাসেও পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এখন মোবাইল ফোনে বা ট্যাবলেট কম্পিউটারে ডিজিটাল উপায়ে বই পড়ি।যেমনঃ ই বুক।

বর্তমানে ই-বুক খুবই পরিচিত একটা শব্দ! আপনি যদি বই প্রেমী হয়ে থাকেন এবং ই-বুক নিয়ে কোন অ্যালার্জি না থাকে, তাহলে শিওর হয়ে বলা যায় আপনি কখনো না কখনো ই-বুক পড়েছেন। যাদের ই-বুকের প্রতি আগ্রহ আছে তাদের নিজে একটি ই-বুক তৈরী করার ইচ্ছেটা মনে আসা একটুও অস্বাভাবিক নয়। এক সময় ই-বুক তৈরীর কাজটি খুবই কঠিন আর কম্পিউটার নির্ভর ছিল কিন্তু বর্তমানে তা নয়, স্মার্টফোনেও ইবুক তৈরি করা যায় এবং এটি তৈরি করা কঠিন কোন বিষয়ই নয়।

বাংলায়  স্ক্যান করা পিডিএফ ই-বুক  তৈরী করা খুবই কঠিন কাজ।তারপরও আপনি সেই বইটি পড়তে পারলেও আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার বা ই-বুক রিডার সেটি পড়তে পারবে না।

আপনার ফোন বা কম্পিউটার স্পিচ টু টেক্সট ব্যাবহার করে আপনাকে বইটি পড়ে শোনাতে পারবে না।পছন্দের লাইন মার্ক করে রাখতে পারবে না। কিন্তু যদি টেক্সট থেকে ইপাব বা মোবি ফরম্যাটে বইটি তৈরী করা হয়, তাহলে এ-সবসহ ই-বুকের দারুন সব সুবিধার সবগুলো পাওয়া যায়।

হাজারো সুবিধার জন্য ই-বুক পৃথিবীব্যাপী এখন খুবই জনপ্রিয়। উদাহরণ হিসেবে, Amazon, ibook, Google Play Books বা Sheiboi, Banglalink Boighor, Boipoka এর মতো প্রজেক্টের কথা বলা যায়।

ই-বুক কী? (What is an E-book?)

E-book এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে Electronic book.দীর্ঘ রূপের পাঠ্য, বই আকারে প্রদর্শন করতে কম্পিউটার,মোবাইল ডিভাইস বা ই-বুক রিডার ব্যবহার করে। ই-বুক গুলির একাধিক ডিজিটাল পেইজ রয়েছে যার মাধ্যমে লোকেরা চলাচল করতে পারে এবং প্রায়ই একটি PDF ডকুমেন্ট হিসেবে প্যাকেজ করা হয়। যাতে সহজেই একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে প্রেরণ করা যায়।

ই-বুকের সুবিধা কী? (What Are the Benefits of an Ebook?)

  1. সহজে যেখানে সেখানে নিয়ে যাওয়া যায় অর্থাৎ পরিবহন সুবিধা।

2. যেকোন সময় আপডেট করা যায়।
3. একেবারে একসাথে অনেক লোকের সাথে শেয়ার করা যায়।
4. ই-বুকগুলি পরিবেশ-বান্ধব।
5. তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহ করা যায়।
6. অর্থ সাশ্রয় করে।
7. সংরক্ষণ নিয়ে চিন্তা নেই।
8. ফাইল সাইজ একেবারে ছোট।
9. যেকোনো ডিভাইস এ পাঠযোগ্য।
10. ই-বুক সার্চ ফ্রেন্ডলি হয় ইত্যাদি।

স্মার্টফোনে ইবুক তৈরি করুন

আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটিকে কাজে লাগিয়ে আপনি খুব সহজেই ই-বুক তৈরি করতে পারবেন।তাই স্মার্টফোন ব্যবহার করে কীভাবে ই-বুক তৈরি করা করা যায় সেই বিষয়টি আজ আমরা এখানে দেখবো।

ই-বুক তৈরি শুরু করার জন্য চলুন প্রথমেই বিনামূল্যের দুইটি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিই।এগুলো হল:

  • Google PhPhoto
  • E-book Converter

Google Photos

গুগল ফটোগুলি সীমাহীন ফ্রি ক্লাউড ফটো ব্যাকআপ, এআই-চালিত ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাবনা এবং শক্তিশালী অনুসন্ধান বৈশিষ্ট্য সরবরাহ করে। আমরা এখানে শুধুমাত্র গুগল লেন্সের ব্যবহার করব। গুগলের এই নতুন বৈশিষ্ট  সম্পর্কে অনেকেই হয়ত জানেন। গুগল লেন্স এমন একটি সরঞ্জাম যা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের দ্বারা নির্ধারণ করা যায় তা কোনও নতুন নেভিগেটের সাথে যোগাযোগ করে চিত্রের স্বীকৃতি ব্যবহার করে।

এটি আপনার তোলা ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে।আপনি এটি আপনার ক্যামেরায় চিত্র সনাক্ত করতে এবং ল্যান্ডমার্ক, স্থান, গাছপালা, প্রাণী, পণ্য এবং অন্যান্য সামগ্রী সম্পর্কে আরও তথ্য অর্জন করতে ব্যবহার করতে পারেন। এটি পাঠ্য স্ক্যান করতে এবং অনুবাদ করতেও ব্যবহৃত হতে পারে। সেই সাথে ছবি যদি কোন লেখা থাকে, সেটা যে ভাষারই হোক না কেন, সেটার টেক্সট করে দেবে। মানে স্টার্ট লেন্স বাটনে চাপ দিয়ে ছবি থেকে যে কোন লেখা আলাদা করে ফেলতে পারবেন!!

ডাউনলোড করুন

Ebook Converter

এটি একটি কনভার্টিং অ্যাপ। এটির সাহায্য যেকোন ডকুমেন্ট বা ই-বুক ফরম্যাট থেকে *.mobi ও *.epub সহ *.fb2, *.docx, *.azw3, *.txt, *.lrf, *.snb, *.rb, *.pdb, *.oeb, *.lit ফরম্যাটে খুব সহজেই কনভার্ট করে নিতে পারবেন। এ অ্যাপটি বিনামূল্যর হওয়ায় আপনাকে অ্যাড দেখার বিরক্তিটুকু সহ্য করতে হবে।

তবে আপনি যদি এই বিরক্তিকর অ্যাড থেকে মুক্তি পেতে চান  তাহলে  no ads ভার্সনটি ১০০ টাকায় কিনে ব্যবহার করতে পারেন। এটি দিয়ে শুধু মাত্র অ্যাড দেখানো বন্ধ করা ছাড়া আর কোন বৈশিষ্ট্যের   পরিবর্তন হবে না।কিন্তু ফ্রি ভার্সনিটিতে অ্যাডের বিরক্তটুকু সহ্য করা ছাড়া আর কোন অসুবিধা হবে না অর্থাৎ কাজের  ক্ষেত্রে কোন কমতি হবে না।

ডাউনলোড করুন

ইন্সটল করা শেষ। এবারে আসি ই-বুক তৈরীর নিয়মকানুনে।

কিভাবে তৈরী করবেন ই-বুক?

ই-বুক তৈরী করার জন্য এখানে পুরো বিষয়টি আমরা চারটি পদ্ধতিতে দেখাবো।যথাঃ

  • স্ক্যানিং
  • ওসিআর
  • এডিটিং
  • ই-বুক ফরম্যাটে কনভার্টিং

প্রথম ধাপঃ স্ক্যানিং

ই-বুক তৈরীর জন্য আপনাকে প্রথমে আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো বই বেছে নিতে হবে। বেছে নেওয়া বইটির প্রথম পৃষ্টা থেকে শুরু করে ক্রমানুসারে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত    সবগুলো পৃষ্ঠার ঝকঝকে ছবি তুলে নিতে হবে। ছবি তোলার সময় শুধু এক পাতার ছবি যেন সুন্দর ও স্পষ্টভাবে আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

দুইপাতা বা এক পাতা বা এক পৃষ্ঠার সাথে অন্য পৃষ্ঠার  কিছু অংশের ছবি তুললে ওসিআর করার সময় কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারেন। তবে এটা তেমন জরুরী কোন বিষয় না। মূল লক্ষ্য  হচ্ছে লেখা গুলো একদম সুন্দর ও পরিষ্কার আসলেই হবে।

দ্বিতীয় ধাপঃ ওসিআর (OCR)

OCR এর পূর্ণ রূপ হলো- Recognition Optical Character Recognition. অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন, বা ওসিআর এমন একটি প্রযুক্তি যা আপনাকে বিভিন্ন ধরণের ডকুমেন্টগুলি যেমন- স্ক্যান করা কাগজ নথি, পিডিএফ ফাইল বা ডিজিটাল ক্যামেরায় বন্দী চিত্রগুলি সম্পাদনযোগ্য এবং অনুসন্ধানযোগ্য ডেটাতে রূপান্তর করতে সক্ষম করে।

এই ধাপে আপনি আপনার  ফোনে যে Google Photos ইন্সটল করেছিলেন,প্রথমে সেটা ওপেন করবেন। এখানে প্রবেশ করে  Photos ট্যাবে গেলে আপনি আপনার তোলা ছবিগুলো দেখতে পাবেন।  প্রথমে আপনি প্রথম পৃষ্ঠার ছবিটি ওপেন করবেন। এর পরে লেন্স বাটনে ক্লিক! করে একটু অপেক্ষা করুন । ব্যাস, আপনার  ওসিআর করা শেষ।

নতুন একটি Pop up উইন্ডোটি ওপেন হবে। সেখান থেকে আপনি Text Selection এ গেলেই আপনার পৃষ্ঠাটির লেখাগুলো টেক্সট আকারে পেয়ে যাবেন এবং সেটা কপি করে ফেলবেন!ব্যাস কাজ শেষ।

তৃতীয় ধাপঃ এডিটিং

এডিটিং হ’ল তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত লিখন, ফটোগ্রাফি, ভিজ্যুয়াল, শ্রুতিমধুর এবং ফিল্ম মিডিয়া নির্বাচন এবং প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া। আপনার  কপি করা অংশটুকু এডিট করার পর আপনাকে কোন টেক্সট ফাইল কিংবা ওয়ার্ড ডকুমেন্টে পেস্ট করে দিতে হবে।

দেখবেন, লেখার মধ্য অপ্রয়োজনীয় অনেকগুলো নতুন নতুন লাইন তৈরী হয়েছে; সেগুলো কেটে পুরো লেখাটি একটু বই এর মতো সুন্দর করে প্যারাগ্রাফ করে নিবেন। বানান ভুল থাকলে সুগুলো সংশোধনও করে নিতে হবে। এ ধাপের কাজ শুধু এডিটিং করা।

এভাবে একটি পৃষ্ঠার এডিটিং শেষ হয়ে গেলে আপনাকে পরের পৃষ্ঠাগুলো আবার দ্বিতীয় ধাপ থেকে যেভাবে করেছেন সেভাবেই এই পর্যন্ত একে একে করে ফেলতে হবে। প্রতি পৃষ্টার এডিটিং এ আপনার মোটামুটি গড়ে ১০ মিনিট করে সময় লাগতে পারে। এভাবে একদম শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত টেক্সটগুলো নিয়ে সুন্দরভাবে একটি ডক বা টেক্সট ফাইল তৈরি করে ফেলা লাগবে।

চতুর্থ ধাপঃই-বুক ফরম্যাটে কনভার্টিং

এ ধাপে আপনার কাজ হচ্ছে ডকুমেন্ট   বা টেক্সট ফাইলটিকে ebook ফরম্যাটে কনর্ভাটিং করা। এটি করা তেমন কোন কঠিন বিষয় নয়। প্রথমে আপনি অ্যাপটি ওপেন করবেন।ওপেন করার পর ডান পাশের নিচের কোনায় থাকা অ্যাড বাটনে ক্লিক করে যে ডকুমেন্ট বা টেক্সট ফাইলটি তৈরি করে ছিলেন তা সিলেক্ট করবেন।

এক্ষেত্রে সার্চ অপশনটিকে ব্যবহার করে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে আপনার খুঁজে পেতে সুবিধা হবে। ফাইল এড করা হয়ে গেলে, স্ক্রিন সোয়াইপ করে Converting ট্যাবে চলে যাবেন। সেখানে Change Destination Directory অপশন থেকে আপনি চাইলে আপনার তৈরিকৃত ই-বুক ফাইলটি কোথায় গিয়ে পড়বে সেটা আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী ঠিক করে দিতে পারেন।আর  না চাইলে কিছু করতে হবে না।

এরপরে ফরম্যাট ঠিক করে দেবেন। ই-বুক ফরম্যাট হিসেবে সাধারণত *.epub কিংবা *.mobi ফরম্যাটই সবার কাছে বেশি জনপ্রিয়। এগুলো সব ডিভাইসেই পড়া যায়। Output profile যে রকম আছে সেরকমই থাক। বই এর কভারের একটি ছবি তুলে ইচ্ছে হল এখানে দিতে পারেন। না দিলেও সমস্যা নেই।না দিলে ডকুমেন্টটি যে নামে সেভ করেছিলেন, সে নামে একটি কভারপেজ অটোমেটিকভাবে তৈরি হবে।

এখন বইটির নাম, লেখকের নাম দিতে হবে । এটাও সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা আপনি চাইলে দিতে পারেন আবার নাও দিতে পারেন তবে দেওয়াটাই ভালো। বাংলা ইংরেজি যে কোন ভাষাতেই এটা দিতে পারেন। ব্যাস কাজ শেষ।

এবার Converting বোতামে চাপ দিন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুণ। Booommm!! আপনার ই-বুকটি তৈরী হয়ে গেছে।আপনার ফোনে ই-বুক রিডার ইনস্টল করা থাকলে আপনি চাইলে এখান থেকেই পড়তে পারবেন। আউটপুট ফোল্ডার থেকে ফাইলটি নিয়ে যেকারো সাথে শেয়ার করতে পারবেন।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x