VPN এর পূর্ণরূপ কি? ভিপিএন ব্যবহার করা হয় কেন? সুবিধা ও অসুবিধা

বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেমনি ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার পার্সোনাল ডাটা এবং প্রাইভেসি ডিটেইলস চুরি করার জন্য হ্যাকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ কারণে অনলাইন প্রাইভেসি এবং ডাটা সুরক্ষিত রাখার জন্য ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অনেকেই ভিপিএন সম্পর্কে জানেনা আর তাদের জন্যই আমার এ আর্টিকেলটি লিখা। চলুন তাহলে জেনে নেই VPN কি? VPN এর পূর্ণরূপ কি? ভিপিএন ব্যবহার করা হয় কেন? সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে।

VPN এর পূর্ণরূপ কি?

VPN এর পূর্ণরূপ হলো – Virtual Private Network. অর্থাৎ, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। এর মাধ্যমে আমরা যেকোনো দেশের সার্ভার ব্যবহার করে ঐ সার্ভারের IP Address নিয়ে ইন্টারনেটে প্রবেশ করতে পারি।

তাছাড়া ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক আপনাকে নিরাপদে ইন্টারনেটে সংযোগ করতে সাহায্য করে, আইপি ঠিকানা লুকিয়ে রাখে এবং কোনও এনক্রিপ্টেড টানেলের মাধ্যমে প্রেরণ করে আপনার ডাটা সুরক্ষিত করে রাখে।

ভিপিএন এর আরও কিছু পূর্ণরূপ

  • Virtual Productions Network
  • Volunteer Physicians Network
  • Vendor Part Number
  • Vendor Private Network
  • Virtual Path Number (telecommunications)

ভিপিএন (VPN) কি?

ভিপিএন (VPN) এর পূর্ণরূপ হল ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Virtual Private Network). এটি ইন্টারনেটে আপনার এবং অন্য একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে সিকিউর কানেকশন তৈরি করে। অর্থাৎ অনলাইন প্রাইভেসি এবং ডাটা সুরক্ষিত রাখার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করা হয়।

ভিপিএন ব্যবহার করার ফলে আপনি যে জায়গা থেকে ইন্টারনেট চালাচ্ছেন সে জায়গাটাকে গোপন রাখা হয় তার পরিবর্তে অন্য একটি জায়গা বা দেশ দেখিয়ে থেকে দেওয়া হয়। এতে হ্যাকাররা আপনার আসল লোকেশন খুঁজে পায়না। ফলে আপনি হ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন।

যেমন ধরুন, আপনি আপনার ভিপিএন সেটিং এ ইন্ডিয়া সিলেক্ট করে রেখেছেন কিন্তু আপনি বাংলাদেশে বসে ইন্টারনেট চালাচ্ছেন। ভিপিএন ব্যবহার করার কারণে আপনার বর্তমান লোকেশন ইন্ডিয়া হিসেবে সকলে দেখতে পাবে।

VPN ব্যবহারের সুবিধা

ভিপিএন ব্যবহার করার যেমন কিছু সুবিধা আছে, তেমনি কিছু অসুবিধা ও রয়েছে। চলুন তাহলে আগে vpn এর সুবিধা সম্পর্কে জেনে নেই।

  • VPN ব্যবহারের মাধ্যমে আপনারা যেকোন ব্লক ওয়েবসাইট Open করতে পারবেন
  • ভিপিএন ব্যবহার করে আপনি যখন কোন ব্লক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন তখন সেখানে কিন্তু অরিজিনাল আইপি অ্যাড্রেস শো করবে না। অরিজিনাল আইপি অ্যাড্রেস তখন হাইড থাকবে।
  • VPN ব্যবহার করলে তাকে ট্রাক করা খুব কঠিন। ফলে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষা করা যায়।

VPN ব্যবহারের অসুবিধা

ভিপিএন ব্যবহারে কিছু অসুবিধা ও রয়েছে। এগুলো হলো –

  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফ্রি VPN সার্ভিসগুলো পেইড হয় এবং কিছু ফ্রি ভিপিএন রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করলে প্রচুর বিজ্ঞাপন আসে।
  • কোনো একটি ওয়েবসাইট যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধ থাকে সেসব সাইটে বা কোনো অবৈধ সাইটে VPN দিয়ে প্রবেশ করা নিরাপত্তা আইন কে ভঙ্গ করে। যা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
  • আপনি যদি কোন ওয়েবসাইটে ভিপিএন ব্যবহার করে বারবার লগইন ও লগআউট করেন, তাহলে (ইউজার) স্প্যাম সন্দেহে আপনার একাউন্টটি ডিএ্যাক্টিভ্যাট করে দিতে পারে বা সেই ওয়েবসাইট আপনাকে ব্লক করে দিতে পারে।

ভিপিএন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

যখন আপনি আপনার ডিভাইসটিতে ভিপিএন কানেক্ট করেন তখন এটা অন্য একটা কম্পিউটারের সার্ভারের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করে এবং ইন্টারনেটের সাথে যোগাযোগের জন্য আপনার জন্য একটি গোপন রাস্তা তৈরি করে। আপনার আইএসপি (ISP) এই গোপন রাস্তার উপস্থিতি বুঝতে পারলেও এর মধ্যে ঢুকতে পারবে না।

যে কারনে আপনি কোন সাইট ব্রাউজ করছেন বা কি ডাটা Press করছেন তা ISP জানতে পারবে না। তখন আপনার দেশের কোন সাইট যদি ব্লক করা থাকে তখন সেই সাইটটিও আপনি ভিপিএন ব্যবহার করে ব্রাউজ করতে পারবেন। আর সব ডাটা ভিপিএন ব্যবহার করার সময় এনক্রিপ্টেড হয়ে যায়

ভিপিএন ব্যবহার করা হয় কেন?

বিভিন্ন ধরনের কাজে ভিপিএন ব্যবহার করা যায়। এর মধ্যে কয়েকটি হলো-

  • জিও রেস্ট্রিক্টেড কন্টেন্ট ব্রাউজ করতে
  • তথ্য নিরাপদ রাখতে
  • প্রকৃত লোকেশন গোপন করতে
  • টরেন্ট ব্যবহারের সময় গোপনীয়তা রক্ষা করতে ইত্যাদি।

জিও রেস্ট্রিক্টেড কন্টেন্ট ব্রাউজ করতে

বিভিন্ন অডিও ও ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটগুলোর কন্টেন্টগুলো নির্দিষ্ট দেশের জন্য স্পেসিফিক করা থাকে। আর এসব কন্টেন্টগুলো ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি যেকোন দেশে থেকেই ব্রাউজ করতে পারবেন।

যেমন ধরুন, এসব সাইট থেকে আপনি বাংলাদেসে বসে গান শুনতে পারবেন না। তবে আপনি চাইলে ভারত,আমেরিকা বা অন্য কোন দেশ যেখানে এর সার্ভিস আছে সেসব দেশের আইপিযুক্ত সার্ভারে ভিপিএন দিয়ে কানেক্ট করে আপনিও বাংলাদেশে বসেই এসব সাইট ব্যবহার করতে পারবেন।

তথ্য নিরাপদ রাখতে

পাবলিক প্লেসে আপনি যখন ফ্রি ওয়াইফাই হটস্পট ব্যবহার করেন তখন আপনার ব্রাউজিং ডেটা একই নেটওয়ার্কে থাকা অন্যান্য মানুষ ট্রেস করতে পারে (যদি এই বিষয়ে কেউ এক্সপার্ট হয়)। এক্ষেত্রে আপনি যদি বাঁচতে চান তাহলে আপনাকে ভিপিএন ব্যবহার করতে হবে।

ভিপিএন দিয়ে কানেক্ট করলে আপনার ওয়াইফাই সংযোগে কেউ আড়ি পাতলেও লাভ হবে না আপনার ISP নিজেও শুধু একটা প্রাইভেট নেটওয়ার্ক দেখবে। এর ভিতর যেসব ডাটা পাস হয় এগুলো কেউ দেখতে পাবে না।

প্রকৃত লোকেশন গোপন করতে

বিভিন্ন হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচতে আপনার প্রকৃত লোকেশন গোপন রেখে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চাইলে আপনি ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। ভিপিএন আপনাকে সেই সুবিধা দিবে।

ভিপিএন ব্যবহার করে প্রকৃত লোকেশন গোপন রাখা যায় এতে করে হ্যাকাররা আসল লোকেশন জানতে পারে না। ফলে সহজেই হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচা যায়।

টরেন্ট ব্যবহারের সময় গোপনীয়তা রক্ষা করতে

ট্রেসিং এড়াতে টরেন্ট থেকে ফাইল নামানোর সময় ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া আপনি যদি লিগ্যাল টরেন্টও ডাউনলোড করেন তবুও বেশি ট্রাফিকের ভয়ে আপনার ISP আপনার কানেকশন স্লো করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ট্রেস এড়াতে আপনি ভিপিএন ব্যবহার করে বাঁচতে পারেন। এছাড়াও আরো বিভিন্ন কাজে ভিপিএন ব্যবহার করা হয়।

ভিপিএন ব্যবহার কি নিরাপদ?

ভার্চুয়াল বিশ্বে কোন কিছুই পুরোপুরি নিরাপদ নয়। তবে ভিপিএন সেবাদাতাগুলোর প্রতি প্রায় অনেকেই আস্থা রেখেছ। আমার নিজের তৈরি করা ভিপিএন নেটওয়ার্ক হলেও মন্দ হয় না।

ভিপিএন নেটওয়ার্ক থেকে আপনার ডাটা হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি যে একদম নেই তা কিন্তু না। অনেক কোম্পানি আছে যারা ফ্রি আনলিমিটেড ভিপিএন দেওয়ার কথা বলে।তাই এসব ভিপিএন ব্যবহার করার সময় বুঝে শুনে না এগুলে বিপদে পড়তে পারেন। তাই ভিপিএন ব্যবহার করার আগে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে নিতে হবে।

ভিপিএন কীভাবে ব্যবহার করব ?

যে কোনো কম্পিউটার এবং মোবাইলে ভিপিএন ব্যবহার করা অনেক সহজ। আপনাদের ফোন এবং কম্পিউটারে যেভাবে অন্য সব অ্যাপস বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করেন এবং ইনস্টল করে ব্যবহার করেন ঠিক তেমনি ভিপিএন অ্যাপস বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে হবে।

ভিপিএন কি?

ভিপিএন অ্যাপস বা সফটওয়্যার ইন্সটল করার পর আপনাকে ভিপিএনের সেটিংসে গিয়ে সার্ভিস এনেবল বা অন করতে হবে। এরপর ভিপিএনের সুরক্ষিত নেটওয়ার্কের দ্বারা আপনার ইন্টারনেট কানেকশন নিজে নিজেই কানেক্ট হয়ে যাবে।

কম্পিউটারের জন্য সেরা ফ্রি ভিপিএন সফটওয়্যার

কম্পিউটারের জন্য কয়েকটি সেরা ভিপিএন সফটওয়্যার হল-

এন্ড্রয়েড মোবাইলের জন্য সেরা ফ্রি ভিপিএন সফটওয়্যার

এন্ড্রয়েড মোবাইলের জন্য কয়েকটি সেরা ফ্রি ভিপিএন সফটওয়্যার হলো –

তাহলে আজ এখানেই থাকলো। আশা করি ভিপিএন কি? VPN এর পূর্ণরূপ কি? ভিপিএন ব্যবহার করা হয় কেন? সুবিধা ও অসুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। আর আমার এ আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *