কারক কাকে বলে? কারক কত প্রকার ও কি কি?

আজ আমরা জানব কারক কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি নিয়ে।

কারক কাকে বলে?

কারক অর্থ যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। এর সন্ধিবিচ্ছেদ হলো কৃ + ণক = কারক। বাক্যস্থিত ক্রিয়া পদের সাথে নামপদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে।

কারকের প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ

কারক ছয় প্রকার। যথাঃ

  • কর্তৃকারক
  • কর্মকারক
  • করণ কারক
  • সম্প্রদান কারক
  • অপাদান কারক
  • অধিকরণ কারক

একটি বাক্যে ৬ টি কারকের উদাহরণ

** ইফাদ প্রতিদিন ভাঁড়ার থেকে নিজ হাতে গরিবদের চাল দিতেন।

এখানে,

ক্রম উদাহরন কারক
০১ ইফাদ কর্তৃ
০২ চাল কর্ম
০৩ হাতে করণ
০৪ গরিবদের সম্প্রদান
০৫ ভাঁড়ার থেকে অপাদান
০৬ প্রতিদিন অধিকরণ

কারক মনে রাখার কৌশল

ক্রিয়াপদকে প্রশ্ন করলে যে উওর পাওয়া যায় কারক
কে / কারা? কর্তৃ
কি / কাকে? কর্ম
কীভাবে / কেন / কিসের দ্বারা? করণ
কি / কাকে? ( স্বত্ব ত্যাগ) সম্প্রদান
কোথা হতে? ( উৎস, বিচ্যুতি,স্থানন্তর,আরম্ভ) অপাদান
কখন / কোথায় / কোন বিষয়ে? অধিকরণ

কর্তৃকারক

বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে কর্তৃকারক বলে। অর্থাৎ, ক্রিয়াকে কে বা কারা দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উওর পাওয়া যায় তাই কর্তৃকারক। যেমন – ছেলেরা ফুটবল খেলে। (কারা খেলে? ছেলেরা – কর্তৃকারক)

কর্তৃকারকের প্রকারভেদ

বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্তৃকারক ৪ প্রকার। যথাঃ-

  • মূখ্য কর্তা
  • প্রযোজক কর্তা
  • প্রযোজ্য কর্তা
  • ব্যতিহার কর্তা

মূখ্য কর্তাঃ যে নিজে নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে মূখ্য কর্তা বলে। যেমন – মেয়েরা ফুল তোলে।

প্রযোজক কর্তাঃ মূল কর্তা যখন অন্যকে কোন কাজে নিয়োজিত করে তা সম্পন্ন করায়, তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমন – মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।

প্রযোজ্য কর্তাঃ মূল কর্তার করণীয় কার্য যাকে দিয়ে করানো হয়, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন – মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।

ব্যতিহার কর্তাঃ কোন বাক্যে যে দুটো কর্তা একসাথে একই জাতীয় কাজ করে, তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন – বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়।

কর্মকারক

যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে কর্মকারক বলে। কর্ম ২ প্রকার। যথাঃ

  • মুখ্য কর্ম
  • গৌণ কর্ম

যেমন – ইফাদ আমাকে (গৌণ কর্ম) একটি ফুল (মুখ্য কর্ম) কিনে দিয়েছিলেন।

কর্মকারকের প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ

১. সকর্মক ক্রিয়ার কর্মঃ ইসরাত ফুল তুলছে।

২. প্রযোজক ক্রিয়ার কর্মঃ মেয়েটিকে বিছানায় শোয়াও।

৩. সমধাতুজ কর্মঃ খুব এক ঘুম ঘুমিয়েছি।

৪. উদ্দেশ্য ও বিধেয়ঃ দ্বিকর্মক ক্রিয়ার দুটি পরস্পর অপেক্ষিত কর্মপদ থাকলে প্রধান কর্মটিকে উদ্দেশ্য কর্ম এবং অপেক্ষিত কর্মটিকে বিধেয় কর্ম বলা হয়। যেমন – দুধকে (উদ্দেশ্য কর্ম) মোরা দুগ্ধ (বিধেয় কর্ম) বলি

করণ কারক

করণ অর্থ – যন্ত্র, সহায়ক, উপায়। ক্রিয়া সম্পাদনের যন্ত্র, সহায়ক বা উপায়কেই করণ কারক বলে। অর্থাৎ, ক্রিয়াপদকে কিসের দ্বারা বা কী উপায়ে প্রশ্ন করলে যে উওর পাওয়া যায় তাকেই করণ কারক বলে। যেমন –

ইফাদ কলম দিয়ে লিখে। (উপকরণ – কলম)

ছেলেরা বল খেলে।

সম্প্রদান কারক

যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান,অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা হয় তাকে সম্প্রদান কারক বলে। যেমন –

ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।

সৎপাত্রে কন্যা দান কর।

জ্ঞাতব্যঃ স্বত্ব ত্যাগ করে না দিলে কর্মকারক হবে।

যেমন – ধোপাকে কাপড় দাও।

অপাদান কারক

যা থেকে কিছু বিচ্যুত, গৃহীত,জাত,বিরত,আরম্ব,দূরীভূত ও রক্ষিত হয় এবং যা দেখে কেউ ভীত হয় তাকে অপাদান কারক বলে। যেমন –

মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে। (বিচ্যুত)

দুধ থেকে দই হয়। (গৃহীত)

খেজুর রসে গুড় হয়। (জাত) ইত্যাদি।

অধিকরণ কারক

ক্রিয়া সম্পাদনের কাল (সময়) এবং আধারকে অধিকরণ কারক বলে। যেমন – আমরা প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। (স্থান)

অধিকরণ কারকের প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ

অধিকরণ কারক ৩ প্রকার। যথাঃ

  • ঐকদেশিক
  • অভিব্যাপক
  • বৈষয়িক

ঐকদেশিকঃ বিশাল স্থানের যেকোন অংশে ক্রিয়া সংগঠিত হলে তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ বলে। যেমন – বনে সিংহ আছে।

অভিব্যাপকঃ উদ্দিষ্ট বস্তু যদি সমগ্র আধার ব্যাপ্ত করে বিরাজমান থাকে তাকে অভিব্যাপক আধারাধিকরণ বলে। যেমন – তিলে তৈল আছে।

বৈষয়িকঃ বিষয় বিশেষে বা কোন বিশেষ গুণে কারও কোন দক্ষতা বা ক্ষমতা থাকলে সেখানে বৈষয়িক অধিকরণ হয়। যেমন – ইফাদ বাংলায় কাঁচা, কিন্তু কম্পিউটারে ভালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *