Modal Ad Example
পড়াশোনা

যুক্তফ্রন্ট কি? যুক্তফ্রন্ট গঠনের উদ্দেশ্য ও ২১ দফা কর্মসূচি।

1 min read

১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে উঠা রাজনৈতিক জোট হলো যুক্তফ্রন্ট। শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী মিলে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি কর্মসূচি ২১টি দফায় বিন্যস্ত ছিল। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি প্রতীক ছিল ‘নৌকা’ এবং মুসলিম লীগ ও পাকিস্তানের আধিপত্য এ দু’য়ের বিরোধিতা ছিল যুক্তফ্রন্টের মূল ভিত্তি।

যুক্তফ্রন্ট গঠনের উদ্দেশ্য
যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের অন্যায়, অত্যাচার ও বাঙালিদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের অবসান ঘটানো। এছাড়া বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃত্ববৃন্দ অনুধাবন করেছিলেন যে, ন্যায্য দাবিসমূহ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিকল্প নেই।

যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি
যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি ছিল নিম্নরূপ–

১) বাংলাকে পাকিস্থানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
২) বিনা খেসারতে জমিদারি প্রথা ও খাজনা আদায়কারী মধ্যস্বত্ব উচ্ছেদ করে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে উদ্বৃত্ত জমি বন্টনের ব্যবস্থা করা হবে। উচ্চহারের খাজনা ন্যায়সঙ্গতভাবে হ্রাস এবং সার্টিফিকেটে জারি করে খাজনা আদায়ের প্রথা রহিত করা হবে।
৩) পাট ব্যবসা জাতীয়করণ ও পাটের ন্যায্যমূল্য প্রদান করা হবে। মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভার পাট কেলেঙ্কারির তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করা হবে।
৪) সমবায় কৃষি পদ্ধতির প্রবর্তন এবং সরকারি সাহায্যে কুটির শিল্পের উন্নতি সাধন করা হবে।
৫) পূর্ব বাংলাকে লবণের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে মুসলিম লীগ শাসনামলে লবণ কেলেঙ্কারির তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি প্রদান করা হবে।

৬) অবিলম্বে বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন করা হবে।
৭) সেচ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও দুর্ভিক্ষ রোধ করা হবে।
৮) পূর্ব বাংলাকে শিল্পায়িত করা ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে
৯) অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে।
১০) সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবধান দূর করা হবে এবং বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করা হবে।

১১) বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত সকল কালাকানুন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হবে।
১২) প্রশাসনিক ব্যয় সংকোচ ও কর্মচারীদের বেতনের সামঞ্জস্য বিধান করা হবে এবং মন্ত্রীদের ১০০০ টাকার বেশি বেতন দেয়া হবে না।
১৩) ঘুষ ,দুর্নীতি বন্ধ ও সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ করা এবং ১৯৪০ সাল থেকে অর্জিত অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
১৪) সকল নিরাপত্তা বন্দিকে মুক্তি দান ,সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করা হবে ‌।
১৫) শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করা হবে।

১৬) বর্ধমান হাউসকে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাগার করা হবে।
১৭) বাংলা ভাষার জন্য শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
১৮) একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হবে।
১৯) লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ববাংলাকে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রধান , পূর্ব বাংলায় নৌবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপন, অস্ত্র কারখানা নির্মাণ এবং আনসার বাহিনীকে মিলিশিয়া হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২০) যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার দ্বারা আইন সভার আয়ু বর্ধিত করা হবে না।সাধারণ নির্বাচনের ৬ মাস পূর্বেই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করবে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
২১) আইনসভার শূন্য আসন তিন মাসের মধ্যে পূরণ করা হবে এবং পরপর তিনটি উপ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীরা পরাজিত হলে মন্ত্রিসভা থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন।

Also Read: ট্রাফিক কাকে বলে? ট্রাফিক সাইন কত প্রকার ও কি কি?

 

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “যুক্তফ্রন্ট কি?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

4.6/5 - (53 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x