দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক কি?

দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক (Anti-Corruption Commission) হচ্ছে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন। এটি বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ, ও দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত একটি কমিশন। দুদক ২০০৪ সালের ৯ মে মাসের দুর্নীতি দমন আইন অনুসারে কার্যকর হয়েছে। একজন চেয়ারম্যান ও দুজন কমিশনার নিয়ে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয় ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত। এ সংস্থাটির লক্ষ্য হচ্ছে দেশে দুর্নীতি ও দুর্নীতিমূলক কাজ প্রতিরোধ করা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের গঠন (Composition of Anti Corruption Commission)
দুর্নীতি দমন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত “দুর্নীতি দমন কমিশন বিল-২০০৪” পাস হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’ গঠিত হয়। একজন চেয়ারম্যান ও দুইজন কমিশনারের সমন্বয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়। তবে প্রয়োজনে যেকোনো স্থানে শাখা কার্যালয় স্থাপন করা যাবে। কমিশনারগণের মেয়াদ হবে চার বছর। তবে মেয়াদ অতিবাহিত হবার পর কমিশনারগণ পুনর্নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
প্রধান নির্বাহী : চেয়ারম্যান। দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন সচিব থাকবেন। তিনি নির্বাহী দায়িত্ব পালনে কমিশনারদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবেন।
নিয়োগ : চেয়ারম্যান ও কমিশনারগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি কমিশনার পদে নিয়োগের সুপারিশ করবে। এ কমিটির সদস্যরা হবেন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক (যিনি বাছাই কমিটির সভাপতি হবেন), হাইকোর্টের একজন বিচারক, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবদের মধ্যে কেউই যদি রাজি না হন তাহলে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিবই কমিটির সদস্য হবেন।
যোগ্যতা ও অপসারণ : কমিশনারদের যোগ্যতার মাপকাঠি হচ্ছে আইন, শিক্ষা, প্রশাসন, বিচার অথবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে অন্যূন ২০ বছরের অভিজ্ঞতা। দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত, ঋণখেলাপি, বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ডপ্রাপ্ত অথবা আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তিগণ অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারক যে পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সে পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কমিশনারগণ অপসারিত হবেন না।
দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলি (Power and functions of anti corruption commission)
দুর্নীতি দমন কমিশন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন। এ কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলি নিম্নে দেওয়া হলো :
১। দুর্নীতি দমন কমিশন অপরাধসমূহ অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করবে।
২। অনুসন্ধান ও তদন্তের ভিত্তিতে কমিশন মামলা দায়ের এবং পরিচালনা করবে।
৩। কোনো ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে অথবা কমিশন নিজস্ব উদ্যোগে দুর্নীতির অভিযোগগুলো তদন্ত করবে।
৪। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে সততার মনোভাব তৈরি করবে।
৫। দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তা তদন্তের মাধ্যমে সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
৬। কোনো আদালত বা অফিস থেকে পাবলিক রেকর্ড বা তার অনুলিপি তলব করতে পারবে।
৭। কমিশন যেকোনো ব্যক্তিকে অনুসন্ধান বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো তথ্য সরবরাহ করতে অথবা সশরীরে কমিশনে হাজির হতে নির্দেশ দিতে পারে।
৮। দুর্নীতি প্রতিরোধে গবেষণা করে এবং বাস্তবভিত্তিক সুপারিশসহ রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *