বর্গ ও বর্গমূল কাকে বলে? (What is called Square and Square root in Bengali?)
কোনো সংখ্যাকে সেই সংখ্যা দ্বারা গুণ করলে যে গুণফল পাওয়া যায় তাকে ঐ সংখ্যার বর্গ এবং সংখ্যাটিকে গুণফলের বর্গমূল বলে। অর্থাৎ কোনো একটি সংখ্যার বর্গমূলকে বর্গ করলে আবার ওই সংখ্যাটিই পাওয়া যায়। যেমন ৪-এর সঙ্গে ৪ গুণ করলে পাওয়া যায় ১৬। সুতরাং ৪ হলো ১৬-এর বর্গমূল এবং ১৬ হলো ৪-এর বর্গ।
বর্গ এর উদাহরণ
৫২ = ২৫ (৫ × ৫ কে ৫২ হিসেবে দেখা হয়েছে ) অর্থাৎ ৫ এর বর্গ হলো ২৫।
বর্গমূলের উদাহরণ
আবার, √২৫ = ৫ (অর্থাৎ ২৫ এর বর্গমূল হলো ৫)
ভাগের সাহায্যে বর্গমূল নির্ণয় পদ্ধতি :
ভাগের সাহায্যে বর্গমূল নির্ণয় করার জন্য প্রথমে সংখ্যাটিকে মাঝে লিখে ডানপাশে একটি খাড়া দাগ দেওয়া হয়। ধরে নেওয়া যাক, সংখ্যাটি ৫৫২২৫। এরপর সংখ্যাটির অঙ্কগুলোকে ডানদিক থেকে দুটি দুটি করে জোড়া তৈরি করার জন্য ওপরে একটি করে দাগ দেওয়া হয়।
এভাবে সংখ্যাটির একেবারে বাঁয়ের জোড় বা একক অঙ্ক দিয়ে গঠিত সংখ্যাটির ঠিক আগের বর্গসংখ্যাটি এর নিচে লিখে বিয়োগ করা হয় এবং ডানপাশে খাড়া দাগের পাশে বর্গসংখ্যাটির বর্গমূল লেখা হয়।
অর্থাত্ এ ক্ষেত্রে ৫-এর আগের বর্গসংখ্যা হলো ৪, সুতরাং ডানে ২ লেখা হয় এবং ৫ থেকে ৪ বিয়োগ করা হয়।
এরপর প্রথম অংশটির জন্য পাওয়া বিয়োগফলের ডানে পরবর্তী অঙ্ক জোড় নামিয়ে লেখা হয়। ফলে নতুন আরেকটি সংখ্যা তৈরি হয়, যার বাঁ পাশে একটি খাড়া দাগ দিয়ে ডানের সংখ্যাটিকে দ্বিগুণ করে এই খাড়া দাগের বাঁয়ে লেখা হয়।
রপর এমন একটি অঙ্ক পছন্দ করা হয়, যেটি নতুন খাড়া দাগের বাঁয়ের দ্বিগুণ করে পাওয়া সংখ্যাটি অর্থাত্ ৪-এর ডানে লিখে যে সংখ্যা পাওয়া যায়, তার সঙ্গে গুণ করলে নতুন সংখ্যা অর্থাত্ ১৫২-এর সমান বা ঠিক কাছাকাছি ছোট সংখ্যা তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে অঙ্কটি হলো ৩। অর্থাত্ ৪-এর ডানে ৩ বসিয়ে ৪৩ পাওয়া যায়, যার সঙ্গে ৩ দিয়ে গুণ করলে পাওয়া যায় ১২৯। ১৫২-এর নিচে ১২৯ বসিয়ে বিয়োগ করা হয় এবং ডান পাশের খাড়া দাগের পাশের সংখ্যাটি অর্থাত্ ২-এর পাশে ৩ লেখা হয়।
একইভাবে বিয়োগফল ২৩-এর পাশে পরের অঙ্ক জোড় নামিয়ে লেখা হয়। এরপর এর বাঁয়ে আরেকটি খাড়া দাগ দিয়ে ডান পাশের ২৩ সংখ্যাটিকে দ্বিগুণ করে এই খাড়া দাগের বাঁয়ে লেখা হয়। এবার এমন একটি অঙ্ক পছন্দ করা হয়, যা ৪৬-এর ডানে লিখে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায়, তার সঙ্গে গুণ করলে ২৩২৫-এর সমান বা এর কাছাকাছি সংখ্যা পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ৫ পছন্দ করলে এবং ৪৬৫ কে ৫ দিয়ে গুণ করলে পাওয়া যায় ২৩২৫। সুতরাং ৫ ডানের সংখ্যাটির পাশে লেখা হয় এবং ২৩২৫ এর নিচে আবারও ২৩২৫ লিখে বিয়োগ করলে বিয়োগফল শূন্য হয়।
সুতরাং ৫৫২২৫ সংখ্যাটির বর্গমূল হলো ২৩৫।
১০ সেকেন্ডে বর্গমূল বের করা:
মাত্র ১০ সেকেন্ডে ক্যালকুলেটর ছাড়া কীভাবে যে কোনো সংখ্যার বর্গমূল বের করা সম্ভব? বুদ্ধি খাটালে আসলে যে কোনো কিছুই সম্ভব।
চলুন তাহলে শিখে ফেলি, বর্গমূল বের করার চমৎকার একটি ট্রিক। প্রথমে একটি ৩ অঙ্কের সংখ্যার কথা চিন্তা করি। ধরি, ৫৭৬ সংখ্যাটির বর্গমূল বের করতে হবে। ক্যালকুলেটর ছাড়া দ্রুত বের করা সম্ভব নাকি? মনে হয় না। এবার একটু বুদ্ধি খাটিয়ে “সম্ভব না” কে “সম্ভব” বানিয়ে ফেলতে হবে।
বর্গমূল বের করার এই ট্রিক খাটানোর জন্য শুরুতেই আমাদের ছোট সংখ্যাগুলোর বর্গের একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলতে হবে। লিস্টটি এরকমঃ
১২ = ০১
২২ = ০৪
৩২ = ০৯
৪২ = ১৬
৫২ = ২৫
৬২ = ৩৬
৭২ = ৪৯
৮২ = ৬৪
৯২ = ৮১
খেয়াল করলে দেখা যাবে, প্রতিটা সংখ্যার বর্গের শেষ অঙ্কটি গাঢ় রঙে লেখা আছে। কারণ শেষ অঙ্কটিই আমাদের ট্রিকের বেলায় কাজে লাগবে।
এবার, ৫৭৬ এর বর্গমূল বের করতে করতেই আমরা শিখে ফেলবো ক্যালকুলেটর ছাড়াই কিভাবে দ্রুত বর্গমূল বের করা যায়।
১) প্রথমে আমাদের প্রশ্নতে দেয়া সংখ্যার শেষ অঙ্কটি নিয়ে কাজ করতে হবে। ৫৭৬ এর শেষ অঙ্কটা ৬; এবার ৬ অঙ্কটি আমাদের প্রথম লিস্টের কোন কোন সংখ্যার বর্গে আছে, তা খুঁজে বের করি।
১২ = ০১
২২ = ০৪
৩২ = ০৯
৪২ = ১৬
৫২ = ২৫
৬২ = ৩৬
৭২ = ৪৯
৮২ = ৬৪
৯২ = ৮১
লিস্টে ৬ আছে দুইটি বর্গেঃ ১৬ আর ৩৬ এ। এদের বর্গমূল যথাক্রমে ৪ এবং ৬ তাই আমাদের ফলাফল এর শেষ অঙ্কটা হবে ৪ অথবা ৬ ; কোনটি হবে, সেটা আমরা পরের ধাপে বের করবো।
২) এবার আমাদের প্রশ্নের সংখ্যাটির শেষ দুটি অঙ্ক কেটে দিতে হবে। এগুলোর কাজ শেষ। এখন শুধু প্রথম অঙ্ক নিয়ে কাজ। ৫৭৬ এর শেষ দুটো অঙ্ক কেটে দিই। শুধু ৫ দিয়ে কাজ করি।
আমাদের প্রথম লিস্টের কোন বর্গটি ৫ এর চেয়ে ছোট, সেটির দিকে তাকাই।
১২ = ০১
২২ = ০৪
৩২ = ০৯
দেখা যাচ্ছে, ০৪ ই ৫ এর চেয়ে ছোট, কেননা এর পরের ধাপে ০৯ আছে, যা ৫ এর চেয়ে বড়, ওটা নেয়া যাবে না।
তাই ০৪ এর বর্গমূল ২ নিই। এটিই আমাদের ফলাফলের প্রথম অঙ্ক।
৩) তাহলে আমাদের ফলাফল হবে ২৪ অথবা ২৬ ; শেষে ৪ হবে নাকি ৬ হবে, তা কিন্তু আমরা এখনো জানি না। তাহলে জেনে নিই, শেষে কী হবে।
৪) আমাদের ফলাফলের শেষের অঙ্কটি ছোটটি হবে (৪) নাকি বড়টি হবে (৬), এটি জানার জন্য আমাদের ফলাফলের প্রথম অঙ্কের অর্থাৎ ২ এর সাথে এর ক্রমিক সংখ্যাটিকে গুণ করতে হবে। এবং গুণফলের সাথে প্রশ্নের সংখ্যাটির প্রথম অঙ্কটি তুলনা করতে হবে।
প্রশ্নের প্রথম অঙ্ক গুণফলের চেয়ে ছোট হলে, শেষের অঙ্কটাও ছোটটিই হবে আর প্রশ্নের প্রথম অঙ্ক গুণফলের চেয়ে বড় হলে বড়টিই হবে ফলাফলের শেষ অঙ্ক।
এখন, ২ এর পরের ক্রমিক সংখ্যা কত? ৩ ; তাহলে ২X৩=৬ ; এই ৬ এর চেয়ে আমাদের প্রশ্নের প্রথম অঙ্ক ৫ ছোট। তাই ফলাফলের শেষ অঙ্ক হবে ৪ এবং ৬ এর মধ্যে ছোটটিই। অর্থাৎ, ৪; তাই ফলাফল ২৪
এতদূর পড়ে হয়তো মনে হচ্ছে, কাজটা খুব কঠিন। কিন্তু কাজটা আসলেও কঠিন না। কয়েকবার প্রাকটিস করলেই সহজ লাগবে।
এবার একটা চার অঙ্কের সংখ্যা নিই। ধরি, ১৮৪৯ এর বর্গমূল বের করতে হবে।
১) শেষ অঙ্কটি নিয়ে কাজ করি। শেষ অঙ্ক ৯; লিস্টের কোন কোন সংখ্যার বর্গে ৯ আছে?
৩২ = ০৯
৭২ = ৪৯
তাই আমাদের ফলাফল এর শেষ অঙ্ক হবে ৩ অথবা ৭;
২) এখন ১৮৪৯ এর শেষ দুটো অঙ্ক কেটে দিই। শুধু প্রথম দুটি অঙ্ক থাকেঃ ১৮; এই ১৮ নিয়ে কাজ করতে হবে।
১৮ এর চেয়ে ছোট কোন বর্গসংখ্যাটি আছে লিস্টে, একটু দেখিঃ
১২ = ০১
২২ = ০৪
৩২ = ০৯
৪২ = ১৬
৫২ = ২৫
২৫ যেহেতু ১৮ এর চেয়ে বড় এবং ১৬ ছোট। তাই ১৬ এর বর্গমূল ৪ নিই। এই ৪ আমাদের ফলাফলের প্রথম অঙ্ক।
৩) তাহলে আমাদের ফলাফল ৪৩ অথবা ৪৭; কোনটা নিবো?
প্রথম অঙ্ক ৪, এর ক্রমিক সংখ্যা ৫; গুণ করে পাইঃ ৪X৫ = ২০
প্রশ্নের প্রথম দুই অঙ্ক ১৮ কিন্তু ২০ এর চেয়ে ছোট। তাই শেষ অঙ্কটিও নিবো ছোট। অর্থাৎ, ৩ এবং ৭ এর মধ্যে ছোট ৩; তাই ফলাফল ৪৩
এভাবে যে কোনো সংখ্যার (যার বর্গমূল একটি পূর্ণসংখ্যা) বর্গমূল বের করা সম্ভব।
আশা করি, দুইটি উদাহরণের মাধ্যমে বুঝতে সহজ হলো। এবার ২০২৫ এবং ৩৩৬৪ সংখ্যা দুটির বর্গমূল মুখে মুখে এই পদ্ধতিতে বের করার দায়িত্ব পাঠকের হাতে।
11 থেকে 99 পর্যন্ত বর্গ করার কৌশল
সূত্র:- (xy)^2=abc [যেখানে;b,cএকটি করে সংখ্যা & a এক বা একাধিক সংখ্যা হতে পারে] এবং
a=x^2
b=2xy
c=y^2
এবার 11 &25 বর্গ করি৷
(11)^2=(1^2)(2.1.1)(1^2)
=(1)(2)(1)
=121
আবার
(25)^2=(2^2)(2.2.5)(5^2)
=(4)(20)(25)
=(4)(20+2)5
=(4)(22)5
=(4+2)25
=625
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “বর্গ ও বর্গমূল কাকে বলে? বর্গমূল করার নিয়ম কি?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।