মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন-১ :

ষাটোর্ধ্ব বিধবা ফাতেমা বেগম। নিঃসন্তান এ বৃদ্ধার আপন বলতে কেউ নেই। একদিন প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে হঠাত্ তিনি একটি মেয়েকে রাস্তায় কাঁদতে দেখেন। বৃত্তান্ত শুনে তিনি মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মেয়েটিকে মাতৃস্নেহে আশ্রয় দেন। স্বামীপক্ষ খবর পেয়ে তাকে নিয়ে যেতে চায়। মেয়েটি কোনোভাবেই যেতে ইচ্ছুক নয়। বৃদ্ধাও মেয়েটিকে যেতে দেননি। এতে তাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। মৃত্যুর আগে বৃদ্ধা মেয়েটিকে সমুদয় সম্পত্তি দান করে যান।

ক. ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়’—উক্তিটি কার?

খ. ‘যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি’—উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের মেয়েটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির সঙ্গে কিভাবে সংগতিপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি ও উদ্দীপকের বৃদ্ধা কি একসূত্রে গাঁথা? মতামত দাও।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়’—উক্তিটি পিসির।

খ. ‘যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি’—উক্তিটি দ্বারা সমাজের কুচক্রীদের কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে দুই বিধবার দায়িত্বশীল ও মানবিক জীবনযুদ্ধের প্রস্তুতিকে বোঝানো হয়েছে।

আহ্লাদিকে অপহরণ করার হীন মতলবে জোতদার ও দারোগা বাবু কানাই চৌকিদারকে পাঠায় মাসি-পিসির বাড়িতে। তারা কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। কিন্তু মাসি-পিসি তা বুঝতে পারে। তারা চিত্কার করে লোক জড়ো করে। অস্ত্র হাতে ধাওয়া করে দোষীদের। কিন্তু তার পরও শত্রুর অনিষ্ট বিষয়ে নিশ্চিত হয় না মাসি-পিসি। তাই বড় গামলাভর্তি জল ও কাঁথা আর কম্বল ভিজিয়ে রাখে। হাঁড়ি-পাতিল ভরে রাখে। আগুন দিলে তাতে নেভানো যাতে সহজ হয় এ জন্য এই প্রস্তুতি। আর হাতের কাছে রাখে ধারালো অস্ত্র।

গ. নির‌্যাবতিতা ও অসহায়ত্বের প্রতিনিধি হিসেবে উদ্দীকের মেয়েটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আহ্লাদির। সে স্বামী-সংসারে নির‌্যাবতিতা। স্বামীর ঘরে টিকতে না পেরে বিধবা মাসি-পিসির কাছে ঠাঁই নেয়। মাসি-পিসির যত্নের কোনো ত্রুটি ছিল না। কিন্তু আশপাশের কুচক্রীরা কুদৃষ্টি দিয়ে তার জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। স্বামীর বাড়ি থেকে হুমকি আসে। জোতদার দারোগা বাবুর সহায়তায় চৌকিদার পাঠায়। বাবার সম্পদের উত্তরাধিকারী হওয়ায় অনেকেই তাকে খরিদ করার পাঁয়তারা করে।

উদ্দীপকের ষাটোর্ধ্ব ফাতেমা আশ্রয় দেন অসহায় মেয়েটিকে। মেয়েটি স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল। বৃদ্ধা মাতৃস্নেহে তাকে লালন করতে থাকেন। আপন করে নেন। স্বামীর ঘর থেকে নিতে এলেও বৃদ্ধা যেতে দেননি মেয়েটিকে। মৃত্যুকালে সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণ করে যান এই মেয়েটিকে। আর এখানেই উদ্দীপকের মেয়েটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

ঘ. ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি স্বামী-সংসারে নির‌্যাবতিতা। অসহায় হয়ে সে মাসি-পিসির কাছে আসে। সেখানে যত্ন-আত্তির ত্রুটি ছিল না তার। কিন্তু আশপাশের দুর্বৃত্তদের চোখ পড়ে অসহায় মেয়েটির ওপর। মাসি-পিসি জীবন বাজি রেখে মেয়েটিকে রক্ষা করতে চান। মাসি-পিসি সারাক্ষণ চিন্তা করেন খাইয়ে-পরিয়ে যত্নে রাখতে হবে আহ্লাদিকে। শ্বশুরবাড়ির কবল থেকে বাঁচাতে হবে, এমনকি গাঁয়ের বজ্জাতদের নজর থেকে সামলে রাখতে হবে, কত দায়িত্ব তাদের, কত কাজ।

উদ্দীপকের ফাতেমা বেগম বিধবা। সকালে হাঁটতে গিয়ে অসহায় একটি মেয়েকে ঘরে তুলে আনেন তিনি। মেয়েটি স্বামীর হাতে নির‌্যাবতিতা। শ্বশুরবাড়ি থেকে নিতে এলেও ফাতেমা বেগম যেতে দেননি তাকে। অনেক ঝামেলাও পোহাতে হয় তাকে। এমনকি মৃত্যুর আগে নিজের সম্পত্তির উত্তরাধিকার করে যান মেয়েটিকে।

উদ্দীপকের ফাতেমা বেগম বিধবা। কিন্তু মানবিকবোধে উজ্জীবিত এক মহান দায়িত্ববান নারী। অন্যদিকে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি ও পিসি আহ্লাদির প্রেক্ষিতে দায়িত্ব-কর্তব্যের এক বিরল দৃষ্টান্ত। সার্বিক আলোচনায় বলা যায়, ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি ও পিসি এবং উদ্দীপকের বৃদ্ধা একসূত্রে গাঁথা।

সৃজনশীল প্রশ্ন-২ :

রমিজ মিয়া দশ বছর আগে মারা গেলেও তার বৃদ্ধা স্ত্রী জরিনা খাতুন স্বামীর ভিটা ধরে আজও পড়ে আছে। নিঃসন্তান এ পরিবারে কোনো ছেলে-মেয়ে না থাকায় প্রতিবেশী খালেক ও তার স্ত্রী জরিনা খাতুনকে দেখাশোনা করে। জরিনা খাতুন তার নিজের ভিটা-মাটি খালেককে দিয়ে যাবে-এমন কথা দিয়েছে। অথচ এ জমির উপর নজর পড়েছে গ্রামের মাতুব্বর রজব আলীর। সে জাল দলিল তৈরি করে রেখেছে। জরিনা খাতুন মারা গেলেই সে এই জমি নিজের বলে দাবি করবে। এ খবর জেনে জরিনা খাতুন থানা থেকে পুলিশ নিয়ে ভূমি অফিসে গিয়ে নিজের ভিটা-মাটি খালেককে লিখে দেয়।

ক) ‘মাসি-পিসি’ গল্পটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশ হয়?

খ) মাসি-পিসি আহ্লাদিকে স্বামীর বাড়িতে পাঠাতে চায় না কেন?

গ) উদ্দীপকের রজব আলীর সঙ্গে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য পাওয়া যায়? বর্ণনা কর।

ঘ) ‘উদ্দীপকের জরিনা খাতুন যেন মাসি-পিসির প্রতিমূর্তি’- মন্তব্যের যথার্থতা যাচাই কর।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *