দারিদ্র্য মোকাবেলায় ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাক-শিল্প যুগে ইংল্যান্ডের দারিদ্র্য দূরীকরণ, ভিক্ষাবৃত্তিরোধ, ভবঘুরে প্রতিকার, দুস্থ ও অসহায়দের সেবা প্রদান প্রভৃতি ব্যাপারে প্রথম সরকারিভাবে আইন প্রণয়ন করা হয় ১৬০১ সালে। নিম্নে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা করা হলো। ১. সাহায্য ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের মাধ্যমে দরিদ্রদের জন্য সাহায্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে সামাজিক সমস্যা হিসেবে স্বীকৃত ভিক্ষাবৃত্তিরোধ করা সম্ভব হয়। দরিদ্রদের পুনর্বাসনের ফলে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ২. অলস ও অকর্মণ্য শ্রেণির সংখ্যা হ্রাস : এ আইন প্রণয়নের ফলে সমাজের অক্ষম ও অকর্মণ্য শ্রেণির সংখ্যা হ্রাস পায়। সক্ষম, অক্ষম দরিদ্র সংশোধনাগারে এবং নির্ভরশীল শিশু মনিবের বাসস্থানে কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হয়। ৩. স্থানীয়ভাবে সেবা প্রদান : আইনে প্যারিস (এলাকা) ভিত্তিক দরিদ্রদের সেবা প্রদানের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়। এর মাধ্যমে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (প্যারিস) এলাকার জনগণের সহায়তায় দরিদ্রদের সাহায্য প্রদানের নীতি গ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “It is established the principle that local community had to organize and finance poor relief.” ৪. সমাজকর্ম পদ্ধতির বিকাশ : সমাজকর্মকে পৈশাগত মর্যাদায় উন্নীতকরণে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ভূমিকা অপরিসীম। এ আইন আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কালক্রমে এ সেবা সরকারি স্বীকৃতির মাধ্যমে পেশাগত সমাজকর্মের মর্যাদায় উন্নীত করতে সহায়তা করে। ৫. দরিদ্রতা থেকে মুক্তি : এ আইন প্রণয়নের ফলে দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে মানুষ মুক্তি পায়। দরিদ্রদের ত্রাণ সহায়তা এবং পুনর্বাসনের ফলে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। এ ব্যবস্থায় দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিরা তাদের সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তা লাভ করে। ৬. সুষ্ঠু পরিচালনা : সুষ্ঠু ও দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে এ আইন বাস্তবায়ন করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্যারিসে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে ওভারসিয়ার (Overseer) নিয়োগ করা হয়। ওভারসিয়ার কর্তৃক দরিদ্রাগারের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দান করা হয়। এভাবে দরিদ্র আইনটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। ৭. পূর্ণাঙ্গ দরিদ্র আইন : ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন প্রণয়নের পূর্বে ইংল্যান্ডে ৪২টি আইন প্রণীত হয়। কিন্তু কোনো আইনই পূর্ণাঙ্গ ছিল না। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন ছিল দরিদ্রদের কল্যাণে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন। ফলে দরিদ্রদের সকল দিককে আইনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ৮. সমাজকল্যাণে সরকারের ভূমিকা : দরিদ্রদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সরকারের হস্তক্ষেপের সূচনা হয় এ আইনের মাধ্যমে। সরকারিভাবে প্রথম দরিদ্রদের কল্যাণ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় দরিদ্ররা সরকারি সুযোগসুবিধা পাওয়া আরম্ভ করে। ৯. সামাজিক দায়িত্ববোধ : এ আইন প্রণয়নের ফলে মানুষের দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়। সামাজিক চেতনা জাগ্রত হওয়ার ফলে মানুষ অন্যের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তৎপর হয়। তাই এ আইনের গুরুত্ব অত্যধিক। ১০. সম্পদের সদ্ব্যবহার : এ আইনে দরিদ্রদের সহায়তার দায়িত্ব প্রদান করা হয় ওভারসিয়ারের উপর। ওভারসিয়ার কর্তৃক প্যারিসের স্থানীয় সম্পদের মাধ্যমে দরিদ্রদের আর্থসামাজিক সমস্যার সমাধান করা হতো।