বিভারিজ রিপোর্ট কি, সুপারিশমালা, বৈশিষ্ট্য এবং অন্যান্য তথ্যাদি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ইংল্যান্ডের সার্বিক সমাজকল্যাণ কর্মসূচিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়। ইংল্যান্ডের শ্রম ও পুনর্গঠন মন্ত্রী আর্থার গ্রিন উড (Aurther Green Wood) পার্লামেন্টের সম্মতিক্রমে সামাজিক বীমা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির আন্তঃবিভাগীয় কমিটি (Interdepartmental Committee on Social Insurance and Allied Services) গঠন করেন । প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ স্যার উইলিয়াম বিভারিজ (Sir William Beveridge) কে এ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এ কমিটিই ‘বিভারিজ…

জনসংখ্যা সমস্যা কি | জনসংখ্যা স্ফীতি কি এবং এর কারণ

জনসংখ্যা সমস্যা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের জন্য একটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। অতিরিক্ত জনসংখ্যা যে কোন দেশের জন্য সমস্যা। অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত করে। দেশে বেকারত্বসহ জটিল সমস্যা সৃষ্টি করে। জনসংখ্যা সমস্যা কি (জনসংখ্যা স্ফীতি কি) কোন দেশের জনসংখ্যা যখন প্রাপ্ত ও সম্ভাব্য সম্পদের তুলনায় বেশি হয় এবং এর প্রভাবে এ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত…

১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশন কি | এর প্রেক্ষাপট এবং সুপারিশ

বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে আমেরিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। ইংল্যান্ড এ উন্নত প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে পাল্লা দিতে ব্যর্থ হয়। তাই তাদের অনেক কয়লা খনি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বেকার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। সরকারি, বেসরকারি কোনভাবেই বেকার সমস্যা মোকাবিলা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এমনি পরিস্থিতিতে জাতীয় জরুরি তহবিল গঠন অপরিহার্য…

আলীগড় আন্দোলন কি | এর কার্যাবলি ও উদ্দেশ্য সমূহ কি কি

দুইশত বছরের শাসনকালে ইংরেজদের চাতুর্যপূর্ণ নীতির মধ্যে অন্যতম ছিল ইসলামি সংস্কৃতি বিরোধী শিক্ষাব্যবস্থা। মুসলমান পরিচালিত অতীতের কিছু বিদ্রোহ মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের শত্রুভাবাপন্ন করে তুলেছিল। ফলে মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের অত্যাচার যেমন বেড়ে উঠে তেমনি ইংরেজ সৃষ্ট হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার এবং নির্বিচার জুলুম তাদের সামাজিক জীবনে দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি করে। মুসলমানদের এ অবস্থা দেখে স্যার সৈয়দ আহমদ খান ব্যথিত হন।…

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি | প্রেক্ষাপট/পটভূমি এবং উদ্দেশ্য/লক্ষ্যসমূহ

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হলো কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য জমিদারের সাথে সম্পাদিত একটি চুক্তির সমতূল্য ব্যবস্থা। ১৭৯৩ সালে ২২ মার্চ গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস কর্তৃক এটা ঘোষিত হয়। কিন্তু আইডিয়া হিসেবে এ বন্দোবস্ত কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞ মহলে আলোচিত হতে থাকে প্রায় দু’দশক আগে থেকেই। বিমূর্তভাবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আইডিয়া প্রথম দেন সমকালীন ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ আলেকজান্ডার…

ইয়েটস রিপোর্ট কি

আমেরিকার পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে দরিদ্রাগার (Poor houses) স্থাপন করা হয় এবং এগুলোকে দরিদ্রদের দেখাশুনার সর্বাধিক অর্থনৈতিক ও কার্যকরী উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৮২১ সালে ম্যাসাচুসেটস এর সাধারণ আদালত (Generalcourt of Massachusetts) দরিদ্র আইন এবং সাহায্য ব্যবস্থা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। উক্ত কমিটির সুপারিশ পেশের পর জে. ভি. এন. ইয়েটস এর উপর দরিদ্রদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ…

১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আলোচনা কর

দারিদ্র্য মোকাবেলায় ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাক-শিল্প যুগে ইংল্যান্ডের দারিদ্র্য দূরীকরণ, ভিক্ষাবৃত্তিরোধ, ভবঘুরে প্রতিকার, দুস্থ ও অসহায়দের সেবা প্রদান প্রভৃতি ব্যাপারে প্রথম সরকারিভাবে আইন প্রণয়ন করা হয় ১৬০১ সালে। নিম্নে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা করা হলো। ১. সাহায্য ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের মাধ্যমে দরিদ্রদের জন্য সাহায্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে সামাজিক সমস্যা হিসেবে স্বীকৃত ভিক্ষাবৃত্তিরোধ করা সম্ভব হয়। দরিদ্রদের পুনর্বাসনের ফলে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ২. অলস ও অকর্মণ্য শ্রেণির সংখ্যা হ্রাস : এ আইন প্রণয়নের ফলে সমাজের অক্ষম ও অকর্মণ্য শ্রেণির সংখ্যা হ্রাস পায়। সক্ষম, অক্ষম দরিদ্র সংশোধনাগারে এবং নির্ভরশীল শিশু মনিবের বাসস্থানে কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হয়। ৩. স্থানীয়ভাবে সেবা প্রদান : আইনে প্যারিস (এলাকা) ভিত্তিক দরিদ্রদের সেবা প্রদানের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়। এর মাধ্যমে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (প্যারিস) এলাকার জনগণের সহায়তায় দরিদ্রদের সাহায্য প্রদানের নীতি গ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “It is established the principle that local community had to organize and finance poor relief.” ৪. সমাজকর্ম পদ্ধতির বিকাশ : সমাজকর্মকে পৈশাগত মর্যাদায় উন্নীতকরণে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ভূমিকা অপরিসীম। এ আইন আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কালক্রমে এ সেবা সরকারি স্বীকৃতির মাধ্যমে পেশাগত সমাজকর্মের মর্যাদায় উন্নীত করতে সহায়তা করে। ৫. দরিদ্রতা থেকে মুক্তি : এ আইন প্রণয়নের ফলে দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে মানুষ মুক্তি পায়। দরিদ্রদের ত্রাণ সহায়তা এবং পুনর্বাসনের ফলে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। এ ব্যবস্থায় দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিরা তাদের সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তা লাভ করে। ৬. সুষ্ঠু পরিচালনা : সুষ্ঠু ও দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে এ আইন বাস্তবায়ন করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্যারিসে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে ওভারসিয়ার (Overseer) নিয়োগ করা হয়। ওভারসিয়ার কর্তৃক দরিদ্রাগারের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দান করা হয়। এভাবে দরিদ্র আইনটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। ৭. পূর্ণাঙ্গ দরিদ্র আইন : ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন প্রণয়নের পূর্বে ইংল্যান্ডে ৪২টি আইন প্রণীত হয়। কিন্তু কোনো আইনই পূর্ণাঙ্গ ছিল না। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন ছিল দরিদ্রদের কল্যাণে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন। ফলে দরিদ্রদের সকল দিককে আইনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ৮. সমাজকল্যাণে সরকারের ভূমিকা : দরিদ্রদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সরকারের হস্তক্ষেপের সূচনা হয় এ আইনের মাধ্যমে। সরকারিভাবে প্রথম দরিদ্রদের কল্যাণ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় দরিদ্ররা সরকারি সুযোগসুবিধা পাওয়া আরম্ভ করে। ৯. সামাজিক দায়িত্ববোধ : এ আইন প্রণয়নের ফলে মানুষের দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়। সামাজিক চেতনা জাগ্রত হওয়ার ফলে মানুষ অন্যের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তৎপর হয়। তাই এ আইনের গুরুত্ব অত্যধিক। ১০. সম্পদের সদ্ব্যবহার : এ আইনে দরিদ্রদের সহায়তার দায়িত্ব প্রদান করা হয় ওভারসিয়ারের উপর। ওভারসিয়ার কর্তৃক প্যারিসের স্থানীয় সম্পদের মাধ্যমে দরিদ্রদের আর্থসামাজিক সমস্যার সমাধান করা হতো।

১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইনের দুর্বল বা নেতিবাচক দিক ও সবল বা ইতিবাচক দিক

১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইনের (নেতিবাচক) দুর্বল দিক নিম্নে ১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইনের দুর্বলদিকগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। ১. শ্রমাগারে মানবেতর জীবনযাপন : ১৮৩৪ সালে রয়াল কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পৃথক পৃথকভাবে শ্রমাগার ও দরিদ্রাগার নির্মাণের কথা বলা হলেও বাস্তবে শুধু শ্রমাগার নির্মাণ করা হয়। এ শ্রমাগারে সব শ্রেণীর দরিদ্রদের একত্রে বসবাস করতে হয়। ফলে রোগগ্রস্ত, বৃদ্ধ, অক্ষম ও শিশুরা একই…

সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের পার্থক্য

সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের পার্থক্য সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান। অন্যদিকে, মনোবিজ্ঞান বহুলাংশে মৌলিক বিজ্ঞানের অন্তর্গত। এতদ্‌সত্ত্বেও জীবনের সামগ্রিক উন্নয়নে বৈষম্য দূরীকরণ, সামাজিক সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখতে এবং মানুষের পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করার জন্য, সমাজকর্মীদের মনোবিজ্ঞান ও এর বিভিন্ন শাখার জ্ঞানার্জন করতে হয়। নিম্নে সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক তুলে ধরা হলো। ১. লক্ষ্যগত সমাজকর্ম মানবীয় আচরণ ও…

সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক

সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। সমাজকর্ম নিয়ে কাজ করতে গেলে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান একান্ত অপরিহার্য। এমনিভাবে সমাজকর্ম নানাদিক দিয়ে মনোবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হল। ১. সংজ্ঞাগত সমাজকর্ম মানুষকে তার নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্য ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উপযোগী করে তোলে এবং পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতির সাথে খাপখাইয়ে চলতে সাহায্য করে।…