‘প্র’ মানে ‘বিশিষ্ট’ এবং ‘বাদ’ বা ‘বচন’ মানে কথা অর্থাৎ বিশিষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ কথা, সুতরাং প্রবাদ হলো লোক পরম্পরাগত বিশেষ উক্তি বা কথন। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতালব্ধ কোনো গভীর জীবনসত্য, লোকপ্রিয় কোনো সংক্ষিপ্ত উক্তির মধ্যে সংহত হয়ে প্রকাশিত হলে তাকে প্রবাদ-প্রবচন বলে।
প্রবাদ-প্রবচনের বৈশিষ্ট্য
প্রবাদ-প্রবচনের সংক্ষিপ্ত বাক্যে একটি জাতির নানান বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে থাকে। প্রবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:
- অর্থব্যঞ্জনা : প্রবাদের অর্থ গভীর ও তাৎপর্যময়। এর তীক্ষ্ণ অর্থভেদী মন্তব্য শ্রোতা ও পাঠককে সহজে সচকিত করে তোলে। এর শব্দার্থ নয়, রূপক অর্থই গুরুত্বপূর্ণ।
- অভিজ্ঞতার নির্যাস : প্রবাদের শক্তিই হলো অভিজ্ঞতা। লোকসমাজের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার সারৎসার থাকে প্রবাদে। যুগের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা মানুষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় যোগ হয়।
- সরল প্রকাশভঙ্গি : প্রবাদ সহজ সরল হওয়ার কারণে তা সহজেই শ্রোতার মনে সাড়া জাগায়। প্রবাদের আলঙ্কারিক গুণ রয়েছে বলে মানুষ তা সহজে ভুলে যায় না। সাধারণত ছন্দ ও অন্ত্যমিলের জন্য বা কখনও উপযুক্ত অনুষঙ্গের জন্য প্রবাদ দীর্ঘদিন মানুষের মনে থাকে। যেমন: অর্থ অনর্থের মূল। কাজের সময় কাজি, কাজ ফুরালে পাজি। ইত্যাদি।
প্রবাদ-প্রবচনের প্রয়োজনীয়তা
যুগ যুগ ধরে মানুষের মুখোমুখি চমৎকার এই বাক্য বা বক্তব্যগুলো, অর্থাৎ প্রবাদ-প্রবচন ব্যবহৃত হলে তা এখন শুধু মানুষের মুখে সীমাবদ্ধ নয়। সাহিত্যে তার বিচরণ যত্রতত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। এগুলো এখন বাংলা সাহিত্যের নিজস্ব সম্পদ এবং ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত। জনপ্রিয় প্রবাদ-প্রবচনগুলো কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, সংবাদপত্র, বিজ্ঞাপন, বক্তৃতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহার লক্ষ করা যায়। তাই প্রবাদ-প্রবচনের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।