কোন ভাষা থেকে অন্য ভাষায় পরিবর্তন বা রূপান্তর করাকে অনুবাদ (Translation) বলে। অনুবাদ সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা।
অনুবাদ কত প্রকার ও কি কি?
অনুবাদ মূলত দুই প্রকার। যথা– ১. আক্ষরিক অনুবাদ ও ২. ভাবানুবাদ।
২. আক্ষরিক অনুবাদ : মূল ভাষার প্রত্যেকটি শব্দের প্রতিশব্দ ব্যবহার করে যে অনুবাদ করা হয়, তাকে আক্ষরিক অনুবাদ বলে। যেমন– ‘It has been raining cats and dogs’ বাক্যটিকে যদি ‘বিড়াল কুকুর বৃষ্টি হচ্ছে’–এভাবে অনুবাদ করা হয়, তবে তা হবে আক্ষরিক অনুবাদ।
২. ভাবানুবাদ : মূল ভাষার ভাব যথাযথ রেখে অপর ভাষার প্রয়োজনীয় শব্দে যে অনুবাদ করা হয়, তাকে ভাবানুবাদ বলে। যেমন— ‘It has been raining cats and dogs’ বাক্যটিকে যদি ‘বিড়াল কুকুর বৃষ্টি হচ্ছে’ এর পরিবর্তে ভাবের দিকে সঙ্গতি রেখে ‘মুলষধারে বৃষ্টি হচ্ছে’- এভাবে অনুবাদ করা হয়, তবে এটি হবে ভাবানুবাদ। অনুবাদ কোন ধরনের হলে সুন্দর ও যথার্থ হবে তা নির্ভর করে অনুবাদের বিষয়ের উপর। তবে অনুবাদ যাতে মৌলিক, সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রকৃতপক্ষে অনুবাদ অভ্যাসের ব্যাপার। নিয়মিত অনুবাদ করার অভ্যাস করলে অনুবাদ সুন্দর ও যথার্থ হবে।
অনুবাদ করার নিয়ম
১. যে অংশটি অনুবাদ করতে হবে তা বার বার পড়ে মূল ভাবটুকু বুঝে নিতে চেষ্টা করবে।
২. যে অংশটি অনুবাদ করবে তাতে কঠিন শব্দ বা দুর্বোধ্য বাক্যাংশ থাকলে সেগুলোর নিচে দাগ দেবে এবং পৃথকভাবে শব্দার্থ লিখে নেবে।
৩. একটি বাক্যকে প্রয়োজনবোধে বাংলা ভাষায় দুটি পৃথক বাক্যে প্রকাশ করতে পার। আবার, অনুবাদের সুবিধার জন্য দুটি ইংরেজি বাক্যকে বাংলায় একটি বাক্যেও রূপান্তরিত করতে পার।
৪. অনুবাদ করার সময় যথাসম্ভব মূলভাবকে রূপ দিতে চেষ্টা করবে। তবে, মূল ভাষাকে হুবহু শাব্দিক অনুবাদ করতে গেলে অনেক সময় অনুবাদ শ্রুতিকটু ও দুরূহ হয়। যেমন— A bad workman quarrels with his tools— এ বাক্যটির অনুবাদ যদি হয়— ‘একজন খারাপ শ্রমিক তার যন্ত্রপাতির সঙ্গে ঝগড়া করে’ তাহলে অত্যন্ত খারাপ শোনায়, যথার্থ অর্থও হয় না। যদি বলি— ‘নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা’ তাহলে যথার্থ অনুবাদ হয়।
৫. বাংলা ভাষায় চেয়ার, টেবিল, টাইপ, টেলিফোন, টেলিভিশন, রেডিও প্রভৃতি শব্দ ব্যবহারের ফলে এসব শব্দ বাংলা ভাষার শব্দসম্ভারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কাজেই অনুবাদের সময় এ সব শব্দের অনুবাদ না করলেও চলে। যেমন— সাইকেল শব্দটি বাংলায় প্রচলিত। আমরা যদি শব্দটি বাংলায় অনুবাদ করে ‘দ্বিচক্রযান’ বলি তবে বিদঘুটে মনে হবে। কারণ শব্দটি অপ্রচলিত।
৬. অনুবাদের সময় মূলভাষার প্রবাদ, প্রবচন ও বাগধারা অনূদিত ভাষার সমার্থক প্রবাদ, প্রবচন ও বাগধারায় রূপান্তরিত করতে হবে। যেমন- ইংরেজি প্রবাদ ‘Penny wise pound foolish’- এর বাংলায় রূপান্তরিত রূপ হবে ‘বজ্র আঁটুনি ফসকে গেরো’।
৭. মূল অংশে যে ক্রিয়া ও কাল থাকে অনুবাদে সে ক্রিয়া ও কাল রূপান্তরিত করতে হবে।
৮. অনুবাদের সময় যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি মনে রাখতে হবে তা হল অনুবাদ যেন আড়ষ্ট ও দুর্বোধ্য না হয়।
৯. মূলভাবকে যথাসম্ভব বজায় রেখে স্বচ্ছ ও সহজ ভাষায় অনুবাদ করতে চেষ্টা করবে।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
১। অনুবাদ কাকে বলে?
ক) এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তরকে
খ) ইংরেজি থেকে বাংলা করাকে
গ) বাংলা থেকে ইংরেজি করাকে
ঘ) আরবি থেকে বাংলা করাকে
উত্তরঃ ক) এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তরকে
২। অনুবাদ কী?
অথবা, অনুবাদের অর্থ কী?
অথবা, অনুবাদের অপর নাম কী?
ক) ভাষান্তর খ) ভাবান্তর
গ) বাক্যান্তর ঘ) বাচ্যান্তর
উত্তরঃ ক) ভাষান্তর
৩। অনুবাদ কয় প্রকার?
অথবা, অনুবাদ মূলত কয় প্রকার?
ক) ২ প্রকার
খ) ৩ প্রকার
গ) ৪ প্রকার
ঘ) ৫ প্রকার
উত্তরঃ ক) ২ প্রকার
৪। ‘A cock and bull story’–এই প্রবাদের সঠিক বাংলা অনুবাদ কোনটি?
ক) একটি মোরগ ও একটি ষাঁড়ের গল্প
খ) পশুপাখির গল্প
গ) মিথ্যা কাহিনী
ঘ) আষাঢ়ে গল্প
উত্তরঃ ঘ) আষাঢ়ে গল্প
৫। ‘সুষ্ঠু অনুবাদ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত’–শ্রেণী দুটি কী কী?
ক) ভাষান্তরিত ও ভাবগত
খ) ইংরেজি ও বাংলা
গ) ভাবানুবাদ ও আক্ষরিক
ঘ) চিন্তনীয় ও বর্ণনামূলক
উত্তরঃ গ) ভাবানুবাদ ও আক্ষরিক
৬। মূল ভাষার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উক্তি অনুবাদের ক্ষেত্রে কেমন হবে?
ক) প্রয়োজনে পরিবর্তিত হবে
খ) মূলের অনুসারী হবে
গ) অনুবাদকের ইচ্ছা অনুসারী হবে
ঘ) ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই
উত্তরঃ ক) প্রয়োজনে পরিবর্তিত হবে
৭। কোন বিষয়টি অনুবাদের ভাষারীতি অনুসারে হবে?
ক) বাচ্য ও ক্রিয়ার কাল
খ) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উক্তি
গ) ব্যক্তি ও স্থানের নাম
ঘ) পদবিন্যাস ও অলঙ্কার রীতি
উত্তরঃ ঘ) পদবিন্যাস ও অলঙ্কার রীতি
৮। অনুবাদের ক্ষেত্রে মূল বিষয়ের কোন দিকটিকে অটুট রাখা কর্তব্য?
ক) ভাষা
খ) ভাব
গ) শব্দার্থ
ঘ) বাক্যবিন্যাস
উত্তরঃ খ) ভাব
৯। এক ভাষার শব্দের স্থলে কী বসিয়ে দিলেই অনুবাদ হয় না?
ক) শব্দের অর্থ
খ) শব্দের ভাব
গ) অন্য ভাষা
ঘ) অন্য ভাষার শব্দ
উত্তরঃ ঘ) অন্য ভাষার শব্দ
১০। অনুবাদকর্মে হাত দেয়ার পূর্বে কোনটির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে?
ক) স্বচ্ছন্দে ইংরেজি পাঠকের ওপর
খ) নিজ ভাষাজ্ঞান ও শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার
গ) ইংরেজি ভাষায় দখলের ওপর
ঘ) স্বচ্ছন্দে অনুবাদ করার চেষ্টার ওপর
উত্তরঃ খ) নিজ ভাষাজ্ঞান ও শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার
১১। অনুবাদের ভাষা কীরূপ হওয়া উচিত?
ক) সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল
খ) বক্তব্য-প্রধান
গ) গম্ভীর
ঘ) মধুর
উত্তরঃ ক) সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল