পৃথিবীর গতি কি? পৃথিবীর গতি কত প্রকার ও কি কি?
পৃথিবী স্থির নয়। এটি প্রত্যহ নিজ অক্ষের উপর ঘুরছে এবং সাথে সাথে সূর্যের চারদিকে পরিভ্রমণ করছে। এটিই পৃথিবীর গতি। পৃথিবীর গতি দু’প্রকার। যথা—
১। আবর্তন বা আহ্নিক গতি ও
২। পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতি
১। আবর্তন বা আহ্নিক গতি
পৃথিবী নিজ অক্ষ বা মেরুরেখার উপর পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড অর্থাৎ প্রায় ২৪ ঘণ্টায় একবার আবর্তন করছে। পৃথিবীর এই গতিকে আহ্নিক গতি বলে। নিরক্ষরেখায় আহ্নিক গতির বেগ সবচেয়ে বেশি।
আহ্নিক গতির কারণ
(১) সৌরজগতের সকল গ্রহই সূর্যকে পরিভ্রমণ করে। পৃথিবী সৌরজগতের একটি গ্রহ, তাই এটাও সূর্যকে পরিভ্রমণ করে। পৃথিবীর এই পরিভ্রমণের জন্য আহ্নিক গতির সৃষ্টি হয়।
(২) পৃথিবী সূর্যকে একটি উপবৃত্তাকার পথেই পরিভ্রমণ করে না; নিজ অক্ষ পথেও পৃথিবী আবর্তন করে। ফলে আহ্নিক গতির সৃষ্টি হয়।
(৩) নিউটনের সূত্র অনুসারে ক্ষুদ্র বস্তুই বৃহত্তর বস্তুর চারদিকে আবর্তন করে। পৃথিবী সূর্য অপেক্ষা ছোট। তাই পৃথিবী সূর্যের চারদিকে নিজ অক্ষের উপর ঘুরে। ফলে আহ্নিক গতির সৃষ্টি হয়।
আহ্নিক গতির ফলাফল
আহ্নিক গতির ফলাফল নিম্নরূপ–
(১) দিনরাত্রির সংঘটন : পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে পর্যায়ক্রমে দিনরাত্রি সংঘটিত হয়।
(২) চির অন্ধকার ও চির আলোক থেকে মুক্তি : আহ্নিক গতি না থাকলে পৃথিবীর এক অর্ধাংশে চিরকাল দিন অপর অর্ধাংশে চিরকাল রাত থাকত।
(৩) বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের উপর প্রভাব : পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়।
(৪) সময় গণনার সুবিধা : আহ্নিক গতির ফলে সময় গণনার সুবিধা হয়েছে। পূর্ণ আবর্তনকালকে ২৪ ঘণ্টা ধরা হয়। আবার ২৪ ঘণ্টাকে মিনিটে ও মিনিটকে সেকেন্ডে ভাগ করে সময় গণনা করা হয়।
(৫) উদ্ভিদমণ্ডল ও প্রাণীজগতের সৃষ্টি : আহ্নিক গতির ফলেই পৃথিবীতে উদ্ভিদমণ্ডল ও প্রাণীজগতের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ আহ্নিক গতির জন্য উদ্ভিদমণ্ডল প্রয়োজনীয় উত্তাপ ও আলো পেয়ে থাকে।
(৬) পৃথিবীর আকার পরিবর্তন : আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীর মেরু প্রদেশ কিঞ্চিত চাপা এবং নিরক্ষীয় অঞ্চল স্ফীত।
(৭) তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি : আহ্নিক গতির ফলে সূর্যকিরণ পৃথিবীর কোথাও লম্বভাবে আবার কোথাও তির্যকভাবে পতিত হয় । ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রায় তারতম্যের সৃষ্টি হয়।
(৮) বহির্মুখী শক্তির সৃষ্টি : আহ্নিক গতির ফলে বহির্মুখী শক্তির সৃষ্টি হয়। এ শক্তির ফলে জলরাশি ভূ-পৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্ন হতে চায়। যা জোয়ারের অন্যতম কারণ।
২। পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতি
পৃথিবী নিজ অক্ষে ২৪ ঘণ্টায় একবার আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট পথে বছরে একবার সূর্যের চারদিকে পরিভ্রমণ করে। একে বার্ষিক গতি বলে। সূর্যকে একবার পরিভ্রমণ করতে পৃথিবীর ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড সময় লাগে।
বার্ষিক গতির ফলাফল
বার্ষিক গতির ফলাফল নিম্নরূপ–
(১) দিবারাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি : সূর্যকে প্রদক্ষিণকালে নিজ কক্ষতলের সঙ্গে পৃথিবীর মেরুরেখা ৬৬.৫° কোণে হেলে সর্বদা স্থান পরিবর্তন করে। এ কারণে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের স্থান ঠিক থাকে না এবং ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র দিবারাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।
(২) ঋতু পরিবর্তন : বার্ষিক গতির ফলে সূর্যকিরণ পৃথিবীর কোন স্থানে তির্যকভাবে আবার কোন কোন স্থানে লম্বভাবে পড়ে এবং দিন রাতও ছোট বড় হয়। এই উভয় কারণেই বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের তাপের তারতম্য ও ঋতুর পরিবর্তন ঘটে।
(৩) সূর্যোদয়ের স্থান পরিবর্তন : বার্ষিক গতির ফলে ২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর সূর্য পূর্বদিকে উদিত হয়। তাছাড়া অন্যান্য সময়ে কিছু উত্তরে বা দক্ষিণ সরে উদিত হয়।
(৪) দূরত্বের পরিবর্তন : বার্ষিক গতির ফলে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বের পরিবর্তন হয়। ১ থেকে ৩ জানুয়ারি সূর্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটে এবং ১ থেকে ৪ জুলাই সূর্য পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা দূরে অবস্থান করে।
এ সম্পর্কিত বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তরঃ–
১। পৃথিবীর গতি কত প্রকার?
ক) দুই
খ) তিন
গ) চার
ঘ) পাঁচ
সঠিক উত্তর : ক) দুই
২। পৃথিবীর নিজ অক্ষে আবর্তন করতে কত সময় লাগে?
ক) ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট
খ) ২৩ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট
গ) ২৩ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট
ঘ) ২৩ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট
সঠিক উত্তর : ক) ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট
৩। কোনটির আকর্ষণে পৃথিবীতে জোয়ার ও ভাটার সৃষ্টি হয়?
ক) চাঁদ ও পৃথিবীর
খ) সূর্য ও পৃথিবীর
গ) চন্দ্র ও সূর্যের
ঘ) চন্দ্র ও মঙ্গলের
সঠিক উত্তর : গ) চন্দ্র ও সূর্যের
৪। পৃথিবীর একটি পূর্ণ আবর্তনের সময়কে কী বলে?
ক) সৌরবছর
খ) আহ্নিক গতি
গ) বার্ষিক গতি
ঘ) সৌরদিন
সঠিক উত্তর : ঘ) সৌরদিন
৫। কোনটির ফলে দিন ও রাত হয়?
ক) বার্ষিক গতি
খ) আহ্নিক গতি
গ) মহাকর্ষ
ঘ) অভিকর্ষ
সঠিক উত্তর : খ) আহ্নিক গতি
৬। পৃথিবীর আলোকিত ও অন্ধকার অংশের মধ্যবর্তী বৃত্তাকার অংশকে কী বলে?
ক) নিরক্ষবৃত্ত
খ) পূর্ণবৃত্ত
গ) ছায়াবৃত্ত
ঘ) অর্ধবৃত্ত
সঠিক উত্তর : গ) ছায়াবৃত্ত
৭। পৃথিবী প্রতি সেকেন্ডে কত বেগে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে?
ক) ৩০ কি.মি.
খ) ৬০ কি.মি.
গ) ৭০ কি.মি.
ঘ) ৯০ কি.মি.
সঠিক উত্তর : ক) ৩০ কি.মি.
৮। কত দিনে সৌরবছর গণনা করা হয়?
ক) ৩৬৪ দিনে
খ) ৩৬৫ দিনে
গ) ৩৬৬ দিনে
ঘ) ৩৬৭ দিনে
সঠিক উত্তর : খ) ৩৬৫ দিনে
৯। কত বছর পর পর অধিবর্ষ হয়?
ক) ২ বছর
খ) ৩ বছর
গ) ৪ বছর
ঘ) ৫ বছর
সঠিক উত্তর : গ) ৪ বছর
১০। অধিবর্ষ বছর গণনা করা হয় কত দিনে?
ক) ৩৬৫ দিনে
খ) ৩৬৬ দিনে
গ) ৩৬৭ দিনে
ঘ) ৩৬৮ দিন
সঠিক উত্তর : খ) ৩৬৬ দিনে
১১। কোন বছরে ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনে ধরা হয়?
ক) সৌরবছরে
খ) ৩৬৫ দিনের বছরে
গ) অধিবর্ষে
ঘ) প্রতি বছরে
সঠিক উত্তর : গ) অধিবর্ষে
১২। কত তারিখে উত্তর গোলার্ধে দীর্ঘতম দিন ও ক্ষুদ্রতম রাত?
ক) ২১ জুন
খ) ২২ ডিসেম্বর
গ) ২৩ সেপ্টেম্বর
ঘ) ২১ মার্চ
সঠিক উত্তর : ক) ২১ জুন
১৩। কত তারিখে দক্ষিণ গোলার্ধে রাত সবচেয়ে বড় হয়?
ক) ২৩ সেপ্টেম্বর
খ) ২২ ডিসেম্বর
গ) ২১ মার্চ
ঘ) ২১ জুন
সঠিক উত্তর : ঘ) ২১ জুন
১৪। পৃথিবীতে সর্বদা দিবারাত্রি সমান হয় কোন তারিখে?
ক) ২১ জুন
খ) ২৩ সেপ্টেম্বর
গ) ২২ ডিসেম্বর
ঘ) ২১ মার্চ
সঠিক উত্তর : খ) ২৩ সেপ্টেম্বর
১৫। যখন উভয় মেরু সূর্য থেকে সমান দূরে থাকে, তখন কী হয়?
ক) দিন বড় হয়
খ) রাত বড় হয়
গ) দিন ছোট হয়
ঘ) দিন-রাত্রি সমান হয়
সঠিক উত্তর : ঘ) দিন-রাত্রি সমান হয়
১৬। কত তারিখে দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় হয়?
ক) ২১ জুন
খ) ২৩ সেপ্টেম্বর
গ) ২২ ডিসেম্বর
ঘ) ২৫ ডিসেম্বর
সঠিক উত্তর : গ) ২২ ডিসেম্বর
১৭। কত তারিখে উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে ছোট হয়?
ক) ২১ জুন
খ) ২৩ সেপ্টেম্বর
গ) ২২ ডিসেম্বর
ঘ) ২১ মার্চ
সঠিক উত্তর : গ) ২২ ডিসেম্বর
১৮। ২২ ডিসেম্বর সূর্য কোথায় লম্বভাবে কিরণ দেয়?
ক) নিরক্ষরেখায়
খ) মূল মধ্যরেখায়
গ) কর্কটক্রান্তিরেখায়
ঘ) মকরক্রান্তিরেখায়
সঠিক উত্তর : ঘ) মকরক্রান্তিরেখায়
১৯। কোন দিনগুলোতে পৃথিবীর সর্বত্র দিবারাত্রি সমান হয়?
ক) ২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর
খ) ২২ ডিসেম্বর ও ২৩ সেপ্টেম্বর
গ) ২১ জুন ও ২১ মার্চ
ঘ) ২১ জুন ও ২২ ডিসেম্বর
সঠিক উত্তর : ক) ২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর
২০। পৃথিবীর কক্ষপথের দৈর্ঘ্য কত?
ক) ৫১০,১০০,৪২২ কি.মি.
খ) ৫২,২৩,৮১,৫০০ কি.মি.
গ) ৫৪,৫১,৪২,৮০০ কি.মি.
ঘ) ৯৩,৮০,৫১,৮২৭ কি.মি.
সঠিক উত্তর : ঘ) ৯৩,৮০,৫১,৮২৭ কি.মি.