আলোক তড়িৎ ক্রিয়া কাকে বলে? আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার আবিষ্কার ও বৈশিষ্ট্য।

কোনো ধাতব পৃষ্ঠের ওপর যথেষ্ট উচ্চ কম্পাঙ্কের আলোক রশ্মি বা অন্য কোনো তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ আপতিত হলে উক্ত ধাতু থেকে ইলেকট্রন নিংসৃত হয়। এ ঘটনাকে আলোক তড়িৎ ক্রিয়া বলে।

আলোক তড়িৎ ক্রিয়া আবিষ্কার (Discovery of photo electric effect)
1873 খ্রিস্টাব্দে ডব্লিউ. স্মিথ (W. Smith) নামক একজন টেলিফোন অপারেটর আলোক তড়িৎ ক্রিয়া আবিষ্কার করেন। ট্রান্স আটলান্টিক ক্যাবল-এর বৈদ্যুতিক রোধ পরিমাপের যন্ত্রে তিনি সেলিনিয়াম রোধক ব্যবহার করেন। পরীক্ষাকালে তিনি লক্ষ করেন যে সূর্যের আলোক রোধকের উপর আপতিত হওয়ায় বর্তনীর বিদ্যুৎ প্রবাহ অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।

1887 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী হার্জ (Hertz) লক্ষ করেন যে, দুটি বিদ্যুৎদ্বারের মধ্যবর্তী ফাঁকে বা ঋণ বিদ্যুৎদ্বারে অতি বেগুনী রশ্মি আপতিত হলে এদের মধ্যে স্ফুলিঙ্গ (sparking) চলতে থাকে। 1888 খ্রিস্টাব্দে হওয়াচ (Hallwachs) এবং তাঁর সঙ্গীরা গবেষণার সময় লক্ষ করেন যে অতি বেগুনি রশ্মি ধনাত্মক আধানযুক্ত পাতের উপর আপতিত হলে তা দ্রুত অচার্জিত হয়ে পড়ে এবং ঋণাত্মক আধানযুক্ত পাতের উপর আপতিত হলে এই ক্রিয়া সংঘটিত হয় না। 1899 খ্রিস্টাব্দে জে. জে. থমসন এবং 1900 খ্রিস্টাব্দে লিনার্ড প্রমাণ করেন যে, আলোকের প্রভাবে ধাতব পাত হতে নির্গত কণাগুলো ইলেকট্রন ছাড়া আর কিছুই নয়।

আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য

আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য রয়েছেঃ

  • আলোক রশ্মি আপতিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আলোক তড়িৎ ক্রিয়া আরম্ভ হয় এবং আলোক রশ্মির আপতন বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ক্রিয়া বন্ধ হয় অর্থাৎ এটি একটি তাৎক্ষণিক ঘটনা।
  • প্রত্যেক ধাতু হতে আলোক ইলেকট্রন নির্গমনের জন্য আপতিত রশ্মির একটি ন্যূনতম কম্পাঙ্ক থাকে যার নাম প্রারম্ভ কম্পাঙ্ক।
  • বিভিন্ন ধাতুর ক্ষেত্রে প্রারম্ভ কম্পাঙ্ক বিভিন্ন।
  • আলোক ইলেকট্রনের বেগ কোনো নির্দিষ্ট শীর্ষ মানের মধ্যে হতে পারে।
  • আলোক ইলেকট্রনের সর্বোচ্চ গতিবেগ আপতিত রশ্মির কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক।
  • আলোক ইলেকট্রন নির্গমনের হার আপতিত আলোকের প্রাবল্যের সমানুপাতিক।
আলোক তড়িৎ নির্গমনের সূত্রাবলি (Laws of photo electric emission)
1912 খ্রিস্টাব্দে লিনার্ড, থমসন, রিচার্ডসন এবং কম্পটন-এর পরীক্ষালব্ধ ফলাফল হতে নির্ণীত হয়েছে যে আলোক তড়িৎ নির্গমন নিম্নলিখিত সূত্র মেনে চলে।
১ম সূত্র : আলোক তড়িৎ নির্গমন একটি তাৎক্ষণিক ঘটনা। অর্থাৎ আপতিত রশ্মির পতনকাল এবং আলোক ইলেকট্রন-এর নির্গমনকালের মধ্যে সময়ের ব্যবধান যদি থাকেও তবে তা অবশ্যই 3 x 10-9 সেকেণ্ডের কম।
২য় সূত্র : প্রতিটি আলোক ইলেকট্রন নির্গমনের ক্ষেত্রে আপতিত আলোক রশ্মির একটি নির্দিষ্ট ন্যূনতম কম্পাঙ্ক রয়েছে যার নাম প্রারম্ভ কম্পাঙ্ক।
৩য় সূত্র : আপতিত আলোকের কম্পাঙ্ক প্রারম্ভ কম্পাঙ্ক অপেক্ষা অধিক হলে আলোক তড়িৎ প্রবাহ মাত্রা আপতিত আলোকের প্রাবল্যের সমানুপাতিক অর্থাৎ i ∝ I.
এখানে i = তড়িৎ প্রবাহ মাত্রা এবং I = আলোকের প্রাবল্য।
৪র্থ সূত্র : আলোক ইলেকট্রনের গতিবেগ তথা গতিশক্তি আপতিত আলোকের প্রাবল্যের ওপর নির্ভর করে না, বরং আপতিত আলোকের কম্পাঙ্ক এবং নিঃসারক বা নির্গমক (emitter)-এর প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
এ সম্পর্কিত আরও কিছু প্রশ্নঃ-
  • আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার ব্যাখ্যা দেন কে?
  • আলোক তড়িৎ ক্রিয়ায় আলোর কোন ধর্ম প্রকাশ পায়?
  • আলোক তড়িৎ ক্রিয়া কে আবিষ্কার করেন?
  • আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য কী কী?

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *