প্রজেক্ট (Project) হচ্ছে এমন একটি উদ্যোগ, যা কোনো একটি উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এই উদ্যোগ হতে পারে কোনো একটি নতুন প্রোডাক্ট তৈরি করা, কোনো নতুন সার্ভিস তৈরি করা অথবা কোনো ফলাফল পাওয়া। তবে প্রজেক্টের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
যেমন- এর নির্দিষ্ট একটি শুরু এবং শেষ থাকতে হবে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়ে প্রজেক্টটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হতে হবে। এটি ইউনিক হতে হবে। অর্থাৎ অন্য কোনো প্রজেক্টের সাদৃশ্য হতে পারবে না। প্রতিটি প্রজেক্ট থেকে অবশ্যই একটি নতুন প্রোডাক্ট, সার্ভিস অথবা ফলাফল পাওয়া যাবে।
প্রজেক্ট স্বল্পস্থায়ী অথবা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, তবে এটি চলমান প্রক্রিয়া নয়। কোনো একটি নতুন প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস তৈরি করার পর প্রজেক্ট সমাপ্ত হয়ে যায়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি সফটওয়্যার তৈরি করা একটি প্রজেক্ট হতে পারে, অথবা একটি বাড়ি তৈরি করা একটি প্রজেক্ট হতে পারে। তবে এখানে উল্লেখ্য, ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য একই ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করা অথবা একাধিক বাড়ি তৈরি করা কি ভিন্ন ভিন্ন প্রজেক্ট? এখানে খেয়াল করতে হবে, যদি সফটওয়্যার ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি করা হয়, তাহলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের আলাদা আলাদা নিজস্ব নিয়ম-কানুন থাকে, প্রতিষ্ঠানের লোকেশন ভিন্ন হয় এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট শুরু ও শেষ ভিন্ন সময়ে হয়, তাই এই প্রজেক্ট ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা হবে। একই কথা বাড়ি নির্মাণের জন্যও প্রযোজ্য।
দুটি বাড়ি দুটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থান করবে, এদের শুরু এবং শেষ ভিন্ন সময়ে হবে অর্থাৎ এরা আলাদা প্রজেক্ট হিসেবে গণ্য হবে। কোনো পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া কি প্রজেক্ট হিসেবে গণ্য হবে? যখন কোনো নতুন পণ্য তৈরি করা হয়, তখন এটি একটি প্রজেক্ট। যেমন- নতুন মডেলের গাড়ি তৈরি করা, নতুন মডেলের মোবাইল ফোন তৈরি করা। তবে যখন একই পণ্য বার বার তৈরি করা হবে, তখন তা আর প্রজেক্ট হিসেবে গণ্য হবে না। তখন এটি হবে অপারেশন। কারণ, তখন এটি হয়ে যায় চলমান প্রক্রিয়া। অপারেশন হচ্ছে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের কার্যক্রম। অপারেশনের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা বা সমাপ্তি নেই। এটি নিত্যদিনের কার্যক্রম । অপারেশন শুধু এ পণ্য তৈরিতেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি হতে পারে কোনো সার্ভিস প্রদানও। যেমন- হসপিটালের বিভিন্ন সার্ভিস, ব্যাংকের বিভিন্ন সার্ভিস অথবা মোবাইল ফোন কোম্পানির বিভিন্ন সার্ভিক্স প্রভৃতি। প্রজেক্ট এবং অপারেশনের মধ্যে বিভিন্ন মিল থাকলেও চলমান প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে তাদেরকে আলাদা করা হয়।
প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট লাইফ সাইকেলকে পাঁচটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো- ইনিশিয়েটিং, প্ল্যানিং, এক্সিকিউটিং , মনিটরিং অ্যান্ড কন্ট্রোলিং ও ক্লোজিং।
- ইনিশিয়েটিং: প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে প্রজেক্ট ইনিশিয়েটিং। এ পর্যায়ে প্রজেক্ট শুরু করার প্রাথমিক কাজগুলাে সম্পন্ন করা হয়। যেমন- প্রজেক্টের কোপ নির্ধারণ করা, প্রজেক্টের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা, স্ট্যাকহোল্ডার নির্ধারণ করা, প্রজেক্ট চার্টার তৈরি করা এবং প্রজেক্টের ফিজিবিলিটি স্টাডি করা প্রভৃতি।
- প্রজেক্ট চার্টার: প্রজেক্ট চার্টার যেকোনো প্রজেক্টের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। এটি একটি লিখিত ডকুমেন্ট, যা প্রজেক্টের অস্তিত্ব প্রকাশ করে। প্রজেক্ট চার্টার প্রজেক্ট ম্যানেজারকে প্রজেক্ট সংক্রান্ত সব অথরিটি প্রদান করে। ফলে অর্গানাইজেশনের বিভিন্ন রিসোর্সকে সে প্রজেক্টের প্রয়ােজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে। প্রজেক্ট চার্টারে প্রজেক্টের স্কোপ এবং টাইমফ্রেম নির্ধারণ করা থাকে।
- প্ল্যানিং: প্রজেক্ট প্ল্যানিং হচ্ছে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টর দ্বিতীয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সফলতার সাথে প্রজেক্টের সব কাজ সম্পন্ন করার জন্য সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। প্রজেক্টের সফলতা নির্ভর করে দক্ষ এবং উপযুক্ত পরিকল্পনার ওপর। প্রজেক্ট পরিকল্পনার সময় বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেমন– স্ট্যাকহোল্ডারের চাহিদা, প্রজেক্টের উদ্দেশ্য, প্রজেক্ট থেকে প্রাপ্ত আউটপুট (ইউনিক প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস), প্রজেক্টের শিডিউল, রেসপনসিবিলিটি, বাজেট এবং কমিউনিকেশন প্ল্যান প্রভৃতি।
- এক্সিকিউটিং: প্রজেক্টের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য (অর্থাৎ ইউনিক প্রোডাক্ট তৈরি, নতুন সার্ভিস তৈরি অথবা ফলাফল পাওয়া প্রভৃতি) মূল কাজ এখানে সম্পন্ন করা হয়। এই ধাপে প্রথমে প্রজেক্ট ম্যানেজার একটি কিক-অফ মিটিংয়ের মাধ্যমে প্রজেক্টের মূল কাজগুলো প্রজেক্ট টিমের কাছে বর্ণনা করেন। এছাড়া প্রজেক্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন, যাতে কীভাবে প্রজেক্টের উদ্দেশ্য অর্জন করা যায়। সে সম্পর্কে প্রজেক্টে টিম পর্যাপ্ত ধারণা গ্রহণ করতে পারে। এক্সিকিউটিং প্রক্রিয়ায় যেসব কাজ সম্পাদন করা হয়, তার মধ্যে প্রজেক্ট টিম তৈরি করা, রিসোর্সসমূহ বণ্টন করা, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান এক্সিকিউট করা, ট্র্যাকিং সিস্টেম সেট করা, প্রজেক্ট শিডিউল আপডেট করা, প্রকিউরমেন্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করা প্রভৃতি অন্যতম।
- মনিটরিং অ্যান্ড কন্ট্রোলিং: মনিটরিং অ্যান্ড কন্ট্রোলিং প্রক্রিয়ায় প্রজেক্টের প্রগ্রেস ও পারফরম্যান্স মনিটর করা হয়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় প্রজেক্টের অগ্রগতি পরিকল্পনা মাফিক সম্পন্ন হচ্ছে কি না। বিভিন্ন ধরনের কী পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটরের মাধ্যমে প্রজেক্টের কার্যক্রম নির্দিষ্ট ট্র্যাকের মধ্যে রয়েছে কি না তা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া প্রজেক্টের শিডিউল, বাজেট, কোয়ালিটি এবং পারফরম্যান্স যথাযথ হচ্ছে কি না, তা মনিটর করা হয় এবং কোনো কারণে এসব বিষয় পরিকল্পনা মাফিক না হলে তাকে সঠিক করার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়।
- ক্লোজিং: এটি প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের সবশেষ ধাপ। এ প্রক্রিয়ায় প্রজেক্ট থেকে প্রাপ্ত আউটপুটকে (প্রোডাক্ট, সার্ভিস অথবা ফলাফল) যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ডেলিভার করা হয়। প্রজেক্ট থেকে প্রাপ্ত আউটপুট যথাযথভাবে হস্তান্তর এই পর্যায়ে নিশ্চিত করা হয়। প্রজেক্ট থেকে পাওয়া নলেজ এবং শিক্ষা লিপিবদ্ধ করা হয়, যাতে পরবর্তী সময় এ ধরনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যায়। সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রজেক্টের কন্ট্রাক্ট সমাপ্ত করা হয়।