এনজাইম কি? এনজাইমের বৈশিষ্ট্য, কাজ এবং এনজাইম কিভাবে আহরন করা হয়?- What is Enzyme?
এনজাইম হল এক প্রকার প্রােটিন যা জীবদেহে অল্প মাত্রায় বিদ্যমান থেকে বিক্রিয়ার গতিকে ত্বরান্বিত করে কিন্তু বিক্রিয়া শেষে নিজে অপরিবর্তিত থাকে।
এনজাইম একধরনের জৈব-রাসায়নিক অনুঘটক বা উৎসেচক পদার্থ। এনজাইম বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক উভয় প্রকার অনুজীবের প্রজাতিরা আবাদ মাধ্যমে (culture medium) এনজাইম তৈরী করে। কোন কোন অনুজীবের এনজাইম আবাদ মাধ্যমে নিঃসৃত হয় তাদেরকে বহিঃকোষীয় এনজাইম বলে। আবার কোন কোন অনুজীবের এনজাইম কোষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তাদেরকে অন্তঃকোষীয় এনজাইম বলে। বহিঃকোষীয় এনজাইম অনুজীবের অনুপস্থিতিতেও কাজ করতে পারে। ঔষুধ ও অন্যান্য কাজে প্রচুর এনজাইম দরকার হয়। এনজাইম তৈরীর জন্য তাই এনজাইম শিল্প গড়ে উঠেছে। Aspergillus, Pennicillium, Mucor ও Rhizopus থেকে বিভিন্ন প্রকার এনজাইম নিঃসৃত করে বিভিন্ন কাজে লাগানো হচ্ছে। অনুজীব থেকে অ্যামাইলেজ, ইনভারটেজ, প্রোটিয়েজ, পেকটিনেজ, ক্যাটালেজ, সেলুলেজ, ল্যাকটেজ, লাইপেজ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার এনজাইম অধিক পরিমাণে উৎপাদন করে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এনজাইম শিল্পের কারখানায় বিজ্ঞানীরা উপযুক্ত আবাদ মাধ্যমে উপযুক্ত প্রজাতি নির্বাচন করে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম তৈরী করে থাকেন।
এনজাইমের বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম
১. এনজাইম হল প্রােটিনধর্মী।
২. এনজাইম কোষে কলয়েড রুপে অবস্থান করে।
এনজাইম হলো জৈব রাসায়নিক ও আমিষ জাতীয় পদার্থ। এগুলো জৈব অনুঘটক হিসেবে কাজ করে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এগুলো একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পর্যন্ত ভালো থাকে এবং সেই তাপমাত্রা অতিক্রম করার পর এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়। নির্দিষ্ট এনজাইম নির্দিষ্ট কাজ করে। যেমন– ট্রিপসিন এনজাইম শুধুমাত্র আমিষের উপরই ক্রিয়া করে। একটি নির্দিষ্ট মাত্রার অম্লীয় বা ক্ষারীয় পরিবেশে বেশি কাজ করে।
এনজাইম কিভাবে আহরন করা হয়?
অনেক বেশি চাহিদার কারনে ক্রমান্বয়ে এনজাইম শিল্প গড়ে উঠেছে। চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় “fungal taka-diastase” নামক একটি এনজাইম ১৮৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় কোম্পানি প্রথম শিল্প কারখানার মাধ্যমে এর উৎপাদন শুরু করে। এরপর থেকে বিভিন্ন ধরনের কারখানা বিভিন্ন ধরনের এনজাইম উৎপাদন শুরু করে, যা বর্তমানে অনুজীব ব্যবহার করে উৎপাদন করা হচ্ছে।
অনেক বেশি পরিমানে এনজাইম উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। বড় বড় ফার্মেন্টার ট্যাংকে বিভিন্ন আবাদ মাধ্যমে নির্দিষ্ট pH, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে নির্দিষ্ট ধরনের এনজাইম সরাসরি জিন থেকে সংশ্লেষণ ঘটে। কোষের সংখ্যা ও প্রাপ্তি বাড়িয়ে নানা ধরনের জৈব রাসায়নিক উপায়ে এনজাইম আহরন করে বিপনন করা হয়। বিভিন্ন অনুজীব বিভিন্ন এনজাইম আহরনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিচে দেখুন কিছু এনজাইম ও তার উৎস (অনুজীব) এর নাম।
i) Alpha-amylase -bacillus subtilis ও B. cereus নামক ব্যাকটেরিয়া ও Aspergillus, Mucor নামক ছত্রাক থেকে।
ii) Alkaline protease -Bacillus licheniformis, B. firmus, Streptomyces fradiae.নামক ব্যাকটেরিয়া ও Aspergillus niger, A. flava নামক ছত্রাক থেকে।
iii) Acid phosphatase- Aspergillus, Endothia Parasitica নামক ছত্রাক থেকে।
iv) Lipase – pennicillium chrysogenum ও Mucor spp নামক ছত্রাক থেকে।
অনুজীব ব্যবহার করে কৃত্রিম পরিবেশে বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় এনজাইমসমুহ উৎপাদন, আহরন ও পৃথকীকরণ ও বিশুদ্ধিকরণ প্রযুক্তিকে বলা হয় এনজাইম প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে এনজাইমের উৎপাদন বৃদ্ধি করা, এনজাইমের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা এবং এনজাইমের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও দীর্ঘায়িত করা। ভৌত রাসায়নিক উপায়েও এনজাইমের উৎকর্ষ সাধন করা যায়। তবে রিকম্বিন্যান্ট DNA প্রযুক্তি বা মিউটেশন ঘটিয়ে অধিক ফলপ্রসূভাবে এনজাইমের উৎপাদন ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “এনজাইম কি? এনজাইমের বৈশিষ্ট্য, কাজ এবং এনজাইম কিভাবে আহরন করা হয়?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।