বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেবার যোগ্যতা আছে এমন যে কেউই ক্যাডার হতে পারে। কিন্তু বিসিএস হবার পথ পরিক্রমা মোটেই সহজ নয়। কঠিন বলে কি খুব বেশিই কঠিন? উত্তরটা কখনো জি, আবার কখনো জি না।
মনে রাখতে হবে বিসিএস ক্যাডার হতে পরীক্ষা দিতে হবে ৩টি (প্রিলি, লিখিত ও ভাইবা)। এক্ষেত্রে প্রিলি’র নম্বর যোগ হয় না। লিখিত ও ভাইভা’র নম্বর যোগ হয়ে কেউ ক্যাডার, কেউ নন-ক্যাডার চাকুরী পায়। অন্যরা ফেল করে। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সহজে কেউ বুঝতেই পারে না, তাহলো, তিনটি পরীক্ষার মোট সময় কতদিন? এই সময় কিভাবে কাজে লাগাতে হয়? কিংবা প্রস্তুতির শুরুটা কিভাবে করা উচিৎ? কখন থেকে করা উচিৎ? ইত্যাদি।
লক্ষ করুন, প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ৩/৪ মাস পরেই লিখিত পরীক্ষা হয়, যেখানে প্রস্তুতি নিতে হয় 900 নম্বরের। ৩/৪ মাসে ৯০০ নম্বরের প্রস্তুতি নেয়া মোটেই সহজ কাজ নয়, যেখানে রয়েছে ইংরেজির মতো বিষয়ের ২০০ নম্বর, যার প্রায় কোন কিছুই পরীক্ষায় কমন থাকে না। অবশ্যই শিখে যেতে হবে। লিখিত পরীক্সার ৩/৪ মাসের মধ্যেই ভাইভা শুরু হয়, যা প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট ধরে নেয়া যায়। তাহলে প্রিলিমিনারির জন্য কতটুকু সময় হাতে থাকে? এখানেই বিসিএস হবার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল রয়ে গেছে। অর্থাৎ প্রিলি. শুরু কখন করবেন এটা নির্ভর করে আপনার নিজের উপর।
ধরুন, ৩৭তম প্রিলি. পরীক্ষার বাকী রয়েছে আর মাত্র ৪/৫ মাস। এই মূহুর্ত থেকে প্রিলি. শুরু করলে প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি শেষ হবে কিনা সন্দেহ রয়ে যায়।কিন্তু আপনি যদি ৩৮ তম প্রিলিমিনারিটা্ একটি গোছানো পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করতে পারেন, দেখবেন ৩৮তম তেই আপনি বিসিএস ক্যাডার হবার স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে। লক্ষ্য করুন, ৩৮ তম বিজ্ঞাপন হবে জুন-২০১৭ তে। পরীক্ষা হতে পারে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে এবং লিখিত হতে পারে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ মাসের দিকে।
ভাইভা নিয়েতো তেমন কোন দুঃচিন্তাই নেই। এক্ষেত্রে ৩৮ তম প্রিলিমিনারির জন্য আপনি হতে সময় পাচ্ছেন এখন থেকেই ঠিক ১২/১৩ মাস। এখন আপনার কাজ হচ্ছে একটা পরিকল্পনা তৈরী করা। তার মানে প্রিলি. প্রস্তুতির জন্য হাতে রাখুন ৮/৯ মাস। আর শেষের ১/৩ মাস শুরু করে দিন এডভান্স লিখিত পড়ালেখা। ভেবে দেখুন এটি করতে পারলে লিখিত অন্যরা যখন পড়া শুরু করবে আপনি তখন Revision দিবেন।
কি মনে হয় আপনার লিখিত পরীক্ষায় খারাপ করার চেয়ে চান্স আছে? জি আছে। আমরা বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কিন্তু জানি না কি পড়া উচিৎ আর কি না পড়লেও চলে। মনে রাখতে হবে বিসিএস পড়ার শুরু আছে, শেষ নেই। যারা না বুঝে সব কিছুই জড়তে চাইবে তারা কিছুটা Exam Load এর ঝামেলা সব কিছু গুলিয়ে ফেলতে পারে। বুদ্ধিমানের কাজ হবে মার্কস কোথায় কম পড়ে বেশি আছে তা খুজে বের করা।
অনেক দিনের পড়ানোর অভীজ্ঞাতা থেকে বলছি শুনুন, লিখিত পরীক্ষায় গড়ে ৬০% মার্কস পেলে একটা না একটা ক্যাডার পদ অবশ্যই পাওয়া যায়। লিখিত ৯০০ নম্বরের মধ্যে সব বিষয়ে এই ৬০% নম্বর প্লাস কেউ পায় না। কিছু বিষয়ে অবশ্যই সাবসিডি দিতে হয়। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে লিখিত পরীক্ষায় কোন বিষয়ে সবাসিডি দিবেন কোথা থেকে এই সাবসিডি নম্বর বেশি তুলে ফেলবেন।
লক্ষ্যকরুণ বাংলা আছে ২০০ নম্বর যার মধ্যে একজন সত্যিকার শিক্ষার্থীর কাছে ১৪০ নম্বরই তেমন কিছু নেই। মানে বাংলা থেকে পড়তে হবে শুধু সাহিত্য ৩০ ও ব্যাকরণ অংশের ৩০। অবশিষ্ট অংশ বাজারের গাউড বই একদিন দেখলেই হয়ে যাবে।অর্থাৎ অবশিষ্ট অংশে রয়েছে ১টি বাংলা রচনা, ১টি ভাব সম্প্রসারণ, ২টি সারমর্ম + সারাংশ, ১ টি চিঠি ইত্যাদি। যা না পড়েও ভালই লেখা যায়।
সাধারণ জ্ঞান থেকে বাংলাদেশ বিষয়াবলী ২য় পত্রের প্রস্তুতির জন্য সংবিধান এর গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী ও অনুচ্ছেদগুলি প্রিলিতে ভালভাবে পড়া ও নোট করে রাখলে লিখিত তে অনেক কাজ দেয়। সংবিধানের অনুচ্ছেদ মনে থাকলে, সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিগত প্রশ্নগুলি পড়লে এবং ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, অর্থনীতি, আমাদের সংস্কৃতি, জনসংখ্যা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ইত্যাদি অত্যান্ত পরিচিত টপিকস্ গুলি মনে রাখতে পারলে, আর এর সাথে কিছুটা চার্ট ভিত্তিক তথ্য পরীক্ষকের সামনে তুলে ধরতে পারলে আপনাকে আর পায় কে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে টীকা এবং সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন বেশি থাকায় কিছুটা পড়ালেখা করতে হয়। তবে প্রিলিতেই আন্তর্জাতিক বিষয়ে অনেকটাই পড়ে নেয়া সম্ভব। তাহলে কি দাড়ালো (১) বাংলা ২০০ থেকে কেবল মাত্র ৬০ নম্বর, (২) বাংলাদেশে বিষয়াবলী বিষয়ে ২০০ থেকে সংবিধান ও কিছুটা দেশ নিয়ে তথ্য উপাত্ত, (৩) আন্তর্জাতিক ১০০ থেকে প্রিলিতে পড়া বিষয়গুলি, বিগত প্রশ্নগুলি, টীকা ও সর্ট প্রশ্নে এইতো। তার মানে ৫০০ নম্বর কিন্তু হয়েই যায়। এটি শেষ করতে বড়জোর ২০ দিন লাগার কথা। তাহলে রইলো কি? (১) দৈনন্দিন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ১০০, (২) গণিত ও মানসিক দক্ষতা (১০০) এবং ইংরেজি (২০০) ভেবে দেখুন এই ৩টি বিষয় এর প্রতিটি থেকেই আপনার পক্ষে ৬০ নম্বরের বেশি পাওয়া অবশ্যই সম্ভব। অর্থাৎ এখানেই কিছু নম্বর এগিয়ে রাখতে হবে আপনাকে।
এক্ষেত্রে এই ৩টি বিষয় পড়ার জন্য আপনাকে টেবিল-চেয়ারে কমপক্ষে ৩/৪ মাস দেয়া উচিৎ। তাও সঠিক নিয়মে জড়তে হবে। আমার পরামর্শ হচ্ছে এখানেই আপনার সঠিক সময় বিনেয়োগ করুন। এই বিনিয়োগ আপনাকে সূদে-মূলে সারাজীবন সেবা দিবে নিশ্চিত থাকুন।
(মোঃ মাইদুল ইসলাম প্রধান)
তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা
সমাজকল্যান মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।