হাইড্রোজেন বন্ধন কাকে বলে? হাইড্রোজেন বন্ধন কত প্রকার ও কি কি?
হাইড্রোজেন বন্ধন কি বা কাকে বলে? (What is a Hydrogen bond in Bengali/Bangla?)
হাইড্রোজেন পরমাণু যখন অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল (যেমন- F, O, N ইত্যাদি) এর সাথে সমযোজী যৌগ গঠন করে, তখন তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্যের কারণে H-প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক চার্জ ও তড়িৎ ঋণাত্মক মৌলের প্রান্তে আংশিক ঋণাত্মক চার্জের সৃষ্টি হয়ে ডাইপোল গঠন করে, একাধিক ডাইপোলের মধ্যকার আকর্ষণ বলের ফলে সৃষ্ট বন্ধনকে হাইড্রোজেন বন্ধন বলে। সাধারণত বিন্দু রেখা (……..) দ্বারা হাইড্রোজেন বন্ধন দেখানো হয়।
হাইড্রোজেন বন্ধন গঠনের শর্ত
হাইড্রোজেন বন্ধন গঠিত হওয়ার শর্ত :
- হাইড্রোজেন বন্ধন গঠনকারী অণুর মধ্যে অন্তত 1টি H পরমাণু থাকা দরকার, যা উচ্চ তড়িৎ ঋণাত্মক মৌলের পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত।
- তড়িৎ ঋণাত্মক মৌলের পরমাণুটিকে আকারে ছোট হতে হবে।
- যে পরমাণুটির সঙ্গে H বন্ধন গঠিত হবে সেই পরমাণুটির উপর অন্তত একটি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় থাকবে। কেবলমাত্র F, O, N পরমাণু উপর্যুক্ত শর্তগুলো পূরণ করে বিধায়, শুধু এই পরমাণুগুলো কার্যকরী হাইড্রোজেন বন্ধন গঠনে সক্ষম। ক্লোরিন এবং নাইট্রোজেনের তড়িৎ ঋণাত্মকতা (3.0) সমান হওয়া সত্ত্বেও ক্লোরিন প্রকৃত পক্ষে স্থায়ী হাইড্রোজেন বন্ধন গঠন করতে পারে না। কিন্তু নাইট্রোজেন পারে। এর কারণ ক্লোরিন পরমাণুর আকার নাইট্রোজেন পরমাণুর আকার অপেক্ষা বড়।
হাইড্রোজেন বন্ধনের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Hydrogen bond)
হাইড্রোজেন বন্ধন দুর্বল স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বল দ্বারা সৃষ্টি হওয়ায় এটি স্থির বৈদ্যুতিক প্রকৃতির হয়। সাধারণ সমযোজী বন্ধনের তুলনায় হাইড্রোজেন বন্ধন দুর্বল প্রকৃতির হয়, তবে এটি ভ্যানডার ওয়ালস বলের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। হাইড্রোজেন বন্ধন দিক-চরিত্র বিশিষ্ট।
হাইড্রোজেন বন্ধনের প্রকারভেদ (Types of Hydrogen bond)
হাইড্রোজেন বন্ধন দুই প্রকার। যথাঃ
(১) আন্তঃআণবিক হাইড্রোজেন বন্ধন এবং
(২) অন্তঃআণবিক হাইড্রোজেন বন্ধন।
১। আন্তঃআণবিক হাইড্রোজেন বন্ধন : একই বা ভিন্ন যৌগের একাধিক অণুর মধ্যে যে বন্ধন গঠিত হয়, তাকে আন্তঃআণবিক হাইড্রোজেন বন্ধন বলে। উদাহরণস্বরূপ HF অণুতে হাইড্রোজেন বন্ধন, H2O অণুসমূহের মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ধন, NH3 অণুসমূহের মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ধন; CH3COOH অণুসমূহের মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ধন।
২। অন্তঃআণবিক হাইড্রোজেন বন্ধন : একই অণুর বিভিন্ন অংশের মধ্যে গঠিত হাইড্রোজেন বন্ধনকে অন্তঃআণবিক হাইড্রোজেন বন্ধন বলে। এরূপ H বন্ধন গঠিত হওয়াকে “চিলেশন” (Chelation) বলা হয়। কারণ এরূপ H-বন্ধনের ফলে বলয় (ring) গঠিত হয়। উদাহরণস্বরূপ— অর্থোনাইট্রোফেনল অণুতে হাইড্রোজেন বন্ধন, অর্থোহাইড্রক্সি বেনজালডিহাইড অণুতে হাইড্রোজেন বন্ধন।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “হাইড্রোজেন বন্ধন কাকে বলে?” আর্টিকেল পছন্দ হয়ে থাকলে, তাহলে অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।