স্বকীয় আবেশ বা স্বাবেশ কি?

কোন পরিবাহীর কুন্ডলীর মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ হলে, কুন্ডলীতে একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় এবং এই চৌম্বক ক্ষেত্রের চৌম্বক বলরেখাগুলো কুন্ডলীর সাথে জড়িয়ে পড়ে অর্থাৎ কুন্ডলীর সাথে সংযুক্ত একটি চৌম্বক ফ্লাক্স (magnetic flux) এর সৃষ্টি হয়। কুন্ডলীর বিদ্যুৎ প্রবাহের পরিবর্তন হলে চৌম্বক ফ্লাক্সেরও পরিবর্তন হয়। এই ফ্লাক্সের পরিবর্তনের কারণে কুন্ডলীতে একটি বিদ্যুৎ চালক বল আবিষ্ট হয় এবং ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। এই আবিষ্ট বিদ্যুৎ প্রবাহ কুন্ডলীর মূল বিদ্যুৎ প্রবাহের পরিবর্তনে (বৃদ্ধি বা হ্রাসের) বাধার সৃষ্টি করে।

কোন বিদ্যুৎপ্রবাহ কুন্ডলীতে নিজস্ব বলরেখা বা ফ্লাক্সের পরিবর্তনের জন্য ক্ষণস্থায়ী বিদ্যুৎ চালক বল আবিষ্ট হওয়ার ঘটনাকে স্বকীয় আবেশ (Self induction) বলে।

কুণ্ডলীতে বিদ্যুৎ-প্রবাহের পরিবর্তনের ফলে যেমন স্বকীয় আবেশের সৃষ্টি হয়, তেমনি চৌম্বক ক্ষেত্রে কুণ্ডলীর নিজের গতির কারণেও স্বকীয় আবেশের সৃষ্টি হয়। ধরা যাক, একটি বর্তনীতে একটি বিদ্যুৎ কোষ ও চাবি আছে। চাবি বন্ধ করার সাথে সাথে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বিদ্যুৎ-প্রবাহ শূন্য থেকে বেড়ে সর্বোচ্চ মানে এসে স্থির হয়। বিদ্যুৎ প্রবাহের সাথে সাথে বলরেখার সংখ্যাও শূন্য থেকে বেড়ে একটি সর্বোচ্চ সংখ্যায় এসে স্থির হয়। অতএব অতি অল্প সময়ে বলরেখার সংখ্যা শূন্য থেকে বেড়ে সর্বোচ্চ মানে আসে।
বলরেখার বা ফ্লাক্সের এই পরিবর্তনের ফলে বর্তনীতে আবিষ্ট বিদ্যুৎ প্রবাহের উদ্ভব হয় যা বর্তনীর মূল প্রবাহকে বাধা দেয়। অর্থাৎ আবিষ্ট এই বিদ্যুৎ-প্রবাহের অভিমুখ এবং মূল প্রবাহের অভিমুখ বিপরীতমুখী হবে। বর্তনীর বিদ্যুৎ-প্রবাহ বাড়তে থাকলে আবিষ্ট বিদ্যুৎ-প্রবাহ কমতে থাকে এবং বর্তনীর বিদ্যুৎ প্রবাহ যখন সর্বোচ্চ স্থির মানে পৌছায় তখন বিপরীতমুখী আবিষ্ট বিদ্যুৎ প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে যায়। এ অবস্থায় বর্তনীতে মােট বলরেখার (flux) কোন পরিবর্তন হয় না।

আবার বর্তনীর চাবি খুলে ফেললে বিদ্যুৎ প্রবাহের মান কমে সর্বোচ্চ থেকে শূন্যে এসে পৌঁছায়। সাথে সাথে বলরেখার সংখ্যাও সর্বোচ্চ মান থেকে কমে শূন্যে পৌছায়। এবারেও বলরেখার বা ফ্লাক্সের পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে বর্তনীতে আবারাে আবিষ্ট বিদ্যুৎচালক বলের সৃষ্টি হবে যা এবার বর্তনীর বিদ্যুৎ-প্রবাহকে ধরে রাখতে চাইবে অর্থাৎ বর্তনীর বিদ্যুৎ-প্রবাহ কমে যাওয়াকে বাধা দিবে। আবিষ্ট এই বিদ্যুৎ-প্রবাহের অভিমুখ এবং মূল প্রবাহের অভিমুখ এখন একই দিকে হবে। আবিষ্ট এই বিদ্যুৎ-প্রবাহকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ-প্রবাহ (extra current) বলে। এই বিদ্যুৎ-প্রবাহের জন্য বর্তনীকে বিচ্ছিন্ন করার সময় স্ফুলিঙ্গের (spark) সৃষ্টি হয়।

উপরের আলােচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, বর্তনীর স্বকীয় আবেশের জন্য বর্তনীকে বন্ধ করলে বিদ্যুৎ প্রবাহের মান সাথে সাথে সর্বোচ্চ মানে পৌছায় না অথবা বর্তনী বিচ্ছিন্ন করার সাথে সাথে বিদ্যুৎ প্রবাহের মান শূন্যে পৌঁছায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *