ঘর্ষণ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? ঘর্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?
একটি বস্তু যখন অন্য একটি বস্তুর সংস্পর্শে থেকে একের উপর দিয়ে অপরটি চলতে চেষ্টা করে বা চলতে থাকে তখন বস্তুদ্বয়ের স্পর্শতলে গতির বিরুদ্ধে একটি বাঁধার উৎপত্তি হয়, এ বাঁধাকে ঘর্ষণ বলে।
ঘর্ষণ সাধারণত চার প্রকারের হয়–
১. স্থিতি ঘর্ষণ (Static friction)
২. পিছলানো ঘর্ষণ (Sliding friction)
৩. আবর্ত ঘর্ষণ (Rolling friction)
- স্থিতি ঘর্ষণ : দুটি তলের একটি অপরটির সাপেক্ষে গতিশীল না হলে এদের মধ্যে যে ঘর্ষণ সৃষ্টি হয় তাকে স্থিতি ঘর্ষণ বলে। অর্থাৎ যখন একটি বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করা হয়, কিন্তু এ বল বস্তুর গতি সৃষ্টি করতে পারে না তখন স্থিতি ঘর্ষণ কাজ করে। আবার মেঝের উপর অবস্থিত একটি ভারী বস্তুকে টানার পরও গতিশীল না হলে যে ঘর্ষণ বল উৎপন্ন হয় তা হলো স্থিতি ঘর্ষণ বল। অর্থাৎ প্রযুক্ত বলের বিপরীতে স্থিতি ঘর্ষণ বল উৎপন্ন হয় এবং গতি সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ বল কাজ করে।
- পিছলানো ঘর্ষণ : যখন একটি বস্তু অন্য একটি বস্তুর তথা তলের উপর দিয়ে পিছলিয়ে বা ঘেঁষে চলতে চেষ্টা করে বা চলে তখন যে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয় তাকে পিছলানো ঘর্ষণ বলে।
- আবর্ত ঘর্ষণ : যখন একটি বস্তু অপর একটি তলের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলে তখন গতির বিরুদ্ধে যে ঘর্ষণ ক্রিয়া করে তাকে আবর্ত ঘর্ষণ বলে। সাইকেলের চাকার গতি, মার্বেলের গতি হলো আবর্ত ঘর্ষণের উদাহরণ। ভ্রমণের সময় মালামাল পরিবহনের জন্য আমরা চাকা লাগানো লাগেজ ব্যবহার করি। যদি লাগেজে চাকা লাগানো না থাকত তখন এটিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পিছলিয়ে টেনে নিতে বেশ কষ্ট হতো। কিন্তু চাকা লাগানোর ফলে লাগেজ টেনে নেওয়া বেশ সহজতর হয়। অর্থাৎ আবর্ত ঘর্ষণ বল পিছলানো ঘর্ষণের তুলনায় কম।
- প্রবাহী ঘর্ষণ : যখন কোনো বস্তু যে কোনো প্রবাহী পদার্থ যেমন– তরল বা বায়বীয় পদার্থের মধ্যে গতিশীল থাকে তখন যে ঘর্ষণ ক্রিয়া করে তাকে প্রবাহী ঘর্ষণ বলে। যখন পুকুরে সাঁতার কাটা হয় তখন পুকুরের পানির মধ্য দিয়ে একটি বাধাকে অতিক্রম করতে হয়। আর এ বাধাই হলো প্রবাহী ঘর্ষণ। প্যারাসুট বায়ুর বাধাকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে। এখানে বায়ুর বাধা হলো এক ধরনের ঘর্ষণ বল যা পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের বিপরীতে ক্রিয়া করে। খোলা অবস্থায় প্যারাসুটের বাহিরের তলের ক্ষেত্রফল অনেক বেশি হওয়ায় বায়ুর বাধার পরিমাণও বেশি হয়, যার ফলে আরোহীর পতনের গতি অনেক হ্রাস পায়। ফলে আরোহী ধীরে ধীরে মাটিতে নিরাপদে নেমে আসে।