রিসাইকেল প্রণালি হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পুরাতন বা বর্জ (Waste) দ্রব্যদিকে পরিবর্তন করে নতুন বস্তু পাওয়া। এর বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন-
ক. বহুল ব্যবহৃত বস্তুর অপচয় রোধ করা
খ. নতুন কাঁচামালের ব্যবহার হ্রাস করা
গ. শক্তি ব্যবহার কমানো
ঘ. বায়ু দূষণ, পানি দূষণ হ্রাস করা
ঙ. কম খরচে পণ্য সরবরাহ
চ. প্রাকৃতিক উৎসসমূহ সংরক্ষণ করা।
রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কাঁচ, কাগজ, ধাতু যেমন আয়রন, অ্যালুমিনিয়াম, তামা এবং প্লাস্টিক, টেক্সটাইল ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী। সুতরাং রিসাইক্লিং পদ্ধতির দ্বারা শক্তির ও অর্থের সাশ্রয় হয়। তদুপরি পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে।
বর্জ্য রিসাইক্লিং (Waste Recycling)
কোন জিনিস ব্যবহার করার পর যত্রতত্র ফেলে দেয়ার পরিবর্তে এগুলোকে নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ করার পর পুনরায় ব্যবহার উপযোগী পণ্যে রূপান্তরের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রিসাইক্লিং করা হয়। রিসাইক্লিং এর জন্য দরকার সামাজিক সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা, সরকারি আইনের আওতায় রিসাইক্লিং বাধ্যতামূলক করা।
প্রায় প্রতিটি জিনিস আমরা যা দেখি তার রিসাইক্লিং করা সম্ভব। ভিন্ন ভিন্ন জিনিসের প্রকৃতি অনুসারে রিসাইক্লিং পদ্ধতি নির্ভর করে। সাধারণত যেসব শিল্প পণ্যের রিসাইক্লিং করা হয় তাদের মধ্যে রয়েছে- ব্যাটারী, কাপড়, ইলেকট্রনিকস, গার্মেন্টস পণ্য, গ্লাস বা কাঁচ, ধাতু: আয়রন, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, কাগজ, প্লাস্টিক ইত্যাদি। রিসাইক্লিং এর আন্তর্জাতিক চিহ্নে একটি বৃত্ত ব্যবহার করা হয়। এতে রয়েছে ৩টি উপাদান: ক. সংগ্রহ ও বাছাইকরণ খ. শিল্পোৎপাদন গ. ভোক্তার কাছে বিক্রি। এই প্রক্রিয়া আবার শুরু হয় ভোক্তার ব্যবহারের পর।
কপার রিসাইক্লিং (Copper Recycling)
প্রায় দশ হাজার বছর ধরে কপার বা তামা ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং অতি প্রাচীনকাল হতে পুরাতন ও ব্যবহৃত তামার সামগ্রী পুনরায় প্রক্রিয়াজাত করে নতুনভাবে ব্যবহার করার নীতি চালু আছে। কপার বিদ্যুৎ ও তাপ পরিবাহী ধাতু। তাই তামার ব্যবহার বহুবিধ: তামার তার, তামার তৈরি যন্ত্রপাতির অংশ ইত্যাদি পুনরায় ব্যবহার করাতে তামার মজুদের উপর চাপ পড়েনা, খরচ কম পড়ে। ব্যবহারের দিক থেকে লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর পরই তামার স্থান। রিসাইক্লিং-এ তামার গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে। নিচে ক্যাবল রিসাইক্লিং এর বর্ণনা দেয়া হলো:
এটি করতে Shaft Shredder মেশিন, কনভেয়ার, চুম্বক পৃথককারী (Separator), ক্যাবল, গুড়াকারী মেশিন (Crusher), পৃথককারী টেবিল ও বায়ু ছাকনি সিস্টেম প্রয়োজন। ক্যাবলে যেহেতু প্লাস্টিকের আবরণ থাকে তাই ক্যাবল রিসাইক্লিং-এ উৎপন্ন হয় তামা ও প্লাস্টিক। এগুলো পৃথককরণের সব ব্যবস্থা রিসাইক্লিং মেশিনে থাকে।
কপার রিসাইক্লিং এর মূল পদ্ধতি : ভালো মানের তামার স্ক্রাপকে একটি চুল্লিতে গলানো হয়। তারপর একে বিজারিত করা হয় এবং বিলেট ও ইনগোটে কাস্টিং করা হয়। নিচু মানের তামার স্ক্রাপকে সালফিউরিক এসিডের সাথে ইলেকট্রোপ্লেটিং এর মাধ্যমে রিসাইক্লিং করা হয়।
কপার রিসাইক্লিং এর সুবিধা : কপার রিসাইক্লিং এর বেশ কিছু সুবিধা (berlefits) রয়েছে। যেমন–
ক. পরিবেশ: খনি হতে তামা নিষ্কাষণের সময় ধূলিকণা, বর্জ গ্যাস যেমন সালফার ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয়। তাদের রয়েছে পরিবেশের উপর বিরূপ, ও ক্ষতিকর প্রভাব। কপার রিসাইক্লিং এ পরিবেশের উপর কোন ক্ষতিকর প্রভাব থাকেনা বললেই চলে।
খ. ভূমিতে জমা রাখার খরচ: কপার ও কপার সংকর বস্তু রিসাইক্লিং না করলে ভূমিতে গর্ত করে রাখতে হয়। এতে জমির যে দাম তাতে রিসাইক্লিং এর তুলনায় এ পদ্ধতি খুবই ব্যয়বহুল।
গ. শক্তির সাশ্রয়: কপার আকরিক হতে বিশুদ্ধ কপার পেতে যে শক্তি ব্যয় করতে হয়, তার মাত্র ১০% শক্তি লাগে কপার রিসাইক্লিং করতে। এই শক্তি সাশ্রয়ে জ্বালানি তেল, গ্যাস অথবা কয়লার সাশ্রয় ঘটে। সেই সাথে বায়ুদূষক CO2, বায়ুতে কম নিঃসরিত হয়। এতে পরিবেশ দূষণ কম ঘটে।
ঘ. অর্থনীতি: খনি হতে নতুন তামা আহরণ ও বিশুদ্ধকরণের যে খরচ তার চেয়ে পুরাতন ও ব্যবহৃত তামা রিসাইক্লিং এর খরচ অনেক কম। এতে তামার বাজার মূল্য বেশ কম পড়ে। ইউরোপের প্রায় ৪১% তামার ব্যবহার ঘটে রিসাইক্লিং কপার হতে।
কাঁচ রিসাইক্লিং (Glass Recycling)
কাঁচ রিসাইক্লিং এর দ্বারা বর্জ্য কাঁচ (Waste glass) কে ব্যবহার উপযোগী উপজাতে রূপান্তর করা যায়। কাঁচের জিনিস ভাঙ্গা বাল্ব, কাঁচের বোতল সংগ্রহ করে কাঁচের রং অনুযায়ী আলাদা করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রিসাইক্লিং করা হয়। রিসাইক্লিং পদ্ধতিতে গ্লাস একটি আদর্শ পণ্য। কেননা, এর দ্বারা বর্জ পদার্থ ভূমিতে সংরক্ষণ লাগেনা, ইট ও সিরামিক তৈরিতে ব্যবহার হতে পারে। শক্তির সাশ্রয় ঘটে, খরচ কম পড়ে, পরিবেশ দূষণ হতে রক্ষা পায়। রিসাইক্লিং দ্বারা প্রাপ্ত কাঁচের ব্যবহার নানানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন-
ক. ইনসুলেশন উৎপাদ তৈরিতে
খ. সিরামিক স্যানিটারি উৎপাদের কাঁচামাল হিসেবে।
গ. ইট তৈরিতে ফ্লাক্স অ্যাজেন্ট হিসেবে
ঘ. কংক্রিট এর কাজে aggregate হিসেবে
ঙ. অ্যাবরেসিভ হিসেবে কাঁচ ব্যবহৃত হয়।
কাঁচ রিসাইক্লিং পদ্ধতি : কাঁচের বোতল সংগ্রহ করে হুপার দ্বারা কাঁচ ভাঙ্গা মেশিনে নেয়া হয়। ভাঙ্গা কাঁচকে কালেট বলে। এটি কালেট মিলে গুড়া করা হয়। পরবর্তিতে পাউডারে পরিণত করার পর পাউডার কনভেয়র দ্বারা মিশ্রণ মেশিনে নেয়া হয়। এরপর কাঁচের মিশ্রণগুড়াকে বেকিং মেশিনে নিয়ে বেকিং করার পর সংগ্রহ করা হয়। এখান থেকে প্রয়ােজনে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। পুনরায় বোতল বানানো বা অন্য শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সরবরাহ করা হয়।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “রিসাইকেল কি?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।