শিরক কি? শিরক কত প্রকার ও কি কি?

শিরক শব্দের অর্থ হচ্ছে অংশীদার সাব্যস্ত করাএকাধিক স্রষ্টা উপাস্যে বিশ্বাস করা। শিরক একটি মারাত্মক পাপ। শিরকের অপরাধ আল্লাহতালা সহজে ক্ষমা করেন না তাদের সকলকে শিরকের ব্যাপারে অনেক বেশি সাবধান হতে হবে।

ইসলামি পরিভাষায় মহান আল্লাহর সাথে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু শরিক করা কিংবা তার সমতুল্য মনে করাকে শিরক বলা হয়। যে ব্যক্তি শিরক করে তাকে মুশফিক বলা হয়। শিরক হচ্ছে তাওহীদ এর বিপরীত।

পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহ তাআল বলেছেন, “বলুন (হে নবী) তিনি আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়।”

সূরা আশ-শুরা এর একটা আয়াত আল্লাহ তা’আলা বলেন, “কোন কিছুই তার সদৃশ নয়।”

সূরা আম্বিয়ার ২২ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা উল্লেখ করেছেন, “যদি আসমান ও জমিনে আল্লাহ ব্যতীত একাধিক ইলাহ থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত।”

শিরক এর প্রকারভেদ

শিরক চার (৪) প্রকারের হতে পারে। যথা– (১) আল্লাহর সত্তা ও অস্তিত্বে, (২) আল্লাহর গুণাবলিতে, (৩) আল্লাহর ক্ষমায় এবং (৪) আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে। যেমনঃ-

 

  • আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও অস্তিত্বের শিরক করা। যেমন- হযরত ঈসা (সা:) কে আল্লাহর পুত্র মনে করা!
  • আল্লাহ তাআলার গুণাবলীতে শিরক করা। যেমন: আল্লাহর পাশাপাশি অন্য কাউকে সৃষ্টিকর্তা বা রিজিকদাতা মনে করা।
  • সৃষ্টিজগতের পরিচালনায় কাউকে আল্লাহর অংশীদার বানানো। যেমন- ফেরেশতাদের জগত পরিচালনাকারী হিসেবে মনে করা।
  • ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলার সাথে কাউকে শরিক করা। যেমন- আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সিজদা করা, কারো নামে পশু জবাই করা ইত্যাদি।

 

শিরকের কুফল
শিরক অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। পৃথিবীর সকল প্রকার জুলুম এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হল শিরক। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “নিশ্চয়ই সে রকম জুলুম” (সূরা লোকমান, আয়াত-১৩)।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলা আমাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। আল্লাহর প্রদত্ত নিয়ামতই আমরা ভোগ করি। এর পরেও কেউ যদি আল্লাহ তা’আলার সাথে কাউকে অংশীদার স্থাপন করে তবে তা অপেক্ষা বড় জুলুম আর কি হতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা মুর্শিদের প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট। যদিও আল্লাহ তায়ালা অপার ক্ষমাশীল ও অসীম দয়াময় তবুও শিরকের অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন না। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআন মাজিদে বলেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না এতদ্ব্যতীত যে কোন পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।” (সূরা নিসাা, আয়াত-৪৮)।
বস্তুতঃ আল্লাহ তাআলার দয়া, ক্ষমা ও রহমত ব্যতীত কেউই দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করতে পারে না। পরকালে মুশরিকদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। এ বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন- “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে আল্লাহ তার জন্য অবশ্যই জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার আবাসস্থল জাহান্নাম।” (সূরা আল মায়েদা, আয়াত-৭২)।
শিরক থেকে বাঁচার উপায়
ভেতর শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ, তাই আমাদের সকলকে এরূপ ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকতে হব। সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনভাবে ভুলক্রমে আল্লাহ তালার শিরক হয়ে না যায়। শিরক হতে পারে এমন কাজের আশপাশেও যাওয়া যাবেনা। কোনভাবে যদি ভুলক্রমে আল্লাহ তা’আলার সাথে শিরক হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে পুনরায় ঈমান আনতে হবে। অতঃপর বিশুদ্ধ অন্তরে তওবা করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা শ্রদ্ধা এবং করুনার মাধ্যমে পাপ ক্ষমা করে দিতে পারেন।
আসুন আমরা সকলে এই নিয়ত করি যে আমরা অবশ্যই শিরক থেকে বেচে থাকব এবং আল্লাহর উপর সুদৃঢ় ও ঈমান এনে আল্লাহর প্রিয় পাত্র হব। তাহলেই কেবল আমাদের ইহকাল ও পরকাল মঙ্গলময় হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *