নবম অধ্যায় : উদ্ভিদ শরীরতত্ত্ব, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ১ম পত্র
উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব কাকে বলে?
উত্তরঃ উদ্ভিদদেহে সর্বদা নানাবিধ জৈবনিক ক্রিয়া সংঘটিত হয়। জীবনপ্রবাহ অক্ষুন্ন রাখার জন্য এসব জৈবনিক প্রক্রিয়া উদ্ভিদের জন্য অপরিহার্য। উদ্ভিদবিজ্ঞানের যে শাখায় উদ্ভিদ দেহের নানাবিধ জৈবনিক কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব (Plant physiology) বলে।
পুষ্টি উপাদান কাকে বলে?
উত্তরঃ উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, গঠন, জীবনধারণ ও প্রজননের জন্য কতগুলো মৌলিক অজৈব উপাদানের প্রয়োজন হয়। এসব উপাদানকে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান বলে। এসব পুষ্টি উপাদানকে উদ্ভিদ প্রকৃতি হতে সংগ্রহ করে। গবেষণা করে দেখা গেছে উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ১৬টি মৌলিক অজৈব উপাদান প্রয়োজন।
ডোনান সাম্যাবস্থা কী?
উত্তরঃ কোষ আবরণীর মধ্য দিয়ে অব্যাপনযোগ্য কোন স্থির অ্যানায়ন (−) কোষাভ্যন্তরে থাকলে এদের নিরপেক্ষ করার জন্য বাহির হতে কিছু ক্যাটায়ন (+) কোষাভ্যন্তরে প্রবেশ করে আয়নের সাম্যাবস্থা বজায় রাখে। এটি ডোনান সাম্যাবস্থা।
লেন্টিসেল কী? (What is lenticel?)
উত্তরঃ কাষ্ঠল উদ্ভিদের সেকেন্ডারি বৃদ্ধির ফলে এর বাকলের স্থানে স্থানে যে উত্তল আকৃতির রন্ধ্রের সৃষ্টি হয় তার নাম লেন্টিসেল।
প্রস্বেদন কী?
উত্তরঃ যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ তার বায়ব অঙ্গের মাধ্যমে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি বাষ্পাকারে বের করে দেয় তার নাম প্রস্বেদন।
সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সকল সবুজ উদ্ভিদ আলোর ফোটন কণা গ্রহণ করে আলোকশক্তিকে (গতিশক্তি) রাসায়নিক শক্তিতে (স্থিতিশক্তি) রূপান্তর করে এবং এ শক্তি দ্বারা পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইডকে একটি ধারাবাহিক বিক্রিয়া শেষে জটিল কার্বোহাইড্রেটে পরিণত করে তাকে সালোকসংশ্লেষণ (Photosynthesis) বলে। এ প্রক্রিয়ায় পানি জারিত ও CO2 বিজারিত হয় এবং উপজাত হিসেবে পানি ও O2 সৃষ্টি হয়।
ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (Electron transport system) কাকে বলে?
উত্তরঃ ইলেকট্রন স্থানান্তর সবাত শ্বসনের একটি অপরিহার্য অংশ। সবাত শ্বসনের যে পর্যায়ে কতকগুলো সাইটোক্রোম এনজাইমের পর্যায়ক্রমিক রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ইলেকট্রন সাইট্রোক্রোমের এক অণু থেকে অন্য আর এক ধরনের সাইট্রোক্রোম অণুতে স্থানান্তরিত হওয়ার সময় ATP সংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ত্যাগ করে তাকে ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (Electron transport system) বলে।
ফার্মেন্টেশন বলতে কী বুঝ? (What is mean by fermentation?)
উত্তরঃ কোষের বাইরে অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে জাইমেজ এনজাইমের প্রভাবে হেক্সোজ কার্বোহাইড্রেট অণু অসম্পুর্ণভাবে জারিত হয়ে ইথানল বা ল্যাকটিক এসিড সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন বলে। কতিপয় ব্যাকটেরিয়া ও এককোষী ঈস্টে ফার্মেন্টেশন ঘটে। প্রাচীনকাল থেকেই ফারমেনটেশন প্রক্রিয়ায় অ্যালকোহল, মদ, সিডার, পাউরুটি ইত্যাদি তৈরি করা হয়। ফারাসি রসায়নবিদ Louis Pasteur, 1865 খ্রিস্টাব্দে ঈস্টের ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার বিবরণ দেন এবং ফার্মেন্টেশনকে অক্সিজেনবিহীন শ্বসন হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সালোকসংশ্লেষণের আলোক নির্ভর অধ্যায় কী?
উত্তরঃ আলোর উপস্থিতিতে ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানার থাইলাকয়েড মেমব্রেনে সালোকসংশ্লেষণের যে রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়া বা আলোক রাসায়নিক অধ্যায় বলে। এ অধ্যায়ে আলোকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে উচ্চশক্তি সম্পন্ন ATP ও NADPH2- তে সঞ্চারিত হয়।
সালোকসংশ্লেষণের আলোক স্বাধীন অধ্যায় কী?
উত্তরঃ সালোকসংশ্লেষণের এ অধ্যায়টি ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমাতে সংঘটিত হয়। এ অধ্যায় আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে সংঘটিত হয় কিন্তু আলো আবশ্যক না বলে একে আলোক স্বাধীন পর্যায় বা অন্ধকার রাসায়নিক বিক্রিয়া বলে। আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপাদিত রাসায়নিক শক্তি বা ATP, NADPH2-এর সাহায্যে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় জৈব যৌগ সৃষ্টি করতে এ বিক্রিয়া মুখ্য ভুমিকা পালন করে। বিক্রিয়াতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের সংবন্ধন ও বিজারণ সংঘটিত হয়। এজন্য একে কার্বন বিজারণ বিক্রিয়াও বলা হয়।