পরাগরেণু স্থানান্তরের কাজটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনাে না কোনাে মাধ্যমের দ্বারা হয়ে থাকে। যে বাহক পরাগরেণু বহন করে গর্ভমুণ্ড পর্যন্ত নিয়ে যায় তাকে পরাগায়নের মাধ্যম বলে। বায়ু, পানি, কীট-পতঙ্গ, পাখি, বাদুড়, শামুক এমনকি মানুষ এ ধরনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে।
মধু খেতে অথবা সুন্দর রঙের আকর্ষণে পতঙ্গ বা পাখি ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায়। এ সময়ে পরাগরেণু বাহকের গায়ে লেগে যায়। এই বাহকটি যখন একই প্রজাতির অন্য ফুলে গিয়ে বসে তখন পরাগরেণু ঐ ফুলের গর্ভমুণ্ডে লেগে যায়। এভাবে তাদের অজান্তে পরাগায়নের কাজটি হয়ে যায়।
পরাগায়নের মাধ্যমগুলোর সাহায্য পেতে ফুলের গঠনে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। একে অভিযােজন বলা হয়। বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য অভিযােজনগুলোও আলাদা। অভিযােজনগুলো নিম্নরূপ:
- পতঙ্গপরাগী ফুলের অভিযোজন : ফুল বড়, রঙিন, মধুগ্রন্থিযুক্ত। পরাগরেণু ও গর্ভমুণ্ড আঠালাে এবং সুগন্ধযুক্ত, যেমন- জবা, কুমড়া, সরিষা ইত্যাদি।
- বায়ুপরাগী ফুলের অভিযোজন : ফুল বর্ণ, গন্ধ ও মধুগ্রন্থিহীন। পরাগরেণু হালকা, অসংখ্য ও আকারে ক্ষুদ্র। এদের গর্ভমুণ্ড আঠালাে, শাখান্বিত, কখনাে পালকের ন্যায়, যেমন- ধান।
- পানিপরাগী ফুলের অভিযোজন : এরা আকারে ক্ষুদ্র , হালকা এবং অসংখ্য। এরা সহজেই পানিতে ভাসতে পারে। এসব ফুলে সুগন্ধ নেই। স্ত্রীফুলের বৃন্ত লম্বা কিন্তু পুং ফুলের বৃন্ত ছােট। পরিণত পুং ফুল বৃন্ত থেকে খুলে পানিতে ভাসতে থাকে, যেমন- পাতাশ্যাওলা।
- প্রাণিপরাগী ফুলের অভিযোজন : এসব ফুল মােটামুটি বড় ধরনের হয়। তবে ছােট হলে ফুলগুলো পুষ্পমঞ্জরিতে সজ্জিত থাকে। এদের রং আকর্ষণীয় হয়। এসব ফুলে গন্ধ থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। যেমন কদম, শিমুল, কচু ইত্যাদি।