খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান
☼ খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন ☼
✪ খাদ্য ও পুষ্টিঃ
আমরা যে সব বস্তু আহার করি তাকে আহার্য সামগ্রী বলে। কিন্তু সব আহার্য সামগ্রীই খাদ্য নয়। যেমন, থোড় সেলুলোজ দিয়ে গঠিত হওয়ায় আমাদের পরিপাক নালীতে পাচিত হয় না। ফলে পুষ্টি সহায়ক নয়। সেই সব আহার্য সামগ্রীকেই খাদ্য বলা যাবে, যা দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধি সহায়ক এবং তাপশক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
জীবদেহে শক্তির উৎস হল খাদ্য। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াকালে সৌরশক্তি খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরুপে আবদ্ধ হয়। জীবকোষে শ্বসনের সময় স্থৈতিক শক্তি তাপ শক্তি বা গতিশক্তি রুপে মুক্ত হয়, জীবদেহের যাবতীয় বিপাক ক্রিয়া, যেমন : শ্বসন, রেচন,পুষ্টি ইত্যাদি এবং শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ, যেমন-বৃদ্ধি, চলন-গমন, জনন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং প্রানধারনের জন্য প্রত্যেক জীবকেই খাদ্য গ্রহন করতে হয়। তাই, যে সব আহার্য সামগ্রী গ্রহন করলে জীবদেহের বৃদ্ধি, পুষ্টি, শক্তি উৎপাদন ও ক্ষয়পূরন হয়, তাকেই খাদ্য বলে।
পুষ্টি হল পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যবস্তু আহরন করে খাদ্যবস্তুকে পরিপাক ও শোষণ করা এবং আত্তীকরন দ্বারা দেহের শক্তির চাহিদা পূরণ , রোগ প্রতিরোধ , বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ করা ৷ অর্থ্যাৎ দেহ সুস্থ ও সবল রাখার প্রক্রিয়াকে পুষ্টি বলে৷ পুষ্টির ইংরেজি শব্দ (Nutrition)। অপরদিকে খাদ্যের যেসব জৈব অথবা অজৈব উপাদান জীবের জীবনীশক্তির যোগান দেয় , তাদের একসঙ্গে পরিপেষক বা নিউট্রিয়েন্টস (Nutrients) বলে ৷ যেমন :—গ্লুকোজ , খনিজ লবণ , ভিটামিন ইত্যাদি ৷
✪ খাদ্যের কাজঃ
- ➤ শরীর গঠন ও বৃদ্ধিসাধন এবং ক্ষয়পূরণ
- ➤ শরীরে তাপশক্তি ও কর্মক্ষমতা যোগানো
- ➤ শরীর রোগমুক্ত রাখা
- ➤ অসুস্থ শরীরকে আরোগ্য লাভে সহায়তা করা
✪ খাদ্যের শ্রেণীবিভাগঃ
জীবদেহে খাদ্যের কার্যকারিতা অনুযায়ী খাদ্য কে দু’ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন-
- দেহ-পরিপোষক খাদ্যঃ যে সব খাদ্য দেহের গঠন, বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদনে সহায়কারী, তাদের দেহ-পরিপোষক খাদ্য বলে। যেমন :শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট, আমিষ বা প্রোটিন এবং স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট বা লিপিড।
- দেহ-সংরক্ষক খাদ্যঃ যে সব খাদ্য দেহকে রোগ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে, শক্তি উৎপাদনে সহায়ক নয়, তাদের দেহ-সংরক্ষক খাদ্য বলে। যেমন : খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, খনিজ পদার্থ বা নারালস।
কাজ এর ভিত্তিতে খাদ্যকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ
১. শক্তিদায়ক খাদ্যঃ এসকল খাদ্যের প্রধান ভূমিকা হলো, শক্তি ও তাপ উৎপাদন করে শরীরকে সতেজ ও কর্মক্ষম রাখা। শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকর্ম যেমনঃ শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়া, হৃৎপিন্ড ও অন্যান্য দেহ যন্ত্রের ক্রিয়া, পরিপাক ক্রিয়া, মলমূত্র নিষ্কাষণ ক্রিয়া এবং দৈনন্দিন জীবনে সকল কাজকর্ম সম্পাদনে শক্তি প্রয়োজন। যে সকল খাদ্য সামগ্রী হতে শক্তি পাওয়া যায় তা হলোঃ
- শস্য জাতীয় খাদ্য (যেমন চাল, গম, ভূট্টা, জোয়ার ইত্যাদি)।
- মূল জাতীয় খাদ্য (যেমন গোল আলু, মিষ্টি আলু, মেটে আলু, কাসাবা ইত্যাদি)।
- তেল বা চর্বি জাতীয় খাদ্য (যেমন সব রকমের তেল, ঘি, মাংসের চর্বি ইত্যাদ।
- চিনি, গুড় ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য।
২. শরীর গঠন, বৃদ্ধিসাধন এবং ক্ষয়পূরণকারী খাদ্যঃ এ সকল খাদ্য মানবদেহে মূলত: শরীরের কাঠামো তৈরী বা শরীর গঠন, শরীরের বৃদ্ধি সাধন ও শরীরের ক্ষয় পূরণে কাজ করে থাকে।
➤এসব খাদ্যের মধ্যে প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্তঃ
➤ এবং উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত:
|
৩. রোগ প্রতিরোধক খাদ্যঃ এ সকল খাদ্যের প্রধান ভূমিকা হলো, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, নানা প্রকার রোগ-ব্যাধি কিংবা অসুস্থতা হতে শরীরকে রক্ষা করা। রোগ প্রতিরোধক সস্তা খাদ্যের মধ্যে রয়েছে :
- রঙ্গিন শাকসব্জি
- ফলমূল
✪ খাদ্য উপাদানের শ্রেণী বিভাগঃ
খাদ্য উপাদানসমূহকে ৬ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
- ১. শ্বেতসার বা শর্করা (উৎস- চাল, গম, ভুট্টা, চিড়া, মুড়ি, চিনি, গুড়, আলু ও মূল জাতীয় অন্যান্য খাদ্য)।
- ২. আমিষ বা প্রোটিন (উৎস-মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, মটর শুঁটি, সীমের বীচি, কাঁঠালের বীচি, বাদাম ইত্যাদি)।
- ৩. স্নেহ বা স্নেহপদার্থ জাতীয় খাদ্য (উৎস-তেল, ঘি, মাখন, চর্বি ইত্যাদি।
- ৪. খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন (উৎস-রঙ্গিন শাক-সব্জি ও ফল, ডিম, দুধ, কলিজা ইত্যাদি)।
- ৫. খনিজ লবণ (উৎস-রঙ্গিন শাক-সবজি ও ফল, ডিম, দুধ, কলিজা, মাংস, ছোট মাছ ইত্যাদি।
- ৬. জল বা নিরাপদ পানি।
➤১. শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটঃ
উপাদানঃ কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন এই তিনটি উপাদান নিয়ে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট গঠিত। শর্করায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে থাকে। শর্করার আণবিক সংকেত Cn(H2O)n; যেমন গ্লুকোজ C6H12O6, সুক্রোজ C12H22O11 ইত্যাদি।
উৎসঃ ধান বা চাল, গম, ভূট্টা, বাজরা, আলু, ওল, কচু, বীট, গাজর ইত্যাদিতে স্বেতসার বা স্টার্চ; খেজুর, আঙ্গুর, আপেল ইত্যাদিতে দ্রাক্ষাশর্করা বা গ্লুকোজ; শাক-সবজি, বেল, তরমুজ, থোড় ইত্যাদিতে সেলুলোজ; আম, কলা, কমলালেবু প্রর্ভতি পাকা ফলে ফলশর্করা বা ফুক্টোজ; চিনি, গুড়, মিছরী ইত্যাদিতে ইক্ষুশর্করা বা সুক্রোজ; দুধে দুগ্ধ শর্করা বা ল্যাক্টোজ এবং পাঁঠার যকৃৎ ও পেশীতে গ্লাইকোজেন বা প্রাণীজ শ্বেতসার পাওয়া যায়।
শ্রেণীবিভাগঃ কার্বোহাইড্রেটের প্রত্যেক অণুতে সরল শর্করার এক বা একাধিক এককের উপস্থিতি অনুসারে কার্বোহাইড্রেটকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ছে। যথা :
- ১. মনোস্যাকারাইডঃ যেসব শর্করা একটি মাত্র অণু দ্বারা গঠিত, তাকে মনোস্যাকারাইড বলে। যথা: গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ ও গ্যালাকটোজ।
- ২. ডাইস্যাকারাইডঃ যেসব শর্করা দুটি অণু দ্বারা গঠিত, তাকে ডাইস্যাকারাইড বলে। যেমন: সুক্রোজ, ল্যাকটোজ ও মলটোজ।
- ৩. পলিস্যাকারাইডঃ যেসব শর্করা অনেক অণু দ্বারা গঠিত, তাকে পলিস্যাকারাইড বলে। যেমন: স্টার্চ, গ্লাইকোজেন ও সেলুলোজ।
➤ পুষ্টিগত গুরুত্ব বা কাজঃ
- দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাপ শক্তি উৎপাদন শর্করার প্রধান কাজ।
- সেলুলোজ জাতীয় খাদ্য কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে।
- গ্লাইকোজেন যকৃত ও পেশীতে সঞ্চিত থাকে যা প্রয়োজনের সময় গ্লুকোজে পরিণত হয়ে দেহে অতিরিক্ত তাপ শক্তি উৎপাদন করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক পরিমান হল প্রতি ১০০ মিলি. রক্তে ৮০-১২০ গ্রাম।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহন না করেও শুধুমাত্র প্রচুর পরিমাণে শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য খেয়ে মানুষ সুস্থ শরীরে দীর্ঘদিন যাবৎ বেঁচে থাকতে পারে। এই জন্য শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যকে প্রোটিন বাঁচোয়া খাদ্য বলা হয়।
➤২. আমিষ বা প্রোটিনঃ
উপাদানঃ কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন সমন্বয়ে প্রোটিন গঠিত। অনেক সময় সালফার এবং ফসফরাসও প্রোটিনে থাকে। প্রোটিন-অণু অসংখ্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের সমন্বয়ে গঠিত হয়।
উৎসঃ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ছানা ইত্যাদিতে প্রাণিজ আমিষ এবং ডাল, সয়াবিন, বীন, গম ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ আমিষ পাওয়া যায়। প্রানিজ আমিষে অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রায় সব গুলিই থাকে বলে প্রাণিজ আমিষকে প্রথম শ্রেণীর আমিষ বা প্রোটিন বালা হয়।
- শ্রেণীবিভাগঃ প্রোটিনকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. সরল প্রোটিনঃ যে সব প্রোটিন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না, তাদের সরল প্রোটিন বলে। যথা: অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, প্রোটমিন, হিস্টোন, গ্লায়াডিন, গ্লুটেলিন ইত্যাদি সরল প্রোটিনের উদাহরণ। - ২. সংযুক্ত প্রোটিনঃ সরল প্রোটিন যখন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে যুক্ত থাকে ,তখন তাদের সংযুক্ত প্রোটিন বলে। যথা: হিমোগ্লোবিন, হিমোসায়ানিন, ফসফোপ্রোটিন, লাইপোপ্রোটিন ইত্যাদি।
- ৩. লব্ধ প্রোটিনঃ যে সব প্রোটিন পরিপাক নালীতে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য পরিপাকের সময় উদ্ভূত হয়, তাদের লব্ধ প্রোটিন বলে। যথা: পেপটন, পেপটাইড ইত্যাদি।
পুষ্টিগত গুরুত্ব বা কাজঃ
- দেহের বৃদ্ধি, কোষ গঠন ও ক্ষয়পূরণ হল প্রোটিনের প্রধান কাজ।
- তাপ শক্তি উৎপাদন।
- দেহস্থ উৎসেচক, হরমোন ইত্যাদি সৃষ্টি করা।
- অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করা হল প্রোটিনের অন্যতম কাজ।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, ১ গ্রাম প্রোটিন অণু দহন হলে ৪.১ কেসিএল তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রত্যহ প্রায় ১০০-১৫০ গ্রাম প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন।
➤৩. স্নেহপদার্থ বা ফ্যাটঃ
উপাদানঃ কার্বন, হাইড্রোজেন, এবং অক্সিজেন নিয়ে স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট গঠিত হয়। এখন অক্সিজেন অনুপাত শর্করা তুলনায় কম এবং শর্করার মত হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে থাকে না। ফ্যাট প্রকৃতপক্ষে অ্যাসিড এবং গ্লিসারলের সমন্বয়ে গঠিত এস্টার বিশেষ।
উৎসঃ বাদাম, নারিকেল, সরষে, রেড়ী বীজ, তুলা বীজ ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ ফ্যাট এবং মাখন, ঘি, চর্বি ইত্যাদিতে প্রানিজ ফ্যাট থাকে। সাধারন উত্তাপে যে সমস্ত ফ্যাট তরল অবস্থায় থাকে, তাদের তেল বলে।
শ্রেণীবিভাগঃ ফ্যাট সাধারনত দু;রকমের হয়। যথা:
- ১. সরল ফ্যাটঃ যে সব ফ্যাট অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না, তাদের সরল ফ্যাট বলে। যথা: ওয়াক্স বা মোম, ল্যানোলিন ইত্যাদি সরল ফ্যাটের উদাহরণ।
- ২. যৌগিক ফ্যাটঃ সরল ফ্যাট যখন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে যুক্ত থাকে ,তখন তাদের যৌগিক ফ্যাট বলে। যথা: ফসফোলিপিড, গ্লাইকোলিপিড, অ্যামাইনো-লিপিড ইত্যাদি।
পুষ্টিগত গুরুত্ব বা কাজঃ
- তাপ শক্তি উৎপন্ন করা ফ্যাট জাতীয় খাদ্যে প্রধন কাজ।।
- ফ্যাট প্রানিদেহের তাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে।
- ফ্যাট মেদরুপে ভবিষ্যতের খদ্যের উৎস হিসাবে সঞ্চিত থাকে।
- ফ্যাট A, D, E, K ভিটামিনকে দ্রবীভূত রাখে এবং এদের শোষণে সাহায্য করে।
- ফ্যাট যকৃৎ থেকে পিওরস এবং অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসরণে সাহায্য করে।
- স্নেহপদার্থ মলাশয় ও পায়ু পিচ্ছল করে মল নিঃসরণে সহায়তা করে।
- কোলেস্টেরল নামক ফ্যাট থেকে ভিটামিন-ডি, ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরণ নামক হরমোন উৎপন্ন হয়।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, ১ গ্রাম অণু ফ্যাট দহন হলে ৯.৩ কেসিএল তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রত্যহ প্রায় ৫০ গ্রাম স্নেহপদার্থ প্রয়োজন।
➤৪. খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিনঃ
যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারন খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থেকে দেহের স্বআভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলে।
- শ্রেণীবিভাগঃ দ্রাব্যতা অনুসারে ভিটামিনগুলিকে দুভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
১. তেল বা স্নেহপদার্থে দ্রবনীয় ভিটামিন :যে সব ভিটামিন তেল বা স্নেহপদার্থে দ্রবীভূত হয়, তাদের স্নেহপদার্থে দ্রবনীয় ভিটামিন বলে। যথা: A, D, E, K । - ২. জলে দ্রবনীয় ভিটামিন :যে সব ভিটামিন জলে দ্রবীত হয়, তাদের জলে দ্রবনীয় ভিটামিন বলে।। যথা: B, C এবং P ।
উৎসঃ ভিটামিন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, প্রানীদের যকৃৎ, মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল, মাখন, উদ্ভিজ্জ তেল, বাদাম, ঢেঁকিছাটা চাল, লাল আটা, ছোলা, মুগ, বীট, গাজর, মটরশুঁটি, পালংশাক, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লেবু, আম, আমলকি, আপেল ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। ভিটামিনের এই সব উৎসের মধ্যে দুধ, ডিম, পালংশাক, টমেটো, মটরশুঁটি, কলা, আপেল ইত্যাদিতে বেশীর ভাগ ভিটামিন পাওয়া যায়। ভিটামিন A এবং D এর উৎস মোটামুটি এক, যেমন : কড্, হ্যালিবাট যকৃত নিঃসৃত তেল (লিভার অয়েল), মাখন, দুধ, ডিম,গাজর, বাঁধাকপি, ইত্যাদি। নারিকেল, সরষে, রেড়ী বীজ, তুলা বীজ ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ ফ্যাট এবং মাখন, ঘি, চর্বি ইত্যাদিতে প্রাণিজ ফ্যাট থাকে। সাধারন উত্তাপে যে সমস্ত ফ্যাট তরল অবস্থায় থাকে, তাদের তেল বলে।
পুষ্টিগত গুরুত্ব বা কাজ :
- তাপ শক্তি উৎপন্ন করা ফ্যাট জাতীয় খাদ্যে প্রধান কাজ।
- ফ্যাট প্রাণিদেহের তাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে।
- ফ্যাট মেদরুপে ভবিষ্যতের খাদ্যের উৎস হিসাবে সঞ্চিত থাকে।
- ফ্যাট A, D, E, K ভিটামিনকে দ্রবীভূত রাখে এবং এদের শোষণে সাহায্য করে।
- ফ্যাট যকৃৎ থেকে পিত্তরস এবং অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসরণে সাহায্য করে।
- স্নেহপদার্থ মলাশয় ও পায়ু পিচ্ছিল করে মল নিঃসরণে সহায়তা করে।
- কোলেস্টেরল নামক ফ্যাট থেকে ভিটামিন-ডি, ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন নামক হরমোন উৎপন্ন হয়।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, ১ গ্রাম অণু ফ্যাট দহন হলে ৯.৩ কেসিএল তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রত্যহ প্রায় ৫০ গ্রাম স্নেহপদার্থ প্রয়োজন।
➤৫. খনিজ লবণঃ
লবণ বা নুন হলো খাদ্যে ব্যবহৃত এক প্রকারের দানাদার পদার্থ যার মূল উপাদান হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl)। এটি প্রাণীর জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য, কিন্তু অধিকাংশ স্থলজ উদ্ভিদের জন্য বিষবৎ। লবণের স্বাদকে মৌলিক স্বাদের একটি বলে গণ্য করা হয়। পৃথিবীর সর্বত্র এটি খাদ্য প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়।
মানুষের খাদ্যে বিভিন্ন ধরণের লবণ ব্যবহার করা হয়। যেমন অপরিশোধিত সৈন্ধব লবণ (sea salt), পরিশোধিত খাবার লবণ, আয়োডিনযুক্ত লবণ, ইত্যদাই। লবণ দেখতে দানাদার, সাদাটে বর্ণের। সমূদ্রের পানি থেকে অথবা খনি থেকে লবণ আহরণ করা হয়।
➤৬. পানিঃ
পানি খাদ্যের একটি উপাদান। মানবদেহের জন্য পানি অপরিহার্য। দেহের গঠন এবং অভ্যন্তরীণ কাজ পানি ছাড়া চলতে পারে না। আমাদের দৈহিক ওজনের ৬০-৭০% পানি। আ”মাদের রক্ত মাংস, স্নাযূ, দাঁত, হাড় ইত্যাদি প্রতিটি অঙ্গ গঠনের জন্য পানি প্রয়োজন। দেহকোষ গঠন ও কোষের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো পানি ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
★ খাদ্য উপাদানের কাজ, উৎস ও মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণঃ
খাদ্যের মুখ্য উপাদানঃ
- শ্বেতসার বা শর্করা
- আমিষ
- স্নেহ
খাদ্যের গৌণ উপাদানঃ
- খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন
- খনিজ লবণ
- নিরাপদ পানি
খাদ্যের মুখ্য উপাদান শ্বেতসার বা শর্করাঃ
কাজ
|
উৎসঃ চাল, গম, ভুট্টা, চিনি, গুড়, মিষ্টি, আলু, মিষ্টি আলু, কচু ইত্যাদি
মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ (আহারোপযোগী )
- মোট প্রয়োজনীয় খাদ্য শক্তির শতকরা প্রায় ৫০-৬০ ভাগ
আমিষঃ
কাজ
|
- উৎসঃ
- প্রাণিজ উৎস যেমন-মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, কলিজা
- উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন- সয়াবিন, কাঁঠালের বীচি, সীমের বীচি, ডাল, বাদাম, মটরশুঁটি ইত্যাদি
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ (আহারোপযোগী):
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১ গ্রাম ( পূর্ণ বয়স্কদের জন্য )
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ২-৩ গ্রাম ( ৪ বছরের শিশুর জন্য )
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১.৭ গ্রাম ( ৪-১৮ বছর বয়স পর্যন্ত )
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১.৫ গ্রাম ( গর্ভবতী ও প্রসূতীর জন্য )
স্নেহ বা শ্বেতসারঃ
কাজ
|
- উৎস
- প্রাণিজ উৎস যেমন-ঘি, মাখন, চর্বি
- উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন-সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, তিলের তেল, সূর্যমুখীর তেল, বাদাম, ডালডা, নারকেল (শুকনা )
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ (আহারোপযোগী)
- প্রায় ৩৫-৪০ গ্রাম ( পূর্ণ বয়স্কের জন্য )
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য দৈনিক ২-৩ গ্রাম ( ১ বছর পর্যন্ত শিশুর জন্য)
★খাদ্যের গৌণ উপাদান – খাদ্য প্রাণ বা ভিটামিনঃ
ভিটামিন (তেল বা চর্বিতে দ্রবণীয়)
★ ভিটামিন-এ
কাজ
|
- উৎস (আহারোপযোগী)
- প্রাণিজ উৎস যেমন-ফিস লিভার ওয়েল, মাছের তেল, কলিজা, মাখন, ডিমের কুসুম, কিডনি, চর্বি
- উদ্ভিজ্য উৎস যেমন-রঙিন শাকসবজি, ফল এবং ভুট্টা ও মিষ্টি আলু
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- প্রায় ৫০০০ আই ইউ* ( প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য )
- প্রায় ৬০০০ আই ইউ ( গর্ভবতীর জন্য )
- প্রায় ৮০০০ আই ইউ ( প্রসূতির জন্য )
- প্রায় ২০০০-৪৫০০ আই ইউ ( ১-১২ বছর বয়স পর্যন্ত )
- * আই ইউ (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট)
★ ভিটামিন-ডি
- কাজ
- শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস বিপাকে সাহায্য করে
- হাঁড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস কাজে লাগাতে সাহায্য করে
- উৎস (আহারোপযোগী)
- প্রাণিজ উৎস যেমন-মাছের তেল, ফিস লিভার ওয়েল, মাখন, ডিমের কুসুম, দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার
- প্রাকৃতিক উৎস যেমন-সূর্যের আলো
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- ২.৫ মাইক্রোগ্রাম ( প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য )
- ১০ মাইক্রোগ্রাম ( গর্ভবতী, প্রসূতি ও শিশুর জন্য )
- (উদ্ভিজ্জ খাদ্যে ভিটামিন-ডি নেই)
★ ভিটামিন-ই
- কাজ
- এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে ভিটামিন-এ, ক্যারোটিন এবং অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডকে জারিত হয়ে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে
- প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করাসহ বন্ধ্যাত্ব নিবারণে সহায়তা করে
- উৎস (আহারোপযোগী)
- প্রাণিজ উৎস যেমন-কডলিভার ওয়েল
- উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন- বাদাম,গম, যব, সূর্যমুখী তেল, সয়াবিন তেল এবং পামতেল
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- প্রায় ৫-১০ মিলিগ্রাম
★পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন
★ ভিটামিন-সি
কাজ
|
- উৎস (আহারোপযোগী)
- টক জাতীয় ফল যেমন – আমলকি, পেঁয়ারা, জাম্বুরা, আমড়া, লেবু, কামরাঙ্গা, কুল, আনারস। এছাড়া কাঁচামরিচ, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, সজনে পাতা, মূলাশাক ইত্যাদি কাঁচা খেলেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- ২০ মিলিগ্রাম ( শিশুর জন্য )
- ৩০ মিলিগ্রাম ( প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য )
- ৫০ মিলিগ্রাম ( গর্ভবতীর জন্য )
- ৫০ মিলিগ্রাম ( প্রসূতির জন্য )
★ ভিটামিন-বি২
- কাজ
- শরীরে শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে শক্তি উৎপাদন করে
- চর্বি ও আমিষ থেকে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে
- দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি সাধনে সাহায্য করে
- উৎস (আহারোপযোগী)
- প্রাণিজ উৎস যেমন-চর্বি বিহীন মাংস, কলিজা, ডিম, দুধ, মাছ
- উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন-ঢেঁকি ছাঁটা সিদ্ধ চাল, গম, যব, ইস্ট, মটরশুঁটি ইত্যাদি
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- ১.৪ মিলিগ্রাম ( পুরুষের জন্য )
- ১.০ মিলিগ্রাম ( মহিলার জন্য )
- ১.১ মিলিগ্রাম ( গর্ভবতীর জন্য )
- ১.৪ মিলিগ্রাম ( প্রসূতির জন্য )
★নায়াসিন
- কাজ
- শর্করা বিপাকে সাহায্য করে
- শর্করা ও আমিষ থেকে দেহের চর্বি উৎপাদনে সাহায্য করে
- উৎস (আহারোপযোগী)
- প্রাণিজ উৎস যেমন-মাংস, কলিজা
- উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন-গম, ডাল, বাদাম, তেল বীজ, ছোলা ও শাক-সবজি
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- ১৮.২ মিলিগ্রাম ( পুরুষের জন্য )
- ১৩.২ মিলিগ্রাম ( মহিলার জন্য )
- ১৫.১ মিলিগ্রাম ( গর্ভবতীর জন্য )
- ১৮.১ মিলিগ্রাম ( প্রসূতির জন্য )
★ ভিটামিন-বি১২
- কাজ
- কো-এনজাইম হিসেবে দেহে কাজ করে
- রক্তের লোহিত কণিকার আকার স্বাভাবিক রাখে
- উৎস (আহারোপযোগী)
- প্রাণিজ উৎস যেমন-কলিজা, মগজ, হৃৎপিন্ড, কিডনি, মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য, ডিমের কুসুম ও গরুর কলিজা
- (উদ্ভিজ্জ খাদ্যে ভিটামিন-বি১২ নেই)
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- ১.০ মাইক্রোগ্রাম (শিশুর জন্য)
- ২.০ মাইক্রোগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য)
- ৩.০ মাইক্রোগ্রাম (গর্ভবতীর জন্য)
- ২.৫ মাইক্রোগ্রাম (প্রসূতির জন্য)
খনিজ লবণঃ
★ ক্যালসিয়াম
কাজ
|
- উৎস (আহারোপযোগী)
- প্রাণিজ উৎস যেমন-ছোট চিংড়ি, ছোট মাছের কাঁটা, নরম হাঁড়, দুধ ও দুধজাত খাবার
- উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন-ডাল, ঢেঁড়স, সজনে এবং সবুজ শাক যেমন-কচু শাক, পালং শাক ইত্যাদি
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- ৪৫০ মিলিগ্রাম ( প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য )
- ৫০০-৬০০ মিলিগ্রাম ( শিশুর জন্য )
- ৬৫০ মিলিগ্রাম ( কিশোর-কিশোরীর জন্য )
- ১১০০ মিলিগ্রাম ( গর্ভবতীর জন্য )
- ১১০০ মিলিগ্রাম ( প্রসূতির জন্য )
★ফসফরাস
কাজঃ
- ক্যালসিয়ামের সাথে মিলিত হয়ে হাঁড় ও দাঁতের তন্তু তৈরী এবং তা মজবুত করে
- শর্করা এবং চর্বি বিপাকে সাহায্য করে শরীরে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে
- কোষের নিউক্লিক এসিড ও সাইটোপ্লাজমের অপরিহার্য অংশ
- উৎস ( আহারোপযোগী )
- প্রাণিজ উৎস যেমন-মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, পনির
- উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন-বাদাম, ডাল এবং দানা জাতীয় খাদ্য দ্রব্য
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- ৮০০ মিলিগ্রাম
★ পটাশিয়াম
- কাজ
- দেহ বিশেষ করে চর্বিহীন মাংসপেশী বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন
- পেশীর স্বাভাবিক নড়াচড়া বজায় রাখে
- উৎস (আহারোপযোগী)
- প্রাণিজ উৎস যেমন-চর্বিহীন মাংস এবং দুধ ( তবে কম বেশি প্রায় সব খাবারের মধ্যে পটাশিয়াম রয়েছে )
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- ২.৫ মিলিগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য)
★ আয়রণ
- কাজ
- রক্তের হিমেগ্লোবিনের হিম অংশ তৈরীর জন্য অপরিহার্য
- অসংখ্য এনজাইমের অংশ হিসেবে অক্সিডেশন-রিডাকশন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়
- জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রন-ট্রান্সফার সিস্টেমের জন্যে লৌহের প্রয়োজন
- উৎস (আহারোপযোগী)
- প্রাণিজ উৎস যেমন-মাংস, কলিজা, ডিম, টেংরা মাছ, তাপসী মাছ, রুপাপাতিয়া মাছ বা এসব মাছের শুটকি
- উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন-কাঁচা আম, আমচুর, কাল কচু শাক, ফুল কপির পাতা, শালগম পাতা, ডাঁটা শাক এবং অন্যান্য শাক
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- ০৯ মিলিগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য )
- ১০ মিলিগ্রাম (ছোট ছেলে মেয়ের জন্য)
- ১৮ মিলিগ্রাম (কিশোরের জন্য)
- ২৪ মিলিগ্রাম (কিশোরীর জন্য)
- ২৮ মিলিগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার জন্য)
- ৩৩ মিলিগ্রাম (গর্ভবতীর জন্য)
★আয়োডিন
- কাজ
- থাইরক্সিন নামক হরমোন তৈরীর জন্য অত্যাবশ্যকীয়
- শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য
- উৎস (আহারোপযোগী)
- প্রাণিজ উৎস যেমন-সামুদ্রিক মাছ (তাজা/শুটকি)
- প্রাকৃতিক উৎস যেমন-সামুদ্রিক আগাছা
- আয়োডিন মিশ্রিত খাবার লবণ
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- ১৫০ মাইক্রোগ্রাম
★ পানি
কাজ
|
- উৎস
- প্রাকৃতিক উৎস (বিশুদ্ধ)
- তরল খাবার বা পানিয়
- শক্ত খাবার
- মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- প্রায় আড়াই থেকে তিন লিটার (পূর্ণ বয়স্কের জন্য)
★ সুষম খাদ্য
- সুষম খাবার বলতে আমরা এমন খাবারের কথা বুঝি যাতে শরীরের প্রয়োজনীয় সবকটি খাদ্য উপাদানই সঠিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। সুষম খাদ্য তালিকায় শক্তিদায়ক,শরীর বৃদ্ধিকারক ও ক্ষয়পূরক এবং রোগ প্রতিরোধক খাবার উপযুক্ত পরিমাণে অন্তর্ভূক্ত থাকতে হবে।
- বয়স, কাজ, লিঙ্গ ও শারীরিক অবস্থাভেদে সুষম খাদ্য ভিন্ন হতে পারে।
- সুস্থ্য দেহের জন্য খাদ্য উপাদান ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার দৈনিক খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- এছাড়া প্রয়োজনীয় পরিমাণ নিরাপদ পানি পান করতে হবে। দৈনিক খাদ্য তালিকায় যেন ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত কোন খাবার না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- সুষম খাদ্য বলতে শুধু দামি খাদ্যকেই বুঝায় না। সস্তা খাদ্য সামগ্রী দিয়েও সুষম খাদ্য তৈরী করা যায়।
★ পুষ্টি
- পুষ্টি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গ্রহণ করা খাদ্য পরিপাক ও শোষিত হয়ে শরীরে তাপ ও শক্তি যোগায়, শরীরের বৃদ্ধিসাধন করে রোগ থেকে মুক্ত রাখে, ক্ষয়পূরণ করে এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- পুষ্টির উৎস
- চাল, ডাল
- মাছ, মাংস
- শাকসব্জী, ফলমূল
- পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন (ভিটামিন ‘বি’কমপ্লেক্স, ভিটামিন ‘সি’)
- তেলে দ্রবণীয় ভিটামিন (ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন‘ডি’, ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’)
- ভিটামিন ‘সি’
- পুষ্টিকর খাদ্য কেন প্রয়োজন
- শরীর গঠন, বুদ্ধিমত্তা, শরীর বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য
- শারীরিক শক্তি বা কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য
- জীবন চক্রের অতি গুরুত্বপূর্ন সময় যেমন- শিশুকাল, শৈশবকাল, কৈশোর, গর্ভাবস্থা, স্তন্যদানকাল ও বয়োসন্ধিকালে বিশেষ প্রয়োজনীয়, পরিমিত ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক অবস্থা ও দৈহিক ক্রিয়াকর্ম অনুযায়ী খাদ্য চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বা কম কিংবা অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ অপুষ্টি জনিত রোগের কারণ হতে পারে। তাই জীবনের সকল পর্যায়ে আমাদের পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করা উচিৎ।
★সচরাচর জিজ্ঞাসা ★
- প্রশ্ন.১.খাদ্যের কাজ কি?
- উত্তর. খাদ্যের কাজ হলো:শরীরে তাপশক্তি ও কর্মক্ষমতা যোগানো,শরীর গঠন ও বৃদ্ধিসাধন এবং ক্ষয়পূরণ, শরীর রোগমুক্ত রাখা, অসুস্থ শরীরকে আরোগ্য লাভে সহায়তা করা
- প্রশ্ন.২.শক্তি জাতীয় খাদ্যের উৎস কোন গুলো?
- উত্তর. শস্য জাতীয় খাদ্য (যেমন চাল, গম, ভূট্টা, জোয়ার ইত্যাদি),মূল জাতীয় খাদ্য (যেমন গোল আলু, মিষ্টি আলু, মেটে আলু, কাসাবা ইত্যাদি), তেল বা চর্বি জাতীয় খাদ্য (যেমন সব রকমের তেল, ঘি, মাংসের চর্বি ইত্যাদি) , চিনি, গুড় ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য ।
- প্রশ্ন.৩. শরীর গঠন, বৃদ্ধিসাধন এবং ক্ষয়পূরণকারী খাদ্যের উৎস কি?
- উত্তর. প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্ত: ডিম, দুধ, মাছ, মাংস এবং উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত: সব রকমের ডাল, মটর শুঁটি, সীমের বীচি, কাঁঠালের বীচি, বাদাম প্রভৃতি।
- প্রশ্ন.৪. রোগ প্রতিরোধক খাদ্য কোন গুলো?
- উত্তর. রোগ প্রতিরোধক সস্তা খাদ্যের মধ্যে রয়েছে রঙ্গিন শাকসব্জি ও ফলমূল।
- প্রশ্ন.৫.পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন-নায়াসিনের কাজ কি?
- শর্করা বিপাকে সাহায্য করে
- শর্করা ও আমিষ থেকে দেহের চর্বি উৎপাদনে সাহায্য করে
- প্রশ্ন.৬.পুষ্টির কাজ কি?
- উত্তর. পুষ্টির কাজ হলো: শরীর গঠন, বৃদ্ধি সাধন, ক্ষয়পূরণ, শক্তি সরবরাহ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে কর্মক্ষম রাখা।
- প্রশ্ন.৭.সুষম খাদ্য তালিকায় কোন ধরনের খাদ্যগুলো থাকতে হবে?
- উত্তর. সুষম খাদ্য তালিকায় সকল ধরনের খাদ্যসামগ্রী যেমন- শক্তিদায়ক, শরীর গঠন, বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণকারী এবং রোগ প্রতিরোধকারী খাবার অন্তর্ভূক্ত থাকবে।