HISTORY

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব আলোচনা| ত্বরাইনের প্রথম যুদ্ধের চেয়ে দ্বিতীয় যুদ্ধ কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেন?

0 min read

সুলতান মাহমুদ ১৭ বার ভারতবর্ষ আক্রমণ করে ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে দুর্বল করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে একইভাবে মুহাম্মদ ঘুরী ভারতে অভিযান চালিয়ে ভারতে স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যত হন।

একই উদ্দেশ্য নিয়ে মুহাম্মদ ঘুরী চৌহানরাজ পৃথ্বীরাজের সাথে মোট দুইবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুহাম্মদ ঘুরী বিচলিত না হয়ে পুনরায় শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করে পৃথ্বীরাজের বিরুদ্ধে তরাইনের প্রান্তরে উপস্থিত হন। ১১৯২ সালে দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন।

ডরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব : মুহাম্মদ ঘুরী তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে রাজপুতদের মিলিত বাহিনীকে তীব্রভাবে আক্রমণ করে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। রাজপুত বীররা মুসলিম বাহিনীর নিকট পরাভূত হয়।

হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও মুসলিমদের নিকট পরাজিত হয়। পৃথ্বীরাজ বন্দি ও নিহত হন। হিন্দুদের চিরাচরিত যুদ্ধরীতি সর্বোপরি মিলিত বাহিনী পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীভূত একক অধিনায়কত্বের অভাব তাদের পরাজয়ের জন্য বিশেষভাবে দায়ী ছিল।

এ যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘুরীর বিশাল বাহিনীর সংখ্যা ছিল ১  লক্ষ ২০ হাজার ও অশ্বারোহীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজার। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ এক যুগান্তকারী ঘটনা।

হিন্দুদের এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে উত্তর ভারত তুর্কি মুসলমানদের দখলে চলে যায়। মুসলিম অধিকার প্রায় দিল্লির উপকণ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

প্রকৃতভাবে মুসলিমদের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। হ্যান্সি, সামান, গুহরাম ও অন্যান্য কয়েকটি সুরক্ষিত দুর্গ মুহাম্মদ ঘুরীর নিকট আত্মসমর্পণ করে।

আজমির রাজ্য মুহাম্মদ ঘুরীর দ্বারা অধিকৃত হলেও তারা মুহাম্মদ ঘুরীকে বাৎসরিক কর দিতে রাজি হলে আজমির পৃথ্বীরাজের পুত্রের শাসনাধীনে রাখা হয়।

গজনিতে ফিরে যাওয়ার পূর্বে মুহাম্মদ ঘুরী তার বিশ্বস্ত সেনাধ্যক্ষ কুতুবউদ্দিনকে ভারতীয় বিজিত রাজ্যের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে যান।

কুতুবউদ্দিন আইবেক তার সামরিক দক্ষতা ও রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টির দ্বারা ভারতে তুর্কি সাম্রাজ্য বিস্তার করে। ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে অতি অল্পসময়ে তিনি দিল্লি জয় করেন এবং ক্রমান্বয়ে গোয়ালিয়র, আনহিলওয়ার, কনৌজ প্রভৃতি অধিকার করে মুসলিম অধিকৃত রাজ্যের বিস্তার সাধন করেন।

যখন কুতুবউদ্দিন আইবেক উলা ভারত মুহাম্মদ ঘুরীর আয়াত্তাধীনে নিয়ে আসেন, তখন তার এক সেনাধ্যক্ষ ও অনুচর ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি পূর্ব ভারতে তুর্কি সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন।

কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার খলজিকে বাংলা ও বিহার জয় করার জন্য পাঠালেন, বখতিয়ার খলজি তখন বাংলার শেষ হিন্দু সেন রাজা লক্ষ্মণ সেনকে আক্রমণ করেন।

লক্ষ্মণ সেন ভয়ে নদীয়া থেকে পলায়ন করেন। বখতিয়ার খলজি সহজেই বাংলা ও বিহার অধিকার করে নেন। তখন বাংলার রাজধানী লক্ষণাবতী বা গৌড়ে স্থানান্তরিত করা হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ সম্পর্কে হেগের ভাষ্য অনুযায়ী, তরাইনের বিজয়ের জন্য উত্তর ভারতে দিল্লিসহ সমস্ত শহরের ফটক মুহাম্মদ ঘুরীর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো।

গজনিতে ফিরে যাওয়ার পূর্বে মুহাম্মদ ঘুরী তার বিশ্বস্ত সেনাধ্যক্ষ কুতুবউদ্দিনকে ভারতের বিজিত রাজ্যের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করে যান।

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই ” তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব আলোচনা| ত্বরাইনের প্রথম যুদ্ধের চেয়ে দ্বিতীয় যুদ্ধ কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেন?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

5/5 - (1 vote)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x