সমাজবিজ্ঞান

ভারতবর্ষে পরিচালিত বাবরের অভিযানসমূহের বিবরণ দাও

1 min read

ভারতবর্ষে বাবরের অভিযানসমূহ আলোচনা কর

ভারতবর্ষের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা এক দ্বিগ্বিজয়ী বীর হচ্ছেন জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর। তিনি অতি অল্প বয়সেই পিতৃহারা হন এবং পিতার সাম্রাজ্যের অধিষ্ঠিত হন।

কিন্তু তার এ সাম্রাজ্য লাভ তার আত্মীয় স্বজনেরা ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। যার ফলে বাবরের বিরুদ্ধে শুরু হয় নানা রকম ষড়যন্ত্র। বাবর তাই পিতৃরাজ্যের আশা ছেড়ে দিয়ে ভারতবর্ষের দিকে অগ্রসর হন।

→ ভারতবর্ষে বাবরের অভিযানসমূহ : বাবর যখন দেখলেন যে নানা সমস্যার কারণে মধ্য এশিয়ায় রাজ্য স্থাপন করা অসম্ভব ঠিক সেই সময়ে বাবর ভারতবর্ষের দিকে মনোনিবেশ করেন।

নিম্নে ভারতবর্ষে পরিচালিত বাবরের প্রাথমিক অভিযানসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. বজৌর ও নদীর অববাহিকা জয় : ভারতবর্ষে অভিযান শুরু করার প্রথমদিকে বাবর ১৫১৯ সালে সিন্ধুনদ অতিক্রম করে বজৌর ও পাঞ্জাবের ঝিলাম নদীর তীরবর্তী ভেরা জয় করেন।

এছাড়াও বাবর এ সময় কুশব ও চেনার নদীর অববাহিকা জয় করেন। এ সকল স্থান দখল করতে বাবরকে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।

২. বদাখশান ও কান্দাহার জয় : বলৌর ও কিলাম প্রভৃতি নদীর অববাহিকা জয় করার পর বাবর ভারতের আরো গভীরের দিকে দৃষ্টি দেন। ১৫২০ সালে তিনি ব্যাখশান এবং ১৫২২ [ সালের কান্দাহার জয় করেন।

অতঃপর এ বদাখশানে স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে পুত্র হুমায়ূনকে এবং দ্বিতীয় পুত্র কামরানকে কান্দাহারের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন।

৩. লোদীর আমন্ত্রণ ও লাহোর জয় : ১৫২৪ সালে বাবরের সামনে ভারতবর্ষ জয়ের এক বিশাল সুযোগ জোটে। কেননা এ সময় দিল্লির সুলতান ইব্রাহীম লোদীর সাথে পাঞ্জাবের শাসনকর্তা দৌলত খান লোদীর ও তার পিতৃব্য আলম খান লোদীর বিরোধ থাকায় দৌলত খান লোদী বাবরকে ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান।

বাবর তাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং ১৫২৪ সালে সৈন্যবাহিনীসহ পাঞ্জাবে প্রবেশ করেন। পাঞ্জাবে প্রবেশ করে প্রথমেই বাবর লাহোর অধিকার করেন।

৪. অন্যান্য এলাকা জয় : লাহোর জয় করার পর বাবর পাঞ্জাবের অন্যান্য এলাকা জয়ে মনোনিবেশ করেন। এ সময় তিনি শিয়ালকোট, দিপালপুর এবং পাঞ্জাবের আশেপাশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা জয় করেন।

তবে এসকল এলাকার শাসনভার বা দৌলত খানকে না দেওয়ায় দৌলত খান অসন্তুষ্ট হয়ে বাবরের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন। বাবর দৌলত খানকে পরাজিত করে শিওয়ালিক পর্বতে বিতাড়িত করেন।

৫. পাঞ্জাবের শাসন ক্ষমতা বণ্টন ও কাবুল প্রত্যাবর্তন : বাবর যখন পাঞ্জাব জয় করে দৌলত খানকে যখন শায়েস্তা করছিলেন ঠিক সেই সময়ে তিনি হুমায়ূনের রাজ্য বাংশানে বিদ্রোহের সংবাদ শুনতে পান।

ভাই বাবর এ সময় পাঞ্জাব ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ দৌলত খানের পুত্র দিলওয়ার খান, ইব্রাহীম লোদীর পিতৃব্য আলম খান ও মুঘল আমিরদের মধ্যে বণ্টন করে নিয়ে কাবুল প্রত্যাবর্তন করেন।

৬. চূড়ান্তভাবে পাঞ্জাব জয় : বাবর কাবুল ফিরে এলে দৌলত খান পাহাড় হতে ফিরে এসে পাঞ্জাবের শাসকদেরকে বিতাড়িত করে পুনরায় পাঞ্জাব দখল করে নেন। বাবরের অনুগত অনেকেই এ সময় দৌলত খানের সাথে হাত মেলান।

বাবর দৌলত খান ও অন্যান্য বিশ্বাসঘাতকদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাদেরকে দমন করার জন্য ১৫২৫ সালে পাঞ্জাব অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। উপায়ন্তর না পেয়ে দৌলত খান ও অন্যরা বাবরের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। ফলে পাঞ্জাব চূড়ান্তভাবে বাববের অধিকারে আসে।

৭. দিল্লি ও আগ্রা ভয় ; ১৫২৬ সালে বাবর সৈন্যবাহিনী নিয়ে দিল্লির দিকে অগ্রসর হন। এসময় দিল্লির সুলতান ইব্রাহীম লোদীর দুটি বাহিনী বাবরকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

অবশেষে ১৫২৬ সালের ১২ এপ্রিল বাবর যমুনা নদীর তীরে ঐতিহাসিক পানিপথ নামক প্রান্তরে এসে সৈন্য শিবির স্থাপন করেন।

২০ ও ২১ এপ্রিল এ স্থানে ইব্রাহীম লোদী ও বাবরের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে বাবর জয়ী হন এবং অতি দ্রুত দিল্লি ও অম্লা দখল করে মুঘল শাসনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন।

৮. খানুয়ার যুদ্ধে জয়লাভ : ভারতের রাজপুত বংশের রানা সংগ্রাম সিংহ এবং বাবরের মধ্যে ১৫২৭ সালের ১৬ মার্চ খানুয়ার প্রান্তরে বাবর ও সংগ্রাম সিংহের মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

মুঘল বাহিনীর আক্রমণে দুর্ধর্ষ রাজপুত সৈন্যবাহিনী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে রানা সংগ্রাম সিংহ যুদ্ধ করতে করতে নিহত হলেন এবং এ যুদ্ধে কয়েকজন রাজপুতসহ অনেক সৈন্য মৃত্যুবরণ করেন।

রাজপুতদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশা চিরতরে বিনষ্ট হলো। এ যুদ্ধে জয়লাভ করার ফলে বাবরের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পেল। আর এ যুদ্ধে জয়লাভ করার পর মুঘল রাজধানী কাবুল হতে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয়।

৯. চান্দেরী দুর্গ দখল : খানুয়ার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাজপুত্ররা চান্দেরী রাজ্যের রাজা মেদিনীরাওয়ের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হন। বাবর এ সংবাদ পেয়ে ১৫২৮ সালের ২০ জানুয়ারি চান্দেরী দুর্গ অবরোধ করেন।

রাজপুত বাহিনী এ সময় বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করলেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন। এ যুদ্ধে রাজপুতরা পুরোপরি ধ্বংস হয়ে যায় এবং চান্দেরী দুর্গ বাবরের হস্তগত হয় ।

১০. গোগরার যুদ্ধ জয়লাভ : বাবরের চান্দেরী দুর্গ দখলের পর ১৫২৯ সালে গোগরার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধ ছিল মূলত বাবরের সাথে আফগান বাহিনীর যুদ্ধ।

পানিপথের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত আফগানরা পুনরায় নিহত ইব্রাহীম লোদীর ভাই জৌনপুরের শাসক মাহমুদ লোদীর নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এবং তারা বাবরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

এ খবর পেয়ে বাবর তার পুত্র আসকারীকে জৌনপুরের শাসক মাহমুদ লোদীকে দমন করার জন্য প্রেরণ করেন। নিজের অনুসারীরা দল ত্যাগ করায় মাহমুদ লোদী হতাশ হয়ে বাংলার সুলতান নসরত শাহের আশ্রয় গ্রহণ করেন।

তাই স্বভাবতই বাবর বাংলার দিকে ধাবিত হতে বাধ্য হন। ১৫২৯ সালে গোগরা নামক স্থানে সংঘটিত গোগরার যুদ্ধে আফগানদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। এতে বিস্তর এলাকা বাবরের অধীনে চলে আসে এবং মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, বুদ্ধিমান বাবর ধাপে ধাপে ভারতের দিকে ধাবিত হন এবং ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন এলাকা জয় করে নেন।

এভাবেই বাবর দিল্লি জয় করেন এবং ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ভারতবর্ষ ও মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা তাকে ইতিহাসে অমরত্ব দান করেছে।

 

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “ভারতবর্ষে পরিচালিত বাবরের অভিযানসমূহের বিবরণ দাও ” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

5/5 - (37 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x