হুমায়ূন কে ছিলেন | সম্রাট হুমায়ুনের পরিচয় দাও
ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাটদের ইতিহাসে হুমায়ূন এক অনন্য নাম। তিনি ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের জ্যেষ্ঠ পুত্র।
তাছাড়া হুমায়ূনের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য উভয়ই ইতিহাসে হুমায়ূনকে ইতিহাসে আশ্রয় করে দিয়েছে। তিনি ছোটবেলা কঠিন দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হন এবং সুস্থতা লাভ করেন। এজন্য হুমায়ূনের প্রাথমিক জীবন ইতিহাসের আলোচনায় উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে।
হুমায়ুনের পরিচয় : হুমায়ূনের প্রাথমিক জীবন সম্বন্ধে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. জন্ম : হুমায়ূনের সম্পূর্ণ নাম হচ্ছে নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ূন। হুমায়ূন ১৫০৮ সালের মার্চ মাসে বাবরের শিয়া স্ত্রী মহিম বেগমের গর্ভে কাবুলে জনুগ্রহণ করেন।
২. বাল্যকাল : হুমায়ূন ছিলেন বাবরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। হুমায়ূনের ছোট আরো তিন ভাই ছিল। তারা হলেন, কামরান, আসকারী এবং হিন্দাল।
বাল্যকালেই হুমায়ূনের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখা দেয় এবং এ সময় তিনি আরবি, ফার্সি, তুর্কি, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। তবে বাল্যকালের শেষ দিকে। হুমায়ূন এক দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
৩. যুদ্ধে অংশগ্রহণ : কৈশোরকালেই হুমায়ূন সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং সামরিক বিষয়ে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেন। বাবরের ভারত অভিযানের সময় হুমায়ূন পিতার সাথে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ও ধানুয়ার যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং বেশ পারদর্শিতার পরিচয় দেন ।
৪. শাসনক্ষমতা লাভ : তরুণ বয়সেই হুমায়ূন শাসন সংক্রান্ত বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েন। হুমায়ূনের বয়স যখন ২০ বছর তখনই তিনি বাবর কর্তৃক বাদাখশানের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং পরবর্তীতে হিসার ফিরোজা এবং সম্বলের শাসনভার লাভ করেন। এ সকল অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি বেশ দক্ষতার পরিচয় দেন।
৫. উত্তরাধিকার মনোনীত হুমায়ূন : বাবর বেঁচে থাকা অবস্থাতেই বাবরের বিজিত সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হন। এজন্যই বাবর মৃত্যুশয্যায় হুমায়ুনকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান।
৬. হুমায়ূনের সিংহাসনে আরোহণ : ১৫৩০ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাবর মৃত্যুবরণ করেন এবং তার মৃত্যুর চারদিন পর মাত্র ২৩ বছর বয়সে হুমায়ূন সম্রাট বাবরের প্রতিষ্ঠিত মুঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট হিসেবে দিল্লির সিংহাসন আরোহণ করেন।
সিংহাসনে আরোহণ করেই হুমায়ূন ভাই কামরানকে কাবুল ও কান্দাহার, মির্জা আসকারীকে সম্বল এবং হিন্দালকে আলওয়ার ও মেওয়াটের শাসনভার প্রদান করেন। চাচাতো ভাই সোলাইমান মির্জাকে হুমায়ূন বদাখশানের শাসক নিযুক্ত করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হুমায়ূনের প্রাথমিক জীবন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাল্যকালে তিনি জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতি সাধন করেন এবং খুব অল্প বয়সে দিল্লির সিংহাসন লাভ করেন।
তিনি শাসনকার্যে অবতীর্ণ হয়ে শেরশাহের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন এবং রাজ্যহারা হয়ে ঘুরে বেড়ান। তবে তিনি পুনরায় সিংহাসন উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
আরো পড়ুনঃ
- হুমায়ুনের চরিত্র আলোচনা
- সম্রাট হুমায়ুনের শেরশাহের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার কারণ কি?
- হুমায়ুন কিভাবে সিংহাসন পুনরুদ্ধার করেন
- হুমায়ুন নামের উপর একটি টীকা লিখ
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “হুমায়ূন কে ছিলেন | সম্রাট হুমায়ুনের পরিচয় দাও” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।