সম্রাট বাবর ভারতবর্ষে যে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি রচনা করেছিলেন পরবর্তীতে তার যোগ্য উত্তরসূরিরা তাদের দক্ষতায় তা এক বিশাল সাম্রাজ্য দান করেছিলেন। সম্রাট হুমায়ূন মুঘল বংশের দ্বিতীয় সম্রাট।

তাঁর জীবনে বিভিন্ন সময় বড় ধরনের উত্থান-পতন ঘটলেও তিনি অসীম সাহসিকতা ও অসাধারণ ধৈর্যের মাধ্যমে এবং সর্বোপরি নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে তিনি হারানো সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

হুমায়ূনের ইতিবৃত্ত : নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. সম্রাট হুমায়ূন জন্ম ও পরিচয় : সম্রাট বাবরের ১৮ জন ছেলের মধ্যে হুমায়ূন সকলের বড় ছিলেন। বাবরের মাত্র ৪ জন ছেলে বেঁচে ছিলেন।

বাকি সবাই বাবরের জীবদ্দশায় মারা যান। সম্রাট হুমায়ূন ১৫০৮ সালের ৬ মার্চ কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মূল নাম নাসিরুদ্দিন মাহমুদ হুমায়ূন।

২. সিংহাসনে আরোহণ : ১৫৩০ সালে সম্রাট বাবর মারা গেলে হুমায়ূন সিংহাসনে বসেন। সিংহাসনে বসেই তিনি তার আপন ভাইদের বিরোধিতা এবং ষড়যন্ত্রের শিকার হন। সম্রাট হুমায়ূন খুবই সহজ-সরল ও বিচক্ষণ শাসক ছিলেন।

৩. মহানুভবতা ও বদান্যতা : সম্রাট হুমায়ূন খুবই দয়ালু, মহানুভব ও শক্তিশালী বদান্যতার অধিকারী ছিলেন। তার ভাইয়েরা তার বিরোধিতা করলেও তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন। তার শৌর্যবীর্য ও সাহসিকতা সমসাময়িক নৃপতিদের ছাড়িয়ে গেছে।

৪. শেরশাহের সাথে যুদ্ধ : শেরশাহ খুবই চতুর শাসক ছিলেন। তাছাড়া তার সেনাবাহিনীর বেশির ভাগ আফগান হওয়ায় জাতীয়তাবোধ তাদের ভিতর অনেক বেশি ছিল। প্রথম হুমায়ূন ও শেরশাহের যুদ্ধ ১৫৩৯ সালে চৌসা নামক স্থানে।

এ যুদ্ধে হুমায়ূন পরাজিত হন এবং কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। পরের বছর আবার বক্সারের প্রান্তরে হুমায়ূন শেরশাহের নিকট পরাজিত হন এবং দিল্লির সিংহাসন হারান।

৫. শিক্ষানুরাগী : সম্রাট হুমায়ূন খুবই শিক্ষানুরাগী শাসক ছিলেন। তাঁর শিক্ষা ও রুচি ছিল বাবরের মতোই ফারসিভিত্তিক। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, কাব্যচর্চা এবং গণিতশাস্ত্রে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন।

৬. ধর্মভীরু : সম্রাট হুমায়ূন খুবই ধর্মভীরু শাসক ছিলেন। ন্যায় নিষ্ঠা এবং ক্ষমার মূর্ত প্রতীক ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী ভাইদের ক্ষমা করে অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি সর্বদা অঞ্জু রক্ষা করতেন এবং তসবি পাঠ করতেন। ইসলাম ধর্মের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল।

৭. সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা : ১৫৪০ সালে সিংহাসন হারানোর পর তিনি পারস্যে গমন করেন। সেখানের সুলতান শাহ তাহমাসপের সহায়তা লাভ করেন এবং সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন। শেরশাহ মারা গেলে সম্রাট হুমায়ূন ১৫৫৫ সালে পুনরায় দিল্লির সিংহাসনে বসেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট হুমায়ূন অসীম ধৈর্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি ক্ষমার অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হয়েও নিজের বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার দরুণ দ্বিতীয়বার সাম্রাজ্য ফিরে পান।

তিনি মুঘল সম্রাটদের মধ্যে অন্যতম ধর্মভীরু শাসক ছিলেন। তিনি ১৫৫৬ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি দ্রুত সিড়ি থেকে নামতে গিয়ে পড়ে যান এবং মারা যান ।

আরো পড়ুনঃ

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “হুমায়ুন নামের উপর একটি টীকা লিখ” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

5/5 - (39 votes)

By Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.