Islamic QA

গুনাতে লিপ্ত হয় আর বলে ঈমান হচ্ছে অন্তরে!

1 min read

প্রশ্ন

কিছু কিছু মানুষ হারাম কাজে লিপ্ত হয় যেমন- দাড়ি মুণ্ডন করা, ধুমপান করা। যদি তাকে এগুলো বর্জন করার উপদেশ দেয়া হয় তখন সে বলে: ঈমান হলো অন্তরে; ঈমান দাড়ি লম্বা করায় নয়, ধুমপান বর্জন করায় নয়। আরও বলেন: নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদের দেহগুলোর দিকে তাকান না; কিন্তু তিনি তোমাদের অন্তরগুলোর দিকে তাকান। আমরা তাকে কিভাবে জবাব দিতে পারি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এই কথাটি কিছু অশিক্ষিত ও ভ্রান্ত যুক্তিদাতা লোকেরা বেশি বলে থাকে। এই সত্য কথাটি বলে বাতিলকে উদ্দেশ্য করা হয়। কেননা এই কথা উদ্ধৃতকারী ব্যক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের পাপের পক্ষে সাফাই গাওয়া। কেননা সে দাবী করে যে, নেক আমল করা ও পাপ ত্যাগ করার পরিবর্তে অন্তরের ঈমানই যথেষ্ট। এটি সুস্পষ্ট ভ্রান্ত যুক্তি। কেননা ঈমান শুধু অন্তরে নয়। বরঞ্চ ঈমান যেমনটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আলেমগণ সংজ্ঞা দেন: মুখের কথা, অন্তরের বিশ্বাস ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কর্ম।

ইমাম হাসান আল-বসরী বলেন: ঈমান বাহ্যিক বেশভুষা কিংবা অলীক চিন্তা নয়; বরং ঈমান হলো যা অন্তরে স্থির হয়েছে এবং কর্ম সেটাকে সত্যে পরিণত করেছে।

পাপে লিপ্ত হওয়া ও নেক আমল বর্জন করা প্রমাণ করে যে, অন্তরে ঈমান নেই কিংবা রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ ঈমান। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা সুদ ভক্ষণ করো না।[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩০] এবং তিনি বলেন: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর, তার নৈকট্যলাভের উপায় অন্বেষণ কর এবং তাঁর পথে জেহাদ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৩৫] এবং তিনি আরও বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে এবং সৎ কর্ম করেছে।[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৬৯] এবং তিনি আরও বলেন: নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে।[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৭৭] তিনি আরও বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে এবং সৎ কর্ম করেছে।[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ৬২]

তাই ঈমানকে কামেল ঈমান বলা হবে না যদি এর সাথে নেক আমল না থাকে এবং গুনাহ বর্জন করা না হয়। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: সময়ের শপথ! নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। কেবল তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, নেক আমল করেছে, একে অপরকে সত্যের ও ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।[সূরা আসর, আয়াত: ১-৩] তিনি আরও বলেন: ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহ্‌র আনুগত্য কর এবং আল্লাহ্‌র রাসূলের আনুগত্য কর।[সূরা নিসা, আয়াত: ৫৯] তিনি আরও বলেন: হে ঈমানদারগণ! যখন আল্লাহ্‌র রাসূল তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে ডাকে যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করবে তখন তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও।[সূরা আনফাল, আয়াত: ২৪] অতএব, অন্তরের ঈমান ছাড়া জাহেরী আমল যথেষ্ট নয়। কেননা এটা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য; যারা থাকবে জান্নাহের সর্বনিম্ন স্তরে।

অনুরূপভাবে মুখে উচ্চারণ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে আমল করা ছাড়া অন্তরের ঈমান যথেষ্ট নয়। কেননা এটি জাহমীদের দলভুক্ত মুরজিয়া ও অন্যান্যদের দৃষ্টিভঙ্গি। এটি বাতিল দৃষ্টিভঙ্গি। বরঞ্চ অন্তরের ঈমান, মুখে উচ্চারণ এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল অবশ্যই লাগবে। গুনাতে লিপ্ত হওয়া অন্তরে ঈমানী দুর্বলতা ও ঘাটতির প্রমাণ বহন করে। কেননা ঈমান নেক আমলের মাধ্যমে বাড়ে এবং পাপ কাজের মাধ্যমে কমে যায়।[আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়াশ শাইখ সালিহ আল-ফাওযান (১/১৯)]

আর তর্ককারী ব্যক্তি যে হাদিসটির দিকে ইঙ্গিত করেছেন কিন্তু তিনি তোমাদের অন্তরের দিকে তাকান এই হাদিসটি সহিহ মুসলিমে (২৫৬৪) সংকলিত হয়েছে এই ভাষ্যে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদের আকৃতি ও সম্পদের দিকে তাকান না। তিনি তোমাদের অন্তরগুলো ও আমলগুলোর দিকে তাকান। এটি দ্ব্যর্থহীন ভাষ্য যে: অন্তরের শুদ্ধি ও আমলের শুদ্ধি উভয়টি উদ্দিষ্ট এবং মানুষকে এই নির্দেশ দেয়া হবে। সুতরাং কোন মুসলিমের জন্য আমলে কসুর করা কিংবা হারামে লিপ্ত হওয়া জায়েয নেই। এরপর বলবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ অন্তরের দিকে তাকান। বরঞ্চ আল্লাহ্‌ অন্তর ও আমল উভয়টির দিকে তাকান। তিনি অন্তরে যা রয়েছে এবং আমলের হিসাব নিবেন।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

5/5 - (11 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x