সূর্য-দীঘল বাড়ী | আবু ইসহাক এর উপন্যাস সূর্য-দীঘল বাড়ী | সূর্য-দীঘল বাড়ী কাহিনি সংক্ষেপ

আবু ইসহাক একজন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক। অভিধানপ্রণেতা হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। এই সাহিত্যিকের অমর ও কালজয়ী সৃষ্টি ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় লেখক উপন্যাসটি লেখা শুরু করেন। অর্ধেক লেখা শেষে মাঝখানে কিছু বিরতির পর ১৯৪৮ সালের আগস্ট মাসে এই উপন্যাস লেখা শেষ হয়।

পরে এটি ১৯৫১-৫২ সালে ধারাবাহিকভাবে কবি গোলাম মোস্তফা সম্পাদিত মাসিক ‘নওবাহার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তারও বহু পরে ১৯৫৫ সালে উপন্যাসটি কলকাতার নবযুগ প্রকাশনী থেকে প্রথম বই আকারে মুদ্রিত হয়। ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসটি দুর্ভিক্ষ, কুসংস্কার, সামাজিক বিধিনিষেধসহ গ্রামীণ সমাজের পটভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।

স্বামী পরিত্যক্তা জয়গুন নামের এক নারীর জীবনসংগ্রাম এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু। এ উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৭৯ সালে মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী যৌথভাবে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এটিই বাংলাদেশের প্রথম সরকারি অনুদানে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।

 

আবু ইসহাককে ‘এক অন্তর্মুখী নিঃসঙ্গ লেখক’ আখ্যা দিয়ে কথাসাহিত্যিক আহমদ মোস্তফা কামাল লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সাহিত্য-সমাজে আৰু ইসহাকের গ্রহণযোগ্যতা এবং শক্তিমত্তা প্রশ্নাতীত ছিল। তবু তিনি সেই আশ্চর্য লেখক, যিনি লেখকসমাজের প্রথম শ্রেণির সদস্য হয়েও এই সমাজের সঙ্গে কোনো দিন সম্পর্ক রক্ষা করে চলেননি।

শক্তি ছিল তাঁর, বিচ্ছিন্ন থেকেও দেশের অন্যতম প্রধান লেখকে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা ছিল, তবু তাঁর নিভৃতচারিতা তাঁকে পাঠক ও সহযাত্রী লেখকদের মনোযোগের কেন্দ্রে আসতে দেয়নি। আমাদের সাহিত্যের ভুবন এখনো ততটা ঋদ্ধ হয়ে ওঠেনি যে, একজন নিভৃতচারী লেখককে তাঁর শক্তিমত্তার কারণে সামনে নিয়ে আসবেG

কাহিনি সংক্ষেপ

শহরের জীবন ছেড়ে দুই সন্তান নিয়ে গ্রামে ফেরেন স্বামী পরিত্যক্তা জয়গুন। উপন্যাসটির কাহিনি এখান থেকেই শুরু। তবে শহরে যাওয়ার আগেও তার একটা জীবন ছিল। সে জীবনে প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর জয়গুন দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন।

একপর্যায়ে ওই দ্বিতীয় স্বামী করিম বকশও তাকে তালাক দিয়ে তাড়িয়ে দেন। এরপরই মূলত জয়গুন শহরে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানকার নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে একসময় আবার গ্রামে ফেরেন। জয়গুন এসে আশ্রয় নেন গ্রামের পরিত্যক্ত ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’তে।

‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’কে গ্রামের মানুষ অপয়া বাড়ি বলে বিবেচনা করত। কিন্তু হতদরিদ্র জয়গুনের বিকল্প না থাকায় এ বাড়িই বসবাসের স্থান হয়ে পড়ে। জয়গুনের উপার্জনের মূল অবলম্বন ছিল ব্যবসা, শাক বিক্রি আর মানুষের বাড়িতে কাজ করা। শত অভাবে থেকেও নিজের দুই সন্তানকে সংযম আর পরিশ্রমের শিক্ষা দেন। কিন্তু জয়গুনের চলাফেরা রক্ষণশীল সমাজ নেতিবাচকভাবে দেখতে শুরু করে।

ঘটনাচক্রে গ্রামের মোড়ল গদু প্রধানের চোখ পড়ে জয়গুনের ওপর। তাকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লাগলেও জয়গুন সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এ অবস্থায় ওই গদু প্রধান জয়গুনের জীবিকার পথ বন্ধ করে দিতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। একপর্যায়ে জয়গুনের সাবেক স্বামী করিম বকশ আবার জয়গুনকে বিয়ে করে ঘরে তুলতে আগ্রহ দেখান। এটি জেনে ক্ষিপ্ত হন গ্রামের মোড়ল গদু। মোড়লের ষড়যন্ত্রে প্রাণ যায় করিম বকশের। আবারও শুরু হয় জয়গুনের অনিশ্চিত পথচলা।

প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন : আবু ইসহাকের জন্ম কবে ও কোথায়?
উত্তর : ১৯২৬ সালের ১ নভেম্বর, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার শিরঙ্গল গ্রামে।

প্রশ্ন : আবু ইসহাকের প্রথম মুদ্রিত গল্পের নাম কী?
উত্তর : ‘অভিশাপ’। এটি ১৯৪০ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত কলকাতার ‘নবযুগ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন : আবু ইসহাক কী কী পুরস্কার পেয়েছিলেন?
উত্তর : স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর, ২০০৪), একুশে পদক (১৯৯৭), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২-৬৩), সুন্দরবন সাহিত্য পদক (১৯৮১) উল্লেখযোগ্য।

প্রশ্ন : আবু ইসহাকের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম লিখুন।
উত্তর : পদ্মার পলিদ্বীপ’, ‘জাল’, ‘হারেম’, ‘মহাপতঙ্গ’, ‘জোঁক’, ‘স্মৃতিবিচিত্রা’ উল্লেখযোগ্য।

প্রশ্ন : আবু ইসহাকের মৃত্যু কবে ও কোথায়?
উত্তর : ২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায়।