ভারতের রাজসিক সংসদ ভবন
২৮ মে ২০২৩ ভারতের নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে ত্রিভূজাকৃতির পার্লামেন্ট ভবন তৈরি করা হয়েছে।
নতুন সংসদ ভবন
নতুন সংসদ ভবনের প্রস্তাব ২০১০ সালের দিকে উত্থাপিত হয়। ২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার মীরা কুমার বর্তমান ভবনের বেশ কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত সরকার কেন্দ্রীয় ভিস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে নয়া দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ।
স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তিতে ২০২২ সালে উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল নতুন সংসদ ভবনের । কিন্তু কিছু কাজে দেরি হওয়ায় ২৮ মে ২০২৩ নতুন সংসদ ভবনের দ্বার উন্মোচন হয়। এ ভবনের সঙ্গে যুক্ত করা রাস্তার পাশে থাকবে সরকারি দপ্তর এবং প্রধানমন্ত্রীর বাস ভবন। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শুরু করে এ কেন্দ্রীয় ভিস্তা প্রকল্প সব সরকারি দপ্তর এবং ভবনকে যুক্ত করবে।
নতুন সংসদ ভবনটি ত্রিভুজাকৃতির এবং পুরোনো সংসদ ভবনের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত । নতুন সংসদ ভবনে লোকসভায় আসন ৮৮৮টি, ভবিষ্যতে যা বাড়িয়ে ১,২৭২টি করা যাবে। রাজ্যসভায় বসতে পারবেন ৩৮৪ জন। এতোদিন লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যদের যুগ্ম অধিবেশন হতো ‘সেন্ট্রাল হলে’ । নতুন ভবনে দুই কক্ষের সদস্যদের যুগ্ম অধিবেশন বসবে লোকসভায় ।
- ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন : ১০ ডিসেম্বর ২০২০
- নির্মাণকাজ সমাপ্তি : ২০ মে ২০২৩
- উদ্বোধন : ২৮ মে ২০২৩
- অবস্থান : নয়াদিল্লি
- আয়তন : ৬৫,০০০ বর্গমিটার
- স্থপতি : বিমল প্যাটেল
- ব্যয় : ৮৬২ কোটি রুপি
- উচ্চতা : ৩৯.৬ মিটার
- তলার সংখ্যা : ৪
- ঠিকাদার : Tata Projects Ltd
- মোট আসন : ১,২৭২ > লোকসভা ৮৮৮ ও রাজ্যসভা ৩৮৪
ভবনের নাম
নতুন ভবনের তিনটি প্রবেশদ্বারের- নামকরণ হয়েছে ‘জ্ঞানদ্বার’, ‘শক্তিদ্বার ও ‘কর্মদ্বার’ । মূল প্রবেশদ্বারে লেখা ‘সত্যমেব জয়তে’।
ভবনের প্রয়োজনীয়তা
কাজের সুবিধার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরিকল্পনা ছিল সমস্ত সাংসদদের একই ছাদের নিচে নিয়ে আসা । অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বসাতে ও ব্যবহারেও সমস্যা হয় পুরোনো সংসদ ভবনে। লোকসভা ও রাজ্যসভায় বসার জায়গার অভাবের পাশাপাশি পুরোনো সংসদ ভবনে ভূমিকম্প বা আগুন থেকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না।
অন্যদিকে পুরোনো সংসদ ভবনের লোকসভায় সর্বোচ্চ ৫৫২ · জন বসতে পারেন। আর সেন্ট্রাল হলে বসতে পারে ৪৩৬ জন । ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, জনসংখ্যার ভিত্তিতে লোকসভার আসনসংখ্যা ঠিক করা হয়। এখন দেশের জনসংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৬ সালে সাংসদ সংখ্যা বাড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সেই বছরে সাংসদ সংখ্যা বাড়তে পারে । তাই সকল কিছু চিন্তা করেই নতুন সংসদ ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২৮ মে উদ্বোধনের কারণ
হিন্দুত্ববাদের প্রবক্তা বিনায়ক দামোদর সাভারকর ২৮ মে ১৮৮৩ জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মদিনে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করা হয়। আধুনিক হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলগুলো সাভারকরকে পরম পূজনীয় হিসেবে সম্মান করে থাকে। সাভারকর ১৯০৪ সালে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘অভিনব ভারত সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন।
পুরোনো সংসদ ভবন
ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্স ও হার্বার্ট বেকার ১৯১২-১৩ সালে বৃত্তাকার সংসদ ভবনটির ডিজাইন করেন । এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯২১ ব্রিটিশ ডিউক অব কনৌট নয়া দিল্লির রাইসিনা হিলসে কাউন্সিল হাউসের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন ।
১৮ জানুয়ারি ১৯২৭ ভাইসরয় লর্ড আরউইন এটি উদ্বোধন করেন, ১৯ জানুয়ারি থেকে অধিবেশন শুরু হয়। এটি তৈরি করা হয় ভারতের সবচেয়ে পুরোনো প্রত্নতত্ত্ব সাইট চাউসাথ ইয়োগিনি টেম্পলের আদলে । ভারত স্বাধীন হওয়ার পর এটিকে সংসদ ভবনে রূপান্তরিত করা হয়।
স্থানের চাহিদার কারণে ১৯৫৬ সালে মূল সংসদ ভবনের ওপরে আরও দুটি তলা যুক্ত করা হয় । ২৪ অক্টোবর ১৯৭৫ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংসদের অ্যানেক্স ভবনের উদ্বোধন করেন। ১৫ আগস্ট ১৯৮৭ প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সংসদের লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
৩১ জুলাই ২০১৭ বৰ্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অ্যানেক্সের সম্প্রসারিত ভবনের উদ্বোধন করেন। সর্বশেষ ৩১ জানুয়ারি-৬ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত পুরোনো সংসদ ভবনে শেষ অধিবেশন ছিল। এ পুরোনো সংসদ ভবন জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হবে। এটি ১২ একর জায়গার ওপর নির্মিত।