মধ্যপ্রাচ্য কী? এর সীমানা এবং অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহ

মধ্যপ্রাচ্যের নামকরণ

Middle East বা মধ্যপ্রাচ্য নামটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন মার্কিন নৌ কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আলফ্রেড থেয়ার মাহান। তিনি ১৯০২ সালে ন্যাশনাল রিভিউ (ব্রিটিশ সাময়িকী) পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর ”The Persian Gulf and International Relations’’ নামক প্রবন্ধে এটি উল্লেখ করেন।
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তি উত্তর আফ্রিকা থেকে ইরান পর্যন্ত সুবিশাল অঞ্চলব্যাপি যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তখন তারা যুদ্ধের প্রয়োজনে এই অঞ্চলটিকে মধ্যপ্রাচ্য নাম দিয়ে একই সামরিক প্রশাসনের অধীনে নিয়ে আসে।
ব্রিটেনের এই অঞ্চলে একক প্রভাব থাকায় এবং তাদের প্রশাসনিক কাগজপত্রে ব্যবহারের ফলে মধ্যপ্রাচ্য নামটি প্রসিদ্ধ লাভ করে।  কিন্তু তখন জাতিসংঘের দাপ্তরিক কাগজপত্রে অঞ্চলটি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া হিসেবে পরিচিত ছিল।
বৃটেন থেকে অঞ্চলটি মধ্যখানে থাকায় তারা এর নাম মধ্যপ্রাচ্য রাখে তবে বিশ্বের অন্যন্য স্থান থেকে এর নামকরণ সঠিক না। যেমন বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য অঞ্চলটি পশ্চিম দিকে রাশিয়া থেকে অঞ্চলটি দক্ষিণে অবস্থিত।

মধ্যপ্রাচ্য নামটির যদিও কোন অফিসিয়াল স্বীকৃতি নেই তথাপি বহুল প্রচলিত নামটি ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই।  তবে মজার বিষয় হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষেরা এখন নিজেদেরকে মধ্যপ্রাচ্যের লোক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে ।

মধ্যপ্রাচ্যের সীমানা

মধ্যপ্রাচ্যের নামের জনক ক্যাপ্টেন থেয়ার মাহান এই অঞ্চলের সীমানা সম্পর্কে কোন নির্দিষ্ট ধারণা দেন নি। তাঁর মতে, ‘‘ভূ-মধ্য সাগর থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত ‍ভূ-খন্ডটি মধ্যপ্রাচ্য’’। মাহানের ধারনাটি মূলত নৌ বাহিনীর দৃষ্টিকোণ থেকে ছিল।
অঞ্চলটি যদিও ধর্মীয়ভাবে  ইউরোপ, সাংস্কৃতিকভাবে দূরপ্রাচ্য এবং ভৌগলিকভাবে মধ্য এশিয়া থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। মধ্যপ্রাচ্য নামটি বৃটেন প্রদত্ত। তাদের যুদ্ধের প্রয়োজনে এর নামকরণ করলেও যুদ্ধ শেষে এর সীমানার ব্যাপারে কোন দিক নির্দেশনা দেয়নি। ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এক বিতর্ক সভায় ব্রিটিশ আন্ডার সেক্রেটারি ক্রিস্টোফার মেহিউ মধ্যপ্রাচ্যের সীমানার প্রশ্নের জবাবে বলেন, ”Where precision would be required we should not use this term”।
এ থেকে পরিস্কার হয় যে, ব্রিটিশ সরকার সুনির্দিষ্ট সীমানার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য নামটি ব্যবহার করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করে। তবে যুক্তরাষ্ট ভিত্তিক সংগঠন Middle East Institute এর মতে, ‘‘মরক্কো হতে ইন্দোনেশিয়া, সুদান থেকে উজবেকিস্তান পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম জাহানই মধ্যপ্রাচ্য।’’
মধ্যপ্রাচ্যের সীমানা নির্ধারণে ইতিহাস থেকে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ের বিবর্তন এবং রাজনৈতিক কারণে মধ্যপ্রাচ্যের সীমানা পরিবর্তিত হয়েছে অনেকবার। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে অঞ্চলটি নিকটপ্রাচ্য নামে পরিচিত ছিল। এর সীমানা ছিল বলকান অঞ্চল, মিশর ও ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পর তুর্কি সাম্রাজ্য খন্ড বিখন্ড হয়ে বলকান এলাকা স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তুর্কী অন্তর্ভুক্ত এশিয় দেশগুলো ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের ম্যান্ডেটরি শাসনে চলে যায়। যার ফলস্বরুপ, নিকটপ্রাচ্য নামটি অপ্রচলিত হয়ে যায়।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্তর্ভুক্ত দেশ সমূহ

মধ্যপ্রাচ্যের সীমানা যেভাবে সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়নি সেভাবে এর অন্তর্ভুক্ত দেশ নিয়ে মতভেদ থাকা স্বাভাবিক। তবে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশকে মধ্যপ্রাচ্যের মূল দেশ হিসেবে সর্বাধিক বিবেচিত হয়ে আসছে।
সে হিসেবে মিশর, ফারটাইল ক্রিসেন্টভুক্ত আরব দেশ (সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ইরাক, ইসরাইল), আরব উপদ্বীপের দেশ (সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, ওমান, ইয়েমেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত), এবং তুরস্ক নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মূর দেশ।
মিশর উত্তর আফ্রিকার দেশ হলেও ওসমানি শাসনামল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ওতপ্রোতভাবে একাকার। তাই মিশরকে মধ্যপ্রাচ্যের মূল দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের মূল দেশের সাথে প্রান্তিক দেশগুলোর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের বিষয় বিবেচনা করা হয়ে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রান্তিক দেশগুলোর মধ্যে ইরান অন্যতম। কারণ মূল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহের সাথে ইরানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অনেকটা মিল পাওয়া যায়।

Similar Posts