আসিয়ান কি? উদ্দেশ্য, কার্যাবলী ও দেশসমূহ

আসিয়ান কি?

আসিয়ান (ASEAN) হচ্ছে একটি অর্থনৈতিক জোট, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে ১৯৬৭ সালে গঠিত হয়। পারস্পরিক সহযোগিতার প্রচার এবং এর সদস্য ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, সামরিক, শিক্ষাগত এবং সামাজিক -সাংস্কৃতিক একীকরণের সুবিধা প্রদান করার উদ্দেশ্য নিয়ে আসিয়ান প্রতিষ্ঠিত হয়। ASEAN এর পূর্ণরুপ Association of South East Asian Nation
আসিয়ানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা, সেইসাথে সামাজিক অগ্রগতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের সাধন করা। এছাড়া আইনের শাসন এবং জাতিসংঘের সনদের নীতি অনুযায়ী আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
 
আসিয়ানের পুরাতন নাম ছিল অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়া (এএসএ), যা ৩১ জুলাই, ১৯৬১ সালে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন এবং ফেডারেশন অফ মালায়া নিয়ে গঠিত হয়েছিল।
৮ আগস্ট, ১৯৬৭ সালে, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণের আসিয়ান ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে আসিয়ানের যাত্রা শুরু হয়। তাই, আসিয়ানের প্রতিষ্ঠাতা দেশ এই পাঁচটি।
১৯৭৬ সালে, ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আসিয়ানের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আসিয়ানের সদর দপ্তর ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় অবস্থিত। ২০০৬ সালে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আসিয়ানকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দেয়। বিপরীতে, সংগঠনটি জাতিসংঘকে আসিয়ানের ‘সংলাপ অংশীদার’ মর্যাদা প্রদান করে।

আসিয়ান ভুক্ত দেশ

আসিয়ান ভুক্ত মোট দেশ ১০টি। দেশগুলো যথাক্রমে-
  1. ইন্দোনেশিয়া
  2. মালয়েশিয়া
  3. সিঙ্গাপুর
  4. থাইল্যান্ড
  5. ফিলিপাইন
  6. ব্রনাই
  7. ভিয়েতনাম
  8. লাওস
  9. মায়ানমার এবং
  10. কম্বোডিয়া।
৩০ এপ্রিল ১৯৯৯ সালে, কম্বোডিয়া সর্বশেষ এবং ১০ তম দেশ হিসেবে আসিয়ানে যোগ দেয়।

আসিয়ানের উদ্দেশ্য

আসিয়ান ঘোষণাপত্র অনুসারে,  এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে,
  • দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।
  • আঞ্চলিক শান্তি, সহযোগিতা এবং স্বার্থের বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা, সহায়তা প্রদান সহ অন্যদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সুবিধা দেওয়া।
  • মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কৃষি ও শিল্পের উন্নত ব্যবহারের জন্য সহযোগিতা করা। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়ায় শিক্ষা উন্নয়ন ও বিস্তার করা।
  • একই ধরনের লক্ষ্য নিয়ে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, উপকারী সহযোগিতা বজায় রাখা।’

আসিয়ানের কার্যাবলী

১৯৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধের সমাপ্তি, আসিয়ান দেশগুলোকে এই অঞ্চলে বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রয়োগ করার স্বাধীনতা দেয়। ফলস্বরুপ, ১৯৯০-এর দশকের পর, আসিয়ান আঞ্চলিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে একটি অগ্রণী কণ্ঠ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
আসিয়ান গঠনের পর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বহু বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ করেছিল, যার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ চীন সাগরে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি ঘোষণাপত্র গ্রহণ। ১৯৯৪ সালে আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে সংলাপের প্রচার এবং পূর্ব তিমুরের দ্বন্দ্ব নিরসন।
১৯৯২ সালে আসিয়ান সদস্যরা আন্ত-দেশীয় বাণিজ্য শুল্ক হ্রাস করে এবং আসিয়ান ‘মুক্ত বাণিজ্য এলাকা’ তৈরি করে। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা হ্রাস করে।
আন্তর্জাতিক কূটনীতি, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি আসিয়ানের অঙ্গীকারের জন্য এর সদস্য দেশগুলো ২০০৭ সালে আসিয়ান সনদে স্বাক্ষর করে।
২০০৩ সালে, আসিয়ান ইউরোপীয় ইউনিয়নের পথ ধরে তিন স্তম্ভের সমন্বয়ে একটি আসিয়ান সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠার জন্য সম্মত হয় যেমন, ১. আসিয়ান নিরাপত্তা সম্প্রদায়, ২. আসিয়ান অর্থনৈতিক সম্প্রদায় এবং ৩. আসিয়ান সামাজিক-সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়।
আসিয়ান এশিয়ার-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং এর বাইরে অন্যান্য দেশগুলিকেও যুক্ত করে। আসিয়ান জোট একটি বৈশ্বিক শক্তি কেন্দ্র, এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সহযোগিতার কেন্দ্রীয় ইউনিয়ন। ফলে, এটাকে একটি বিশিষ্ট এবং প্রভাবশালী সংগঠন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সংগঠনটি অসংখ্য আন্তর্জাতিক বিষয়ে জড়িত এবং বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক মিশন পরিচালনা করে আসছে।