সমাস কি? | সমাসের বিভিন্ন প্রকার

সমাস কি?

সমাস অর্থ সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। অর্থ সম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। বাক্যে শব্দের ব্যবহার সংক্ষেপ করার জন্যে সমাসের সৃষ্টি। সমাস দ্বারা দুই বা ততােধিক শব্দের সমন্বয়ে নতুন অর্থবােধক পদ সৃষ্টি হয়। এটি নতুন শব্দ তৈরি ও প্রয়ােগের একটি বিশেষ রীতি। সমাস বাংলা ব্যাকরণের রুপতত্ত্বে আলোচনা করা হয়। যেমন : দেশের সেবা = দেশসেবা, বই ও পুস্তক = বইপুস্তক।
সমস্ত পদ : সমাসের প্রক্রিয়ায় সমাসবদ্ধ বা সমাসনিষ্পন্ন পদটির নাম সমস্ত পদ। যেমন, সিংহাসন, চন্দ্রমূখ ইত্যাদি।
সমস্যমান পদ : সমস্ত পদে পদের অন্তর্গত পদগুলােকে সমস্যমান পদ বলে। সিংহ, আসন, মুখ, চন্দ্র ইত্যাদি।
পূর্বপদ ও উত্তরপদ : সমাসযুক্ত পদের প্রথম অংশকে বলা হয় পূর্বপদ এবং পরবর্তী অংশ কে বলা হয় উত্তরপদ। সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন। এখানে সিংহ হচ্ছে পূর্ব পদ, আসন উত্তর পদ।
সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য : সমস্ত পদকে ভেঙে যে বাক্যাংশ করা হয়, তার নাম সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য। যেমন ; মুখ চন্দ্রের ন্যায়।

সমাসের প্রকারভেদ

সমাস প্রধানত ৬ প্রকার : তৎপুরুষ, কর্মধারয়, দ্বন্দ্ব, দ্বিগু, অব্যয়ীভাব এবং বহুব্রীহি সমাস। তবে, দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কেও তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেছেন। এদিক থেকে সমাস ৪ প্রকার : দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, অব্যয়ীভাব। এছাড়া, প্রাদি, নিত্য, অলুক ইত্যাদি কিছু অপ্রধান সমাস রয়েছে।
১. তৎপুরুষ সমাস
 
পূর্বপদের বিভক্তির লোপ পেয়ে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বােঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত যে কোনাে বিভক্তি থাকতে পারে। এছাড়া পূর্বপদের বিভক্তির নাম অনুসারে এদের নামকরণ হয়। যেমন বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন। এখানে দ্বিতীয়া বিভক্তি ‘কে’ থাকার কারণে এর নাম দ্বিতীয়া তৎপুরুষ।

তৎপুরুষ সমাসের প্রকারভেদ

তৎপুরুষ সমাস ৯ প্রকার। যেমন; দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, নঞ, উপপদ ও অলুক তৎপুরুষ সমাস।
  • ক. দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে) ইত্যাদি লােপ পেয়ে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা : দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত, বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন। ব্যাপ্তি অর্থেও দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন : চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী।
  • খ. তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) লােপে যে সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা : মন দিয়ে গড়া = মনগড়া, মধু দিয়ে মাখা= মধুমাখা। উন, হীন, শূন্য প্রভৃতি শব্দ উত্তরপদ হলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা; বিদ্যা দ্বারা হীন = বিদ্যাহীন, জ্ঞান দ্বারা শূন্য = জ্ঞানশূন্য। এছাড়া  উপকরণবাচক বিশেষ্য পদ পূর্বপদে বসলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা : বর্ণ দ্বারা মণ্ডিত = বর্ণমণ্ডিত। এরূপ-হীরকখচিত, রত্নশােভিত ইত্যাদি।
  • গ. চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে চতুর্থ বিভক্তি (কে, জন্য, নিমিত্ত ইত্যাদি) লােপে যে সমাস হয়, তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা ; গুরুকে ভক্তি = গুরুভক্তি, বসতের নিমিত্ত বাড়ি= বসতবাড়ি, বিয়ের জন্য পাগলা = বিয়েপাগলা ইত্যাদি।
  • ঘ. পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে, চেয়ে) লােপে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা – বিলাত থেকে ফেরত = বিলাতফেরত, পরাণের চেয়ে প্রিয় = পরাণপ্রিয়। তাছাড়া, চ্যুত, আগত, ভীত, গৃহীত , বিরত , মুক্ত, উত্তীর্ণ, পালানো, ইত্যাদি পরপদের সঙ্গে যুক্ত হলে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন : জেল থেকে মুক্ত = জেলমুক্ত। এ রুপ জেলখালাস, ঋণমুক্ত ইত্যাদি।
  • ঙ. যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তির (র, এর) লোপে যে সমাস হয়, তাকে যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা : চায়ের বাগান = চাবাগান , রাজার পুত্র = রাজপুত্র , খেয়ার ঘাট – খেয়াঘাট। অনুরূপভাবে ছাত্রসমাজ, দেশসেবা, দিল্লীশ্বর, পাটক্ষেত, ছবিঘর, ঘোড়দৌড়, বিড়ালছানা ইত্যাদি।
  • চ. অলুক তৎপুরুষ সমাস : ঘােড়ার ডিম, মাটির মানুষ, হাতের পাঁচ , মামার বাড়ি, সাপের পা, মনের মানুষ, কলের গান ইত্যাদি।
  • ছ. সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি (এ.য়, তে) লােপ পেয়ে যে সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন : গাছে পাকা = গাছপাকা, দিবায় নিদ্রা = দিবান্দ্রিা। এরূপ – বাকপটু, গােলাভরা, অকালমৃত্যু, বিশ্ববিখ্যাত, ভােজনপটু, দানবীর, বাক্সবন্দি, বস্তাপচা, রাতকানা, মনমরা ইত্যাদি।
  • জ.  নঞ তৎপুরুষ সমাস : না বাচক নঞ অব্যয় (না, নেই, নাই, নয়) পূর্বে বসে যে কংপুখে সমাস হয় তাকে মঞ্চ তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা- ন আচার = অনাচার, ন কাতার – অকাতর। এরুপ নাতিদীর্ঘ, অভাব, বেতাল ইত্যাদি।
  • ঝ. উপপদ তৎপুরুষ সমাস : যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎপ্রত্যয় যুক্ত হয় সে পদকে উপপদ বলে। কৃন্ত পদের সঙ্গে উপদের যে সমাস হয়, তাকে বলে উপপদ তৎপুরুষ সমাস। যেমন জলে চরে যা = জলচর, জল দেয় যে = জলদ, পঙ্কে জনে যা = পঙ্কজ।
  • ঞ.  অলুক তৎপুরুষ সমাস : যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি বিভক্তি লােপ হয় না, তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন : গায়ে পড়া = গায়েপড়া। এরূপ- ঘিয়ে ভাজা, কলে ছাঁটা, কলের গান, গরুর গাড়ি ইত্যাদি।
২. কর্মধারয় সমাস
যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদে অর্থই প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন – নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম। কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়।
  • দুটি বিশেষণ পরে একটি বিশেষ্যকে বােঝালে। যেমন – যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর
  • দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বােঝালে। যেমন – যিনি জজ তিনিই সাহেব = জজ সাহেব।
  • কার্যে পরম্পরা বােঝাতে দুটি কৃতন্ত বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন – আগে ধােয়া পরে মােছা = ধােয়ামােছা।
  • পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে কর্মধারয় সমাসে সেটি পুরুষ বাচক হয়। যেমন – সুন্দরী যে লতা = সুন্দরলতা, মহতী যে কীর্তি = মহাকীর্তি।
  • বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে, ‘মহৎ’ ও ‘মহান স্থানে ‘মহা’ হয়। যেমন মহৎ যে জ্ঞান= মহাজ্ঞান, মহান যে নবি = মহানবি।
  • পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে ‘কু স্থানে ‘কৎ’ হয়। যেমন – কু যে অর্থ = কদৰ্থ, কু যে আচার = কদাচার।
  • পরপদে ‘রাজা’ শব্দ থাকলে কর্মধারয় সমাসে ‘রাজ’ হয়। যেমন – মহান যে রাজা = মহারাজ
  • বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনাে কখনাে বিশেষণ পরে আসে, বিশেষ্য আগে যায়। যেমন –সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ, অধম যে নর = নরাধম।

কর্মধারয় সমাসের প্রকারভেদ

কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকার হয়। যেমন – মধ্যপদলােপী, উপমান, উপমিত ও রূপক কর্মধারয় সমাস।
  • ক. মধ্যপদলােপী কর্মধারয় : যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লােপ হয়, তাকে মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস বলে। যথা- সিংহ চিহ্নিত আসন। সিংহাসন, স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ= স্মৃতিসৌধ।
  • খ. উপমান কর্মধারয় : উপমান অর্থ তুলনীয় বস্তু। প্রত্যক্ষ কোনাে বস্তুর সাথে পরােক্ষ কোনাে বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয়, আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাকে বলা হয় উপমান। যেমন, ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ = ভ্রমরকৃষ্ণকেশ। এখানে ভ্রমর উপমান এবং কেশ উপমেয়। কৃষ্ণত্ব হলাে সাধারণ ধর্ম। তুষারের ন্যায় শুভ্র = তুষারশুভ্র, অরুণের ন্যায় রাঙা = অরুণরাঙা ইত্যাদি।
  • গ. উপমিত কর্মধারয় : সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমেয় পদের সাথে উপমানের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে (এ ক্ষেত্রে সাধারণ গুণটিকে অনুমান করে নেওয়া হয়। এ সমাসে উপমেয় পদটি পূর্বে বসে। যেমন – মুখ চন্দ্রের ন্যায় = চন্দ্রমুখ। পুরুষ সিংহের ন্যায় = সিংহপুরুষ।
  • ঘ. রূপক কর্মধারয় : উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয়। এ সমাসে উপমেয় পদ পূর্বে বসে এবং উপমান পদ পরে বসে এবং সমস্যমান পদে ‘রূপ’ অথবা ‘ই’ যােগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয়। যেমন- ক্রোধ রূপ অনল =ক্রোধানল, বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু, মন রূপ মাঝি= মনমাঝি ইত্যাদি।
৩. দ্বন্দ্ব সমাস
 
যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্ব সমাস বলে।দ্বন্ব সমাসে পূর্বপদ ও পর পদের সম্বন্ধ বােঝানাের জন্য ব্যাসবাক্যে এবং , ও, আর – এ তিনটি অব্যয় ব্যবহৃত হয়।  যেমন; দেয়াত ও কলম = দোয়াত-কলম। এখানে দোয়াত ও কলম প্রতিটি পদেরই অর্থের প্রাধান্য সমস্ত পদে রক্ষিত হয়েছে।
দ্বন্দ সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়। উদাহরণস্বরুপ:
  • মিলনার্থক শব্দযােগে = মা-বাপ, মাসি-পিসি, জিন-পরি, চা-বিস্কুট, মশা-মাছি, ছেলে-মেয়ে ইত্যাদি।
  • বিরােধার্থক শব্দযােগে = দা-কুমড়া, অহি-নকুল, স্বর্গ-নরক, ছোট-বড়, ভালো-মন্দ ইত্যাদি।
  • বিপরীতার্থক শব্দযােগে = আয়-ব্যয়, জমা-খরচ, ছােট-বড়, ছেলে-বুড়ো, লাভ-লােস
  • সমার্থক শব্দযােগে = হাট-বাজার, ঘর-দুয়ার, খাতা-পত্র, কাপড়-চোপড়, পােকা-মাকড়, দয়া-মায়া, ধূতি-চাদর ইত্যাদি।
  • দুটি সর্বনামযোগে = যা-তা, যে-সে, যথা-তথা, তুমি-আমি, এখানে-সেখানে ইত্যাদি
  • দুটি ক্রিয়াযােগে = দেখা-শােন, যাওয়া-আসা, চলা-ফেরা, দেওয়া-থোওয়া ইত্যাদি
  • দুটি ক্রিয়া বিশেষণযােগে = ধীরে-সুস্থে, আগে-পাছে, আকারে-ইঙ্গিতে ইত্যাদি।
  • দুটি বিশেষণযােগে = ভালাে-মন্দ, কম-বেশি, আসল-নকল, বাকি-বকেয়া ইত্যাদি।
  • অঙ্কবাচক শব্দযোগে = নয়-ছয়, উনিশ-বিশ, সাত-সতেরো।
অলুক দ্বন্দ্ব:  যে ফন্দ্ব সমাসে কোনাে সমস্যমান পদের বিভক্তি লােপ হয় না, তাকে অলক ফল বলে। যেমন দুধে-ভাতে, জলে-স্থলে, দেশে-বিদেশে, হাতে-কলমে। তিন বা বহু পদে দ্বন্দ্ব সমাস হলে তাকে বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন : সাহেব-বিবি-গােলাম, হাত পা-নাক-মুখ-চোখ ইত্যাদি।
৪. দ্বিগু সমাস
সমাহার (সমষ্টি) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। দ্বিগু সমাসে সমাসনিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ হয়। যেমন, তিন কালের সমাহার = ত্রিকাল, চৌরাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা, তিন মাথার সমাহার = তেমাথা, শত অব্দের সমাহার-শতাব্দী, ত্রি (তিন) পদের সমাহার = ত্রিপদী ইত্যাদি।
সমাহার
৫. অব্যয়ীভাব সমাস
 
পূর্বপদে অব্যয়যােগে নিপন্ন সমাসে যদি অব্যয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তবে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। অব্যয়ীভাব সমাসে কেবল অব্যয়ের অর্থযােগে ব্যাসবাক্যটি রচিত হয়। যেমন : মরণ পর্যন্ত = আমরণ। নৈকট্য, পৌনঃপুনিকতা, পর্যন্ত, অভাব, অনতিক্রম্যতা, সাদৃশ্য, যােগ্যতা প্রভৃতি নানা অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয়।
নিচের উদাহরণগুলােতে অব্যয়ীভাব সমাসের অব্যয় পদটি বন্ধনীর মধ্যে দেখানাে হলাে।
  • সামীপ্য (উপ) কণ্ঠের সমীপে = উপকণ্ঠ, কূলের সমীপে = উপকূল।
  • বিপসা (অনু, প্রতি) : দিন দিন = প্রতি দিন, ক্ষণে ক্ষণে = প্রতিক্ষণে, ক্ষণ ক্ষণ = অনুক্ষণ।
  • অভাব (নিঃ = নির) : আমিষের অভাব = নিরামিষ, ভাবনার অভাব = নির্ভাবনা, উৎসাহের অভাব = নিরুৎসাহ।
  • পর্যন্ত (আঃ) : পা থেকে মাথা পর্যন্ত = অপাদমস্তক।
  • সাদৃশ্য (উপ) : শহরের সদৃশ = উপশহর, গ্রহের তুল্য = উপগ্রহ, বনের সদৃশ উপবন।
  • অনতিক্রম্যতা (যথা) ; রীতিকে অতিক্রম না করে = যথারীতি, সাধ্যকে অতিক্রম না করে = যথাসাধ্য।
৬. বহুব্রীহি সমাস
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলাের কোনােটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোনাে পদকে বােঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যথা- বহুব্রীহি (ধান) আছে যার = বহুব্রীহি । এখানে ‘বহু’ কিংবা ‘ব্রীহি’ কোনােটিরই অর্থের প্রাধান্য নেই, যার বহু ধান আছে এমন লােককে বােঝাচ্ছে। বহুব্রীহি সমাসে সাধারণত যার, যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্যরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন, নদী
মাতা (মাতৃ) যার = নদীমাতৃক, বিগত হয়েছে পত্নী যার = বিপত্নীক।

বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ

বহুব্রীহি সমাস ৮ প্রকার। যেমন; সমানাধিকরণ, ব্যাধিকরণ, ব্যতিহার, নঞ, মধ্যপদলােপী, প্রত্যয়ান্ত, অলুক ও সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি।
  • ক. সমানাধিকরণ বহুব্রীহি : পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন : হত হয়েছে শ্রী যার = হতশ্রী, খােশ মেজাজ যার = খােশমেজাজ।
  • খ. ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি : বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনােটিই যদি বিশেষণ না হয়, তবে তাকে বলে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি। যথা; আশীতে (দাঁতে) বিষ যার = আশীবিষ। পরপদ কৃদন্ত বিশেষণ হলেও ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। এ সমাসে পূর্বপদে আ এবং উত্তরপদে ‘ই যুক্ত হয় যথা : হাতে হাতে যে যুদ্ধ = হাতাহাতি, কানে কানে যে কথা = কানাকানি। এরুপ কাড়াকাড়ি, পালাগালি, দেখাদেখি, কোলাকুলি, লাঠালাঠি, হাসাহাসি, গুতাগুঁতি, ঘুষাঘুষি ইত্যাদি।
  • গ. নঞ বহুব্রীহি : বিশেষ্য পূর্বপদের আগে ন (না অর্থবােধক) অব্যয় যােগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে তাকে নঞ বহুব্রীহি সমাস বলে । নঞ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয়। যেমন : ন (নাই) জ্ঞান যার = অজ্ঞান, নি (নাই) ভুল যার = নির্ভুল।
  • ঘ. মধ্যপদলােপী বহুব্রীহি : বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংশের কোনাে অংশ যদি সমস্তপদে লােপ পায়, তবে তাকে মধ্যপদলােপী বহুব্রীহি বলে। যেমন : বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর = বিড়ালচোখ, হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে – হাতেখড়ি। এমনি ভাবে – গায়ে হলুদ, ইত্যদি।
  • ঙ. প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয় প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি যথা- এক দিকে চোখ (দৃষ্টি) যার = একচোখা (চোখ+আ), ঘরের দিকে মুখ যার = ঘরমুখাে (মুখ+ও), নিঃ (নেই) খরচ যার = নি-খরচে (খরচ +এ)। এরকম -দোটানা, দোমনা, একগুঁয়ে, অকেজো, একঘরে, দোনলা, দোতলা, ঊনপাঁজুরে ইত্যাদি।
  • চ. অলুক বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোনাে পরিবর্তন হয় না, তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে। অলুক বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদটি বিশেষণ হয়। যথা : মাথায় পাগড়ি যার = মাথায়পাগড়ি।
  • ছ. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি : পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্তপদটি বিশেষণ বােঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়। এ সমাসে সমপদে ‘আ’, ‘ই’ বা ‘ঈ’ যুক্ত হয়। যথা – দশ গজ পরিমাণ যার = দশগজি, চেী (চার) চাল যে ঘরের = চৌচালা।

Similar Posts