ভাষা কাকে বলে?
মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য যেসব কথা বা বাক্য উচ্চারণ করে, তাকে ভাষা বলে।অর্থাৎ বাকযন্ত্রের সাহার্যে মনের ভাব প্রকাশে যা বলা হয়, তাই ভাষা। যেমন– আমার নাম আজহার সুমন। আমি নোবিপ্রবিতে পড়ি এবং ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট লিখি।
ভাষার প্রকারভেদ
ভাষা প্রধানত দুই প্রকার। যেমন–কথ্য বা মৌখিক ভাষা এবং লেখ্য ভাষা বা লিখিত ভাষা।
(১) কথ্য ভাষা
সাধারণত আমরা পরস্পরের মধ্যে কথাবার্তা বলে যে ভাব আদান-প্রদান করি, তাকে কথ্য বা মৌখিক ভাষা বলে। কথ্য ভাষা দুই প্রকার। যথা- ক. আঞ্চলিক কথ্য ভাষা ও খ. সর্বজনীন বা আদর্শ কথ্য ভাষা।
ক. আঞ্চলিক কথ্য ভাষা: বাংলাদেশের মধ্য, দক্ষিণ ও পূর্ব অঞ্চল এছাড়া উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, বিহার ও ঝাড়খন্ড প্রভূতি অঞ্চলের উপভাষার নাম।
আঞ্চলিক ভাষার বৈশিষ্ট্য
- আঞ্চলিক ভাষা ব্যাকরণের নিয়ম মেনে চলে না।
- এর মাধ্যমে বিশেষ অঞ্চলের মানুষের পরিচয় জানা যায়।
- এটি সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল।
- এটি বাঙ্গালির লোক-সংস্কৃতির সম্পদ।
- এই ভাষার রূপ অকৃত্রিম।
- অঞ্চল বিশেষে বৈচিত্র্যই একে স্বতন্ত্র্যরূপ দান করেছে।
খ. আদর্শ কথ্য ভাষা: বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর সর্বজনীন কথ্য ভাষা হল আদর্শ কথ্য রীতি। বিশেষ করে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার বিভিন্ন ধরনের মাধ্যমে প্রচারিত অডিও ভিডিও, বক্তব্য, আলোচনা, নাটক ও সংগীতে আদর্শ কথ্য রীতির প্রয়োগ দেখা যায়।
(২) লেখ্য ভাষা
যে ভাষাতে বই-পুস্তক, চিঠি-পত্র এবং অফিস-আদালত ইত্যাদি লেখা বা ব্যবহার হয়, তাকে লেখ্য ভাষা বা লিখিত ভাষা বলে। লেখ্য ভাষা দুই প্রকার। যেমন– সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা।
ক. সাধু ভাষা: যে ভাষায় ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয়, তাকে সাধু ভাষা। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘সাধারণ গদ্য-সাহিত্যে ব্যবহৃত বাঙ্গালা ভাষাকে সাধু ভাষা বলে।’’ যেমন– তাঁহারা জুতা খুলিয়া ঘরে প্রবেশ করিল। এই বাক্যে তাহারা, জুতা, খুলিয়া এবং করিল শব্দগুলো সাধু ভাষার নিয়মে বসেছে।
সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্য
- এটি শুধু লেখ্য ভাষারূপে প্রচলিত।
- সাধু ভাষা কিছুটা কঠিন ও গুরুগম্ভীর।
- সাধু ভাষা অপরিবর্তনীয়।
- এতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয়।
- সাধু ভাষা কথাবার্তা, নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার উপযোগী নয়।
- সাধু ভাষা ব্যাকরণের নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে মেনে চলে।
খ. চলিত ভাষা: যে ভাষা রীতিতে ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যবহৃত হয়, তাকে চলিত ভাষা বলে। চলিত ভাষার সৃষ্টি হয় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রমথ চৌধুরীর হাত ধরে। তিনি সবুজপত্র পত্রিকার মাধ্যমে চলিত ভাষা রীতির প্রচলন করেন। চলিত ভাষা যেমন–তারা জুতো খুলে ঘরে প্রবেশ করল।
চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্য
- ব্যাকরণ দ্বারা নির্দিষ্ট নয়, তাই সব সময় পরিবর্তনশীল।
- পদবিন্যাস সুনির্দিষ্ট বা অপরিবর্তনীয় নয়।
- এই ভাষা কিছুটা গম্ভীর্যহীন, সহজ-সরল।
- সাধু ভাষার তুলনায় চলিত ভাষা অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত।
- কবিতা, নাটক ও বক্তৃতায় এই ভাষা অত্যন্ত উপযোগী।
- চলিত ভাষা স্বাভাবিক ও কৃত্রিমতা শূন্য।