যতি চিহ্ন কি?
বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বুঝার জন্য বাক্যের মধ্যে বা বাক্যের সমাপ্তিতে অথবা বাক্যে আবেগ (হর্ষ, বিষাদ, অনুভূতি), জিজ্ঞাসা ইত্যাদি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে যেসব সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে যতি বা ছেদচিহ্ন বলে।
নিম্মে বিভিন্ন প্রকার যতিচিহ্নের নাম, এবং এর ব্যবহার বর্ণনা করা হল।
যতি চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম
১. দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ( । )
বিবৃতিমূলক ও অনুজ্ঞামূলক বাক্যের শেষে দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। যেমন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাকে এক গ্লাস পানি দেন ইত্যাদি।
তবে, অনেক সময় শব্দের বা বাক্যের শেষে কি/কী, কেন, কারা কোথায় ইত্যাদি থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা মনে করে এটা প্রশ্ন বাক্য, কিন্তু তা না। যেমন দেখা দরকার বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশীদার কারা।
বিভিন্ন অভিসন্দর্ভ এবং গবেষণামূলক প্রবন্ধে তথ্যনির্দেশের প্রসঙ্গ আলাদা করতে দাঁড়ি বসে। যেমন, আলম, মাহবুব। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস। ঢাকা: ঢাকা প্রেস, ২০১৫।
২. কমা ( , )
- ক. বাক্যের একাধিক অংশকে আলাদা করে প্রকাশ করতে কমার প্রয়োজন হয়। যেখানে স্বল্প বিরতির প্রয়ােজন সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন– সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে।
- খ. পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে বসলে শেষ পদটি ছাড়া বাকি সবগুলাের পরই কমা বসবে। যেমন- সুখ, দুঃখ, আশা, নৈরাশ্য একই মালিকার পুল ।
- গ. সম্বােধনের পরে কমা বসাতে হয়। যেমন- রহিম, এদিকে এসাে।
- ঘ. জটিল বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেক খন্ডবাক্যের পরে কমা বসবে। যেমন- কাল যে লােকটি এসেছিল, সে আমার ভাই।
- ঙ. উদ্ধৃতির শুরুতে ‘কমা’ বসাতে হবে। যেমন- করিম সাহেব বললেন, “আজ দুপুরে ভোজন হবে।”
- চ. তারিখ লেখার সময় ‘কমা’ বসাতে হয়। যেমন– বুধবার, ২০২১ সন। ৭ই মার্চ, ১৯১০
- ছ. বাড়ি বা রাস্তার নাম্বরের পরে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন- ৬৮, মিরপুর রোড, ঢাকা-১০
- জ. নামের পরে ডিগ্রিসূচক পরিচয় সংযােজিত হলে সেগুলাের প্রত্যেকটির পরে কমা বসবে। যেমন- ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, এম.এ, পি-এইচ.ডি।
৩. সেমিকোলন ( ; )
কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়ােজন হলে, সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বাক্যে একাধিক প্রমাণ, উদাহরণ, যুক্তি, পরিচয় ইত্যাদি প্রকাশ করতে সেমিকোলন বসে।
যেমন- সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ আমরা; এ মায়ার বাধন কি সত্যিই দুচ্ছেদ্য?, আগামি একাডেমিক সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন ড. দিব্যদূতি সরকার, প্রফেসর বিএমএস ডিপার্টমেন্ট; শাহিন কাদির, এসোসিয়েট প্রফেসর;
৪. প্রশ্নবােধক চিহ্ন (?)
বাক্যে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে শেষে প্রশ্নবােধক চিহ্ন বসে। যেমন– আপনি কেমন আছেন? আপনারা কোথায় যাবেন? ইত্যাদি।
৫. বিষ্ময়বোধক চিহ্ন (!)
বাক্যে হৃদয়াবেগ বা বিষ্ময় প্রকাশ করতে সম্বােধন পদের পরে (!) চিহ্নটি বসে। যেমন-
আহা! কী সুন্দর দৃশ্য। আহা! কী যে কষ্ট লাগে।
৬. কোলন (:)
একটি অপূর্ণ বাক্যের পরে অন্য একটি বাক্য শুরু করতে হলে সাধারণত কোলন চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন- সভায় সিদ্ধান্ত হলাে : একমাস পরে নতুন সভাপতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সময় নির্দেশ করতে ঘন্টা, মিনিট, ও সেকেন্ডের মধ্যে কোলন চিহ্ন বসে। যেমন ৯:১০:২০
৭. ড্যাস চিহ্ন (–)
যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি বাক্যের সমন্বয় ৰা সংযােগ বাৈঝাতে ড্যাস চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন- তােমরা দরিদ্রের উপকার কর- এতে তােমাদের সম্মান যাবে না-বাড়বে।
৮. হাইফেন বা সংযােগ চিহ্ন (-)
সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলাে বিচ্ছিন্ন করে দেখানাের জন্য হাইফেনের ব্যবহার হয়। যেমন– এ আমাদের শ্রদ্ধ-অভিনন্দন, আমাদের প্রতি উপহার।
৯. ইলেক (‘) বা লােপ চিহ্ন
কোনাে বর্ণ বিশেষের লােপ বােঝাতে বিলুপ্ত বর্ণের জন্য (‘) লােপচিহ্ন দেওয়া হয়।
১০. উর্ধ্বকমা ও উদ্ধার চিহ্ন (’) (‘‘ ’’)
ইংরেজি অ্যাপস্ট্রপি শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ উর্ধ্বকমা এবং ইংরেজি কোটেশন মার্ক শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ উদ্ধার চিহ্ন। সাধারণত বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে উদ্ধার চিহ্নের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যেমন-শিক্ষক বললেন, “গতকাল ভয়ানক ভূমিকম্প হয়েছে।”