মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি?

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে সেই সব আকাঙ্ক্ষা যার জন্য বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘ সময় আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
যেসকল কারণে বাংলাদেশের মানুষ তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েছিল এবং তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছে, সেগুলোই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে বুঝায়, ‘‘যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্ধুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ।’’
অর্থাৎ, একাত্তরে লাখ লাখ শহিদের রক্তস্নাত পথে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছিলাম তার পিছনে চারটি মূল আকাঙ্ক্ষা কাজ করেছিল। সেগুলো হলো: জাতীয়তাবাদসমাজতন্ত্রগণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা
জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল চরম মরণ-সংগ্রামে। জাতীয়তাবাদ ছাড়া কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে গিয়েছি।
অনুভূতি আছে বলেই আজকে আমরা জাতিতে বাঙালি। অনুভূতি যদি না থাকে, তাহলে কোন জাতি বেশিদূর যেতে পারে না। অনেক জাতি আছে যারা বিভিন্ন ভাষাবলম্বী হয়েও এক-জাতি হয়েছে। অনেক দেশে আছে, একই ভাষা, একই ধর্ম, একই সবকিছু নিয়ে বিভিন্ন জাতি গড়ে তুলেছে–তারা এক জাতিতে পরিণত হতে পারে নাই। জাতীয়তাবাদ নির্ভর করে মূলত অনুভূতির উপর।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো গণততন্ত্র। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্র সেই গণতন্ত্র, যা সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও এর ভিত্তিতে সৃষ্ট বাংলাদেশের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:
প্রথমত, বাংলাদেশ হবে জনগণের দেশ এবং জনগণের দ্বারা পরিচালিত দেশ; অর্থাৎ গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত দেশ। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ হবে সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত, অন্যায়, অবিচার ও শোষণমুক্ত; অর্থাৎ অসাম্প্রদায়িক সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক দেশ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়। সংবিধানে প্রস্তাবনায় উল্লেখ রয়েছে যেমন, ‘‘আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে’’
এছাড়া সংবিধানের প্রথমভাগে রয়েছে।
১) বাংলাদেশ হবে একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আরো অন্যন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যেমন; বৈষম্যমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, অন্যায়, অবিচার, শোষণ, এবং নিষ্পেষণমুক্ত সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক বাংলাদেশ।

Similar Posts