আইন কি? আইনের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ

আইন কি

আইন বলতে সমাজ স্বীকৃত এবং রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত নিয়ম-কানুনকে বোঝায় যা মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। আইনের মাধ্যমে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তি, ব্যক্তির সাথে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ধারণ হয়। এসব আইনের উদ্ভব হয়েছে কতগুলো প্রথা, রীতি-নীতি, এবং নিয়মকানুনের সমষ্টি থেকে।
এটির দ্বারা মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত হয়। কারণ মানুষ শাস্তির ভয়ে আইন বিরোধী কোন কাজ করবে না। আইনের স্বীকৃতির জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদন লাগে। যেকোন আইন রাষ্ট্রীয় অনুমোদন ছাড়া কোন বিধিবিধান আইনে পরিণত হয় না।

আইনের সংজ্ঞা

আইন হলো রাষ্ট্র বা সমাজ কর্তৃক কতগুলো নিয়মের সমষ্টি যার মাধ্যমে একটি দেশ তার জনগণের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং যেটি শাস্তি আরোপের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে পারে।
আইন হল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা সৃষ্ট নিয়মের একটি সেট যা রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয়।
আইন হল একটি নিয়মের সমষ্টি যা একটি সমাজ বা সরকার অপরাধ, ব্যবসায়িক চুক্তি এবং সামাজিক সম্পর্ক মোকাবেলা করার জন্য বিকাশ করে।
আইন হল সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট স্থান বা কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্ধারিত নিয়মের একটি সেট।
আইন হচ্ছে একটি সম্প্রদায়ের রীতিনীতি, অভ্যাস এবং আচরণের নিয়মগুলোর সাথে সম্পর্কিত শৃঙ্খলা, যা সম্প্রদায় দ্বারা বাধ্যতামূলক হিসাবে স্বীকৃত।
অস্টিনের কমান্ড তত্ত্ব অনুসারে, ‘‘আইন হল একটি রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত সমাজে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশের একটি অংশ।’’
স্যামন্ডস এর মতে, ‘‘আইন হলো রাষ্ট্র কর্তৃক ন্যায়শাসনে স্বীকৃত এবং প্রয়োগকৃত নীতির মূল অংশ।’’
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫২ (১) (c) মতে, “আইন” অর্থ বাংলাদেশে আইনের বলসম্পন্ন যে কোন আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, প্রজ্ঞাপন বা অন্যান্য আইনি উপকরণ এবং যে কোন প্রথা বা ব্যবহার।

আইনের প্রকারভেদ

প্রাথমিকভাবে আইনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন; সরকারি আইন, বেসরকারি আইন, এবং আন্তর্জাতিক আইন।
১. সরকারি আইন
 
নাগরিকের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ধারণ করার জন্য যেসব আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয় তাকে সরকারি আইন বলে। সরকারি আইন আবার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত যথা-
    ক. ফৌজদারি আইন: রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কাজ পরিচালনার জন্য ফৌজদারি আইন প্রণয়ন করা হয়। মূলত কোন কারণে ব্যক্তির অধিকার ক্ষুন্ন হলে এ-আইনের মাধ্যমে অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
    খ. প্রশাসনিক আইন: রাষ্ট্রের শাসন বিভাগের এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের যাবতীয় কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য এ-আইন প্রণয়ন করা হয়। মূলত প্রশাসনিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণের জন্য এ-ধরণের আইন তৈরি করা হয়।
    গ. সাংবিধানিক আইন: এ-ধরণের আইন সংবিধান দ্বারা প্রণয়ন হয়। সংবিধানে যেসব বিধিবিধান রয়েছে সেসব বিধিবিধান বা আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।
    ঘ. সিভিল আইন: যে সকল আইন নাগরিকের অধিকার, কর্তব্য এবং এর প্রতিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো ব্যাখ্যা ও বিচার করে তাকে সিভিল আইন বা দেওয়ানি আইন বলে।
এটি ব্যক্তিগত বিবাদ যেমন সম্পত্তি, অফিস, ধর্ম, খ্যাতি, চুক্তির শর্তাদি ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত অধিকার ও কর্তব্য এবং প্রতিকার নিয়ে কাজ করে যা অন্যদের ক্ষতির কারণ হয়।
২. বেসরকারি আইন
 
ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক রক্ষার জন্য যেসব আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয় তাকে বেসরকারি আইন বলে। এ-ধরণের আইনের দ্বারা বিভিন্ন চুক্তি ও দলিল সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করা হয়। মূলত, সামাজিক শৃংখলা বজায় রাখতে বেসরকারি আইন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
বেসরকারী আইন ব্যক্তি এবং সংস্থার মধ্যে আইনি বিরোধ যেমন চুক্তি, সম্পত্তি, ক্ষতি এবং বাণিজ্যিক আইনের ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করে।
৩. আন্তর্জাতিক আইন
 
রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক রক্ষার জন্য যেসব আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয় তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে। এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সাথে কেমন আচরণ করবে, এক রাষ্ট্রের নাগরিক অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকের সাথে কেমন ব্যবহার করবে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধান কি হবে তা আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।
আন্তর্জাতিক আইন আবার দুই ধরণের যেমন সরকারী আন্তর্জাতিক আইন, এবং বেসরকারী আন্তর্জাতিক আইন। সরকারী আন্তর্জাতিক আইনগুলো (Public International Law) হচ্ছে শান্তিকালীন আইন (Law of Peace), যুদ্ধসংক্রান্ত আইন (Law of War) এবং নিরপেক্ষতার আইন (Law of Neutrality)।
যে সকল আন্তর্জাতিক আইন বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে সেগুলোকে শান্তিকালীন আন্তর্জাতিক আইন বলে। বিবদমান রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধের সময়ে যে সকল নিয়ম মান্য করে চলে সেগুলোকে যুদ্ধসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন বলা হয়। বিবদমান রাষ্ট্রগুলো সম্পর্কে পুরোপুরি নিরপেক্ষতা অবলম্বন সংক্রান্ত আইনকে নিরপেক্ষতা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন বলে।
বেসরকারি আন্তর্জাতিক আইন (Private International Law) মূলত এক রাষ্ট্রের নাগরিকের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্র বা তার নাগরিকের সমস্যাদি মীমাংসা করে। এগুলোকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক আইন বলে। অবৈধ সন্তানের অধিকার, বিবাহ বিচ্ছেদ প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কিত আইন ব্যক্তিকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক আইনের অন্তর্ভুক্ত।

Similar Posts